• কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের বাইরেও উপস্থিত থাকবেন আমন্ত্রিত অতিথিরা
• আয়োজন সাধারণত দুদিনের হলেও এবারের আয়োজন একদিনের
• গঠন করা হয়েছে ১১টি উপ-কমিটি
• তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে নেতাদের ব্যস্ততা বাড়ছে
• সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২৪ ডিসেম্বর। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের এ সম্মেলনের আলাদা মাত্রা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
আওয়ামী লীগের সম্মেলন সাধারণত দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে এবারের সম্মেলন একদিনে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। এছাড়া অতীতের মতো জাঁকজমকপূর্ণও হবে না এবারের সম্মেলন। জাঁকজমকপূর্ণ না হলেও লোক সমাগমের বিষয়ে ছাড় দিতে নারাজ দলের হাইকমান্ড।
দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে কয়েক লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা যাচ্ছে সারা পৃথিবীতে, এই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সব ক্ষেত্রে সাশ্রয়ীভাবে চলার জন্য, সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। তার মানে এটা নয় যে, জাতীয় কাউন্সিল একেবারে সাদামাটা হবে, সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্মেলন উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। সারা দেশে এই সংগঠনের কোটি নেতাকর্মী আছে। সারা দেশের মানুষের ভাগ্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। সারা দেশের মানুষের আগ্রহ আছে আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে, সেই সম্মেলন একেবারে সাদামাটা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উৎসবমুখর পরিবেশে হবে, তবে আমরা সাশ্রয়ীভাবে এই সম্মেলনটা করব।’
গত ২৮ অক্টোবর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানেই আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়। সেই সভায় বেশ কয়েকটি বিষয় চূড়ান্ত হয়।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য মন্দার কথা চিন্তা করে জাতীয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতার ব্যয় কমানো হবে। আয়োজন হবে সাদামাটা। এবারের আয়োজনে থাকছে না জাঁকজমক। সকালে উদ্বোধন, বিকেলে কাউন্সিল অধিবেশন এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে আয়োজন।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে সব সময়ই এক ধরনের উৎসবের আমেজ থাকে। দলের কাউন্সিলররা জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দলের নতুন কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচন করেন। কিন্তু এবারের সম্মেলন এই ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম হবে।
কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, জাতীয় সম্মেলনে রেকর্ড সংখ্যক কাউন্সিলর-ডেলিগেটের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। তবে তুলনামূলক বিচারে খরচ কম করা হবে। তেমন একটা সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা কিংবা অন্য কোনো ধরনের বর্ণাঢ্য আয়োজনের ব্যবস্থা থাকবে না।
এরই মধ্যে সম্মেলন সফল করতে গঠন করা হয়েছে ১১টি উপ-কমিটি। প্রতিটি উপকমিটি একাধিক বৈঠক করেছে এবং নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের পূর্বে একই মঞ্চে গতকাল হয়েছে আওয়ামী লীগ পন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিব) সম্মেলন। আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। ঢাকা মহাগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন হবে ২ নভেম্বর, তারপরের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৮ ও ৯ নভেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলন, ১৫ নভেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলন একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে জাতীয় সম্মেলনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তৃণমূলের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নিজেদের বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরি করছেন। কোনো নেতা মারা গেলে তাদের নামও সংগ্রহ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। শুধু সাংগঠনিক রিপোর্ট নয়, জাতীয় সম্মেলনে ডেলিগেট ও কাউন্সিলর কার্ড নিয়েও কাজ করছেন তারা।
এবারের সম্মেলনে ডেলিগেট ও কাউন্সিলর ছাড়াও তৃণমূল থেকে আমন্ত্রণ করা হবে নেতাকর্মীদের। সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা পাবেন অতিথি কার্ড।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বৈশ্বিক যে সংকট, অর্থনৈতিক যে মন্দা সারা বিশ্ব মোকাবিলা করছে বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। সেই বিবেচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রথমে ঘোষণা দিয়েছেন যে, আমরা সাশ্রয়ীভাবে আওয়ামী লীগেরসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সম্মেলন করব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সাদামাটা উদ্যোগ থাকলেও সারা বাংলাদেশের জেলা, উপজেলার পর্যায় থেকে আমাদের নেতারা, কর্মী, সমর্থকরা কিন্তু এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করবে। আয়োজনটা সাদামাটা হলেও এর বিশালত্বের কোনো কমতি থাকবে না। সেখানে ব্যাপক সমর্থক, কর্মী, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর এবং ডেলিগেটরা আসবে। কাউন্সিলর এবং ডেলিগেটদের সংখ্যা সীমিত হলেও অতিথি হিসেবে নেতাকর্মীরা আসবে। সবাইকে স্বাগত জানাব। এটা একটা বিশাল উৎসবে পরিণত হবে।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, প্রতি জেলা থেকে কাউন্সিলর আর ডেলিগেট আসবে। সেক্ষেত্রে সাধারণ সমর্থক যদি কেউ আসে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। আওয়ামী লীগের সম্মেলন কেউ দেখতে এলে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। সেক্ষেত্রে সম্মেলন জনসমুদ্রে পরিণত হতে পারে। যারা আসবে তারা নেত্রীর বক্তব্য শোনার জন্য, নির্দেশনা শোনার জন্য আসবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হতে পারে।’
জানতে চাইলে কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে তাদের নিজের সম্মেলনের মতো ধারণ করে। তাই প্রতিবারই আমরা দাওয়াত কার্ড পাই। আমরা দাওয়াত কার্ড পেলেও উপস্থিত হবো, না পেলেও উপস্থিত হবো। বিশেষ করে আমি আমার সংগঠনের কথা বলতে পারি, অবশ্যই আমরা এই সম্মেলনে উপস্থিত হবো। আমাদের তো কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ নেই, ডেলিগেট কার্ড পেলে ডেলিগেট কার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ করব। যদি ডেলিগেট কার্ড না পেয়ে দাওয়াত কার্ড পাই তা নিয়ে অংশগ্রহণ করব। কোনো কার্ড না পেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে আমরা অংশগ্রহণ করব।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন এলেই সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসব বিরাজ করে। সেই সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকেন। সারা দেশের কাউন্সিলর, ডেলিগেট এবং সহযোগী সংগঠনসহ সব সংগঠনের নেতারা সম্মেলনে উপস্থিত থাকে। আমরা স্বেচ্ছাসেবক লীগ স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করি। আমাদের হাজার নেতাকর্মী সেদিন উপস্থিত থেকে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে। আমাদের সিনিয়র কাউন্সিলরদের বসার ব্যবস্থা করেন। আমাদের নেতাকর্মীরা এই সম্মেলনে সারা দেশ থেকে এসে উপস্থিত হবে।