গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে। আজ দেশের এ অবস্থার জন্য সরকার দায়ী। এই দুরবস্থার কারণ চার ভাগের তিন ভাগ সরকারের। সরকার দুর্নীতি করে দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা সৃষ্টি করেছে। এই দুরবস্থার থেকে উদ্ধার করতে হলে পেশাজীবীদের এক হওয়া উচিত।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে পেশাজীবী অধিকার পরিষদ আয়োজিত ‘গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পেশাজীবীদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড.রেজা কিবরিয়া বলেন, বর্তমান সরকার অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এই সরকার দেশটি শুধু বিক্রি করে দেয়নি, দেশের মানুষকেও বিক্রি করে দিয়েছে। সরকারের অনেকে বলে ইংল্যান্ডেরও অবস্থা ভালো নেই, আমার প্রশ্ন এটা কি গাইবান্ধার ইংল্যান্ড, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইংল্যান্ড, তারা কি বুঝাতে চাচ্ছে?
তিনি বলেন, সরকারের কৃতকর্ম সমাজের সবার কাছে তুলে ধরতে হবে। এতে পেশাজীবীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পরে। তারা সভা-সেমিনার, মানববন্ধন, সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসমক্ষে তুলে ধরে সরকারের দুষ্কর্ম ও সরকারবিরোধী মত সৃষ্টি করতে হবে। জনগণকে নিয়ে ‘সরকার হঠাও’ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এই দুর্নীতিবাজ সরকার থেকে দেশের অর্থনীতি উদ্ধার করতে হবে।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার মূল উদ্দেশ্য টাকা লুট করা। এর বাইরে সরকারের খুব বেশি মাথা ব্যথা নেই। দেশে স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি কি ক্ষতি করছে তারা এনিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। দেশের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক অবকাঠামো ধ্বংস করে তারা লুট করবে এতে তাদের কোনো সমস্যা নেই।
তিনি বলেন, ১৬ কোটি মানুষের বদ দোয়ার বোঝা কতদিন এ সরকার বইবে? ভবিষ্যতে এই সরকারকে সরানোর একটা সুযোগ আসবে। তাই আমাদের আন্দোলনমুখী থাকতে হবে। দেশের মানুষ যে কষ্টে আছে এবং কি কারণে কষ্টে আছে সেটা আমাদের পরিষ্কার করা দরকার। ৫১ বছরে সাধারণ কৃষক বা রিকশাচালকের স্বার্থে পেশাজীবী কিংবা বুদ্ধিজীবীরা রক্ষা করেননি। কিন্তু আমাদের দলের অঙ্গিকার আলাদা। আমরা সর্বস্তরের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি করছি।
তিনি আরও বলেন, দেশে এমন অনেক লোক আছে যারা এই সরকারের অধীনে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে তারা বিদেশে চলে গেছে। অনেক পেশাজীবী, সাহসী ও বুদ্ধিমান লোক দেশে থাকত যদি এই ৫১ বছরে আমরা সেই পরিবেশ তৈরি করতাম। ওই মানুষগুলোর সদ্ব্যবহার করার জন্য আমাদের সমাজ যদি সেভাবে তৈরি হতো তাহলে এরা থাকতো দেশে। কিছু লোক ফেরত আসবে দেশে, ১০০ ভাগ আসবে না। যারা ফেরত আসতে চায় আমরা তাদের সুযোগ দেব।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যারা জবাবদিহি করার মালিক, তাদেরই বেশিরভাগ অন্যভাবে নির্বাচিত। নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। মানুষও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আমাদের এখন আরেকটা মুক্তিযুদ্ধে নামতে হবে। এই যুদ্ধ বুদ্ধির যুদ্ধ, কলমের যুদ্ধ, রাজপথে গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দেওয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে জয়ী হয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই সকল পেশাজীবীকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, আজ দেশে গণতন্ত্র নেই, একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এই সরকার পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব দিয়েছে জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার হরণকারী একজন পুলিশ অফিসারকে। এখন সময় এসেছে, গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য। সকল পেশাজীবী এক হয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজে এর সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, কবি আবদুল হাই, ড. দিলারা চৌধুরী, অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, রাশেদ খান, ফারুক হাসান প্রমুখ।