সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশি স্থপতি মোহাম্মদ রেজওয়ান। তার নৌকা স্কুলটি বেশ সারা ফেলেছিল। এবার সেই সারা জাগানো কাজের স্বীকৃতি পেলেন রেজওয়ান।
নিঃস্বার্থ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ রেজওয়ানকে ‘মেডেল অফ অ্যাচিভমেন্টস’ ক্যাটাগরিতে ‘গ্লোবাল লাভ অফ লাইভস অ্যাওয়ার্ডস’-এর ২৭তম সংস্করণে পুরস্কৃত করা হয়েছে। যেই পুরস্কারটি জীবনের জন্য ‘নোবেল পুরস্কার’ হিসেবেও পরিচিত।
এই পুরস্কারটি ১৯৯৮ সাল থেকে দেওয়া হচ্ছে। যা তাইওয়ানের চৌ তা-কুয়ান সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক ফাউন্ডেশন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যেই পুরস্কারটি বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ সেবার স্বীকৃতি দেয়।
চীন প্রজাতন্ত্রের (তাইওয়ান) প্রেসিডেন্ট জনাব লাই চিং-তে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে রেজওয়ান এবং অন্যান্য পুরস্কার বিজয়ীদের সম্মানিত করেন। এ সময় ভাষণে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রেজওয়ান, একজন স্থপতি হিসেবে, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের জন্য একটি সমাধান তৈরি করেছেন যা বিশ্বকে উপকৃত করবে; তার ভাসমান স্কুল শিশুদের জন্য আশা তৈরি করে এবং শিক্ষার সুযোগের অ্যাক্সেস নিশ্চিত করে।’
প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে রেজওয়ান রাষ্ট্রপতি, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, সিটিকে ফাউন্ডেশনের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক এবং অন্যান্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন।
এ সময় রেজওয়ান বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের মতো তাইওয়ানের জনগণও স্থিতিস্থাপক এবং প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে তাদের সম্প্রদায়ও লড়াই করে। তাই, আমাদের ভাসমান স্কুলের জন্য তাইওয়ানের কাছ থেকে এই স্বীকৃতি পেয়ে আমি সম্মানিত। তারা চায় আমরা ফরমোসা (সুন্দর দ্বীপ) নদীতে একটি স্কুল নৌকা তৈরি করি। আমি আশা করি আমরা বাংলাদেশিরা বিশ্বব্যাপী আরও বেশি জীবনকে প্রভাবিত করার জন্য আরও জীবন-পরিবর্তনকারী উদ্ভাবন তৈরি করতে সক্ষম হব।’
১৬ সদস্যের জুরি বোর্ড সারা বিশ্ব থেকে মনোনীত ৩,৪৯৯ জন প্রার্থীর মধ্যে রেজওয়ানকে নির্বাচিত করেন। পরে তাকে নৌকা স্কুল উদ্ভাবন এবং বিশ্বব্যাপী ভাসমান শিক্ষা আন্দোলন শুরু করার জন্য স্বীকৃত দেওয়া হয়।
সিটিকে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চৌ চিন-হুয়া বলেন, ‘রেজওয়ানের উদ্ভাবন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার একটি কার্যকর পদ্ধতি এবং সত্যিকার অর্থেই তিনি বাংলাদেশের আর্থ হিরো। আমাদের পুরস্কার গত দুই দশকে পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং জলবায়ু অভিযোজনে তার অবদানের স্বীকৃতি দেয়।’
রেজওয়ান বাংলাদেশের নাটোরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার শৈশব কেটেছে নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার দশটি উপজেলায় বিস্তৃত একটি বিস্তীর্ণ জলাভূমি চলনবিলে। স্কুলের দিনগুলিতে, তিনি পানিবন্দি মানুষের সমস্যা-গ্রস্ত জীবন পর্যবেক্ষণ করেন এবং কিছু করার তাগিদ অনুভব করেছিলেন।
পরে তিনি তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে শিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। যা ২০০২ সালে, চলনবিলের বিস্তীর্ণ পানিতে প্রথমবারের মতো স্কুল বোট শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। পরে যা অনন্য এনজিওকেও অনুপ্রাণিত করে। রেজওয়ানের ‘স্কুল বোট’ ধারণাটি জাতিসংঘের তহবিল ও কর্মসূচি (ইউনিসেফ, ইউএনইপি এবং ইউএনডিপি) দ্বারা একটি উদ্ভাবন হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে।