সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দীর্ঘ এই যুদ্ধের মাধ্যমে ইউক্রেনে দখল করা ভূখণ্ডগুলো হাতছাড়া হতেই সামরিক গতিবিধি বাড়ানের নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
দেশটিতে নতুন যে সামরিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তাতে জানানো হয়েছিল, যাদের সামরিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদেরও যুদ্ধে ডাকা হবে। এই পরিস্থিতিতে তরুণ ও যুবক রুশ নাগরিকদের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালানোর হিড়িক পড়েছে। এতে করে রুশ সীমান্তে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। এমনকি রুশ সীমান্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। যদিও তেমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য আংশিক সৈন্য সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার পর রাশিয়ায় কয়েকদিন ধরে বিশৃঙ্খল দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। তবে রাশিয়া ছেড়ে পালিয়ে যেতে চাওয়া সামরিক-বয়স্ক এসব পুরুষদের দেশত্যাগ বন্ধ করতে রাশিয়ার সীমানা সিল করা হবে কিনা সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।
সোমবার সীমান্ত বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’ ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রিজার্ভ সৈন্য তলবের বিষয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের ওই ঘোষণার পর থেকেই রাশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাশিয়ার আইন অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করা নিষিদ্ধ। এরপরও রাশিয়ার শহরগুলোজুড়ে বড় আকারের বিক্ষোভ করেন অনেকে। বিক্ষোভ সমাবেশ করার কারণে এক হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছিল রুশ কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া এড়াতে হাজার হাজার তরুণ দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। জর্জিয়া ও ফিনল্যান্ড সীমান্তে দেশত্যাগের জন্য দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মী, ব্যাংকার আর গণমাধ্যমকর্মীদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হবে না বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। আলজাজিরা বলছে, রাশিয়ার বাইরে যাওয়া যাবে এমন ফ্লাইটগুলোর টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে এবং সীমান্ত চেকপয়েন্টগুলোতে গাড়ির স্তূপ জমে গেছে। জর্জিয়ার যেতে একমাত্র সীমান্ত রাস্তায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে গাড়ির সারি রয়েছে। রাশিয়ার এই প্রতিবেশী দেশটি রুশ নাগরিকদের ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে দেয়।
জর্জিয়ার সীমান্ত ক্রসিংয়ে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডেভিড নামে এক রুশ নাগরিক বলেছেন, ‘আতঙ্ক। আমার পরিচিত সকলেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। আমরা সেই শাসন থেকে পালাচ্ছি যারা মানুষ হত্যা করে।’ এছাড়া কাজাখস্তান এবং মঙ্গোলিয়ার সীমান্ত ক্রসিংয়ের রাস্তায়ও গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে রুশ-অধিভুক্ত ক্রিমিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী সিনিয়র আইনপ্রণেতা সের্গেই সেকভ আরআইএ নভোস্তি নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে (সেনাসদস্য হিসেবে) নিয়োগের জন্য নির্ধারিত বয়সের প্রত্যেকেরই বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা উচিত।’
মেডুজা এবং নোভায়া গাজেটা ইউরোপ নামে রাশিয়ার দু’টি নির্বাসিত নিউজ সাইটও এ বিষয়ে সরব হয়েছে। রাশিয়ার অজ্ঞাত কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে উভয় সাইটই জানিয়েছে, পুরুষদের দেশের বাইরে চলে যাওয়া নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে রুশ কর্তৃপক্ষ।