ঢাকা ১১:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দাউদকান্দি উপজেলা নবাগত ইউএন ও এসিল্যান্ড ভূমি ও পৌর প্রশাসক মো: জিয়াউর রহমান কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় ভোলায় আজকের পত্রিকার পাঠক বন্ধুর উদ্যোগে মাদক বিরোধী র‌্যালি,সেমিনার ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নতুন ব্রিজ এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে পথচারী জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে আমরা আর কোনো অবিচার চাই না’ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে বদলি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ রিমান্ডে যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাবেক ২ আইজিপি বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ফের উত্তাল আশুলিয়া, বন্ধ ৫২ কারখানা ট্রাইব্যুনালে প্রথমবার হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ

অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জোন ৬/১ এর সাবেক অথরাইজড অফিসার (পরিদর্শক) জোটন দেবনাথের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। জোটন দেবনাথ নিজ নেতৃত্বে কিছু রাজনৈতিক পরিচয়দানকারী ব্যক্তি ও একাধিক রাজউকের কর্মকর্তার সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে সহযোগিতা ছাড়াও নকশা ও ছাড়পত্র পাইয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করে আসছে।

ছাড়পত্র ও ভবন ভাঙার নোটিশে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে জোটন দেবনাথসহ আরও কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। জোটন সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় রাজধানীর তোপখানা, কাকরাইল, বেইলি রোড, মালিবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, বাসবো, রামপুরাসহ আরও বেশকিছু এলাকা অবৈধ নকশায় তৈরী ভবনগুলোর কারণে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

জানা যায় জোটন সেন্ডিকেটের এ তালিকায় আছে পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম, জিয়াউদ্দিন ও ইমরান শেখ। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের চাহিদামতো অর্থ পেলে মালিকদের সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণে আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়না। তবে চাহিদা মত অর্থ না পেলে সিন্ডিকেটেটি টাকা আদায়ে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন একাধিক নোটিশ, অথবা মোবাইল কোর্ট। প্রকৃতপক্ষে এসব নোটিশ টাকা আদায়ের পর অদৃশ্য হয়ে যায়, আর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আংশিক ভেঙে ফেলা হলেও, টাকা আদায়ের পর দেয়া হয় জোড়াতালি।

আবার ত্রিশ বছর আগের আটসিসি পিলার বিহীন ভবনের পাঁচতলা ও ছয়তলারও অনুমোদন মেলে জোটন সেন্ডেকেটের কাছে। যা ঝুঁকিপূর্ণ। রাজউক জোন ৬/১ এ দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করলে জোটন সিন্ডিকেটের বিভিন্ন অপকর্ম বেরিয়ে আসে। এই সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় নির্মিত কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামোর ভবনের তালিকার মধ্যে: এক- রাজধানীর সেগুনবাগিচা তোপখানা রোড ২৩/৩, নকশা ছাড়াই বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ হয়েছে। দুই- ৬৩১, উত্তর শাহজাহানপুর এলাকায় আবাসিকের স্থলে কমার্শিয়াল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তিন- সবুজবন নূর টাওয়ার, ১৩৮৩/৮/১৫/৩, মৌলভীরটেক, মৌজা- শহর খিলগাঁও।

ভবনটিতে নকশায় ৩৮ভাগ ভূমি ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও ভূমি ব্যবহার করা হয়েছে ৯০ভাগের মত তা ছাড়া একতলা বেশি করা হয়েছে নকশায় অনুমোদন ছাড়া। চার- ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বরে মোহাম্মদ ইয়াহ ইয়া খান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং মো. সালেহ্ আহমেদ জাকারিয়া পরিচালক (জোন-৬), রাজউক ও জোটন দেবনাথ, অথরাইজড অফিসার জোন-৬/১, এর নেতৃত্বে, সহকারী অথরাইজড অফিসার মো. আব্দুল লতিফ, প্রধান ইমারত পরিদর্শক, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. আব্দুর রহিম, মো. ইমরান হোসেন, শাহনাজ খানম এবং ইমারত পরিদর্শক, মো. তারেক, মো. কামরুজ্জামান, মো. শাহিন আরিফুল ইসলাম, অন্যান্য কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা এলাকায় উচ্ছেদ/ মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

১) ভবন মালিক : সৈয়দ আহমেদ তালুকদার, প্লট নং-১২, ব্লক নং-ই, রোড নং-৮, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়েছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ২) ইমারত মালিক : খন্দকার রাশেদ গং, প্লট নং-৮ ও ১০, ব্লক নং-ই, রোড নং-৮, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়েছে এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ইমারত মালিক ৩’শ টাকার নন- জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন যে ইমারতের ব্যত্যয়কৃত অংশ নিজ উদ্যোগে ভেঙে অপসারণ করবেন, কিন্তু তা এখনো ভাঙা হয়নি।

৩) ইমারত মালিক : স্বপ্ন বিল্ডার্স এন্ড ডেভলোপার লি:, প্লট নং- ৬, ব্লক নং-ই, রোড নং-১০ এ অবস্থিত ব্যত্যয় করে নির্মাণের জন্য নির্মাণাধীন ইমারতটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ৪) ভবন মালিক : পিচ ইনোভেটিভ রিয়েল এস্টেট লি:, প্লট নং-০৪, ব্লক নং-ই, রোড নং-১০, বনশ্রী, রামপুরাতে ব্যত্যয় করে নির্মাণের জন্য নির্মাণাধীন ইমারতটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ৫) ভবন মালিক : মো. জাহিদ হোসেন, প্লট নং-৭, ব্লক নং-ই, রোড নং-১০, বনশ্রী, রামপুরাতে ব্যত্যয় করে নির্মাণের জন্য নির্মাণাধীন ইমারতটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ৬) ভবন মালিক : বুড়িগঙ্গা রিয়েল এস্টেট লি. এর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন, প্লট নং-১১/১, ব্লক নং-ই, রোড নং-০৭, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকাতে অবস্থিত ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়।

৭) ভবন মালিক : মো. গোলাম মওলা, প্লট নং-১০, ব্লক নং-ই, রোড নং-৪/১, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির আবাসিক এর স্থলে বাণিজ্যিক করায় ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়। ৮) ভবন মালিক : মো. রফিকুল ইসলাম গং , প্লট নং-০৪, ব্লক নং-ই, রোড নং-১১, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয় এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ৯) ভবন মালিক : মো. আবু জাফর গং , প্লট নং-০৩ ও ০৫, ব্লক নং-ই, রোড নং-১১, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ১০) ভবন মালিক : পিচ ডেভেলপমেন্ট লি:, প্লট নং-২০ ব্লক নং-ই, রোড নং-৪/১, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়, এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

১১) ভবন মালিক : রুমা রিয়েল এস্টেট লি: এর পক্ষে ব্যাস্থাপনা পরিচালক পারভিন আক্তার, প্লট নং-২ ব্লক নং-ই, রোড নং-১১ ও ৪/১, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়, এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। মোবাইল কোর্টটির মাধ্যমে ভবনগুলো আংশিক ভেঙে ফেলা হলেও পরবর্তীতে এসকল প্রতিটি ভবন জোড়াতালি দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। জোটন সিন্ডিকেটের লোকেরা লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে জোড়াতালি দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে জানা যায়। এভাবে জোটন সিন্ডিকেট প্রতিটি উচ্ছেদ কার্যক্রমকে বাণিজ্যে রূপান্তর করেছেন। এবিষয়ে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, ছাড়পত্র থেকে শুরু হয় অর্থ আদায়।

এরপর ভবন নির্মাণ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে, বিভিন্ন কৌশলে সিন্ডিকেটের লোকেরা লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করে থাকে। এছাড়া একটি প্লটের ড্যাবে ঝিল উল্লেখ থাকায় তা আবাসিকে সংশোধন করতে জোটন সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের কোম্পানি থেকে ২৫ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছেন। শতশত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আংশিক ভাঙার পর জোড়াতালির বিষয়ে অভিযুক্ত জোটন দেবনাথের সাথে কথা বলতে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি পরিচয় দিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও জোটনের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জোটন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ছাড়পত্র ও ভবন ভাঙার নোটিশে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিলকিস আক্তারের নেতৃত্বে একটি টিম রাজউকে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় জোটন দেবনাথসহ আরও কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুদক অভিযোগের সত্যতা পায়। এবিষয়ে দুদকের অভিযান পরিচালনার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম ও একেএম মর্তুজা আলী সাগর। অভিযানের পরে জোটন সিন্ডিকেটের লোকজন দুদকের সাথে সমাধানের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

দাউদকান্দি উপজেলা নবাগত ইউএন ও এসিল্যান্ড ভূমি ও পৌর প্রশাসক মো: জিয়াউর রহমান কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময়

অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক

আপডেট সময় ০৬:২৭:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জোন ৬/১ এর সাবেক অথরাইজড অফিসার (পরিদর্শক) জোটন দেবনাথের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। জোটন দেবনাথ নিজ নেতৃত্বে কিছু রাজনৈতিক পরিচয়দানকারী ব্যক্তি ও একাধিক রাজউকের কর্মকর্তার সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে সহযোগিতা ছাড়াও নকশা ও ছাড়পত্র পাইয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করে আসছে।

ছাড়পত্র ও ভবন ভাঙার নোটিশে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে জোটন দেবনাথসহ আরও কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। জোটন সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় রাজধানীর তোপখানা, কাকরাইল, বেইলি রোড, মালিবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, বাসবো, রামপুরাসহ আরও বেশকিছু এলাকা অবৈধ নকশায় তৈরী ভবনগুলোর কারণে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

জানা যায় জোটন সেন্ডিকেটের এ তালিকায় আছে পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম, জিয়াউদ্দিন ও ইমরান শেখ। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের চাহিদামতো অর্থ পেলে মালিকদের সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণে আর কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়না। তবে চাহিদা মত অর্থ না পেলে সিন্ডিকেটেটি টাকা আদায়ে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন একাধিক নোটিশ, অথবা মোবাইল কোর্ট। প্রকৃতপক্ষে এসব নোটিশ টাকা আদায়ের পর অদৃশ্য হয়ে যায়, আর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আংশিক ভেঙে ফেলা হলেও, টাকা আদায়ের পর দেয়া হয় জোড়াতালি।

আবার ত্রিশ বছর আগের আটসিসি পিলার বিহীন ভবনের পাঁচতলা ও ছয়তলারও অনুমোদন মেলে জোটন সেন্ডেকেটের কাছে। যা ঝুঁকিপূর্ণ। রাজউক জোন ৬/১ এ দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করলে জোটন সিন্ডিকেটের বিভিন্ন অপকর্ম বেরিয়ে আসে। এই সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় নির্মিত কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামোর ভবনের তালিকার মধ্যে: এক- রাজধানীর সেগুনবাগিচা তোপখানা রোড ২৩/৩, নকশা ছাড়াই বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ হয়েছে। দুই- ৬৩১, উত্তর শাহজাহানপুর এলাকায় আবাসিকের স্থলে কমার্শিয়াল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তিন- সবুজবন নূর টাওয়ার, ১৩৮৩/৮/১৫/৩, মৌলভীরটেক, মৌজা- শহর খিলগাঁও।

ভবনটিতে নকশায় ৩৮ভাগ ভূমি ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও ভূমি ব্যবহার করা হয়েছে ৯০ভাগের মত তা ছাড়া একতলা বেশি করা হয়েছে নকশায় অনুমোদন ছাড়া। চার- ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বরে মোহাম্মদ ইয়াহ ইয়া খান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং মো. সালেহ্ আহমেদ জাকারিয়া পরিচালক (জোন-৬), রাজউক ও জোটন দেবনাথ, অথরাইজড অফিসার জোন-৬/১, এর নেতৃত্বে, সহকারী অথরাইজড অফিসার মো. আব্দুল লতিফ, প্রধান ইমারত পরিদর্শক, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. আব্দুর রহিম, মো. ইমরান হোসেন, শাহনাজ খানম এবং ইমারত পরিদর্শক, মো. তারেক, মো. কামরুজ্জামান, মো. শাহিন আরিফুল ইসলাম, অন্যান্য কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা এলাকায় উচ্ছেদ/ মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

১) ভবন মালিক : সৈয়দ আহমেদ তালুকদার, প্লট নং-১২, ব্লক নং-ই, রোড নং-৮, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়েছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ২) ইমারত মালিক : খন্দকার রাশেদ গং, প্লট নং-৮ ও ১০, ব্লক নং-ই, রোড নং-৮, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়েছে এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ইমারত মালিক ৩’শ টাকার নন- জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন যে ইমারতের ব্যত্যয়কৃত অংশ নিজ উদ্যোগে ভেঙে অপসারণ করবেন, কিন্তু তা এখনো ভাঙা হয়নি।

৩) ইমারত মালিক : স্বপ্ন বিল্ডার্স এন্ড ডেভলোপার লি:, প্লট নং- ৬, ব্লক নং-ই, রোড নং-১০ এ অবস্থিত ব্যত্যয় করে নির্মাণের জন্য নির্মাণাধীন ইমারতটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ৪) ভবন মালিক : পিচ ইনোভেটিভ রিয়েল এস্টেট লি:, প্লট নং-০৪, ব্লক নং-ই, রোড নং-১০, বনশ্রী, রামপুরাতে ব্যত্যয় করে নির্মাণের জন্য নির্মাণাধীন ইমারতটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ৫) ভবন মালিক : মো. জাহিদ হোসেন, প্লট নং-৭, ব্লক নং-ই, রোড নং-১০, বনশ্রী, রামপুরাতে ব্যত্যয় করে নির্মাণের জন্য নির্মাণাধীন ইমারতটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ৬) ভবন মালিক : বুড়িগঙ্গা রিয়েল এস্টেট লি. এর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন, প্লট নং-১১/১, ব্লক নং-ই, রোড নং-০৭, বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকাতে অবস্থিত ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়।

৭) ভবন মালিক : মো. গোলাম মওলা, প্লট নং-১০, ব্লক নং-ই, রোড নং-৪/১, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির আবাসিক এর স্থলে বাণিজ্যিক করায় ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়। ৮) ভবন মালিক : মো. রফিকুল ইসলাম গং , প্লট নং-০৪, ব্লক নং-ই, রোড নং-১১, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয় এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ৯) ভবন মালিক : মো. আবু জাফর গং , প্লট নং-০৩ ও ০৫, ব্লক নং-ই, রোড নং-১১, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ১০) ভবন মালিক : পিচ ডেভেলপমেন্ট লি:, প্লট নং-২০ ব্লক নং-ই, রোড নং-৪/১, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়, এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

১১) ভবন মালিক : রুমা রিয়েল এস্টেট লি: এর পক্ষে ব্যাস্থাপনা পরিচালক পারভিন আক্তার, প্লট নং-২ ব্লক নং-ই, রোড নং-১১ ও ৪/১, বনশ্রী, রামপুরার ইমারতটির ব্যত্যয়কৃত (অংশ) আংশিক অপসারণ করা হয়, এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। মোবাইল কোর্টটির মাধ্যমে ভবনগুলো আংশিক ভেঙে ফেলা হলেও পরবর্তীতে এসকল প্রতিটি ভবন জোড়াতালি দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। জোটন সিন্ডিকেটের লোকেরা লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে জোড়াতালি দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে জানা যায়। এভাবে জোটন সিন্ডিকেট প্রতিটি উচ্ছেদ কার্যক্রমকে বাণিজ্যে রূপান্তর করেছেন। এবিষয়ে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, ছাড়পত্র থেকে শুরু হয় অর্থ আদায়।

এরপর ভবন নির্মাণ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে, বিভিন্ন কৌশলে সিন্ডিকেটের লোকেরা লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করে থাকে। এছাড়া একটি প্লটের ড্যাবে ঝিল উল্লেখ থাকায় তা আবাসিকে সংশোধন করতে জোটন সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের কোম্পানি থেকে ২৫ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছেন। শতশত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আংশিক ভাঙার পর জোড়াতালির বিষয়ে অভিযুক্ত জোটন দেবনাথের সাথে কথা বলতে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি পরিচয় দিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও জোটনের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জোটন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ছাড়পত্র ও ভবন ভাঙার নোটিশে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিলকিস আক্তারের নেতৃত্বে একটি টিম রাজউকে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় জোটন দেবনাথসহ আরও কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুদক অভিযোগের সত্যতা পায়। এবিষয়ে দুদকের অভিযান পরিচালনার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম ও একেএম মর্তুজা আলী সাগর। অভিযানের পরে জোটন সিন্ডিকেটের লোকজন দুদকের সাথে সমাধানের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।