উত্তরা- তুরাগে অনুমোদনহীন ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরির পানি বাজার সয়লাব উত্তরা (ঢাকা)- রাজধানীর উত্তরা ও তুরাগে নাম মাত্র ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে দেদাচেছ বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন ড্রিংকিং ওয়াটার নামক (পানি) ফ্যাক্টরি। এক্ষেত্রে ফ্যাক্টরি (পানি কারখানা) পরিচালনায় মানা হচ্ছে না কোনো রকমের বিধিমালা।
অনুমোদনহীন এসব ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরির পানি এখন উত্তরা ও তুরাগ এলাকার বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। জানা গেছে, ফ্যাক্টরি পরিচালনা করতে সাইন্স ল্যাবরেটরি, আইসিডিডিআর, বিএসটিআই এর অনুমোদনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের প্রিমিসেস সার্টিফিকেট, শ্রমিকদের শারীরিক সুস্থতা সনদ, পরিবেশের ছাড়পত্র ও কল-কারখানার সনদ। তুরাগের এসব ফ্যাক্টরি গুলোতে নেই এর একটিও। নেই ফ্যাক্টরি গুলোর নিজস্ব ল্যাব বা ক্যামিস্ট।
এসব বিধি বিধান অমান্য করে রাজধানীর উত্তরা ও তুরাগে অবাধে বিক্রি করছে বোতলজাত পানি। আর এসব প্রতিষ্ঠান গুলো হলো এস টি ড্রিংকিং ওয়াটার, নিউ জমজম ড্রিংকিং ওয়াটার, সামুরাই ড্রিংকিং ওয়াটারসহ ৫/৬ টি পানি ফ্যাক্টরি। পরিচালিত এসব ফ্যাক্টরি গুলোর পানি কতটা নিরাপদ এখন সে প্রশ্ন জনমনে। অবৈধভাবে পরিচালিত এসব পানি ফ্যাক্টরি গুলোতে প্রশাসনিক নজরদারি না থাকায় রাজধানী জুড়ে সয়লাব এখন অনুমোদনহীন জার জাতীয় বোতলজাত পানি। বিএসটিআইয়ের অভিযান না থাকায় এসব কোম্পানী দিন দিন বেড়েই চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফ্যাক্টরির মালিকগন ব্যবসায়ীদের এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পৌছানো বাবদ যার প্রতি মূল্য নেয় ৪০ টাকা হারে । কিন্তু বর্তমানে ডিলার দ্বারা ব্যবসা করতে হচ্ছে বলে যানায় ব্যবসায়ীরা। কিছু নেতারা দলের ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের নিকট জোড় পূর্বক ৮/১০ টাকা দরে পানি নামিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এতে প্রতিদিন অনেক ক্ষতি হচ্ছে তাদের। ক্রেতারা জানান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন হয় খাবার পানি। যা বাসা-বাড়ি থেকে এনে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।
এছাড়াও বাইরে থেকে টিউবওয়েলের পানি বারবার আনা কষ্টকর। এ কারণে আর বিশুদ্ধ পানি ভেবে বোতলজাত পানিগুলো রাখছেন তারা। তবে,ক্রয়কৃত বোতলজাত এই পানি গুলো স্বাস্থ্যর জন্য কতটা নিরাপদ সেটি জানেন না তারা। উত্তরায় পানির বোতল সরবরাহকালে এস টি ট্রেডিং ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরির একজন কর্মী জানান, মাসে তাদের ফ্যাক্টরির পানি যায় প্রায় ৫৭ হাজার বোতল। যার মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকাও বেশি।
এসব পানির ফ্যাক্টরি গুলোতে রাতের আধাঁরে পানি বোতল জাত এবং বাজার জাত করতে দেখা যায়। আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাতবর কোন প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া অবাধে পানি বোতল জাত করছেন প্রতিষ্ঠান গুলো। সরাসরি কমপ্রেশার মেশিন দিয়ে পানি উঠিয়ে তা বোতল জাত করা হচ্ছে এবং সেসব পানি রাতের ভেলায় গাড়িতে উঠিয়ে মধ্যরাতে উত্তরা,তুরাগ এবং আশপাশের এলাকা গুলোতে সরবরাহ করছেন। রাত ১২ টার পর রাজধানীর অধিকাংশ দোকান বন্ধ থাকায় প্রতিটি সেক্টরে তাদের ডিলার নিকট পৌছে দেয়া হয় পানি গুলো। পরে সকাল বেলায় ডিলার পৌছে দেয় প্রতিটি দোকান এবং বিভিন্ন প্রতিষ্টানে। এস টি ট্রেডিং পানি ফ্যাক্টেরী পাশে থাকা এক চা ব্যবসায়ী আব্দুল সাত্তার জানান, আমি যখন রাতে ১২ টায় দিকে দোকান বন্ধ করি তখন তারা ফ্যাক্টেরীর চালু করে রাতবর কাজ করে ভোরে কাজ শেষ করে বাড়ি যায়। দিনের ভেলায় ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকে বলেও জানান তিনি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক বছর যাবৎ বিএসটিআই, সাইন্স ল্যাবরেটরি, আইসিডিডিআর এর অনুমোদনসহ স্বাস্থ্য অধিদফতর বিভাগের প্রিমিসেস সার্টিফিকেট, শ্রমিকদের শারীরিক সুস্থতা সনদ, পরিবেশের ছাড়পত্র আর কল-কারখানার সনদ ছাড়াই পানি উৎপাদন আর বিপনণ কাজ চালিয়ে আসছে এস টি ড্রিংকিং ওয়াটার, নিউ জমজম ড্রিংকিং ওয়াটার, সামুরাই ড্রিংকিং ওয়াটার, বিশ্বাস ড্রিংকিং ওয়াটার, মাইন ড্রিংকিং ওয়াটার, মা ড্রিংকিং ওয়াটার, নামের মোট ছয়টি পানি ফ্যাক্টরি সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তবে, নিয়মনীতি মেনে চলাসহ লোকবল সংকটে বন্ধ হয়ে যায় একই সময় চালু হওয়া বিভিন্ন ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরি। কিন্তু প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে এবং কিছু নামধারী সাংবাদিকদের আতাত করে তুরাগ এলাকায় অনুমোদনহীন মোট ছয়টি পানি ফ্যাক্টরি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বন্ধ করে দেয়া একাধিক পানি ফ্যাক্টরির মালিক জানান, ফ্যাক্টরি চালাতে সাইন্স ল্যাবরেটরি, আইসিডিডিআর, বিএসটিআই এর অনুমোদনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের প্রিমিসেস সার্টিফিকেট, শ্রমিকদের শারীরিক সুস্থতা সনদ, পরিবেশের ছাড়পত্র ও কল-কারখানার সনদ প্রয়োজন কিন্তু বর্তমানে যেসকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে তুরাগ এলাকায় রয়েছে তার অনেকটাই তাদের নিকট নেই। একাধিক পানির কারখানার শ্রমিকরা জানান, রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার না থাকায় এ ধরণের বোতলজাত পানি সর্বোচ্চ তিনদিন ব্যবহার করা সম্ভব।
এছাড়াও জারের মুখ বেশিদিন খোলা থাকলে পানিতে মশা ডিম পারাসহ জন্ম নিতে পারে নানা ধরণের পোকা, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। পানিতে সৃষ্টি হতে পারে দুর্গন্ধ। কোন কাগজ না থাকায় কোন কোন ফ্যাক্টরি শুধু সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স দিয়েই এখনো উৎপাদন ও বিপনণ চালিয়ে আসছে। একটি বিশ্বস্হ তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বাউনিয়া সুলতান মার্কেট এলাকায় সামুরাই ড্রিংকিং ওয়াটার, বাদালদী মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় এস টি ট্রেটিং ড্রিংকিং ওয়াটার, দলিপাড়া এলাকা জমজম ড্রিংকিং ওয়াটার, তুরাগের দিয়াবাড়ি এলাকার বিশ্বাস ড্রিংকিং ওয়াটার, নলভোগ এলাকায় মাইন ড্রিংকিং ওয়াটার, মা ড্রিংকিং ওয়াটার নামের মোট ছয়টি পানি ফ্যাক্টরি।
এর মধ্যে এস টি ড্রিংকিং ওয়াটার পানি সাপ্লাই ফ্যাক্টরি শুধু ট্রেড লাইন্সেস আর শিল্প মন্ত্রণালয়ের ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রেশনের আবেদন ব্যতিত নেই অন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক আবেদন। কোন প্রাতিষ্ঠানিক কাগজ পত্র না থাকলেও বাজারে বোতলজাতের জার পানি সরবরাহে নেমেছে এস টি পানি ফ্যাক্টরি। উত্তরা ব্যাপী কয়েকটি গাড়িতে সরবরাহের মাধ্যমে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করেছে অবৈধভাবে পরিচালিত এস টি ড্রিংকিং ওয়াটার কোম্পানি। বিশ লিটার পানির প্রতিটি জার বোতল ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হলেও উত্তরা মোট ১০/১৫ জন ডিলারের নিকট বিক্রি করছেন ৮/১০ টাকা দরে।
বর্তমানে এস টি পানি কোম্পানির দৈনিক রাতে প্রায় ২ হাজার বোতল যার ভর্তি পানি বিক্রি করে আসছে বাজারের এসব পানির ক্ষতিকর দিক গুলো না জেনে প্রয়োজনের তাগিদে পানিগুলো ব্যবহার হচ্ছে রাজধানীর উত্তরা- তুরাগসহ সর্বত্র এলাকা জুড়ে। এসব পানি পান করে অনেকেই শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এবিষয়ে উত্তরা বিভাগের পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাঝে মধ্যে এসব লাইসেন্স বিহীন অবৈধ পানি কারখানা গুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) অভিযান চালায়। আমরা কোন অভিযোগ পেলে এবিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্হা নেয়া হবে।