মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (আ.) শাহাদত বার্ষিকীকে আরবিতে বলা হয় আরবাইন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর একটি হলো এই আরবাইন, যাতে অংশ নেন লাখ লাখ শিয়া মুসলমান।
এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কয়েকদিন হেঁটে ইরাকের কারবালায় পৌঁছেছেন ইরফান গাংজি নামে এক পাকিস্তানি, যিনি বর্তমানে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। সোমবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদের ১৮০ কিলোমিটার দূরের শহর নাজাফ থেকে যাত্রা শুরু করে প্রায় ৮০ কিলোমিটার হেঁটে বৃহস্পতিবার কারবালায় পৌঁছান ইরফান। এই কারবালাতেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন ইমাম হোসাইন।
আরবাইনের মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে শুক্রবার সন্ধ্যায় আর শেষ হবে শনিবার সন্ধ্যায়। প্রথমবার আরবাইনে যোগ দেওয়া ৩৫ বছর বয়সী ইরফান নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, এ অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ কঠিন। সবখানে জনসমুদ্র। হুইল চেয়ারে, ক্রাচে মানুষ ছিল আমাদের সাথে… নারী ও শিশুরাও ছিল।
৬১ হিজরীর ১০ই মুহাররম কারবালার যুদ্ধে ইমাম হোসাইনের মৃত্যুর স্মরণে আশুরার ৪০ দিন পর আরবাইন পালন করা হয়। ইমাম হোসাইনের মৃত্যুর এই দিনটি শিয়া ইসলামের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।
২০১৯ সালে আরবাইনে ইরান, লেবানন, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি শিয়া মুসলমান একত্রিত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
তবে আরবাইনের এ যাত্রা বেশ কঠিন হতে পারে। পাকিস্তানের করাচি থেকে আরবাইনে যোগ দিতে আসা ৩৫ বছর বয়সী নারী সারাহ মুশতাক বলেন, হাঁটার এক পর্যায়ে তার আর পা নড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। একপর্যায়ে রাস্তার পাশে তাকে বসেও পড়তে হয়। তবে তিনি এর সঙ্গে এ কথাও বলেন যে, শারীরিকভাবে এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক, কিন্তু মানসিকভাবে নিজেকে আগে কখনও একটা উজ্জীবিত মনে হয়নি।
দিনের বেলায় ৩৬ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরমে আরবাইনের যাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। গরম, মানুষের ভিড়, ক্লান্তি, পানিশূন্যতায় প্রায়ই মানুষের অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার খবর আসতে থাকে। আরবাইনে যোগ দেওয়া মানুষদের জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি বহু বিদেশিও খাবার, পানি এবং বিছানার মতো প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার জন্য রাস্তার পাশে বিশ্রামের স্থান, অস্থায়ী স্টল এবং ক্লিনিক স্থাপন করেন।
ইরফান বলেন, এই সেবার বিনিময়ে তারা কিছু চানও না। ২০২০ সালের মার্চে করোনা মহামারি শুরুর পর এবারই প্রথম কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা ছাড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে আরবাইন। গতবছর এতে অংশ নেওয়ার জন্য বিদেশিদের সংখ্যা ৪০ হাজারে সীমাবদ্ধ করেছিল ইরাক। ইরান থেকে ৩০ হাজার জনকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য এ বছরের আরবাইন আয়োজন নিয়ে উদ্বেগ ছিল। আগস্টের শেষের দিকে শিয়া গোষ্ঠীর সংঘর্ষে বাগদাদে ৩০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এর পর কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের ইরাক ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়। তবে এসবের কোনো কিছুই থামাতে পারেনি ইরফানকে।
তিনি বলেন, কখনও কখনও শুধু একটা টান থাকে। এই বছর মহরমের প্রথম ১০ দিনে আমি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম…আমি আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলি আর যাত্রা করি। ফ্লাইট বাতিল করার কথা কখনও আমার মাথায়ও আসেনি। একমাত্র আমাকে ঢুকতে দেওয়া না হলে আমার যাওয়া হতো না। সূত্র : আলজাজিরা।