ঢাকা ০৯:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দাউদকান্দি উপজেলা নবাগত ইউএন ও এসিল্যান্ড ভূমি ও পৌর প্রশাসক মো: জিয়াউর রহমান কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় ভোলায় আজকের পত্রিকার পাঠক বন্ধুর উদ্যোগে মাদক বিরোধী র‌্যালি,সেমিনার ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নতুন ব্রিজ এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে পথচারী জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে আমরা আর কোনো অবিচার চাই না’ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে বদলি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ রিমান্ডে যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাবেক ২ আইজিপি বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ফের উত্তাল আশুলিয়া, বন্ধ ৫২ কারখানা ট্রাইব্যুনালে প্রথমবার হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ

দালাল দুর্নীতিবাজ চক্রের শক্ত ঘাঁটি তেজগাঁও কমপ্লেক্স

দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতি চক্রের খপ্পর থেকে মুক্ত হতে পারেনি বেশিরভাগ সাবরেজিস্ট্রি অফিস। অধিকাংশ জেলা রেজিস্ট্রার ও সাবরেজিস্ট্রার ছাড়াও শত শত ওমেদার, দলিল লেখক ও নকলনবিশদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণিত অভিযোগের ছড়াছড়ি অবস্থা।

যাদের বাস্তব আয়ের সঙ্গে অর্জিত অর্থসম্পদের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সাধারণ কর্মচারী হয়েও কেউ কেউ শতকোটি টাকার মালিক। হাতেনাতে ধরা পড়া ছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভাগীয় মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও গণমাধ্যমের অনুসন্ধান এবং গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল প্রতিবেদনে অনেকের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে।

তদন্ত ও মামলার মুখোমুখি অনেকে। কেউ কেউ ইতোমধ্যে জেলও খেটেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গড়িমসি, স্বজনপ্রীতি এবং দুদকের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান ও শাস্তি নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ নতুন এক জাগরণের পথে অগ্রসর হলেও দুর্নীতিগ্রস্ত দুর্বৃত্তদের হুঁশ ফেরেনি। কেউ কেউ রাতারাতি ভোল পালটে এখন নতুন স্রোতের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আওয়ামীপন্থিদের অনেকে নিজেদের বিএনপি ও জামায়াতের লোক বলে পরিচয় দিচ্ছেন। দুর্নীতিগ্রস্তদের অনেকে আবার গা ঢাকা দিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পুরো রেজিস্ট্রেশন বিভাগ দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে একেবারে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। পর্যাপ্ত তালিকা ও তথ্য-উপাত্তের সবই প্রস্তুত আছে। এখন শুধু প্রয়োজন সদিচ্ছার।

পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের মতো একজন গ্রহণযোগ্য ও যোগ্য ব্যক্তি আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি নিশ্চয় এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

আইন মন্ত্রণালয় ছাড়াও রেজিস্ট্রেশন বিভাগের সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের অধীন নিবন্ধন পরিদপ্তরের। কিন্তু সেখানেও ভূতের আসর পড়েছে। এখানে যে যত বড় কর্মকর্তা তিনি তত বড় ধড়িবাজ। আবার যিনি দুর্নীতিগ্রস্ত হিসাবে অভিযুক্ত তাকেই বসানো হয়েছে এ দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে।

এ কর্মকর্তাকে নিয়োগ না দিতে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার ঘোর আপত্তি করলেও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের হস্তক্ষেপে সমালোচিত ব্যক্তিকেই বসানো হয়।

সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির নেপথ্যে প্রভাবশালী মহলের ইন্ধন রয়েছে। অনেক সময় উপর মহলের নাম ব্যবহার করে একটি চক্র তদবির বাণিজ্য করে থাকে। যে কারণে অনেক সময় তদবিরসংশ্লিষ্ট নিয়োগ-বদলির প্রজ্ঞাপন অনলাইনে দেওয়া হতো না। এছাড়া সাবরেজিস্ট্রার বদলির ক্ষেত্রে অনেক সময় নীতিমালা মানা হয় না। ৭ বছরের মধ্যে ঢাকায় ফের পোস্টিং দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু তা মানা হয়নি।

আবার প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ সাবরেজিস্ট্রারদের বেছে বেছে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। পত্রিকায় সুনির্দিষ্টভাবে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর লোক দেখানো বদলির পর ফের তা বাতিলও করা হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুখ চেনা, দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রাইজ পোস্টিং দেওয়া হয় মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। এসব বদলি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল ডিআর ও সাবরেজিস্ট্রারদের একটি প্রভাবশালী চক্র। যারা উচ্চপর্যায়ের যথাস্থানে যোগাযোগ করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। এখন আবার আরেকটি চক্র নতুন মিশন নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করছে।

ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থীদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, দালাল চক্রের দোর্দণ্ড প্রতাপ ছাড়াও দুর্নীতিবাজদের কারও চরিত্র পালটায়নি। বরং ক্ষেত্র বিশেষে বেড়েছে। সেই আগের মতো পদে পদে হয়রানি, দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতি অব্যাহত আছে।

সুশাসন ও সেবার মান নিশ্চিত করার কথা-শুধু কথার ফুলঝুরি ছাড়া কিছু নয়। যেসব রেজিস্ট্রি অফিসের আওতা ও জমির মূল্য যত বেশি, সেখানে হয়রানি-দুর্নীতি তত বেশি। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশে অবস্থিত সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোর বেশিরভাগ প্রাইজপোস্টিং হিসাবে চিহ্নিত।

এছাড়া চট্টগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় ও জেলা শহরে বেশকিছু সাবরেজিস্ট্রি অফিস দুর্নীতিবাজদের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। রাজধানীর তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে অবস্থিত সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোর সার্বিক কার্যক্রম গোপনে অনুসন্ধান করলে যে কেউ এসব অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাবেন।

তবে এতসব অভিযোগের মধ্যেও রেজিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টে সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যাও কম নয়। যুগান্তরের অনুসন্ধানে তাদের নাম-পরিচয়ও বেরিয়ে এসেছে। জীবনে কোনো দিন একটি টাকা ঘুস নেননি এবং মানুষকে তার প্রাপ্য সেবাটাও ঠিকঠাক দিচ্ছেন-এমন জেলা রেজিস্ট্রার ও সাবরেজিস্ট্রারও আছেন অর্ধশতাধিক।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, নভেম্বর থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সজুড়ে ছায়া অনুসন্ধান শুরু করে। এর ২ মাস পর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। যা কঠোরভাবে গোপন রাখা হয়।

একই সময় ৩৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম ও পদবি উল্লেখ করে ঢাকা জেলা সাবরেজিস্ট্রারকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর ঘুস, দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ ছিল। এ তালিকায় দুজন সাবরেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

তারা হলেন সূত্রাপুর সাবরেজিস্ট্রার এবিএম নূর-উজ্জমান পলাশ ও ধানমন্ডির সাবরেজিস্ট্রার আবুল হোসেন। তবে ওই সময় অনেকে অভিযোগ করেন, যেসব রাঘববোয়ালের নাম তালিকায় আসা উচিত ছিল তাদের অনেকের নাম সেখানে ছিলেন না।

দুর্নীতিগ্রস্ত সাবরেজিস্ট্রার : সারা দেশে সাবরেজিস্ট্রারদের পদ রয়েছে ৪৭৫টি। এর মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে কম-বেশি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তবে কেউ কেউ আছেন অতিমাত্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত। এ তালিকার কয়েকজন হাতেনাতে ঘুসসহ ধরাও পড়েছেন। কারও বিরুদ্ধে আবার দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে বিভিন্ন ধাপে অনুসন্ধান তদন্ত অব্যাহত আছে।

কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে চার্জশিট হয়েছে। কেউ আবার জেলও খেটেছেন। তবে অনেকের ফাইল ধামাচাপা রয়েছে। একজন তো মোটা অঙ্কের অর্থ সম্পদ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে গেছেন। যিনি সর্বশেষ গাজীপুরে কর্মরত ছিলেন। দেশ ছাড়ার অনেক আগে তিনি স্ত্রী-সন্তানকে বিদেশে পুনর্বাসন করেন। পরে সময় সুযোগ বুঝে ভারত হয়ে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান।

সূত্র জানিয়েছে, একই পথ ধরে তার আরেক ব্যাচমেট বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যিনি কিছুদিন আগে তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স থেকে বদলি হয়ে ময়মনসিংহের একটি স্টেশনে কর্মরত আছেন। বর্তমানে তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে গুলশান ও বাড্ডার সাবরেজিস্ট্রার ছাড়া বাকিদের বিষয়ে কম-বেশি বিস্তর অভিযোগ চাউর আছে।

গুলশান স্টেশনে আসাদুল ইসলাম থেকে শুরু ভালো মানের কর্মকর্তারা পোস্টিং পান। এদের মধ্যে রমজান খান ও শাহ মো. আশরাফউদ্দিন ভূঁইয়ার নাম উল্লেখযোগ্য। সবশেষে এ স্টেশনে দায়িত্ব পালন করছেন মানিকগঞ্জ সদর থেকে আসা মো. রফিকুল ইসলাম। এরা প্রত্যেকে সুনাম অর্জনকারী সাবরেজিস্ট্রার। বিশেষ করে রমজান ছিলেন একজন আলোচিত সাহসী কর্মকর্তা।

অপরদিকে অনেক বছর পর বাড্ডা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে মোস্তাফিজুর রহমান নামে একজন চৌকশ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার অফিস স্টাফদের কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতি ও জনহয়রানির বিস্তর অভিযোগ। যাদের কাছে তিনি বড় অসহায়।

এখানে কেরানি রাসেল প্রভাবশালী মহল কর্তৃক নিয়োগকৃত হওয়ায় কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না। রাসেলের মা সদ্য সাবেক হওয়া আইনমন্ত্রীর বাসায় চাকরি করেন। এটাই তার খুঁটির জোর। আর এ কারণে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারও এই প্রভাবশালী কেরানিকে সমীহ করে চলতেন। এর আগে একবার তাকে বাড্ডা অফিস থেকে বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু সে আদেশ বহাল করা যায়নি।

দুষ্ট চক্রের গডফাদার : রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের নিজস্ব জনবল ছাড়াও বাইরে থাকা লোকজনও এখানে দিনভর দালালি করে। তবে এক্ষেত্রে তাদের সহযোগী হিসাবে বিশেষ ভূমিকা রাখে এক শ্রেণির দলিল লেখক, ওমেদার ও নকলনবিশ।

কেউ কেউ আছেন বিভিন্ন অপকর্মের কারণে অফিশিয়ালি বহিষ্কৃত। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের দাপট আরও বেশি। ‘ন’ আদ্যাক্ষরের একজন দলিল লেখক কড়াইল বস্তির জমি জালিয়াতি মামলার আসামি। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে ২০১০ সালের ৩ মার্চ। তিনি কমপক্ষে একশ কোটি টাকার মালিক। তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান। অথচ তার দাপটে সব সময় তটস্থ থাকেন সাবরেজিস্ট্রাররা।

প্রতিদিন রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে এসে ধান্ধাবাজির দলিল রেজিস্ট্রি করতে তিনি দলবদল নিয়ে হাজির হন। এই দলিল লেখকের অন্যতম সহযোগী হলেন ‘ব’ আদ্যাক্ষরের আরেকজন প্রভাবশালী। এরা মূলত এখানকার গডফাদার হিসাবে পরিচিত।

গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে এ চক্রের আরও অন্তত সাত-আটজনের নাম রয়েছে। এদের মধ্যে বাড্ডা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে আছেন একই পরিবারের দুজন। ‘আ’ আদ্যাক্ষরের এ দুজন জাল-জালিয়াতির মাস্টার। মোহাম্মদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ‘আ’ আদ্যাক্ষরের আছেন আরও একজন। যার রয়েছে সাততলা বাড়ি। তিনি কোনো সাবরেজিস্ট্রারকে পাত্তা দেন না।

একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রির পেশা ছেড়ে দলিল লেখক হয়েছেন। এখন বেশ ভালোই আছেন। খিলগাঁওয়ে ৯ কাঠা জমির ওপর বাড়ি করেছেন। প্রায়দিন সন্ধ্যার পর তিনি তার দলবল নিয়ে কাকরাইলের একটি হোটেল গিয়ে পার্টি দেন।

ওমেদাররা বেশি প্রভাবশালী : মূলত রেজিস্ট্রি অফিসে বড় বড় ঘুস লেনদেনে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন একশ্রেণির ওমেদার। সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ছয়জন। পল্লবীতে আলামিন বরখাস্ত থাকলেও তার আনাগোনা কমেনি। এখানে ‘রা’ আদ্যাক্ষরের ওমেদার খুবই ধূর্ত। মোহাম্মদপুরে সবার পরিচিত মুখ ‘স’ আদ্যাক্ষরের একজন। বাড্ডায় ‘ফ’ আদ্যাক্ষরের ওমেদার খুবই বেপরোয়া। যিনি বড় বড় কেস ডিল করেন। টাকার ভাগ দেন কেরানি রাসেলকে।

এদিকে প্রভাবশালী ওমেদারদের মধ্যে খিলগাঁওয়ে আছেন ‘ম’ আদ্যাক্ষরের একজন। যিনি দুর্নীতিগ্রস্ত ওমেদারদের মধ্যে এখন সবচেয়ে এগিয়ে। চাহিদামাফিক টাকা পেলে তার কাছে যেকোনো অনিয়ম জায়েজ করা মামুলি বিষয়। আর একজন প্রভাবশালী ওমেদার আছেন সদরে। যার নামের আদ্যাক্ষর ‘ল’।

রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে দুর্নীতিগ্রস্ত ওমেদার এবং দলিল লেখকরা ঈর্ষণীয় অর্থবিত্তের মালিক এবং এ কারণে তারা বেশি প্রভাবশালী। অথচ একজন ওমেদার চাকরি করেন মাস্টাররোলে। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে পান ৬০ টাকা। অর্থাৎ সরকারি অফিস খোলার দিন তাদের শুধু হাজিরা দেওয়া। ওমেদার কোনো সরকারি চাকরি নয়। তাদের পদের আভিধানিক অর্থ হলো ‘চাকরিপ্রার্থী’।

কাজ শেখার জন্য তাদের সুযোগ দেওয়া হয়। অথচ এখন সব কাজের কাজীতে পরিণত হয়েছেন তারা। কথা প্রসঙ্গে একজন দলিল লেখক যুগান্তরকে বলেন, কিছু দিন আগে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের দোতলায় একজন সাবরেজিস্ট্রার জমি রেজিস্ট্রির কাজে ব্যস্ত।

এ সময় পাশে দাঁড়ানো ওমেদার সাবরেজিস্ট্রারের পায়ে পাড়া দিয়ে ইশারা দেন, এই দলিল এত কম খরচে দলিল রেজিস্ট্রি করা যাবে না। এখানে বড় দাও মারার সুযোগ আছে। কিন্তু সাবরেজিস্ট্রার তার ইশারা বুঝতে না পেরে দলিলে স্বাক্ষর করতে গেলে অনেক জোরে পায়ে পাড়া দেন। এরপর তীব্র ব্যথা পেয়ে সাবরেজিস্ট্রার চিৎকার দিয়ে ওঠেন।

অপ্রতিরোধ্য পায়েল বাহিনী : যে কোনো সেবাপ্রার্থী তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে ঢোকার পর নিচতলায় লিফটের পাশে রয়েছে হেল্পডেস্ক। কিন্তু হেল্পডেস্কে কর্তব্যরত আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলার আগেই দর্শনার্থীকে নিয়ে একরকম টানাটানি শুরু হয়ে যাবে। ভবনের ফ্লোরে পা দেওয়ার আগেই ঘিরে ধরবে কয়েকজন দালাল। আপনার কী লাগবে, কী জন্য এসেছেন? আসেন এদিকে সব দ্রুত করে দিচ্ছি।

অন্য কোথাও গিয়ে লাভ নেই। শুধু শুধু টাকা নষ্ট করবেন। হয়রানির শিকার হবেন, ইত্যাদি। কথাগুলো অনেকটা একদমে বলে ফেলবেন তারা। এ চক্রের প্রধান হোতা নকলনবিশ রবিউল হোসেন পায়েল। এর নেতৃত্বে একটি চক্র প্রতিদিন এখানে সেবাপ্রার্থীদের নানাভাবে হয়রানি ও প্রতারণা করে থাকে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

দাউদকান্দি উপজেলা নবাগত ইউএন ও এসিল্যান্ড ভূমি ও পৌর প্রশাসক মো: জিয়াউর রহমান কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময়

দালাল দুর্নীতিবাজ চক্রের শক্ত ঘাঁটি তেজগাঁও কমপ্লেক্স

আপডেট সময় ১১:০৯:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪

দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতি চক্রের খপ্পর থেকে মুক্ত হতে পারেনি বেশিরভাগ সাবরেজিস্ট্রি অফিস। অধিকাংশ জেলা রেজিস্ট্রার ও সাবরেজিস্ট্রার ছাড়াও শত শত ওমেদার, দলিল লেখক ও নকলনবিশদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণিত অভিযোগের ছড়াছড়ি অবস্থা।

যাদের বাস্তব আয়ের সঙ্গে অর্জিত অর্থসম্পদের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সাধারণ কর্মচারী হয়েও কেউ কেউ শতকোটি টাকার মালিক। হাতেনাতে ধরা পড়া ছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভাগীয় মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও গণমাধ্যমের অনুসন্ধান এবং গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল প্রতিবেদনে অনেকের বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগের প্রমাণও মিলেছে।

তদন্ত ও মামলার মুখোমুখি অনেকে। কেউ কেউ ইতোমধ্যে জেলও খেটেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গড়িমসি, স্বজনপ্রীতি এবং দুদকের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান ও শাস্তি নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ নতুন এক জাগরণের পথে অগ্রসর হলেও দুর্নীতিগ্রস্ত দুর্বৃত্তদের হুঁশ ফেরেনি। কেউ কেউ রাতারাতি ভোল পালটে এখন নতুন স্রোতের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আওয়ামীপন্থিদের অনেকে নিজেদের বিএনপি ও জামায়াতের লোক বলে পরিচয় দিচ্ছেন। দুর্নীতিগ্রস্তদের অনেকে আবার গা ঢাকা দিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পুরো রেজিস্ট্রেশন বিভাগ দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে একেবারে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। পর্যাপ্ত তালিকা ও তথ্য-উপাত্তের সবই প্রস্তুত আছে। এখন শুধু প্রয়োজন সদিচ্ছার।

পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের মতো একজন গ্রহণযোগ্য ও যোগ্য ব্যক্তি আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি নিশ্চয় এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

আইন মন্ত্রণালয় ছাড়াও রেজিস্ট্রেশন বিভাগের সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের অধীন নিবন্ধন পরিদপ্তরের। কিন্তু সেখানেও ভূতের আসর পড়েছে। এখানে যে যত বড় কর্মকর্তা তিনি তত বড় ধড়িবাজ। আবার যিনি দুর্নীতিগ্রস্ত হিসাবে অভিযুক্ত তাকেই বসানো হয়েছে এ দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে।

এ কর্মকর্তাকে নিয়োগ না দিতে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার ঘোর আপত্তি করলেও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের হস্তক্ষেপে সমালোচিত ব্যক্তিকেই বসানো হয়।

সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতির নেপথ্যে প্রভাবশালী মহলের ইন্ধন রয়েছে। অনেক সময় উপর মহলের নাম ব্যবহার করে একটি চক্র তদবির বাণিজ্য করে থাকে। যে কারণে অনেক সময় তদবিরসংশ্লিষ্ট নিয়োগ-বদলির প্রজ্ঞাপন অনলাইনে দেওয়া হতো না। এছাড়া সাবরেজিস্ট্রার বদলির ক্ষেত্রে অনেক সময় নীতিমালা মানা হয় না। ৭ বছরের মধ্যে ঢাকায় ফের পোস্টিং দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু তা মানা হয়নি।

আবার প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ সাবরেজিস্ট্রারদের বেছে বেছে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। পত্রিকায় সুনির্দিষ্টভাবে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর লোক দেখানো বদলির পর ফের তা বাতিলও করা হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুখ চেনা, দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রাইজ পোস্টিং দেওয়া হয় মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে। এসব বদলি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল ডিআর ও সাবরেজিস্ট্রারদের একটি প্রভাবশালী চক্র। যারা উচ্চপর্যায়ের যথাস্থানে যোগাযোগ করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। এখন আবার আরেকটি চক্র নতুন মিশন নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করছে।

ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থীদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, দালাল চক্রের দোর্দণ্ড প্রতাপ ছাড়াও দুর্নীতিবাজদের কারও চরিত্র পালটায়নি। বরং ক্ষেত্র বিশেষে বেড়েছে। সেই আগের মতো পদে পদে হয়রানি, দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতি অব্যাহত আছে।

সুশাসন ও সেবার মান নিশ্চিত করার কথা-শুধু কথার ফুলঝুরি ছাড়া কিছু নয়। যেসব রেজিস্ট্রি অফিসের আওতা ও জমির মূল্য যত বেশি, সেখানে হয়রানি-দুর্নীতি তত বেশি। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশে অবস্থিত সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোর বেশিরভাগ প্রাইজপোস্টিং হিসাবে চিহ্নিত।

এছাড়া চট্টগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় ও জেলা শহরে বেশকিছু সাবরেজিস্ট্রি অফিস দুর্নীতিবাজদের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। রাজধানীর তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে অবস্থিত সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোর সার্বিক কার্যক্রম গোপনে অনুসন্ধান করলে যে কেউ এসব অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাবেন।

তবে এতসব অভিযোগের মধ্যেও রেজিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টে সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যাও কম নয়। যুগান্তরের অনুসন্ধানে তাদের নাম-পরিচয়ও বেরিয়ে এসেছে। জীবনে কোনো দিন একটি টাকা ঘুস নেননি এবং মানুষকে তার প্রাপ্য সেবাটাও ঠিকঠাক দিচ্ছেন-এমন জেলা রেজিস্ট্রার ও সাবরেজিস্ট্রারও আছেন অর্ধশতাধিক।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, নভেম্বর থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সজুড়ে ছায়া অনুসন্ধান শুরু করে। এর ২ মাস পর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। যা কঠোরভাবে গোপন রাখা হয়।

একই সময় ৩৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম ও পদবি উল্লেখ করে ঢাকা জেলা সাবরেজিস্ট্রারকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর ঘুস, দুর্নীতি ও হয়রানির অভিযোগ ছিল। এ তালিকায় দুজন সাবরেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে বেশি অভিযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

তারা হলেন সূত্রাপুর সাবরেজিস্ট্রার এবিএম নূর-উজ্জমান পলাশ ও ধানমন্ডির সাবরেজিস্ট্রার আবুল হোসেন। তবে ওই সময় অনেকে অভিযোগ করেন, যেসব রাঘববোয়ালের নাম তালিকায় আসা উচিত ছিল তাদের অনেকের নাম সেখানে ছিলেন না।

দুর্নীতিগ্রস্ত সাবরেজিস্ট্রার : সারা দেশে সাবরেজিস্ট্রারদের পদ রয়েছে ৪৭৫টি। এর মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে কম-বেশি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তবে কেউ কেউ আছেন অতিমাত্রায় দুর্নীতিগ্রস্ত। এ তালিকার কয়েকজন হাতেনাতে ঘুসসহ ধরাও পড়েছেন। কারও বিরুদ্ধে আবার দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে বিভিন্ন ধাপে অনুসন্ধান তদন্ত অব্যাহত আছে।

কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে চার্জশিট হয়েছে। কেউ আবার জেলও খেটেছেন। তবে অনেকের ফাইল ধামাচাপা রয়েছে। একজন তো মোটা অঙ্কের অর্থ সম্পদ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে গেছেন। যিনি সর্বশেষ গাজীপুরে কর্মরত ছিলেন। দেশ ছাড়ার অনেক আগে তিনি স্ত্রী-সন্তানকে বিদেশে পুনর্বাসন করেন। পরে সময় সুযোগ বুঝে ভারত হয়ে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান।

সূত্র জানিয়েছে, একই পথ ধরে তার আরেক ব্যাচমেট বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যিনি কিছুদিন আগে তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স থেকে বদলি হয়ে ময়মনসিংহের একটি স্টেশনে কর্মরত আছেন। বর্তমানে তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে গুলশান ও বাড্ডার সাবরেজিস্ট্রার ছাড়া বাকিদের বিষয়ে কম-বেশি বিস্তর অভিযোগ চাউর আছে।

গুলশান স্টেশনে আসাদুল ইসলাম থেকে শুরু ভালো মানের কর্মকর্তারা পোস্টিং পান। এদের মধ্যে রমজান খান ও শাহ মো. আশরাফউদ্দিন ভূঁইয়ার নাম উল্লেখযোগ্য। সবশেষে এ স্টেশনে দায়িত্ব পালন করছেন মানিকগঞ্জ সদর থেকে আসা মো. রফিকুল ইসলাম। এরা প্রত্যেকে সুনাম অর্জনকারী সাবরেজিস্ট্রার। বিশেষ করে রমজান ছিলেন একজন আলোচিত সাহসী কর্মকর্তা।

অপরদিকে অনেক বছর পর বাড্ডা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে মোস্তাফিজুর রহমান নামে একজন চৌকশ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার অফিস স্টাফদের কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতি ও জনহয়রানির বিস্তর অভিযোগ। যাদের কাছে তিনি বড় অসহায়।

এখানে কেরানি রাসেল প্রভাবশালী মহল কর্তৃক নিয়োগকৃত হওয়ায় কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না। রাসেলের মা সদ্য সাবেক হওয়া আইনমন্ত্রীর বাসায় চাকরি করেন। এটাই তার খুঁটির জোর। আর এ কারণে ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারও এই প্রভাবশালী কেরানিকে সমীহ করে চলতেন। এর আগে একবার তাকে বাড্ডা অফিস থেকে বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু সে আদেশ বহাল করা যায়নি।

দুষ্ট চক্রের গডফাদার : রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের নিজস্ব জনবল ছাড়াও বাইরে থাকা লোকজনও এখানে দিনভর দালালি করে। তবে এক্ষেত্রে তাদের সহযোগী হিসাবে বিশেষ ভূমিকা রাখে এক শ্রেণির দলিল লেখক, ওমেদার ও নকলনবিশ।

কেউ কেউ আছেন বিভিন্ন অপকর্মের কারণে অফিশিয়ালি বহিষ্কৃত। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের দাপট আরও বেশি। ‘ন’ আদ্যাক্ষরের একজন দলিল লেখক কড়াইল বস্তির জমি জালিয়াতি মামলার আসামি। তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে ২০১০ সালের ৩ মার্চ। তিনি কমপক্ষে একশ কোটি টাকার মালিক। তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান। অথচ তার দাপটে সব সময় তটস্থ থাকেন সাবরেজিস্ট্রাররা।

প্রতিদিন রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে এসে ধান্ধাবাজির দলিল রেজিস্ট্রি করতে তিনি দলবদল নিয়ে হাজির হন। এই দলিল লেখকের অন্যতম সহযোগী হলেন ‘ব’ আদ্যাক্ষরের আরেকজন প্রভাবশালী। এরা মূলত এখানকার গডফাদার হিসাবে পরিচিত।

গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে এ চক্রের আরও অন্তত সাত-আটজনের নাম রয়েছে। এদের মধ্যে বাড্ডা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে আছেন একই পরিবারের দুজন। ‘আ’ আদ্যাক্ষরের এ দুজন জাল-জালিয়াতির মাস্টার। মোহাম্মদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ‘আ’ আদ্যাক্ষরের আছেন আরও একজন। যার রয়েছে সাততলা বাড়ি। তিনি কোনো সাবরেজিস্ট্রারকে পাত্তা দেন না।

একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রির পেশা ছেড়ে দলিল লেখক হয়েছেন। এখন বেশ ভালোই আছেন। খিলগাঁওয়ে ৯ কাঠা জমির ওপর বাড়ি করেছেন। প্রায়দিন সন্ধ্যার পর তিনি তার দলবল নিয়ে কাকরাইলের একটি হোটেল গিয়ে পার্টি দেন।

ওমেদাররা বেশি প্রভাবশালী : মূলত রেজিস্ট্রি অফিসে বড় বড় ঘুস লেনদেনে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন একশ্রেণির ওমেদার। সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ছয়জন। পল্লবীতে আলামিন বরখাস্ত থাকলেও তার আনাগোনা কমেনি। এখানে ‘রা’ আদ্যাক্ষরের ওমেদার খুবই ধূর্ত। মোহাম্মদপুরে সবার পরিচিত মুখ ‘স’ আদ্যাক্ষরের একজন। বাড্ডায় ‘ফ’ আদ্যাক্ষরের ওমেদার খুবই বেপরোয়া। যিনি বড় বড় কেস ডিল করেন। টাকার ভাগ দেন কেরানি রাসেলকে।

এদিকে প্রভাবশালী ওমেদারদের মধ্যে খিলগাঁওয়ে আছেন ‘ম’ আদ্যাক্ষরের একজন। যিনি দুর্নীতিগ্রস্ত ওমেদারদের মধ্যে এখন সবচেয়ে এগিয়ে। চাহিদামাফিক টাকা পেলে তার কাছে যেকোনো অনিয়ম জায়েজ করা মামুলি বিষয়। আর একজন প্রভাবশালী ওমেদার আছেন সদরে। যার নামের আদ্যাক্ষর ‘ল’।

রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে দুর্নীতিগ্রস্ত ওমেদার এবং দলিল লেখকরা ঈর্ষণীয় অর্থবিত্তের মালিক এবং এ কারণে তারা বেশি প্রভাবশালী। অথচ একজন ওমেদার চাকরি করেন মাস্টাররোলে। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে পান ৬০ টাকা। অর্থাৎ সরকারি অফিস খোলার দিন তাদের শুধু হাজিরা দেওয়া। ওমেদার কোনো সরকারি চাকরি নয়। তাদের পদের আভিধানিক অর্থ হলো ‘চাকরিপ্রার্থী’।

কাজ শেখার জন্য তাদের সুযোগ দেওয়া হয়। অথচ এখন সব কাজের কাজীতে পরিণত হয়েছেন তারা। কথা প্রসঙ্গে একজন দলিল লেখক যুগান্তরকে বলেন, কিছু দিন আগে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের দোতলায় একজন সাবরেজিস্ট্রার জমি রেজিস্ট্রির কাজে ব্যস্ত।

এ সময় পাশে দাঁড়ানো ওমেদার সাবরেজিস্ট্রারের পায়ে পাড়া দিয়ে ইশারা দেন, এই দলিল এত কম খরচে দলিল রেজিস্ট্রি করা যাবে না। এখানে বড় দাও মারার সুযোগ আছে। কিন্তু সাবরেজিস্ট্রার তার ইশারা বুঝতে না পেরে দলিলে স্বাক্ষর করতে গেলে অনেক জোরে পায়ে পাড়া দেন। এরপর তীব্র ব্যথা পেয়ে সাবরেজিস্ট্রার চিৎকার দিয়ে ওঠেন।

অপ্রতিরোধ্য পায়েল বাহিনী : যে কোনো সেবাপ্রার্থী তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে ঢোকার পর নিচতলায় লিফটের পাশে রয়েছে হেল্পডেস্ক। কিন্তু হেল্পডেস্কে কর্তব্যরত আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলার আগেই দর্শনার্থীকে নিয়ে একরকম টানাটানি শুরু হয়ে যাবে। ভবনের ফ্লোরে পা দেওয়ার আগেই ঘিরে ধরবে কয়েকজন দালাল। আপনার কী লাগবে, কী জন্য এসেছেন? আসেন এদিকে সব দ্রুত করে দিচ্ছি।

অন্য কোথাও গিয়ে লাভ নেই। শুধু শুধু টাকা নষ্ট করবেন। হয়রানির শিকার হবেন, ইত্যাদি। কথাগুলো অনেকটা একদমে বলে ফেলবেন তারা। এ চক্রের প্রধান হোতা নকলনবিশ রবিউল হোসেন পায়েল। এর নেতৃত্বে একটি চক্র প্রতিদিন এখানে সেবাপ্রার্থীদের নানাভাবে হয়রানি ও প্রতারণা করে থাকে।