পাবনার ঈশ্বরদী ও পার্শ্ববর্তী নাটোর জেলার লালপুর এবং বনপাড়া উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত হয় পাটারি গুড়। বিশুদ্ধ ও ভেজাল মুক্ত পাটারির জন্য দেশব্যাপী এই এলাকার সুনাম থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় অবৈধ ও মানবদেহের ক্ষতিকর উপকরণ দিয়ে ভেজাল পাটারি গুড় তৈরী করছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। জেল ও জরিমানা করেও থামানো যাচ্ছে না তাদের এই অসৎ কর্মতৎপরতা, প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতাসাধারণ। সম্প্রতি বিভিন্ন মহলের অভিযোগের পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে কয়েকটি গুড় উৎপাদনকারী কারখানাকে জরিমানা ও গুড় তৈরীর উপকরণ জব্দ করা হলেও থামেনি ভেজাল গুড় উৎপাদন প্রক্রিয়া এমনটাই উঠে এসেছে অনুসন্ধানে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারত থেকে বিভিন্ন রকম বিষাক্ত ভেজাল গুড় মাত্র আশি টাকা কেজি কিনে এনে সাথে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল,চিনি ও রং দিয়ে পাটারি তৈরী করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। যা বাজারে দেড়শো থেকে দুইশত টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রয় করছে। অল্প দামে চকচকা মিষ্টি আগাম পাটারি পেয়ে অনেকেই আনন্দিত হলেও সেগুলো খেয়ে ক্যান্সার সহ নানারকম অসুখে ভুগছে।
জানা যায়, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খেঁজুর বাগানেই অস্থায়ী ছাউনি ও চুলা বসিয়ে রাতের বেলাতেই গাছ থেকে রস নামিয়ে পুরোনো পচা লালীগুড়, চিনি, হাইড্রোজ, চুন, সোডা, সরিষা তেলসহ নানারকম কেমিক্যাল মিশিয়ে আকর্ষনীয় পাটারি বানিয়ে বিক্রয় করছে দুইশ থেকে তিনশ টাকা কেজি দরে। যা খেয়ে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীরা আরও ভয়াবহ অসুখে ভুগছে। সেইসাথে খাটি খেঁজুর রসের পাটারি গুড়ের স্বাদ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা।
এছাড়াও বিশুদ্ধ খেঁজুর রস ভোক্তাদের কাছে পৌছে দিতে তেমন কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় নি। গাছের সাথে কোন নেট বা বাঁশের চাটাই না থাকায় বাদুড়,পাখি, সাপ ও পোকামাকড়ের দ্বারা রসে ক্ষতিকর জীবানু ছড়ানোর আশংকা বিদ্যামান যা মানুষের মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।
লালপুর ও বনপাড়া বাজারের চিনি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শীতের এই মওসুমে পাটারি গুড় তৈরি কারখানায় টন টন চিনি বিক্রয় হয়ে থাকে।
সচেতন মহলের দাবি প্রশাসনের তৎপরতা, গুড় উৎপাদন কারখানার মালিক-শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কারখানা মালিকদের সচেতন করে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ভেজালমুক্ত খেঁজুর গুড়ের পাটারি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, শীতের প্রকোপ, ভোরের কুয়াশা আর শীতল বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উত্তরাঞ্চলে শুরু হয়েছে পিঠা খাওয়ার ধুম।