ঢাকা ১১:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

‘সংস্কার নয়, দেশকে নতুন করে গঠন করতে হবে’

‘সংস্কার নয়, দেশকে নতুন করে গঠন করতে হবে। যেখানে সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন হবে। তাছাড়া দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তার মাধ্যমে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘গণঅভ্যুত্থান ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। সেমিনারের আয়োজন করে প্রতিবাদী নাগরিক সমাজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন- লেখক ও কলামিস্ট এবং রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার ফরহাদ মজহার, প্রফেসর ড. আমিনুল হক, বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ ফেডারেশন সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের (একাংশ) সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম প্রমুখ।

সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘জনগণের প্রধান একটি নাগরিক অধিকার হলো ভোটের অধিকার। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তার মাধ্যমে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংস্কার নয়, দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। তরুণ ছাত্রদের সঙ্গে গণঅভ্যুত্থানে বিএনপিও ছিল। এটা জনগণের অভ্যুত্থান, বিএনপি সেখানে আলাদা নয়। এ অভ্যুত্থানে সবার অবদান আছে।’

‘বিগত সরকারকে ফ্যাসিস্ট আখ্যায়িত করে’ তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর আমাদেরকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট। তার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ক্ষমতা ধরে রাখতে নিজের মতো করে সংবিধান করেছে, তা বাতিল করতে হবে। সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভারত যে খেলা খেলতে চেয়েছে, তা অনেক কষ্টে রুখে দেওয়া হয়েছে। এখন শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বন্দি বিনিময় চুক্তি তিনি করেছেন, তার আওতায় তিনিই পড়বেন।’

রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘এখনও ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ শুকায় নাই। কিন্তু বিভিন্ন দিক থেকে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সারা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদেরকে কেউ সম্প্রীতি শেখাতে আসবেন না।’

সেনাবাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কারও জীবন রক্ষা করা আপনাদের দায়িত্ব নয়, আপনাদের দায়িত্ব হলো দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।’

এদেশে কোনো জুলুম নির্যাতন চলবে না বলেও জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দায়িত্ব নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়ে ৮ দফা পরামর্শ দেন। এগুলো হলো- অনতিলিম্বে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় জীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। জুলাই-আগস্টে সংগঠিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া হত্যা, লুটপাটসহ সব ধরনের অপরাধের তদন্ত ও বিচার করতে হবে। বিচারহীনতার ও জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি জাতিকে সর্বদিক থেকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়ে একে সম্পূর্ণরূপে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে; সুতরাং সরকারকে এ বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে হবে।

হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে যেকোনো মূল্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। বিদ্যমান প্রশাসন কাঠামোতে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যতীত এ মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত করা বা পুরস্কৃত করা- উভয় বিষয়েই বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।

যেকোনো প্রকার বা যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক- দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে হবে। বিগত ষোল বছরের সীমাহীন দুর্নীতিই আজ বাংলাদেশকে নিঃস্ব রিক্ত করছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়াকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। গণতন্ত্রহীনতার অবাধ ও উলঙ্গ চর্চার প্রতিফলন ঘটেছে সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সুস্থ বিকাশ না ঘটলে এই গণবিপ্লবের সাফল্য অর্জিত হবে না। শিক্ষাব্যবস্থা বলতে বাংলাদেশে আজ কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিগত ফ্যাসিস্টরা শিক্ষা নামক বিষয়টাকে হত্যা করেছে। সুতরাং এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি একটি সর্বজনীন গণমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারবে ও জনমানুষের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে

‘সংস্কার নয়, দেশকে নতুন করে গঠন করতে হবে’

আপডেট সময় ০৫:৩১:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

‘সংস্কার নয়, দেশকে নতুন করে গঠন করতে হবে। যেখানে সব ধরনের বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন হবে। তাছাড়া দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তার মাধ্যমে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘গণঅভ্যুত্থান ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। সেমিনারের আয়োজন করে প্রতিবাদী নাগরিক সমাজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন- লেখক ও কলামিস্ট এবং রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকার ফরহাদ মজহার, প্রফেসর ড. আমিনুল হক, বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ ফেডারেশন সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের (একাংশ) সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম প্রমুখ।

সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘জনগণের প্রধান একটি নাগরিক অধিকার হলো ভোটের অধিকার। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তার মাধ্যমে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংস্কার নয়, দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। তরুণ ছাত্রদের সঙ্গে গণঅভ্যুত্থানে বিএনপিও ছিল। এটা জনগণের অভ্যুত্থান, বিএনপি সেখানে আলাদা নয়। এ অভ্যুত্থানে সবার অবদান আছে।’

‘বিগত সরকারকে ফ্যাসিস্ট আখ্যায়িত করে’ তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছর আমাদেরকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট। তার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ক্ষমতা ধরে রাখতে নিজের মতো করে সংবিধান করেছে, তা বাতিল করতে হবে। সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভারত যে খেলা খেলতে চেয়েছে, তা অনেক কষ্টে রুখে দেওয়া হয়েছে। এখন শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বন্দি বিনিময় চুক্তি তিনি করেছেন, তার আওতায় তিনিই পড়বেন।’

রুহুল আমিন গাজী বলেন, ‘এখনও ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ শুকায় নাই। কিন্তু বিভিন্ন দিক থেকে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সারা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদেরকে কেউ সম্প্রীতি শেখাতে আসবেন না।’

সেনাবাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কারও জীবন রক্ষা করা আপনাদের দায়িত্ব নয়, আপনাদের দায়িত্ব হলো দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।’

এদেশে কোনো জুলুম নির্যাতন চলবে না বলেও জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দায়িত্ব নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়ে ৮ দফা পরামর্শ দেন। এগুলো হলো- অনতিলিম্বে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় জীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। জুলাই-আগস্টে সংগঠিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া হত্যা, লুটপাটসহ সব ধরনের অপরাধের তদন্ত ও বিচার করতে হবে। বিচারহীনতার ও জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি জাতিকে সর্বদিক থেকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়ে একে সম্পূর্ণরূপে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে; সুতরাং সরকারকে এ বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে হবে।

হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে যেকোনো মূল্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। বিদ্যমান প্রশাসন কাঠামোতে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যতীত এ মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত করা বা পুরস্কৃত করা- উভয় বিষয়েই বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।

যেকোনো প্রকার বা যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক- দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে হবে। বিগত ষোল বছরের সীমাহীন দুর্নীতিই আজ বাংলাদেশকে নিঃস্ব রিক্ত করছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়াকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। গণতন্ত্রহীনতার অবাধ ও উলঙ্গ চর্চার প্রতিফলন ঘটেছে সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সুস্থ বিকাশ না ঘটলে এই গণবিপ্লবের সাফল্য অর্জিত হবে না। শিক্ষাব্যবস্থা বলতে বাংলাদেশে আজ কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিগত ফ্যাসিস্টরা শিক্ষা নামক বিষয়টাকে হত্যা করেছে। সুতরাং এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি একটি সর্বজনীন গণমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব সম্পাদন করতে পারবে ও জনমানুষের বহুদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।