সাবেক সচিব আকরামুজ্জামান নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব হয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ৯ স্বজনকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। নিয়োগপ্রাপ্ত শুধু ভাগ্নি জামাইয়ের বাড়ি নড়াইলে। বাকি আটজনের বাড়িই গোপালগঞ্জে বলে জানা গেছে। তবে তারা বিভিন্ন জায়গার ঠিকানা দিয়ে চাকরি নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের এমন ঘটনায় দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার।
নিয়ম অনুযায়ী, নিয়োগ বোর্ডে থাকা কোনো কর্মকর্তার স্বজন চাকরিপ্রত্যাশী হলে তাকে ওই নিয়োগ বোর্ড থেকে পদত্যাগ করতে হয়। কিন্তু সাবেক সচিব নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ছিলেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, সরকারি একজন কর্মকর্তার ৯ জন আত্মীয়স্বজনকে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন, এখানে যে স্বজনপ্রীতি হয়েছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, লাইজু খানমের বোন লিনা খানম ও ভাই মুশফিক উস শালেহীনও চাকরি করছেন ডিএসসিসিতে। চলতি বছরের ১২ মে রেজিস্ট্রেশন সহকারী (জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধীকরণ) পদে যোগদান করেছেন লিনা। আর কার্যসহকারী পদে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেছেন মুশফিক। আকরামুজ্জামানের আরেক ভাগ্নি হামিমা খানম প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মী পদে নিয়োগ পেয়েছেন চলতি বছরের ১৩ মে।
শুধু ভাগ্নে-ভাগ্নি নয়, আকরামুজ্জামানের প্রভাবে চাকরি পেয়েছেন তার ভাগ্নি জামাই মো. শাহীন মোল্ল্যা। তার বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কচুয়াডাঙ্গা গ্রামে। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক পদে ডিএসসিসির সচিবের দপ্তরে যোগদান করেছেন শাহীন।
সাবেক সচিব আকরামুজ্জামানের চার চাচাতো ভাইও নিয়োগ পেয়েছেন সিটি করপোরেশনে। ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রেন্ট অ্যাসিসটেন্ট পদে যোগদান করেছেন মারুফ হাওলাদার। ইপিআই সুপারভাইজার পদে চলতি বছরের ১৯ মে যোগদান করেছেন মো. শাকিল আহম্মেদ। ২০২২ সালের ২১ আগস্ট স্প্রেম্যান সুপারভাইজার পদে যোগদান করেছেন ছাব্বির আহমেদ।
পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক পদে গত ২ জুন যোগদান করেছেন সোহাগ হাওলাদার। এর মধ্যে তথ্য গোপন করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে একসঙ্গে সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন সোহাগ। তিনি গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ের অফিস সহায়ক পদেও কর্মরত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের মে মাসে শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর আকরামুজ্জামানকে প্রেষণে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব করা হয়। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি নগর ভবনে আসা বন্ধ করে দেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডে বদলি করা হয়েছে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, তাপস মেয়র থাকার সময় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন পদে কাকে নেওয়া হবে, সেটি তিনি নিজেই চূড়ান্ত করতেন। এরপর তার পছন্দের প্রার্থীদের তালিকা সিটি করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামানের কাছে দিতেন। সে অনুযায়ী নিয়োগের ব্যবস্থা করতেন তিনি। বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার খাতাও দেখতেন তিনি।
সাবেক মেয়রের কথা মতো নিয়োগের পুরো বিষয় তত্ত্বাবধান করতেন তিনি। মেয়রকে ম্যানেজ করেই আত্মীয়স্বজনকে চাকরি দিয়েছেন আকরামুজ্জামান। তার আত্মীয়স্বজনের কেউ কেউ লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই চাকরি পেয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।