ঢাকা ০৩:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

হাজার কোটি টাকার কান্ডে পিয়াসা-মিশু-দিলীপ সিন্ডিকেট

রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সাথে ছবি তুলে ক্ষমতার প্রভাব দেখান। বিতর্কিত মডেল পিয়াসা গ্রেপ্তার হলে দিলীপের সঙ্গে তার মাদক ও সোনার অবৈধ কারবারের তথ্য বের হয়ে আসছিলো। কিন্তু সিআইডির প্রভাবশালী এক কর্মকর্তার মাধ্যমে তা ধামাচাপা দেন তিনি। সিআইডি পিয়াসাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, গরুর পেটে ঢুকিয়ে আনা হিরা ও স্বর্ণ দিলীপের কাছে কম মুল্যে বিক্রি করত মিশু-পিয়াসা চক্র। যাতে সরকার বিপুল পরিমাণ কর থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। শুল্ক কর্মকর্তারা অনুসন্ধান চালালে তার শুল্ক ফাঁকির আরো অনেক তথ্য পাবে বলেও দিলীপের একসময়ের ঘনিষ্ঠজনরা দাবি করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ পাচারের মাধ্যমে দিলীপ কুমার আগারওয়াল কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি ও ১১টি বাড়ি করেছেন, কানাডা ও দুবাইয়েও তার আলীশান বাসভবন আছে বলে দুদকের কাছে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। ৪০ কোটি টাকা দিয়ে তিনি বেঙ্গল ব্যাংকেরও পরিচালক হয়েছেন। এসব টাকার উৎস নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে সরকারি সংস্থাগুলো কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

মডেল পিয়াসায় কি দুধে ধোয়া দিলীপ আগরওয়ালা?

বিতর্কিত মডেল পিয়াসা, তার দোসর মিশু সিন্ডিকেটে হঠাৎ করেই দিলীপ কুমার আগরওয়ালার নাম জড়িয়ে পড়েছে। গতকাল দেশের গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই জের ধরে দিলীপের নিজের জেলা চুয়াডাঙ্গাতেও কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় উল্লেখিত খবর, বিতর্কিত মডেলদের সঙ্গে একাধিক ছবি শেয়ার করাসহ নানা তীর্যক মন্তব্য প্রকাশ করছেন। প্রকাশিত সংবাদে যেমন তার মালিকানাধীন ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে অভিযান চালানোর দাবী রয়েছে, ঠিক তেমনি চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একাংশ তাকে দল থেকে বহিস্কারের দাবীও তুলেছেন
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, সরকার স্বীকৃত সিআইপি। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক, এফবিসিসিআই-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট। ব্যবসা, ব্যবসায়ী সংগঠনের পাশাপাশি তিনি ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিতর্কিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার সহযোগী ও বিজনেস পার্টনার মিশু হাসানকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশ ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। মঙ্গলবার রাতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় মিশুর এক সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়।
বিতর্কিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার গোপন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তার অন্যতম সহযোগী ও বিজনেস পার্টনার শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান (৩১) ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান (৩৯)। তাদের ফ্লাইট ছিল ভোররাতে। কিন্তু হয়নি শেষরক্ষা। আকাশপথে ফ্লাই করার আগেই তাদের আস্তানায় হানা দেয় এলিট ফোর্স র‌্যাব।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি অভিজাত ফেরারি গাড়ি, ১৩ হাজার ৩০০ পিস ইয়াবা, একটি অস্ত্র, ৬ রাউন্ড গুলি, ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় জাল রুপি, সিসার কাঁচামাল জব্দ করা হয়। র‌্যাব বলছে, মিশু আমেরিকার গ্রিনকার্ড হোল্ডার। এদিকে রিমান্ডে থাকা বিতর্কিত মডেল পিয়াসা ও মৌকে দফায় দফায় জেরা করছে গোয়েন্দা পুলিশ। আয়ের উৎস না থাকলেও আলিশান জীবন যাপন করতেন পিয়াসা আর মৌ। তাদের আয়ের উৎস কী? গোয়েন্দাদের এমন প্রশ্নে কোনো জবাব ছিল না লেডি মাফিয়ার দুই গ্যাংস্টারের কাছে। ২০১৮ সালে সংঘটিত পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুনে নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে পিয়াসার কাছ থেকে। রিমান্ডে থাকা পিয়াসা তার ব্যবহারের বিলাসবহুল ফেরারি, বিএমডব্লিউ ও মার্সিডিজ গাড়ি কিংবা আলিশান জীবন-যাপনের জন্য টাকার উৎসের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
গোয়েন্দাসূত্র জানান, আলিশান জীবনযাপন ছিল মডেল পিয়াসা ও মৌর। নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, দেশি-বিদেশি দামি পোশাক, শেলফের তাকে তাকে সাজানো জুতাসহ বাহারি সব পণ্যের সমাহার ছিল তাদের বাসায়। বাসার ভিতরে প্রবেশ করলে চোখ চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম। কারণ তাদের দৃশ্যমান আয়ের উৎসের সঙ্গে জীবনযাপনের ব্যয়ের ছিল আকাশপাতাল ব্যবধান।
গোয়েন্দাদের ভাষায়, পিয়াসার বাসা ছিল অনেকটা ‘রাজরানী’র ঘরের মতো। গতকাল বিকালে র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মিশু ও জিসানের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক এবং পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হবে। জিসানের ব্রাহামা গরু পালনের ব্যাপারে আমরা পশু ও প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে জিসানকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি অনেক কালো টাকার মালিকের অর্থ বিদেশে পাচার করেছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। মিশুর নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলেন তিনি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, মিশু একসময় রাজধানীতে পেশাদার ছিনতাইকারী হিসেবে পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিলেন। একসময়ের ছিনতাইকারী এখন হয়ে উঠেছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, চুরি, মাদকের অন্তত ১১টি মামলা রয়েছে। মিশু এর আগে বিভিন্ন মামলায় তিনবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। ক্যাসিনো ও চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার মোহাম্মদপুরের সাবেক আলোচিত কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান ওরফে রাজীবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং অনেক অপকর্মের সাক্ষী মিশু। রাজীব গ্রেফতারের আগে তার বাসাতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ ছাড়া মডেল পিয়াসার চোরাচালান চক্রের অন্যতম প্রধান সহযোগী মিশু। পিয়াসার মাধ্যমে অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন তিনি। চোরাচালানের সুবাদে মিশুও এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। রাজধানীর উপকণ্ঠে সান ডেইরির নামে একটি গরুর ফার্মের আড়ালে এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও অস্ত্রের কারবারে জড়িত। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আমদানির সময় গরুর পেটে করে আনা হয় হীরা ও সোনার চালান। গত পাঁচ বছরে এভাবে হাজার কোটি টাকার চালান দেশে আনা হয়।
সূত্র বলছেন, শুধু হীরার ও সোনার চালান নয়, গরুর পেটে করে ইয়াবার চালানও আনা হয়। এজন্য মাঝেমধ্যে টেকনাফ থেকেও গরুর চালান আনা হতো। এভাবে চোরাচালানের টাকায় রাতারাতি বিত্তশালী বনে যান মিশু। মিশু হাসান শুল্কমুক্ত গাড়ি চোর চক্রের সদস্য। মিশুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও নারী পাচারের অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এ চক্রের সদস্য ১০-১২ জন। তারা রাজধানীর অভিজাত এলাকা বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডের অন্যতম হোতা। এসব পার্টিতে তারা অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করতেন। এরা দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় ও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করতেন। সুকৌশলে তারা ক্লায়েন্টদের গোপন ছবি ধারণ করে পরে তাদের ব্ল্যাকমেল করতেন। পার্টিতে ক্লায়েন্টের চাহিদা/পছন্দের গুরুত্ব দেওয়া হতো। গাড়ির ব্যবসা, আমদানি ও গরুর ফার্মের ব্যানারে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন জনের অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে আসছিলেন।
র‌্যাব বলছে, মিশু হাসান দেশের বিভিন্ন প্রভাবশালীর কাছে নামিদামি ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি সরবরাহ করে আসছিলেন। তবে তাদের সরবরাহকৃত গাড়িগুলো রোডিও ড্রাইভ, ইউরো কার, সলিউশন ওয়ার্কশপে টেম্পারিং করা হতো। পিয়াসাকেও গাড়ি সরবরাহ করেছিলেন মিশু। বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রেও মিশু বিভিন্ন অনিয়ম ও ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতেন। নিজে ব্যবহারের জন্য তার কাছে দুটি রেঞ্চ রোভার, অ্যাকুয়া, ভক্স ওয়াগন, ফেরারিসহ পাঁচটি গাড়ি রয়েছে। গোয়েন্দা তদন্তে এ সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে নাম উঠে এসেছে ডায়মন্ড ব্যবসায়ী দিলীপ আগারওয়ালের। অবৈধ উপায়ে আনা ডায়মন্ডগুলো স্থান পায় দিলীপের শোরুমে। দিলীপ-পিয়াসা-মিশু সিন্ডিকেট একেকটি চালানে প্রায় ৫০ থেকে ৮০ কোটি টাকা মুনাফা করে। সূত্র নিশ্চিত করেছেন, প্রশাসন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে অভিযান চালালেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। চোরাচালানের মাধ্যমে দিলীপ প্রায় ৫-৬ হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন রাতারাতি।
অন্যদিকে, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা সমির্থত দলীয় নেতাকর্মীদের দাবী, দিলীপের নেতৃত্বে এ দেশের জুয়েলারী খাতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার সফল এই ব্যবসায়ী নেতা ব্যবসা’র পাশাপাশি সমাজ সংস্কারেও দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাকে হেয় করতে একটি মহল, ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে’। আর প্রচারিত ছবি সম্পর্কে সমর্থকরা বলেন, একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবাসায়ী, ব্যবসায়ী নেতা, সমাজসেবক এবং রাজনীতিকদের একাধিক মানুষের আবদার পুরণ করতে অনিচ্ছাকৃতভাবেও অনেক সময় ছবি উঠতে হয়। তবে আলোচিত এ সকল মডেলদের সঙ্গে তার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গ্রুপ ছবি থাকতে পারে। একক ছবি থাকার প্রশ্নই উঠেনা।
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে সুবিধা নেয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তাদের দলের নাম ব্যবহার করে সুবিধা নেয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, উপকমিটিতে অনেক সময় বিভিন্ন জনের তদ্বিরের কারণে দু’একজন বিতর্কিত ব্যক্তি চলে এসেছে। সেগুলো কেন্দ্রীয় ভাবে রিভিও হচ্ছে।
অবশ্য একজন সরেস ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ট্রয় নগরী ধ্বংসে দায়ি শুধু রূপসী হেলেন, কিন্তু ট্রয়ের যুবরাজ প্যারিস নির্দোষ। ক্লিয়োপেট্রাই কামুক, জুলিয়াস সিজার দুধে ধোয়া। রাশান কুইনই অসভ্য, রাসপুটিন একদম নাবালক। দিলীপ আগরওয়ালাও কি পিয়াসা কানেকশনে দুধে ধোয়া?

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে

হাজার কোটি টাকার কান্ডে পিয়াসা-মিশু-দিলীপ সিন্ডিকেট

আপডেট সময় ০৫:০৪:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪

রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সাথে ছবি তুলে ক্ষমতার প্রভাব দেখান। বিতর্কিত মডেল পিয়াসা গ্রেপ্তার হলে দিলীপের সঙ্গে তার মাদক ও সোনার অবৈধ কারবারের তথ্য বের হয়ে আসছিলো। কিন্তু সিআইডির প্রভাবশালী এক কর্মকর্তার মাধ্যমে তা ধামাচাপা দেন তিনি। সিআইডি পিয়াসাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, গরুর পেটে ঢুকিয়ে আনা হিরা ও স্বর্ণ দিলীপের কাছে কম মুল্যে বিক্রি করত মিশু-পিয়াসা চক্র। যাতে সরকার বিপুল পরিমাণ কর থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। শুল্ক কর্মকর্তারা অনুসন্ধান চালালে তার শুল্ক ফাঁকির আরো অনেক তথ্য পাবে বলেও দিলীপের একসময়ের ঘনিষ্ঠজনরা দাবি করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ পাচারের মাধ্যমে দিলীপ কুমার আগারওয়াল কলকাতায় তিনটি জুয়েলারি ও ১১টি বাড়ি করেছেন, কানাডা ও দুবাইয়েও তার আলীশান বাসভবন আছে বলে দুদকের কাছে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। ৪০ কোটি টাকা দিয়ে তিনি বেঙ্গল ব্যাংকেরও পরিচালক হয়েছেন। এসব টাকার উৎস নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে সরকারি সংস্থাগুলো কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

মডেল পিয়াসায় কি দুধে ধোয়া দিলীপ আগরওয়ালা?

বিতর্কিত মডেল পিয়াসা, তার দোসর মিশু সিন্ডিকেটে হঠাৎ করেই দিলীপ কুমার আগরওয়ালার নাম জড়িয়ে পড়েছে। গতকাল দেশের গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই জের ধরে দিলীপের নিজের জেলা চুয়াডাঙ্গাতেও কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় উল্লেখিত খবর, বিতর্কিত মডেলদের সঙ্গে একাধিক ছবি শেয়ার করাসহ নানা তীর্যক মন্তব্য প্রকাশ করছেন। প্রকাশিত সংবাদে যেমন তার মালিকানাধীন ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে অভিযান চালানোর দাবী রয়েছে, ঠিক তেমনি চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একাংশ তাকে দল থেকে বহিস্কারের দাবীও তুলেছেন
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, সরকার স্বীকৃত সিআইপি। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক, এফবিসিসিআই-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট। ব্যবসা, ব্যবসায়ী সংগঠনের পাশাপাশি তিনি ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিতর্কিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার সহযোগী ও বিজনেস পার্টনার মিশু হাসানকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশ ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। মঙ্গলবার রাতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অস্ত্রসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় মিশুর এক সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়।
বিতর্কিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার গোপন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তার অন্যতম সহযোগী ও বিজনেস পার্টনার শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান (৩১) ও মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসান (৩৯)। তাদের ফ্লাইট ছিল ভোররাতে। কিন্তু হয়নি শেষরক্ষা। আকাশপথে ফ্লাই করার আগেই তাদের আস্তানায় হানা দেয় এলিট ফোর্স র‌্যাব।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি অভিজাত ফেরারি গাড়ি, ১৩ হাজার ৩০০ পিস ইয়াবা, একটি অস্ত্র, ৬ রাউন্ড গুলি, ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় জাল রুপি, সিসার কাঁচামাল জব্দ করা হয়। র‌্যাব বলছে, মিশু আমেরিকার গ্রিনকার্ড হোল্ডার। এদিকে রিমান্ডে থাকা বিতর্কিত মডেল পিয়াসা ও মৌকে দফায় দফায় জেরা করছে গোয়েন্দা পুলিশ। আয়ের উৎস না থাকলেও আলিশান জীবন যাপন করতেন পিয়াসা আর মৌ। তাদের আয়ের উৎস কী? গোয়েন্দাদের এমন প্রশ্নে কোনো জবাব ছিল না লেডি মাফিয়ার দুই গ্যাংস্টারের কাছে। ২০১৮ সালে সংঘটিত পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খুনে নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে পিয়াসার কাছ থেকে। রিমান্ডে থাকা পিয়াসা তার ব্যবহারের বিলাসবহুল ফেরারি, বিএমডব্লিউ ও মার্সিডিজ গাড়ি কিংবা আলিশান জীবন-যাপনের জন্য টাকার উৎসের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
গোয়েন্দাসূত্র জানান, আলিশান জীবনযাপন ছিল মডেল পিয়াসা ও মৌর। নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী, দেশি-বিদেশি দামি পোশাক, শেলফের তাকে তাকে সাজানো জুতাসহ বাহারি সব পণ্যের সমাহার ছিল তাদের বাসায়। বাসার ভিতরে প্রবেশ করলে চোখ চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম। কারণ তাদের দৃশ্যমান আয়ের উৎসের সঙ্গে জীবনযাপনের ব্যয়ের ছিল আকাশপাতাল ব্যবধান।
গোয়েন্দাদের ভাষায়, পিয়াসার বাসা ছিল অনেকটা ‘রাজরানী’র ঘরের মতো। গতকাল বিকালে র‌্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মিশু ও জিসানের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক এবং পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হবে। জিসানের ব্রাহামা গরু পালনের ব্যাপারে আমরা পশু ও প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে জিসানকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি অনেক কালো টাকার মালিকের অর্থ বিদেশে পাচার করেছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। মিশুর নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় প্রতারণাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলেন তিনি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, মিশু একসময় রাজধানীতে পেশাদার ছিনতাইকারী হিসেবে পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিলেন। একসময়ের ছিনতাইকারী এখন হয়ে উঠেছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, চুরি, মাদকের অন্তত ১১টি মামলা রয়েছে। মিশু এর আগে বিভিন্ন মামলায় তিনবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। ক্যাসিনো ও চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার মোহাম্মদপুরের সাবেক আলোচিত কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান ওরফে রাজীবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং অনেক অপকর্মের সাক্ষী মিশু। রাজীব গ্রেফতারের আগে তার বাসাতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ ছাড়া মডেল পিয়াসার চোরাচালান চক্রের অন্যতম প্রধান সহযোগী মিশু। পিয়াসার মাধ্যমে অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন তিনি। চোরাচালানের সুবাদে মিশুও এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। রাজধানীর উপকণ্ঠে সান ডেইরির নামে একটি গরুর ফার্মের আড়ালে এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও অস্ত্রের কারবারে জড়িত। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আমদানির সময় গরুর পেটে করে আনা হয় হীরা ও সোনার চালান। গত পাঁচ বছরে এভাবে হাজার কোটি টাকার চালান দেশে আনা হয়।
সূত্র বলছেন, শুধু হীরার ও সোনার চালান নয়, গরুর পেটে করে ইয়াবার চালানও আনা হয়। এজন্য মাঝেমধ্যে টেকনাফ থেকেও গরুর চালান আনা হতো। এভাবে চোরাচালানের টাকায় রাতারাতি বিত্তশালী বনে যান মিশু। মিশু হাসান শুল্কমুক্ত গাড়ি চোর চক্রের সদস্য। মিশুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও নারী পাচারের অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এ চক্রের সদস্য ১০-১২ জন। তারা রাজধানীর অভিজাত এলাকা বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকান্ডের অন্যতম হোতা। এসব পার্টিতে তারা অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। প্রতিটি পার্টিতে ১৫-২০ জন অংশগ্রহণ করতেন। এরা দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় ও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করতেন। সুকৌশলে তারা ক্লায়েন্টদের গোপন ছবি ধারণ করে পরে তাদের ব্ল্যাকমেল করতেন। পার্টিতে ক্লায়েন্টের চাহিদা/পছন্দের গুরুত্ব দেওয়া হতো। গাড়ির ব্যবসা, আমদানি ও গরুর ফার্মের ব্যানারে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন জনের অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে আসছিলেন।
র‌্যাব বলছে, মিশু হাসান দেশের বিভিন্ন প্রভাবশালীর কাছে নামিদামি ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি সরবরাহ করে আসছিলেন। তবে তাদের সরবরাহকৃত গাড়িগুলো রোডিও ড্রাইভ, ইউরো কার, সলিউশন ওয়ার্কশপে টেম্পারিং করা হতো। পিয়াসাকেও গাড়ি সরবরাহ করেছিলেন মিশু। বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রেও মিশু বিভিন্ন অনিয়ম ও ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতেন। নিজে ব্যবহারের জন্য তার কাছে দুটি রেঞ্চ রোভার, অ্যাকুয়া, ভক্স ওয়াগন, ফেরারিসহ পাঁচটি গাড়ি রয়েছে। গোয়েন্দা তদন্তে এ সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে নাম উঠে এসেছে ডায়মন্ড ব্যবসায়ী দিলীপ আগারওয়ালের। অবৈধ উপায়ে আনা ডায়মন্ডগুলো স্থান পায় দিলীপের শোরুমে। দিলীপ-পিয়াসা-মিশু সিন্ডিকেট একেকটি চালানে প্রায় ৫০ থেকে ৮০ কোটি টাকা মুনাফা করে। সূত্র নিশ্চিত করেছেন, প্রশাসন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে অভিযান চালালেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। চোরাচালানের মাধ্যমে দিলীপ প্রায় ৫-৬ হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন রাতারাতি।
অন্যদিকে, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা সমির্থত দলীয় নেতাকর্মীদের দাবী, দিলীপের নেতৃত্বে এ দেশের জুয়েলারী খাতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার সফল এই ব্যবসায়ী নেতা ব্যবসা’র পাশাপাশি সমাজ সংস্কারেও দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাকে হেয় করতে একটি মহল, ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে’। আর প্রচারিত ছবি সম্পর্কে সমর্থকরা বলেন, একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবাসায়ী, ব্যবসায়ী নেতা, সমাজসেবক এবং রাজনীতিকদের একাধিক মানুষের আবদার পুরণ করতে অনিচ্ছাকৃতভাবেও অনেক সময় ছবি উঠতে হয়। তবে আলোচিত এ সকল মডেলদের সঙ্গে তার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গ্রুপ ছবি থাকতে পারে। একক ছবি থাকার প্রশ্নই উঠেনা।
আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে সুবিধা নেয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তাদের দলের নাম ব্যবহার করে সুবিধা নেয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, উপকমিটিতে অনেক সময় বিভিন্ন জনের তদ্বিরের কারণে দু’একজন বিতর্কিত ব্যক্তি চলে এসেছে। সেগুলো কেন্দ্রীয় ভাবে রিভিও হচ্ছে।
অবশ্য একজন সরেস ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ট্রয় নগরী ধ্বংসে দায়ি শুধু রূপসী হেলেন, কিন্তু ট্রয়ের যুবরাজ প্যারিস নির্দোষ। ক্লিয়োপেট্রাই কামুক, জুলিয়াস সিজার দুধে ধোয়া। রাশান কুইনই অসভ্য, রাসপুটিন একদম নাবালক। দিলীপ আগরওয়ালাও কি পিয়াসা কানেকশনে দুধে ধোয়া?