তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ-বিদায়। মাত্র তিন অক্ষর। কিন্তু শব্দটির আপাদমস্তক বিষাদে ভরা। শব্দটা কানে আসতেই মনটা কেন যেন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। এমন কেন হয়?
কারণ এই যে,বিদায় হচ্ছে বিচ্ছেদ। আর প্রত্যেক বিচ্ছেদের মাঝেই নিহিত থাকে নীল কষ্ট। বিদায় জীবনে শুধু একবারই নয়, এক জীবনে মানুষকে সম্মুখীন হতে হয় একাধিক বিদায়ের। সে-ই যে জন্ম লগ্ন থেকে বিদায়ের সূচনা, তারপর জীবন পথের বাঁকে বাঁকে আরো কত বিদায় যে অনিবার্য হয়ে আসে…। মানবশিশু ভুমিষ্ট হয়েই কাঁদতে থাকে। কেন সে কাঁদে? সে তো কাঁদবেই। এতদিন মায়ের নাড়ির সঙ্গে তার যে বন্ধন ছিল সেটি যে আজ ছিন্ন হল।
এভাবে জীবনের পরতে পরতে ছিন্ন হয় আরো কত প্রিয় বন্ধন! শিক্ষাজীবনের সমাপ্তিতে সহপাঠী ও প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নেয়ার বিষয়টিও এমনি এক নিবিড় বন্ধন ছিন্ন হওয়া, যা খুব সহজে ভোলা যায় না। তবে এ বিদায়ের বেলায় কষ্টের মাঝেও এক রকম আনন্দ থাকতে পারে যদি সান্তনার সংকট না থাকে। এই সান্তনা শিক্ষাজীবনে সফলতার সান্ত্বনা। ( পক্ষান্তরে, যার সান্ত্বনার সংকট থাকে-অর্থাৎ বিদায়যাত্রী যদি পেছনে তাকিয়ে দেখে যে, ফলাফল ভালো নয়, ) ভালো করে পড়াশোনা করা হয়নি, সময়ের মূল্যায়ন করা হয়নি তাহলে তার কষ্টটা হয় সবচে বেশি, সবচে তীব্র।
এটি এমন এক সত্য, যা খুবই তিক্ত। মানবজীবনের সর্বশেষ যে বিদায় অবধারিত হয়ে আসে তার নাম মৃত্যু। মৃত্যু এমন এক বিদায়ের নাম, যার দিন-তারিখ কেউ বলতে পারে না। বলা সম্ভব নয়। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন … ‘কোনো মানুষ জানে না, সে আগামীকাল কী উপার্জন করবে এবং কোনো মানুষ জানে না, সে কোন স্থানে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ। তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত। ’-সূরা লোকমান ৩৪ শেষ বিদায় যেহেতু সবচেয়ে কষ্টের, সবচেয়ে বিষাদের তাই জীবনের অন্যান্য বিদায়ের সময় শেষ বিদায়ের কথা স্মরণ করতে হবে। যাতে তখন কোনোরূপ পরিতাপ নিজেকে দগ্ধ না করে অতীত জীবনের কর্মের জন্য। তাহলেই জীবনের খন্ড খন্ড বিদায়গুলো সার্থক হয়ে উঠবে নিশ্চয়।