ঢাকা ০৪:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানের ভূত তাদের মাথা থেকে যায়নি”মোজাম্মেল হক

বিএনপি নেতাদের মাথা থেকে এখনও ‘পাকিস্তানের ভুত’ যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য বলেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া মিলে ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। আর আমরা ২২ বছর। ২৯ বছরে তারা দেশের কোনো উন্নতি করেননি। কারণ তারা চাননি দেশ স্বাধীন হোক। তারা চেয়েছিলেন বাংলাদেশও পাকিস্তানের মত ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র হোক। গত কয়েক দিনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুইবার বলেছেন, এর চেয়ে পাকিস্তান ভাল ছিল। কোন দিক দিয়ে ভালো ছিল?

তিনি বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আর তারা বলে পাকিস্তান ভালো ছিল। আসলে পাকিস্তানের ভূত তাদের মাথা থেকে যায়নি। এসব মিথ্যাচার শুনলে আজও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, শহীদদের আত্মার অসম্মান হয়। তাদের মুখে শেখ ফরিদ, বগলে ইট। বাংলাদেশে থেকেও তারা দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেন না। এদের যাতে রাজনৈতিক কবর রচিত হয় সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরী নাগরিক শোকসভা কমিটির আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত করার দাবি জানানো হয়।  মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌকমান্ডো আবু মুছা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনের মায়া তুচ্ছ করে তিনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আবু মুছা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি অপারেশন জ্যাকপট, অপারেশন আউটার অ্যাংকর, অপারেশন অ্যাভলুজ ছাড়াও বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, নারায়ণগঞ্জের নিকটে জাতিসংঘের পণ্যবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে আজ জানতে হবে আমার মুক্তিযুদ্ধ কেন করেছিলাম। পাকিস্তান হয়েছিল বাঙালির ভোটে। অথচ আমাদের বাংলা ভাষার দাবিকেই তারা অস্বীকার করেছিল। তাই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ার পরও তারা আমাদের ক্ষমতা দেয়নি।

মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডোদের পরিচালিত অভিযানের গুরুত্ব তুলে ধরে মোজাম্মেল হক বলেন, তাদের গোপনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্টে উনারা একযোগে ১১টি জাহাজ উড়িয়ে দেন। এই প্রথম পাকিস্তান বিশ্বের কাছে স্বীকার করতে বাধ্য হয় মুক্তিযুদ্ধ চলছে। এর আগ পর্যন্ত তারা মিথ্যাচার করছিল। নৌকমান্ডোদের অভিযানের পর আর বিশ্বের কাছে মিথ্যাচার করতে পারেনি।

সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, রাজধানী হওয়া উচিত ছিল ঢাকায় হলো পশ্চিম পাকিস্তানে। কিছুই হলো না পূর্ব পাকিস্তানে। এমনকি ভাষাকেও চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলো। এ কারণে ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু। নতুন প্রজন্মের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানেন না। মুক্তিযোদ্ধাদের কত ত্যাগ আর অবদান। মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন উৎসর্গ করতে ছুটে গিয়েছিলেন আবু মুছা চৌধুরী। দেখতে হবে সত্যিকার অর্থে কারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে যে গণহত্যা তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আজও মেলেনি। বাংলাদেশকে প্রথম স্বাধীনতা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

সুলতানা কাজীর সঞ্চালনায় সভায় প্রয়াত আবু মুছা চৌধুরীর সহধর্মিণী মরিয়ম আক্তার বলেন, উনি জীবদ্দশায় কিছুই চাননি। জাতি যেন উনাকে মনে রাখে সে ব্যবস্থা করে দেবেন এই অনুরোধ। উনার মৃত্যুতে শোক জানানোয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। সভায় প্রধান বক্তা নৌকমান্ডো অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অনিল বরণ রায় বলেন, পাকিস্তানিরা স্বীকারই করছিল না এখানে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু নৌকমান্ডোদের অপারেশনের কারণে তাদের স্বীকার করতে হয়। সারাবিশ্বে জানতে পারে এখানে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। আবু মুছা চৌধুরী খুব সাহসী যোদ্ধা ছিলেন।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, শোক সভা কমিটির সদস্য সচিব বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী বক্তব্য রাখেন। সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরীর স্মরণে স্মারক গ্রন্থ পাঠ উন্মোচন করেন অতিথিরা।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তানের ভূত তাদের মাথা থেকে যায়নি”মোজাম্মেল হক

আপডেট সময় ০২:১১:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ অক্টোবর ২০২২

বিএনপি নেতাদের মাথা থেকে এখনও ‘পাকিস্তানের ভুত’ যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য বলেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া মিলে ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। আর আমরা ২২ বছর। ২৯ বছরে তারা দেশের কোনো উন্নতি করেননি। কারণ তারা চাননি দেশ স্বাধীন হোক। তারা চেয়েছিলেন বাংলাদেশও পাকিস্তানের মত ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র হোক। গত কয়েক দিনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুইবার বলেছেন, এর চেয়ে পাকিস্তান ভাল ছিল। কোন দিক দিয়ে ভালো ছিল?

তিনি বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের রোল মডেল। আর তারা বলে পাকিস্তান ভালো ছিল। আসলে পাকিস্তানের ভূত তাদের মাথা থেকে যায়নি। এসব মিথ্যাচার শুনলে আজও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, শহীদদের আত্মার অসম্মান হয়। তাদের মুখে শেখ ফরিদ, বগলে ইট। বাংলাদেশে থেকেও তারা দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেন না। এদের যাতে রাজনৈতিক কবর রচিত হয় সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরী নাগরিক শোকসভা কমিটির আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত করার দাবি জানানো হয়।  মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌকমান্ডো আবু মুছা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনের মায়া তুচ্ছ করে তিনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আবু মুছা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি অপারেশন জ্যাকপট, অপারেশন আউটার অ্যাংকর, অপারেশন অ্যাভলুজ ছাড়াও বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, নারায়ণগঞ্জের নিকটে জাতিসংঘের পণ্যবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে আজ জানতে হবে আমার মুক্তিযুদ্ধ কেন করেছিলাম। পাকিস্তান হয়েছিল বাঙালির ভোটে। অথচ আমাদের বাংলা ভাষার দাবিকেই তারা অস্বীকার করেছিল। তাই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ার পরও তারা আমাদের ক্ষমতা দেয়নি।

মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডোদের পরিচালিত অভিযানের গুরুত্ব তুলে ধরে মোজাম্মেল হক বলেন, তাদের গোপনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্টে উনারা একযোগে ১১টি জাহাজ উড়িয়ে দেন। এই প্রথম পাকিস্তান বিশ্বের কাছে স্বীকার করতে বাধ্য হয় মুক্তিযুদ্ধ চলছে। এর আগ পর্যন্ত তারা মিথ্যাচার করছিল। নৌকমান্ডোদের অভিযানের পর আর বিশ্বের কাছে মিথ্যাচার করতে পারেনি।

সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, রাজধানী হওয়া উচিত ছিল ঢাকায় হলো পশ্চিম পাকিস্তানে। কিছুই হলো না পূর্ব পাকিস্তানে। এমনকি ভাষাকেও চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলো। এ কারণে ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু। নতুন প্রজন্মের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানেন না। মুক্তিযোদ্ধাদের কত ত্যাগ আর অবদান। মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন উৎসর্গ করতে ছুটে গিয়েছিলেন আবু মুছা চৌধুরী। দেখতে হবে সত্যিকার অর্থে কারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে যে গণহত্যা তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আজও মেলেনি। বাংলাদেশকে প্রথম স্বাধীনতা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

সুলতানা কাজীর সঞ্চালনায় সভায় প্রয়াত আবু মুছা চৌধুরীর সহধর্মিণী মরিয়ম আক্তার বলেন, উনি জীবদ্দশায় কিছুই চাননি। জাতি যেন উনাকে মনে রাখে সে ব্যবস্থা করে দেবেন এই অনুরোধ। উনার মৃত্যুতে শোক জানানোয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। সভায় প্রধান বক্তা নৌকমান্ডো অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অনিল বরণ রায় বলেন, পাকিস্তানিরা স্বীকারই করছিল না এখানে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু নৌকমান্ডোদের অপারেশনের কারণে তাদের স্বীকার করতে হয়। সারাবিশ্বে জানতে পারে এখানে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। আবু মুছা চৌধুরী খুব সাহসী যোদ্ধা ছিলেন।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, শোক সভা কমিটির সদস্য সচিব বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী বক্তব্য রাখেন। সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুছা চৌধুরীর স্মরণে স্মারক গ্রন্থ পাঠ উন্মোচন করেন অতিথিরা।