জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নাগরিক সমাবেশে ফারুক হাসানের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার আসামিদের জামিনের নিন্দা জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, কেন এ হামলা? এ হামলার ইন্ধনদাতা কারা? শোনা যাচ্ছে, রাঘববোয়ালরা আসামিদের জামিন করাতে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করবে। তাই যদি হয়, তবে কিসের রাষ্ট্র সংস্কার, কিসের বিচারবিভাগের স্বাধীনতা? আমাদের স্পষ্ট কথা, দোষীদের ছাড় দেওয়া চলবে না।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে দুই শ্রেণির মানুষ আহত হয়েছেন। আন্দোলনের পক্ষে এবং আন্দোলন প্রতিরোধ করতে গিয়ে। গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধের শক্তি এখন আহত লীগে পরিণত হয়েছে। এরা কখনো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জিম্মি করছে, কখনো আহত লীগের মধ্য থেকে উপদেষ্টা দাবি করছে, কখনো সড়ক অবরোধ করছে। প্রকৃত আহতরা হাসপাতালের বিছানায়। আর অপরাধীরা বিভিন্ন জায়গা কুকর্ম করছে। যারা ফারুক হাসানের ওপর হামলা করেছে এরা হাসিনার পেতাত্মা। এদের কোনো ছাড় নেই, ক্ষমা নেই।
‘যদি এরা জামিন পায়, তবে ধরে নেব, এটা কোনো ছোটখাটো বিষয় না। বড় উদ্দেশ্য নিয়ে ফারুক হাসানের ওপর হামলা করা হয়েছে। কেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না, কীভাবে ওবায়দুল কাদের পালিয়ে গেল? শেখ পরিবারের একজনও কেন আটক হলো না? এখনো শহিদ পরিবার ক্ষতিপূরণ পেলো না, শহিদের তালিকা হলো না, কেন আহতরা সুচিকিৎসা পাচ্ছে না। এই কথা বললে আজকাল মাইর খেতে হচ্ছে। ২০২৪ এর কোনো যোদ্ধা অপরাধ করলেই কি ক্ষমা পাবে? তাহলে তো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ওবায়দুল নিষ্পাপ!’
সংবাদ সম্মেলন শেষে হতেই শোনা যায়, অপরাধীরা গ্রেফতারের ১১ ঘণ্টার মাথায় জামিন পেয়েছে। পরবর্তীতে অন্যান্য সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রাশেদ খাঁন বলেন, ফারুকের ওপর হামলার মামলায় গ্রেফতার আসামিরা জামিন পেয়েছে। অথচ ফারুক এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। ৩৭৯, ৩২৬, ৩০৭ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হলেও বিচারবিভাগের ওপর প্রভাব খাটিয়ে জামিন নিয়েছে। এখন প্রমাণিত হলো হামলায় রাঘববোয়ালদের সংশ্লিষ্টতা ও ইন্ধন ছিল। বিচারবিভাগ স্বাধীন হবে, এই রাষ্ট্রের পরিবর্তন এই সরকার করবে, এটা আমি আর বিশ্বাস করি না। রাষ্ট্র সংস্কারের নামে ক্ষমতার চেয়ারের স্বাদ নেওয়ার সময়সীমা এরা দীর্ঘায়িত করবে। এর বাইরে আর কোনো কিছু করতে পারবে না।
এ সময় হামলার শিকার গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমার ওপর যারা শহিদ মিনারে হামলা চালিয়েছে তারা কেউই আহত নন কিংবা শিক্ষার্থী নন, তারা পরিষ্কারভাবে সন্ত্রাসী। সরকার এই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতেও গড়িমসি করছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে যে, এই হামলাকারীদের সঙ্গে তাদের ভালো একটা কানেকশন আছে। তারা আমার কাছে লোক পাঠিয়েছিল আপস করার জন্য, কিন্তু আমি জানিয়েছি ভুলের ক্ষমা হয়, অপরাধের কোনো ক্ষমা হয় না। কিন্তু আমি হাসপাতালে বিছানায় কাতরাচ্ছি, এই অবস্থায় তারা জামিন পেয়ে গেল? এই কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা? এই রাষ্ট্রের আদৌও সংস্কার হবে?
গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন বলেন, ফারুক হাসানের ওপর হামলা এবং হামলাকারীদের জামিনের মধ্যে দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয় বিচার বিভাগ এখনো স্বাধীন হয়নি। প্রকাশ্যে দিবালোকে শহিদ মিনারে ফারুক হাসানের ওপর হামলা হয়েছে, সেই হামলার ভিডিও থাকার পরও আসামিদের জামিন দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থা ছিল আওয়ামী লীগ শাসনামলে। তাহলে আর কিসের সংস্কার হলো জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে?
‘আমাদের রক্তের মধ্যে দিয়ে আজকের এই জুলাই আগস্টের বিপ্লব হয়েছে, আর আজ আমাদের ফারুক হাসানের ওপর হামলা! এটা কোনোভাবেই গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না।
সংবাদ সম্মেলনের সময় গণঅভ্যুত্থানে আহত নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।