বায়েজিদে প্রশাসনের সাথে চোর পুলিশ খেলা চলছে সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ ভ্রাম্যমান বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাথে। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারহাট লিংক রোডের চলাচলের পথ শেরশাহ বাংলাবাজারে চাঁদাবাজদের ইশারায় এখনো সড়কেই বসছে ভ্রাম্যমান বাজার। রাস্তাঘাট অধিকাংশই অবরুদ্ধ করে রেখেছে অত্র বাজার ও নিষিদ্ধ অটো রিক্সা তাতেই বিঘ্নতা সৃষ্টি ও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে হাজার হাজার সাধারণ দের চলাফেরার রাস্তা।
সূত্র জানায়, স্থানীয় চাঁদাবাজ আবু তাহের ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিশোর গ্যাং লিডার আলামিন ফকিরের ইশারায় প্রতিদিন পুলিশের নজরদারি উপেক্ষা করে সড়কে চাঁদা দেওয়ার বিনিময়ে বসছে আস্ত কাঁচাবাজার। মূলত অসহায় ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের কষ্টের টাকায় চাঁদা বসিয়ে দিয়েছে এই দুই সন্ত্রাসী তাদের অন্যতম সহযোগী পুলিশ মারা সহ একাধিক মামলার আসামি সোর্স আবুল। আবুলের কাজ হল কোন সময় বাজারে প্রশাসন আসবে তা নজরদারি রাখা উৎ পেতে থাকা সোর্স আবুল বর্তমানে কাঁচা বাজারের চাঁদাবাজ ও অটো রিক্সার লাইনম্যান, সোর্স আবুল হোসেন এর কাজ নিত্যদিনের কখন বাজারের আশেপাশে প্রশাসন আসবে তা খবর পৌছিয়ে দেয়। সাথে সাথে কাঁচাবাজারের চাঁদাবাজ ও টোকেন বাণিজ্য চাঁদাবাজদের কানে। ব্যবসায়ীরা জানায় টাকা না দিলেই মারধর করা হয় তাদের। সোর্স আবুল হোসেনের বাইয়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশের সাথে আছে গভীর সম্পর্ক, তাইতো প্রতিনিয়ত অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত ১১ জানুয়ারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাস্তায় দোকান বাজার বসানোর কারনে পুলিশ ৬ জনকে থানায় নিয়ে যায়। আবু তাহের ও আলামিন ফকির থানায় গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে এনে জন প্রতি ১০ হাজার টাকা দাবী করে। এতে পিয়াল সিকদার নামক এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে গুলসান আবাসিক এলাকায় আবু তাহেরের নেতৃত্ব অমানবিক নিষ্ঠুর ভাবে মারধর করে।
তারা আরো জানান, আবু তাহের ও আলামিন ফকির জড়িত থাকায় পিয়াল সিকদার থানায় গেলেও তার পক্ষ থেকে থানা পুলিশ কোন অভিযোগ বা মামলা নেয়নি। এর পর থেকেই পিয়াল সিকদারকে এই এলাকায় কম দেখা যায়।
বাংলা বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মতে, আবু তাহের ও আলামিন ফকিরের কাছে রাতের মধ্যে বাজারের টাকা পৌছালে পরদিন আর বাজার বসানো যায়না। তাই তারা বাধ্য হয়েই টাকা দেয়।
এর আগে এই বাজারের চাঁদাবাজি নিয়ে সংবাদ করায় আবু তাহের ও কিশোরগ্যাং লিডার আলামিন ফকির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যানার ধরিয়ে দিয়ে রাস্তায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একটি মানববন্ধন করায়। সেই মানববন্ধনে প্রতিবেদনকারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে জনসম্মুখে নানান কুরুচি পূর্ন ও মানহানি কর মন্তব্য করে চাঁদাবাজরা।
জানাযায়, হত্যা মামলার আসামী ও চিহ্নিত চাঁদাবাজ আবু তাহেরের নেতৃত্বে আধিপত্ত বিস্তার ও চাঁদা উত্তোলন নিয়ে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে দিনের পর দিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে এই এলাকায়। চাঁদা না দেওয়ায় খোদ আবু তাহের ও আলামিন ফকিরসহ তার বাহিনীর সদস্যরা প্রকাশ্যে গত ২০ ডিসেম্বর শেফালী বেগম ও ঝাড়ুদার বেলালকে হামলা ও মারধর করেন। পরবর্তীতে তারা থানায় গেলে অভিযোগ বা জিডি না নিয়েই ঘটনা তদন্তে এক এস আইকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী শেফালী বেগম ও ঝাড়ুদার বেলাল বলেন, তারা একাধিক বার থানায় গেলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা অভিযোগ করেন, একজন এস আই তাদের হুমকি দিয়ে বলেন, মামলা হলে দুইটি হবে, বাদি বিবাদী দুই পক্ষেরই বিরুদ্ধে মামলা হবে।
বায়েজিদ বাংলাবাজার মোড় সড়ক কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে সড়কটি নির্মাণ করা হলেও সেখানে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। পুরো সড়ক দখল করে বসানো হয়েছে ভ্যান গাড়ির ভাসমান অবৈধ বাজার। আর এ অবৈধ ভাসমান বাজার থেকে মাসে চাঁদা তোলা হয় সাড়ে চার লাখ টাকা। প্রতিটি ভ্যান বসানোর শুরুতে নেয়া হয় পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা। এছাড়া ভ্যানে সংযোগ দেয়া বিদ্যুতের বাল্বপ্রতি দৈনিক বিল নেয়া হয় ২০ টাকা। বাজারে ৫ শতাধিক বাল্ব রয়েছে। সেই হিসাবে মাসে ৩ লক্ষাধিক টাকার চাঁদা তোলা হয় বিদ্যুৎ খাতে। যার সাথে প্রত্যেক্ষও পরোক্ষভাবে জড়িত সন্ত্রাসী আবু তাহের সোর্স আবুল ও বাহিনীর সদস্যরা।
বছরের পর বছর ধরে বাংলাবাজার মোড়ে সড়ক দখল করে অবৈধ ভাসমান হকার বসিয়ে চাঁদাবাজি চললেও থানা পুলিশ কিংবা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব। সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দখলমুক্ত করতে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ বা বিশেষ দল মাঠে নামিয়েছে সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। গত মাসে বাজারটিতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও এরপর থেকেই চসিকের ‘স্ট্রাইকিং ফোর্সের’ পা পড়েনি বাংলাাবাজারে।
জানাযায়, ২০১৯ সালে বাংলাবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট অবৈধ বাজারটি উচ্ছেদে গেলে তাদের উপর এই আবু তাহের বাহিনী ও তার সহচর আলামিন ফকিরের কিশোরগ্যাং সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় ও পুলিশের সামনেই ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যার চেষ্টা করেন। এরপর থেকেই বাংলাবাজার নিয়ে যেন একপ্রকার আতঙ্ক বিরাজ করে খোদ প্রশাসনের ভেতর।
বাজারটিতে মূলত, বাংলাবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কল্যান সমবায় সমিতি সমিতি ও বাজারের ময়লা পরিষ্কারের উত্তোলিত টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো এলাকায়। সন্দীপের সাবেক বিএনপি নেতা আবু তাহের আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্য এর আগে ২০১২ সালে সন্দীপের স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবু হানিফ’কে প্রকাশ্য হত্যা করে গা-ঢাকা দিয়ে আশ্রয় নেয় বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায়। তথ্য মতে, সন্দীপ থেকে পালিয়ে আসার পর বায়েজিদ এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের সাথে মিশে তৈরী করে কিশোরগ্যাং ও চাঁদাবাজ সংগঠন। এছাড়াও অপরাধ অপকর্ম লুকিয়ে রাখতে এক সময়কার তুখোড় বিএনপি নেতা আবু তাহের বায়েজিদে এসে বনে যায় ক্ষমতাসীন দল যুবলীগের ত্যাগী নেতা। পেছন থেকে অপরাধের নেপথ্যে কাজ করার ফলে এক প্রকার চোখের আড়ালেই রয়ে যায় এই আবু তাহের। তবে জানাযায় এই পর্যন্ত হত্যা মামলাসহ মোট ৩টি মামলার আসামী তিনি।
এদিকে জান্নাত বেগম নামক এক ভুক্তভোগী মহিলা বলেন, ২০১৯ সালেরই ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বায়েজিদে প্রতিপক্ষের ছুরির আঘাতে খুন হয় রিপন। বুধবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে নিহত রিপনের ভাই মোহাম্মদ আজাদ বাদি হয়ে ২৮ জনের নামসহ ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। আবু তাহের নিহত রিপনের বন্ধু পরিচয়ে তার ভাইকে দিয়ে বেশকিছু অসহায় মানুষদের সেই মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। পরবর্তীতে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলে টাকা তোলে।
তিনি আরো জানান, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে আবু তাহের বন্ধুত্বের আড়ালে কৌশলে নিহত রিপনকে অন্ধকার ঘটনাস্থলে নিয়ে এসে সটকে পড়ে। পরে অন্ধকারের মধ্যে রিপনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। রিপনের হত্যারপর তার ভাইকে দিয়ে এই আবু তাহের রিপনই মামলা বাজি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।
তথ্যমতে, বাংলাবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কল্যান সমবায় সমিতি ও মানবাধিকার সংগঠনের পরিচয়ে আবু তাহের ও কিশোর গ্যাং লিডার আলামিন ফকিরের হয়ে কাজ করে জাবেদ, শফিক, মাছ ব্যাপারী সাদ্দাম, মোশারফ ওরপে মুরগী ওয়ালা মোশারফ, রেখা, মহিন ওরপে দরবেশ মহিন, অপু তালুকদার, হকার নুর হোসেন, মাছ ওয়ালা ডিপজলসহ আন্ডারগ্রাউন্ড সদস্যরা।
চাঁদা উত্তোলনের বিষয়ে বাজারটির ভ্রাম্যমান দোকানদের সাথে সরাসরি অস্বীকার করেন তারা৷ তবে সমিতিসহ বাজারের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য তাদের নিয়োগকৃত ঝাড়ুদারদের টাকা দেন বলে স্বীকার করেন।
এর আগে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজীসহ শেফালী বেগম ও ঝাড়ুদার বেলালের উপর হামলার বিষয়ে আবু তাহেরে মুঠো ফোনে প্রতিবেদক যোগাযোগ করলে, তিনি মহিলা ও ঝাড়ুদারকে মারধর করার কথা অকপটে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তারা রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করলে তাদের আমরা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের সাথে আমাদের এই ঘটনাটি ঘটে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৩ মে বায়েজিদ বাংলাবাজার এলাকায় সড়ক দখলমুক্ত ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় আবু তাহের ও কিশোর গ্যাং লিডার আলামিন ফকিরসসহ তাদের অনুসারীরা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আক্তারের জিপসহ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। সেই সময় বায়েজিদ বোস্তামী থানার এএসআই মুজিবুর রহমান, নায়েক নাছির, কনস্টেবল কায়েস ও রাজ্জাকসহ সাংবাদিকরাও আহত হন।