বাতিল করা হচ্ছে সারা দেশে ৩০টি সাইলো নির্মাণ প্রকল্প। চার বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়ন অগ্রগতি নেই বললেই চলে। এখন নতুন করে সাইলোর সংখ্যা কমিয়ে প্রকল্পটি সংশোধনীর প্রস্তাব করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এতে সায় না দিয়ে প্রকল্পটি বাতিল করার পক্ষে সুপারিশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। শিগগিরই এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হবে।
এক্ষেত্রে বর্তমান আর্থিক সংকট এবং প্রকল্পের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করার কথা। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল খাদ্য অধিদপ্তরের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারিগরি সেবা বিভাগের পরিচালক (চ.দা.) মো. তাজল ইসলাম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, হ্যাঁ, প্রকল্পটি বাতিলের সুপারিশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে কী কারণে এটি বাতিল করা হচ্ছে, সেটি বলতে পারছি না। কেননা আমি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উপস্থিত ছিলাম না। এছাড়া বাতিলের কোনো চিঠিপত্রও এখনো হাতে পাইনি। প্রকল্পটি বাতিল হচ্ছে, সেটি শুধু শুনেছি। এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৮ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান শুকানো, সংরক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ আধুনিক ধানের সাইলো নির্মাণ’ (প্রথম ৩০টি সাইলো নির্মাণ পাইলট প্রকল্প) প্রকল্পটি। কিন্তু নানা কারণে এটি বাস্তবায়নে গতি ছিল না। প্রায় চার বছরের মধ্যে এর আওতায় খরচ হয়েছে ৯ কোটি টাকার মতো। এ অর্থে ডিজাইন, ড্রইংসহ অনান্য কার্যক্রম করা হয়েছে। পরে প্রকল্পটি সংশোধন করে সাইলো সংখ্যা কমিয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পের মাধ্যমে একেকটি সাইলো নির্মাণে অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধনী প্রস্তাবে প্রতিটি সাইলো নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০০ কোটি টাকা।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় বিষয়টি নজরে আসে পরিকল্পনা কমিশনের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এরপর সভায় উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ২৪ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রকল্প অনুমোদন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। আমরা বিচারবিশ্লেষণ করে দেখেছি প্রকল্পটির পেছনে এখন পর্যন্ত যে সমান্য অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, এতে এ অবস্থায় এটি বাতিল করা হলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না। এছাড়া যা খরচ হয়েছে, তা দিয়ে যে নকশা তৈরি বা অন্যান্য প্রাথমিক কার্যক্রম করা হয়েছে, সেগুলো পরবর্তী সময়ে কাজে লাগানো যাবে। তাই এটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, কীটনাশক ছাড়া দীর্ঘসময় ধান সংরক্ষণের প্রকল্প ছিল এটি। প্রকল্পটি গ্রহণের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের মাধ্যমে উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য দেওয়া, সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ১ দশমিক ৫০ লাখ টন ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির অভিযোজন, কীটনাশকবিহীন মজুতব্যবস্থার মাধ্যমে ২ থেকে ৩ বছর শস্যের পুষ্টিমান বজায় রাখা। আরও আছে, আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মজুত শস্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা এবং নিরাপদ ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম ছিল, ধান ঝাড়াই, বাছাই, শুকানো, আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রকব্যবস্থা ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ প্রতিটি ৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার ৩০টি ধানের সাইলো নির্মাণ করা। এছাড়া সাইলোতে ট্রাক ও বাল্ক ওজন যন্ত্র, কনভেয়িং, বাকেট এলিভেটর সিস্টেম সংযোজন করা, ৩০টি সাইলোর সিভিল ফাউন্ডেশন, মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ (প্রতিটি ১৮৫ দশমিক ৮৭ বর্গমিটার), ৩০টি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন স্থাপন (মোট ৩০টি) এবং ৩০টি কেন্দ্রে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ (প্রতিটিতে ৩৫৫ দশমিক ০৮ মিটার) করা।
প্রকল্পটি গ্রহণের সময় সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০টি ধানের সাইলো নির্মাণ করা হবে। সাইলোগুলো নির্মাণ হলে ৩ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ৫০ লাখ টন ধান সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। এসব সাইলো নির্মাণ করা হলে সারা বছর কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কৃষক সহজেই সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রয় করতে উৎসাহিত হবেন। উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।