ঢাকা ০৮:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিটিভির সংবাদ বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারের প্রয়োজন নেই : নাহিদ শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‍্যাব ক্যাম্পের অভিযানে দু’কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার, আটক-১ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেই ভাসতে থাকে প্রথম শ্রেণীর জাজিরা পৌরসভা। চট্টগ্রামে সাবেক সাংসদ বাদলের কবরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে মুক্তি পাচ্ছে ‘রুম নম্বর ২০১১’ গণতন্ত্র ও বিএনপি সমান্তরাল : মির্জা ফখরুল আ.লীগ দেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল : তারেক রহমান

গাবতলী টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণে দরপত্র ‘কারসাজি’র চেষ্টা বিএনপির নেতা–কর্মীদের

রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল এক বছরের জন্য ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে শিডিউল (দরপত্র দলিল) বিক্রিও করেছে সংস্থাটি। কিন্তু নির্ধারিত দিনে তাঁদের কেউ শিডিউল জমা দেননি। শিডিউলের ছয়টি বিএনপি ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং একটি জাতীয় পার্টির নেতা কিনেছেন।

উত্তর সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, বিএনপির নেতারা আড়ালে একজোট হয়ে শিডিউল জমা দেননি। সরকারি দরের চেয়ে কম টাকায় ইজারা নিতে এটা তাঁদের কৌশলও হতে পারে।

কর্মকর্তাদের একজন বলেন, মূল্য সংযোজন কর (১৫ শতাংশ) ও আয়কর (১০ শতাংশ) মিলিয়ে এ টার্মিনালের মোট ইজারামূল্য হয় ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৭৮ হাজার ২১২ টাকা। অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। বিগত সরকারের সময়ে ইজারাদার জোরপূর্বক যেসব খাত থেকে টাকা আদায় করতেন, এমন অনেক খাত থেকে অর্থ আদায় আপাতত বন্ধ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব ও অন্তর্বর্তী সরকারের কারণে নানা দিক বিবেচনায় এখন টার্মিনালটির ইজারা নেওয়াকে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা লোকসান হিসেবে দেখছেন। এ অবস্থায় ইজারা ছাড়াই টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ নিতে কারসাজি করছেন তাঁরা।

এদিকে ইজারা না হওয়া পর্যন্ত টার্মিনাল থেকে খাস আদায়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। তবে কমিটির কার্যক্রম শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে গত ৫ আগস্টের পর টার্মিনালের বিভিন্ন খাত থেকে খাস আদায়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্ধারিত ইজারামূল্যের সঙ্গে মূল্য সংযোজন কর ও আয়কর এক করলে মোট ইজারামূল্য দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। টার্মিনালের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে এ টাকা এক বছরের মধ্যে আদায় করা অসম্ভব। সবকিছু বিশ্লেষণ করে তাঁরা শিডিউল জমা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

টার্মিনাল ইজারা দিতে ২০ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাতটি শিডিউল বিক্রি হয়। শিডিউল ক্রেতা বিএনপির নেতাদের মধ্যে দুজন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডিএনসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থী (২০১৯ নির্বাচন) সাইদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সোহেল রহমান।

এর বাইরে তিনটি শিডিউল সংগ্রহ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর শামীম পারভেজ। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক তিনি। এ তিন শিডিউলের দুটি কিনেছেন তাঁর দুটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাফনা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স ওবায়েদ জাহান ট্রেডার্সের নামে। একটি কিনেছেন শ্যালক সিফাত ইউনুস ওরফে লেনিনের নামে। সাত শিডিউলের বাকি দুটি কিনেছেন দারুস সালাম থানা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু সায়েম মণ্ডল ও জাতীয় পার্টির নেতা মাসুম খান।

এই দুই নেতা মূলত দারুস সালাম থানা বিএনপির আহ্বায়ক এস এ সিদ্দিকের (সাজু) প্রতিনিধি। সাজুর হয়েই তাঁরা দুজন শিডিউল সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। সাজু ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এস এ খালেকের ছেলে। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

এর বাইরে তিনটি শিডিউল সংগ্রহ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর শামীম পারভেজ। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক তিনি। এ তিন শিডিউলের দুটি কিনেছেন তাঁর দুটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাফনা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স ওবায়েদ জাহান ট্রেডার্সের নামে। একটি কিনেছেন শ্যালক সিফাত ইউনুস ওরফে লেনিনের নামে।

সাত শিডিউলের বাকি দুটি কিনেছেন দারুস সালাম থানা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু সায়েম মণ্ডল ও জাতীয় পার্টির নেতা মাসুম খান।

‘সাজু সাহেবের’ ফোন
শিডিউল কিনে জমা না দেওয়ার বিষয়ে কথা হয় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে। তাঁদের দাবি, ইজারামূল্য ও বর্তমানে টার্মিনাল থেকে দৈনিক সম্ভাব্য আয় বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে, ইজারা নিলে লোকসান হবে। জাতীয় পার্টির নেতার ভাষ্যমতে, নির্দিষ্ট সময়ে টাকা জোগাড় করতে না পারায় শিডিউল জমা দেওয়া হয়নি।

সাবেক কাউন্সিলর শামীম পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাজু সাহেব ফোন করে বললেন, “ভাই আসেন একটু বসি। বসার পরে বললেন, দেখেন, এভাবে যে ডাইকা নিবেন, নিলে কি আসলে কিছু থাকবে? আসলে তো কিছু থাকবে না।”’ শামীম আরও বলেন, ‘সাজু ভাই বললেন, “দেখেন তাহলে আমরা আরেকটু অপেক্ষা করি। সরকার ইজারামূল্য কিছুটা কমায় কি না। বারবার যদি শিডিউল জমা না হয়, তাহলে একটা পর্যায়ে সরকারি দর কমতেও পারে। আমাদেরই ডাকতে পারে। তাহলে আমরা আর এই রিস্ক (ঝুঁকি) না নিই। কেউই আর জমা দিল না।”’

সাজুর হয়ে তাঁর ‘রাজনৈতিক ছোট ভাই’ সোহেল রহমান ও সাইদুল ইসলাম শিডিউল কিনেছেন বলেও জানান তিনি।

সাজু সাহেব ফোন করে বললেন, “ভাই আসেন একটু বসি। বসার পরে বললেন, দেখেন, এভাবে যে ডাইকা নিবেন, নিলে কি আসলে কিছু থাকবে? আসলে তো কিছু থাকবে না।’’
সাবেক কাউন্সিলর শামীম পারভেজ
সাইদুল ইসলামের দাবি, সবকিছু হিসাব করে নির্ধারিত সরকারি দরে লোকসান হবে ভেবে তিনি আর দরপত্র জমা দেননি। একই দাবি বিএনপির নেতা আবু সায়েমের। তিনি বলেছেন, ‘যে রেটে এখন আছে, এই রেটে দরপত্র অংশ নিলে আমাদের লোকসান হবে।’

আর জাতীয় পার্টির মাসুম খান বলেন, ‘আমরা সাত-আটজন মিলে পার্টনার হয়েছিলাম। এর মধ্যে দুজন টাকা দিতে পারেননি। একদম শেষ সময়ে তাঁরা বিষয়টি জানিয়েছেন।’

টার্মিনালে সিটি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেই, খাস আদায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা
শিডিউল বিক্রি ও খাস আদায় প্রক্রিয়া নিয়ে উত্তর সিটির পরিবহন বিভাগ ও অঞ্চল-৪–এর (গাবতলী টার্মিনাল এ অঞ্চলের আওতাধীন) একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলেন  এই প্রতিবেদক। তাঁরা বলেছেন, খাস আদায়ে উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি করেছে। তবে টার্মিনালে সিটি করপোরেশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। খাস আদায়ের কাজ চালানোর মতো জনবলও নেই। এ সুযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীরাই আদায়ের কাজ করছেন। নিজেদের লাভ রেখে দিন শেষে করপোরেশনে প্রায় এক লাখ টাকা বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাবতলী টার্মিনাল বর্তমানে এস এ সিদ্দিকের নিয়ন্ত্রণে। তাঁর হয়ে খাস আদায়সহ যাবতীয় বিষয় দেখভাল করেন সাইদুল ইসলাম ও সোহেল রহমান। আর আদায় কার্যক্রম সরাসরি তদারক করেন নুরুল ইসলাম ওরফে লাল নামের একজন। তিনি পরিবহন মালিক সমিতির সদস্য।

জানতে চাইলে এস এ সিদ্দিক বলেন, ‘আমি এখানে কোনো স্টেকহোল্ডার (সুবিধাভোগী) না। আমি কেন তাঁদের বলব বা তাঁদের নিয়ে বসব? আমার সঙ্গে এ ধরনের কোনো মিটিং হয়নি। আমি কোনো শিডিউল কিনি নাই। যাঁদের নাম বলছেন, আমি তাঁদের চিনিই না।’

টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ করা বিষয়ে এস এ সিদ্দিক বলেন, ‘কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোনো মজুরি কিংবা পারিতোষিকের ভিত্তিতে আদায়ে সহযোগিতার কাজ করে থাকতে পারেন। যে লালের (নুরুল ইসলাম) কথা বলছেন, তিনি বিএনপির কেউ নন।’

সার্বিক বিষয়ে উত্তর সিটির পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ  বলেন, শিডিউল জমা দেওয়ার জন্য আরও তিনটি নির্ধারিত দিন বাকি আছে (প্রথম দফায় জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ৫ সেপ্টেম্বর)। এ সময়ে যদি কেউ জমা না দেন, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমানে খাস আদায়ের কাজ এলাকার লোকজনকে (বিএনপির নেতা-কর্মী) দিয়ে করানোর বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

গাবতলী টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণে দরপত্র ‘কারসাজি’র চেষ্টা বিএনপির নেতা–কর্মীদের

আপডেট সময় ০৬:৫৮:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল এক বছরের জন্য ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে শিডিউল (দরপত্র দলিল) বিক্রিও করেছে সংস্থাটি। কিন্তু নির্ধারিত দিনে তাঁদের কেউ শিডিউল জমা দেননি। শিডিউলের ছয়টি বিএনপি ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং একটি জাতীয় পার্টির নেতা কিনেছেন।

উত্তর সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, বিএনপির নেতারা আড়ালে একজোট হয়ে শিডিউল জমা দেননি। সরকারি দরের চেয়ে কম টাকায় ইজারা নিতে এটা তাঁদের কৌশলও হতে পারে।

কর্মকর্তাদের একজন বলেন, মূল্য সংযোজন কর (১৫ শতাংশ) ও আয়কর (১০ শতাংশ) মিলিয়ে এ টার্মিনালের মোট ইজারামূল্য হয় ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৭৮ হাজার ২১২ টাকা। অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। বিগত সরকারের সময়ে ইজারাদার জোরপূর্বক যেসব খাত থেকে টাকা আদায় করতেন, এমন অনেক খাত থেকে অর্থ আদায় আপাতত বন্ধ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব ও অন্তর্বর্তী সরকারের কারণে নানা দিক বিবেচনায় এখন টার্মিনালটির ইজারা নেওয়াকে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতারা লোকসান হিসেবে দেখছেন। এ অবস্থায় ইজারা ছাড়াই টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ নিতে কারসাজি করছেন তাঁরা।

এদিকে ইজারা না হওয়া পর্যন্ত টার্মিনাল থেকে খাস আদায়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। তবে কমিটির কার্যক্রম শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে গত ৫ আগস্টের পর টার্মিনালের বিভিন্ন খাত থেকে খাস আদায়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্ধারিত ইজারামূল্যের সঙ্গে মূল্য সংযোজন কর ও আয়কর এক করলে মোট ইজারামূল্য দাঁড়ায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। টার্মিনালের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে এ টাকা এক বছরের মধ্যে আদায় করা অসম্ভব। সবকিছু বিশ্লেষণ করে তাঁরা শিডিউল জমা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

টার্মিনাল ইজারা দিতে ২০ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাতটি শিডিউল বিক্রি হয়। শিডিউল ক্রেতা বিএনপির নেতাদের মধ্যে দুজন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডিএনসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থী (২০১৯ নির্বাচন) সাইদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সোহেল রহমান।

এর বাইরে তিনটি শিডিউল সংগ্রহ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর শামীম পারভেজ। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক তিনি। এ তিন শিডিউলের দুটি কিনেছেন তাঁর দুটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাফনা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স ওবায়েদ জাহান ট্রেডার্সের নামে। একটি কিনেছেন শ্যালক সিফাত ইউনুস ওরফে লেনিনের নামে। সাত শিডিউলের বাকি দুটি কিনেছেন দারুস সালাম থানা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু সায়েম মণ্ডল ও জাতীয় পার্টির নেতা মাসুম খান।

এই দুই নেতা মূলত দারুস সালাম থানা বিএনপির আহ্বায়ক এস এ সিদ্দিকের (সাজু) প্রতিনিধি। সাজুর হয়েই তাঁরা দুজন শিডিউল সংগ্রহ করেছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। সাজু ঢাকা-১৪ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এস এ খালেকের ছেলে। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

এর বাইরে তিনটি শিডিউল সংগ্রহ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর শামীম পারভেজ। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক তিনি। এ তিন শিডিউলের দুটি কিনেছেন তাঁর দুটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাফনা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স ওবায়েদ জাহান ট্রেডার্সের নামে। একটি কিনেছেন শ্যালক সিফাত ইউনুস ওরফে লেনিনের নামে।

সাত শিডিউলের বাকি দুটি কিনেছেন দারুস সালাম থানা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু সায়েম মণ্ডল ও জাতীয় পার্টির নেতা মাসুম খান।

‘সাজু সাহেবের’ ফোন
শিডিউল কিনে জমা না দেওয়ার বিষয়ে কথা হয় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে। তাঁদের দাবি, ইজারামূল্য ও বর্তমানে টার্মিনাল থেকে দৈনিক সম্ভাব্য আয় বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে, ইজারা নিলে লোকসান হবে। জাতীয় পার্টির নেতার ভাষ্যমতে, নির্দিষ্ট সময়ে টাকা জোগাড় করতে না পারায় শিডিউল জমা দেওয়া হয়নি।

সাবেক কাউন্সিলর শামীম পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাজু সাহেব ফোন করে বললেন, “ভাই আসেন একটু বসি। বসার পরে বললেন, দেখেন, এভাবে যে ডাইকা নিবেন, নিলে কি আসলে কিছু থাকবে? আসলে তো কিছু থাকবে না।”’ শামীম আরও বলেন, ‘সাজু ভাই বললেন, “দেখেন তাহলে আমরা আরেকটু অপেক্ষা করি। সরকার ইজারামূল্য কিছুটা কমায় কি না। বারবার যদি শিডিউল জমা না হয়, তাহলে একটা পর্যায়ে সরকারি দর কমতেও পারে। আমাদেরই ডাকতে পারে। তাহলে আমরা আর এই রিস্ক (ঝুঁকি) না নিই। কেউই আর জমা দিল না।”’

সাজুর হয়ে তাঁর ‘রাজনৈতিক ছোট ভাই’ সোহেল রহমান ও সাইদুল ইসলাম শিডিউল কিনেছেন বলেও জানান তিনি।

সাজু সাহেব ফোন করে বললেন, “ভাই আসেন একটু বসি। বসার পরে বললেন, দেখেন, এভাবে যে ডাইকা নিবেন, নিলে কি আসলে কিছু থাকবে? আসলে তো কিছু থাকবে না।’’
সাবেক কাউন্সিলর শামীম পারভেজ
সাইদুল ইসলামের দাবি, সবকিছু হিসাব করে নির্ধারিত সরকারি দরে লোকসান হবে ভেবে তিনি আর দরপত্র জমা দেননি। একই দাবি বিএনপির নেতা আবু সায়েমের। তিনি বলেছেন, ‘যে রেটে এখন আছে, এই রেটে দরপত্র অংশ নিলে আমাদের লোকসান হবে।’

আর জাতীয় পার্টির মাসুম খান বলেন, ‘আমরা সাত-আটজন মিলে পার্টনার হয়েছিলাম। এর মধ্যে দুজন টাকা দিতে পারেননি। একদম শেষ সময়ে তাঁরা বিষয়টি জানিয়েছেন।’

টার্মিনালে সিটি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেই, খাস আদায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা
শিডিউল বিক্রি ও খাস আদায় প্রক্রিয়া নিয়ে উত্তর সিটির পরিবহন বিভাগ ও অঞ্চল-৪–এর (গাবতলী টার্মিনাল এ অঞ্চলের আওতাধীন) একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলেন  এই প্রতিবেদক। তাঁরা বলেছেন, খাস আদায়ে উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি করেছে। তবে টার্মিনালে সিটি করপোরেশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। খাস আদায়ের কাজ চালানোর মতো জনবলও নেই। এ সুযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীরাই আদায়ের কাজ করছেন। নিজেদের লাভ রেখে দিন শেষে করপোরেশনে প্রায় এক লাখ টাকা বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাবতলী টার্মিনাল বর্তমানে এস এ সিদ্দিকের নিয়ন্ত্রণে। তাঁর হয়ে খাস আদায়সহ যাবতীয় বিষয় দেখভাল করেন সাইদুল ইসলাম ও সোহেল রহমান। আর আদায় কার্যক্রম সরাসরি তদারক করেন নুরুল ইসলাম ওরফে লাল নামের একজন। তিনি পরিবহন মালিক সমিতির সদস্য।

জানতে চাইলে এস এ সিদ্দিক বলেন, ‘আমি এখানে কোনো স্টেকহোল্ডার (সুবিধাভোগী) না। আমি কেন তাঁদের বলব বা তাঁদের নিয়ে বসব? আমার সঙ্গে এ ধরনের কোনো মিটিং হয়নি। আমি কোনো শিডিউল কিনি নাই। যাঁদের নাম বলছেন, আমি তাঁদের চিনিই না।’

টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ করা বিষয়ে এস এ সিদ্দিক বলেন, ‘কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোনো মজুরি কিংবা পারিতোষিকের ভিত্তিতে আদায়ে সহযোগিতার কাজ করে থাকতে পারেন। যে লালের (নুরুল ইসলাম) কথা বলছেন, তিনি বিএনপির কেউ নন।’

সার্বিক বিষয়ে উত্তর সিটির পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ  বলেন, শিডিউল জমা দেওয়ার জন্য আরও তিনটি নির্ধারিত দিন বাকি আছে (প্রথম দফায় জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ৫ সেপ্টেম্বর)। এ সময়ে যদি কেউ জমা না দেন, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমানে খাস আদায়ের কাজ এলাকার লোকজনকে (বিএনপির নেতা-কর্মী) দিয়ে করানোর বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।