ঢাকা ০১:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দাউদকান্দি উপজেলা নবাগত ইউএন ও এসিল্যান্ড ভূমি ও পৌর প্রশাসক মো: জিয়াউর রহমান কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় ভোলায় আজকের পত্রিকার পাঠক বন্ধুর উদ্যোগে মাদক বিরোধী র‌্যালি,সেমিনার ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নতুন ব্রিজ এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে পথচারী জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে আমরা আর কোনো অবিচার চাই না’ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে বদলি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ রিমান্ডে যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাবেক ২ আইজিপি বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ফের উত্তাল আশুলিয়া, বন্ধ ৫২ কারখানা ট্রাইব্যুনালে প্রথমবার হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ

‘একটা ছেলে প্রতিবন্ধী, আরেকটি ছেলে কোটা আন্দোলনে গিয়ে চোখসহ কানের শক্তি হারিয়েছে’

পারিবারিক পিছুটান উপেক্ষা করে দোকান কর্মচারী মবিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তিসহ এক কানের শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন।

প্রতিবন্ধী এক ভাইকে রেখে প্রায় পাঁচ মাস আগে মারা যান তার বাবা। ঢাকার উত্তরা থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দিয়ে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হারানোর পর উপার্জন বন্ধ হওয়ায় এখন পথে বসেছে মবিনের পরিবার।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, ৩-৪ লাখ টাকা হলে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি ফিরে পাবেন মবিন। দেশের প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে অসহায় হয়ে পড়া মবিন এখন দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। এ টাকা না হলে তার পরিবারকে পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

শনিবার ডামুড্যার বড় শিধলকুড়া গ্রামে গিয়ে মবিনের (১৭) পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, প্রতিবন্ধী ছেলে জুলহাসসহ তিন ছেলেকে রেখে প্রায় পাঁচ মাস আগে মারা যান মবিনের বাবা মোফাজ্জল হোসেন মাল।

এরপর সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে মবিনের মা নাজমা বেগম দিশেহারা হয়ে পরলে স্থানীয় ও স্বজনদের পরামর্শে বড় ছেলে নাজমুল হুদা পলাশকে ড্রাইভারের চাকরি ও মবিনকে ঢাকার উত্তরার একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজে দেন। খেয়ে না খেয়ে বেশ চলছিল প্রতিবন্ধী ভাই জুলহাস, মা নাজমা বেগম ও মবিনের সংসার। গত ১৮ জুলাই প্রতিদিনের মতো মবিন রাজধানী ঢাকার উত্তরার রাজল²ীর পাশে ৩ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সড়কের ২৭ নম্বর প্লটে লতিফ এম্পোরিয়ামের মো. ওয়াসিম তালুকদারের কম্পিউটারের দোকানে কাজের জন্য যায়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন তুঙ্গে। পারিবারিক পিছুটানসহ সব কিছু ভুলে মবিন দোকান বন্ধ করে মিছিলে যোগ দেন। এরপর মিছিলটি যখন উত্তরা থানার দিকে যায়, তখন থানার ভেতর থেকে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এক পর্যায়ে একটি বুলেট মবিনের বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান কানের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।

পাশাপাশি পুলিশের ছোড়া ছড়রা গুলিতে তার চোখসহ মাথা ক্ষতবিক্ষত হয়। এরপর মবিনের মিছিলের সঙ্গীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করলেও এখনো মবিনের মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। টাকার অভাবে হাসপাতালে যেতে না পারায় এখন তিনি বাড়িতেই অবস্থান করছেন।

মবিনের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘মবিনের বাবা মারা যাওয়ার সাড়ে চার মাসের মাথায় আল্লাহ আমার এ কি করল? আমার একটা ছেলে প্রতিবন্ধী। ওই এক ছেলেকে নিয়েই আমার হিমশিম খেতে হয়। এখন আবার আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে চোখসহ কানের শক্তি হারিয়েছে। আমি দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে এখন কোথায় যাব? দেশবাসী যদি আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করতেন, তাহলে আমি বাঁচতে পারতাম। নয়তো আমার কী হবে? আমি সাহায্য চাই।’

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

দাউদকান্দি উপজেলা নবাগত ইউএন ও এসিল্যান্ড ভূমি ও পৌর প্রশাসক মো: জিয়াউর রহমান কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময়

‘একটা ছেলে প্রতিবন্ধী, আরেকটি ছেলে কোটা আন্দোলনে গিয়ে চোখসহ কানের শক্তি হারিয়েছে’

আপডেট সময় ১১:৪৪:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪

পারিবারিক পিছুটান উপেক্ষা করে দোকান কর্মচারী মবিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তিসহ এক কানের শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন।

প্রতিবন্ধী এক ভাইকে রেখে প্রায় পাঁচ মাস আগে মারা যান তার বাবা। ঢাকার উত্তরা থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দিয়ে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি হারানোর পর উপার্জন বন্ধ হওয়ায় এখন পথে বসেছে মবিনের পরিবার।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, ৩-৪ লাখ টাকা হলে দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি ফিরে পাবেন মবিন। দেশের প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে অসহায় হয়ে পড়া মবিন এখন দেশবাসীর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। এ টাকা না হলে তার পরিবারকে পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

শনিবার ডামুড্যার বড় শিধলকুড়া গ্রামে গিয়ে মবিনের (১৭) পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, প্রতিবন্ধী ছেলে জুলহাসসহ তিন ছেলেকে রেখে প্রায় পাঁচ মাস আগে মারা যান মবিনের বাবা মোফাজ্জল হোসেন মাল।

এরপর সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে মবিনের মা নাজমা বেগম দিশেহারা হয়ে পরলে স্থানীয় ও স্বজনদের পরামর্শে বড় ছেলে নাজমুল হুদা পলাশকে ড্রাইভারের চাকরি ও মবিনকে ঢাকার উত্তরার একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজে দেন। খেয়ে না খেয়ে বেশ চলছিল প্রতিবন্ধী ভাই জুলহাস, মা নাজমা বেগম ও মবিনের সংসার। গত ১৮ জুলাই প্রতিদিনের মতো মবিন রাজধানী ঢাকার উত্তরার রাজল²ীর পাশে ৩ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর সড়কের ২৭ নম্বর প্লটে লতিফ এম্পোরিয়ামের মো. ওয়াসিম তালুকদারের কম্পিউটারের দোকানে কাজের জন্য যায়। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন তুঙ্গে। পারিবারিক পিছুটানসহ সব কিছু ভুলে মবিন দোকান বন্ধ করে মিছিলে যোগ দেন। এরপর মিছিলটি যখন উত্তরা থানার দিকে যায়, তখন থানার ভেতর থেকে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এক পর্যায়ে একটি বুলেট মবিনের বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান কানের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।

পাশাপাশি পুলিশের ছোড়া ছড়রা গুলিতে তার চোখসহ মাথা ক্ষতবিক্ষত হয়। এরপর মবিনের মিছিলের সঙ্গীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করলেও এখনো মবিনের মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। টাকার অভাবে হাসপাতালে যেতে না পারায় এখন তিনি বাড়িতেই অবস্থান করছেন।

মবিনের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘মবিনের বাবা মারা যাওয়ার সাড়ে চার মাসের মাথায় আল্লাহ আমার এ কি করল? আমার একটা ছেলে প্রতিবন্ধী। ওই এক ছেলেকে নিয়েই আমার হিমশিম খেতে হয়। এখন আবার আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে চোখসহ কানের শক্তি হারিয়েছে। আমি দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে এখন কোথায় যাব? দেশবাসী যদি আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করতেন, তাহলে আমি বাঁচতে পারতাম। নয়তো আমার কী হবে? আমি সাহায্য চাই।’