উন্নয়নবঞ্চিত উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন পুনর্বহাল সাড়ে তিন লাখ মানুষের প্রাণের দাবি। অবহেলিত এ উপকূলীয় অঞ্চলকে উন্নয়নের রোল মডেল গড়ে তুলতে আসন বিন্যাসের বিকল্প নেই। অন্তবর্তী সরকারের কাছে দ্রুত এ আসনটি পুনর্বহালের দাবি উন্নয়নবঞ্চিত আমতলী-তালতলীর মানুষের।
আগামী ১৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে ওই পত্রের আলোকে তথ্যাদি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
২০০৮ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের গেজেটে উল্লেখ আছে- ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক সুবিধার বিবেচনায় বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন বিলুপ্তির কোনো যুক্তি নেই; কিন্তু সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন ওই গেজেট অনুসরণ না করে বরগুনা-৩ আসন বিলুপ্তি করেছে। প্রমত্তা পায়রা ও বিশখালী দুটি নদী ঘিরে রেখেছে বরগুনার জেলার সংসদীয় আসন।
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় জেলার নাম বরগুনা। ১৯৮৪ সালে আমতলী, বরগুনা সদর, বামনা, পাথরঘাটা ও বেতাগী নিয়ে বরগুনা জেলায় উন্নীত হয়। ২০১০ সালের ৬ মে আমতলী উপজেলা থেকে বিভক্ত হয়ে তালতলী উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। পায়রা নদীর পূর্ব পাড়ে আমতলী ও তালতলী উপজেলা।
স্বাধীনতার পর থেকে বরগুনা জেলায় তিনটি সংসদীয় আসন ছিল। তৎকালীন সরকার বাহাদুর প্রমত্তা পায়রা ও বিশখালী নদীর ওপর ভিত্তি করে বরগুনা জেলাকে তিনটি সংসদীয় আসনে বিভক্ত করেন।
বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলা নিয়ে বরগুনা-১ আসন, পাথরঘাটা ও বামনা নিয়ে বরগুনা-২ আসন এবং আমতলী ও তালতলী নিয়ে বরগুনা-৩ আসন।
সমবণ্টনের মাধ্যমে চলছিল তিনটি সংসদীয় আসনের উন্নয়ন। কিন্তু ২০০৮ সালে সেনা শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সরেজমিন পরিদর্শন না করেই আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে কাল্পনিকভাবে বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসনকে ভেঙে দুটি সংসদীয় আসনে বিন্যাস্ত করেন।
বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলা নিয়ে বরগুনা-১ আসন এবং পাথরঘাটা, বেতাগী ও বামনা উপজেলা নিয়ে বরগুনা-২ আসন। এতে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়ে পরে সর্ব দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলী উপজেলা।
আমতলী-তালতলী উপজেলা বাংলাদেশের দক্ষিণের শেষপ্রান্তের সাগর পাড়ের উপকূলীয় উপজেলা। বন্যা, জ্বলোচ্ছাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গেই যুদ্ধ করে উপকূলের মানুষের বেঁচে থাকতে হয়। এ জনপথের অবহেলিত মানুষের দুঃখ দুর্দশা বোঝার মতো জনপ্রতিনিধি নেই। তালতলী উপজেলায় রয়েছে আদিবাসী রাখাইন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস। এ উপজেলার উৎপাদিত তাঁতশিল্প তথা হস্ত শিল্প, মাছ ও ধান জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে; কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হয়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট গাজী মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক সুবিধার জন্য সাবেক বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন পুনর্বহাল খুবই প্রয়োজন।
বাংলাদেশ বিমানের সাবেক ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, সাবেক বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন বিলুপ্ত করায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনে আমতলী-তালতলী উপজেলার মানুষের গণস্বাক্ষরসহ আবেদন জমা দিয়েছি।
সাবেক বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ মল্লিক বলেন, আসন পুনর্বহালের প্রয়োজনীয়তা ভেবেই নির্বাচন কমিশনে ২০০৮ সাল থেকে আবেদন করে আসছি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রশাসনিক এলাকার সৃজন, বিয়োজন ও সংকোচনের তথ্যাদি চেয়ে নির্বাচন কমিশন চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠির আলোকে বরগুনার সংসদীয় এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যথাসময়ে তথ্যাদি পাঠানো হবে।