ঢাকা ০৪:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জাজিরায় বালুর নিচে পুঁতে রাখা অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের অসাংবিধানিক নির্বাচন বাতিলের দাবি মিঠাপুকুরে শিক্ষকদের মানববন্ধন ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান রাজনৈতিক চাপে ধামাচাপা পড়েছে ফাইল গাজীপুর কাস্টমসের পিওন কাওসারের কোটি টাকার সম্পত্তি ক্ষমতার সান্নিধ্যে বিত্তবান সাবেক সচিব খাইরুল কুমিল্লায় হাসপাতাল দখলের অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে কেজি দরে বিআরটিসির বাস বিক্রি করে দিয়েছেন কর্মকর্তা দাউদকান্দি উপজেলা নবাগত ইউএন ও এসিল্যান্ড ভূমি ও পৌর প্রশাসক মো: জিয়াউর রহমান কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় ভোলায় আজকের পত্রিকার পাঠক বন্ধুর উদ্যোগে মাদক বিরোধী র‌্যালি,সেমিনার ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

কুমিল্লায় হাসপাতাল দখলের অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ নেতার চালু করা একটি বেসরকারি হাসপাতাল দখলের অভিযোগ উঠেছে আনোয়ার হোসেন ওরফে ছোট নয়ন নামের এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জেলার ‘নাঙ্গলকোট আল্ট্রা-মর্ডাণ হসপিটাল’টি দখল করা হয়। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন নয়ন নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব। এর আগে ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান ছিলেন নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সামছুদ্দিন কালু। সরকার পতনের পর গা ঢাকা দেন সামছুদ্দিন কালু।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও ২০১২ সালের ৭ মে ৪০ জন অংশীদার নিয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরে নাঙ্গলকোট আল্ট্রা-মর্ডাণ হসপিটাল নাম দিয়ে হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতি অংশীদার থেকে ১ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাসপাতালটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাবেক পৌর মেয়র সামছুদ্দিন কালু। হাসপাতালটির নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ যাবতীয় সকল কাগজপত্র ওই আওয়ামী লীগ নেতার নামে। বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন ওরফে ছোট নয়নের নাম ছিল না অংশীদারদের মধ্যে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা এক হয়ে সামছুদ্দিন কালুর রাজনৈতিক কার্যালয়, ব্যবসায়িক স্থাপনা এবং বসতবাড়িসহ বেশ কিছু জায়গায় ভাঙচুর চালান। এ সময় নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরে অবস্থিত নাঙ্গলকোট আল্ট্রা-মর্ডাণ হসপিটালে ভাঙচুর চালাতে গেলে তাতে বাধা দেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন নয়ন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে হাসপাতালটিতে আগুন ও ভাঙচুর থেকে রক্ষা করেন।

পরবর্তীতে গত ৯ আগস্ট জরুরি সভা ডাকেন হাসপাতালের পরিচালক ও অংশীদারেরা। সভায় সামছুদ্দিন কালুকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে আনোয়ার হোসেন নয়নকে চেয়ারম্যান করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা সামছুদ্দিন কালুর অনুসারীদের বাদ দিয়ে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। সভায় কালু বা তার অনুসারী কোনো অংশীদার বা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন অংশীদার বলেন, এভাবে হাসপাতাল দখল করার কোনো নজির নেই। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে তিনি (বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন নয়ন) হাসপাতালের চেয়ারম্যান হয়ে গেছেন। অথচ হাসপাতালের নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স সামছুদ্দিন কালুর নামে। চলতি বছরের ৮ জুলাই নাঙ্গলকোট পৌরসভা থেকে সামছুদ্দিন কালুর নামে হাসপাতালটির ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছিল বলে পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন নয়ন  বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আমি হাসপাতালের একজন অংশীদার ছিলাম। ২০১২ সালে সামছুদ্দিন কালু হাসপাতাল দখলে নিয়ে আমার অংশীদারিত্ব কেড়ে নেয়। গত ৫ তারিখ হাসপাতালটি পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। আমি আগুন দেওয়া তাদের ফিরিয়েছি। পরবর্তীতে আমি হাসপাতালের অংশীদারত্বের জন্য আবেদন করেছি। আমি এখনও নিশ্চিত নই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার সদস্য পদ ফিরিয়ে দেবে কি না। দখল বা জোর করে চেয়ারম্যান হওয়ার কিছু নেই। সেখানকার পরিচালকরা আমাকে জোর করেছে আমাকে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। সম্প্রতি আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তারা সেসব প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে সফল হতে পারবেন না, ইনশাআল্লাহ।

হাসপাতালটির পরিচালক মো. আলম  বলেন, একটি হাসপাতাল চালাতে হলে একজন সুদক্ষ মানুষের দরকার হয়। আগের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর আমরা নয়ন ভাইকে অনুরোধ করেছি যেন তিনি আমাদের সঙ্গে থাকেন। তিনি না থাকলে হাসপাতালটি পরিচালনা করতে বেগ পোহাতে হবে। অতীতে কিছু অংশীদার যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় অংশীদারিত্ব হারিয়েছেন, তারাই এখন নয়ন ভাইয়ের নামে এসব ভুল মেসেজ ছড়াচ্ছেন।

হাসপাতালটির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সামছুদ্দিন কালুকে কয়েকবার ফোন করা হলেও মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতা আনোয়ার হোসেন নয়নের এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত উপজেলা বিএনপির একটি অংশ। নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন বিএনপি নেতা  বলেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য করে দখলদারিত্বে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এমন কর্মকাণ্ড করলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের (বিএনপির) পার্থক্য থাকল কোথায়?

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

জাজিরায় বালুর নিচে পুঁতে রাখা অজ্ঞাত এক নারীর লাশ উদ্ধার

কুমিল্লায় হাসপাতাল দখলের অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

আপডেট সময় ০১:৪৬:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ নেতার চালু করা একটি বেসরকারি হাসপাতাল দখলের অভিযোগ উঠেছে আনোয়ার হোসেন ওরফে ছোট নয়ন নামের এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জেলার ‘নাঙ্গলকোট আল্ট্রা-মর্ডাণ হসপিটাল’টি দখল করা হয়। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন নয়ন নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব। এর আগে ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান ছিলেন নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সামছুদ্দিন কালু। সরকার পতনের পর গা ঢাকা দেন সামছুদ্দিন কালু।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও ২০১২ সালের ৭ মে ৪০ জন অংশীদার নিয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরে নাঙ্গলকোট আল্ট্রা-মর্ডাণ হসপিটাল নাম দিয়ে হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতি অংশীদার থেকে ১ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাসপাতালটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাবেক পৌর মেয়র সামছুদ্দিন কালু। হাসপাতালটির নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ যাবতীয় সকল কাগজপত্র ওই আওয়ামী লীগ নেতার নামে। বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন ওরফে ছোট নয়নের নাম ছিল না অংশীদারদের মধ্যে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা এক হয়ে সামছুদ্দিন কালুর রাজনৈতিক কার্যালয়, ব্যবসায়িক স্থাপনা এবং বসতবাড়িসহ বেশ কিছু জায়গায় ভাঙচুর চালান। এ সময় নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরে অবস্থিত নাঙ্গলকোট আল্ট্রা-মর্ডাণ হসপিটালে ভাঙচুর চালাতে গেলে তাতে বাধা দেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন নয়ন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে হাসপাতালটিতে আগুন ও ভাঙচুর থেকে রক্ষা করেন।

পরবর্তীতে গত ৯ আগস্ট জরুরি সভা ডাকেন হাসপাতালের পরিচালক ও অংশীদারেরা। সভায় সামছুদ্দিন কালুকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে আনোয়ার হোসেন নয়নকে চেয়ারম্যান করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা সামছুদ্দিন কালুর অনুসারীদের বাদ দিয়ে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। সভায় কালু বা তার অনুসারী কোনো অংশীদার বা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন অংশীদার বলেন, এভাবে হাসপাতাল দখল করার কোনো নজির নেই। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে তিনি (বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন নয়ন) হাসপাতালের চেয়ারম্যান হয়ে গেছেন। অথচ হাসপাতালের নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স সামছুদ্দিন কালুর নামে। চলতি বছরের ৮ জুলাই নাঙ্গলকোট পৌরসভা থেকে সামছুদ্দিন কালুর নামে হাসপাতালটির ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছিল বলে পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন নয়ন  বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আমি হাসপাতালের একজন অংশীদার ছিলাম। ২০১২ সালে সামছুদ্দিন কালু হাসপাতাল দখলে নিয়ে আমার অংশীদারিত্ব কেড়ে নেয়। গত ৫ তারিখ হাসপাতালটি পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। আমি আগুন দেওয়া তাদের ফিরিয়েছি। পরবর্তীতে আমি হাসপাতালের অংশীদারত্বের জন্য আবেদন করেছি। আমি এখনও নিশ্চিত নই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার সদস্য পদ ফিরিয়ে দেবে কি না। দখল বা জোর করে চেয়ারম্যান হওয়ার কিছু নেই। সেখানকার পরিচালকরা আমাকে জোর করেছে আমাকে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। সম্প্রতি আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তারা সেসব প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে সফল হতে পারবেন না, ইনশাআল্লাহ।

হাসপাতালটির পরিচালক মো. আলম  বলেন, একটি হাসপাতাল চালাতে হলে একজন সুদক্ষ মানুষের দরকার হয়। আগের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর আমরা নয়ন ভাইকে অনুরোধ করেছি যেন তিনি আমাদের সঙ্গে থাকেন। তিনি না থাকলে হাসপাতালটি পরিচালনা করতে বেগ পোহাতে হবে। অতীতে কিছু অংশীদার যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় অংশীদারিত্ব হারিয়েছেন, তারাই এখন নয়ন ভাইয়ের নামে এসব ভুল মেসেজ ছড়াচ্ছেন।

হাসপাতালটির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সামছুদ্দিন কালুকে কয়েকবার ফোন করা হলেও মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতা আনোয়ার হোসেন নয়নের এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত উপজেলা বিএনপির একটি অংশ। নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন বিএনপি নেতা  বলেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য করে দখলদারিত্বে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এমন কর্মকাণ্ড করলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের (বিএনপির) পার্থক্য থাকল কোথায়?