সব ধরনের ঋণ শ্রেণিকরণের ক্ষেত্রেই এই বিধান প্রযোজ্য হবে, বর্তমানে ঋণ ভেদে ৩ মাস বা ৬ মাস পর ঋণখেলাপি হচ্ছে, ৩ মাস কমানোর ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা
এ বিষয়ে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। নতুন এ নির্দেশনা আগামী বছরের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা নিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আপত্তি করে আসছে। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে কোনো ঋণ পরিশোধের দিন থেকে ৩ মাসের মধ্যে শোধ করা না হলে তাকে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু গত সরকারের সময়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখাতে বাংলাদেশে এটি ৬ মাস করা হয়েছে। মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে ৯ মাস করা হয়েছিল। পরে আইএমএফের আপত্তির কারণে কিছু ঋণের ক্ষেত্রে ৩ মাস করা হলেও কৃষি ও মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ৬ মাস করা হয়। যা এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছে।
এদিকে ৪ ডিসেম্বর ঢাকায় আসছে আইএমএফের একটি মিশন। ওই মিশন এবার খেলাপি ঋণ নিয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে। কারণ আইএমএফের ঋণের শর্ত ছিল খেলাপি ঋণ কমানো। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণ না কমে বরং আরও বেড়েছে। আইএমএফের ঋণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা। তাদের ওই শর্ত বাস্তবায়ন করতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার মাধ্যমে আরও কঠোর করল। তবে খেলাপি ঋণের বিভিন্ন ধাপে ৩ মাস ছাড় দেওয়া হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, চলমান ঋণ, কৃষি ঋণ, মেয়াদি ঋণসহ সব ধরনের ঋণ বা ঋণের কিস্তি ১ এপ্রিল থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধিত না হলে পরদিন থেকেই তা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে গণ্য হবে। নতুন সংজ্ঞায় মেয়াদোত্তীর্ণের তিনটি ধাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। আগে ছিল একটি ধাপ। ঋণটি যাতে চূড়ান্তভাবে খেলাপি না হয় সেজন্য ব্যাংকগুলোকে তদারকি বাড়াতে এইসব ধাপ বাড়ানো হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার প্রথম ধাপ হবে পরিশোধের নির্ধারিত দিনের পর দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ হবে ১ মাসের বেশি থেকে ২ মাস পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ ঋণটি বিশেষ হিসাবে স্থানান্তর হয়ে যাবে। অর্থাৎ ঋণটি খেলাপি হওয়ার আগের ধাপে চলে গেল। কিস্তি পরিশোধের নির্ধারিত দিন থেকে ২ মাসের বেশি থেকে ৩ মাস পর্যন্ত বিশেষ হিসাবে থাকবে। এর মধ্যে ঋণ পরিশোধিত বা নবায়ন না হলে ৩ মাসের পর থেকে তা খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হবে। খেলাপি ঋণের তিনটি ধাপ রয়েছে। খেলাপি হওয়ার পর ৩ মাস থেকে ৬ মাস পর্যন্ত নিম্নমান, ৬ মাস থেকে ১২ মাস পর্যন্ত সন্দেহজনক এবং ১২ মাসের বেশি সময় খেলাপি থাকলে তা মন্দ ঋণ বা আদায় অযোগ্য ঋণ হিসাবে চিহ্নিত হবে।
খেলাপি হওয়ার পর প্রথমে ঋণ বা ঋণের অংশ বিশেষ নিম্নমানের হিসাবে শ্রেণিকৃত হবে। ৩ মাস থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ঋণটি পরিশোধিত বা নবায়ন করা না হলে নিম্নমান হিসাবে শ্রেণিকৃত থাকবে। ৬ মাসের বেশি থেকে ১২ মাস পর্যন্ত ঋণটি শ্রেণিকৃত থাকলে তা সন্দেহজনক ঋণ হিসাবে চিহ্নিত হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এ খাতে ৬ মাস থেকে ৯ মাস সময় থাকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ খাতে ৩ মাস ছাড় দিয়েছে। কোনো ঋণ ১২ মাসের বেশি শ্রেণিকৃত হিসাবে থাকলে তা মন্দ বা আদায় অযোগ্য ঋণ হিসাবে চিহ্নিত হবে।
সার্কুলারে কিছু ঋণের ক্ষেত্রে প্রভিশনের হারও বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের নিয়মিত ঋণের বিপরীতে এক শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হবে। আগে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ শতাংশ প্রভিশন রাখার বিধান ছিল। ফলে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন রাখার পরিমাণ বাড়বে। কোনো ঋণ বিশেষ হিসাবে চলে গেলে ওইসব ঋণের বিপরীতে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হবে। কোনো ঋণখেলাপি হলে প্রথম ধাপে বা নিম্নমান হিসাবে শ্রেণিকৃত থাকলে তার বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক হলে তার বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ হিসাবে শ্রেণিকৃত হলে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হবে।
কোনো ঋণ বা ঋণের অংশ বিশেষ খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হলে তার বিপরীতে আরোপিত সুদ হিসাব করে আলাদা একটি অ্যাকাউন্টে স্থগিত সুদ হিসাবে রাখতে হবে। এসব সুদ কোনোভাবেই আয় খাতে নেওয়া যাবে না।