ঢাকা ০৫:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশজুড়ে সহিংসতায় নিহত বেড়ে ১৯৭

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে ১৯৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে মঙ্গলবার পর্যন্ত। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২২)। তিনি গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে গুলিবিদ্ধ হন। আরেক ব্যক্তি মারা যান সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) নতুন করে খোঁজ পাওয়া যায় আরও ৮ জনের মৃত্যুর। এর মধ্যে ঢাকার ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে পাঁচজন এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ পাওয়া গেছে নিহত আরেক ব্যক্তির।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত মঙ্গলবার গিয়ে জানা যায়, সেখানে মোট ১৩ জনের মরদেহ নেওয়া হয়েছে। এর আগের হিসাবের ক্ষেত্রে হাসপাতালটিতে মৃত্যু ধরা হয়েছে ১১ জনের, বাড়ল দুজন।

মৃত্যুর এই হিসাব কিছু হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে পাওয়া। সব হাসপাতালের চিত্র পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) ৬, বৃহস্পতিবার ৪১, শুক্রবার ৮৪, শনিবার ৩৮, রবিবার ২১, সোমবার ৫ এবং গতকাল মঙ্গলবার ২ জনের মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য, গত সোম ও মঙ্গলবারের মৃত্যু চিকিৎসাধীন অবস্থায় হয়েছে।

ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, সেখানে ১৯ জুলাই (শুক্রবার) আহত ১৭ জনকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন তিনজন মারা যান। ২০ জুলাই (শনিবার) ১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই দিন মারা যান দুজন।

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শফিউর রহমান গত শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বলেছিলেন, ঠিক কতজনের মরদেহ এসেছে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ১০ জনের বেশি হবে। পরের দিন তিনি জানিয়েছিলেন, আরও একজনের মরদেহ হাসপাতালটিতে নেওয়া হয়েছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল গিয়ে জানা যায়, সেখানে মোট ১৩ জনের মরদেহ নেওয়া হয়েছে। এর আগের হিসাবের ক্ষেত্রে হাসপাতালটিতে মৃত্যু ধরা হয়েছে ১১ জনের, বাড়ল দুজন। হাসপাতালটির পরিচালক শফিউর রহমান বলেন, মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি। কারণ ময়নাতদন্তের মতো পরিস্থিতি তখন ছিল না।

এদিকে গুলিবিদ্ধ পোশাক কারখানার কর্মী শুভ শীল (২৪) গতকাল ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। তাঁকে গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। একই দিনে ভর্তি হওয়া গুলিবিদ্ধ ফারুক (৪৫) নামের এক ব্যক্তি পরদিন রোববার মারা গেছেন বলে গতকাল (মঙ্গলবার) জানা যায়। তিনি সাভারে থাকতেন। এনাম মেডিকেলের তত্ত্বাবধায়ক মো. ইউসুফ তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন।

সংঘর্ষে মোট কতজন নিহত ও আহত হয়েছেন, তার সরকারি হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত সোমবার রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষে তিনজন পুলিশ সদস্য এবং একজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন। ১ হাজার ১১৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ১৩২ জন। তিনজন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন।

ওই দিন (সোমবার) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। সেখানে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন, সংঘর্ষে মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা কত, সংকলিত কোনো হিসাব সরকারের কাছে আছে কি না? তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশ ও আনসার সদস্যদের আহত ও নিহতের হিসাব দেন।

বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির জনসংযোগ শাখা থেকে গতকাল জানানো হয়, নিহত আনসার সদস্যের নাম মো. জুয়েল শেখ (২২)। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালীতে। তিনি মতিঝিল থানায় অঙ্গীভূত আনসার সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন। উল্লেখ্য, এই আনসার সদস্যের নিহতের তথ্য আগেই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ফলে নতুন করে আর অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী, তরুণ ও নারী রয়েছেন। নিহত মানুষের বেশির ভাগের শরীরে গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল। কারও কারও মৃত্যু হয়েছে আঘাতে। আহত অনেকে চোখে রাবার বুলেট ও ছররা গুলি এবং শরীরের অন্যান্য জায়গায় গুলির ক্ষতচিহ্ন নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মারা যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয়ের বাড়ি পটুয়াখালীতে। তাঁর সহপাঠীদের দাবি, টিউশনি শেষ করে ফেরার পথে হৃদয় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন।

হৃদয়ের বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া ও মা অর্চনা রানীর ছেলে একটিই। আরেকটি মেয়ে রয়েছে। রতন কাঠমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান। মুঠোফোনে তিনি জানান, ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছেন, লেখাপড়া শেষ করে সে চাকরি করে দরিদ্র বাবার সংসারের বোঝা কাঁধে তুলে নেবে; কিন্তু একটি গুলিতে সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে ১৬ জুলাই সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা আরও ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ বেশি হয়েছে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে। ১৭ জুলাই সারা দেশে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরের দিন বন্ধ হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী।

গবেষকেরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে ও পরে এত অল্প সময়ে সংঘর্ষে এত মানুষের মৃত্যু কখনো হয়নি। মৃত্যু ও আহত মানুষের কোনো পূর্ণাঙ্গ হিসাবও পাওয়া যাচ্ছে না।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মঙ্গলবার বলেন, নিহত ও আহত মানুষের সংখ্যা কত তা হিসাব করা উচিত। সরকার যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তার কার্যপরিধিতে নিশ্চয়ই বিষয়টি আসবে। তিনি বলেন, সামগ্রিক ঘটনাবলিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় আছে কি না, তা কমিশন খতিয়ে দেখছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশজুড়ে সহিংসতায় নিহত বেড়ে ১৯৭

আপডেট সময় ০৩:৫৫:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে ১৯৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে মঙ্গলবার পর্যন্ত। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২২)। তিনি গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে গুলিবিদ্ধ হন। আরেক ব্যক্তি মারা যান সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) নতুন করে খোঁজ পাওয়া যায় আরও ৮ জনের মৃত্যুর। এর মধ্যে ঢাকার ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে পাঁচজন এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ পাওয়া গেছে নিহত আরেক ব্যক্তির।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত মঙ্গলবার গিয়ে জানা যায়, সেখানে মোট ১৩ জনের মরদেহ নেওয়া হয়েছে। এর আগের হিসাবের ক্ষেত্রে হাসপাতালটিতে মৃত্যু ধরা হয়েছে ১১ জনের, বাড়ল দুজন।

মৃত্যুর এই হিসাব কিছু হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে পাওয়া। সব হাসপাতালের চিত্র পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) ৬, বৃহস্পতিবার ৪১, শুক্রবার ৮৪, শনিবার ৩৮, রবিবার ২১, সোমবার ৫ এবং গতকাল মঙ্গলবার ২ জনের মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য, গত সোম ও মঙ্গলবারের মৃত্যু চিকিৎসাধীন অবস্থায় হয়েছে।

ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, সেখানে ১৯ জুলাই (শুক্রবার) আহত ১৭ জনকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন তিনজন মারা যান। ২০ জুলাই (শনিবার) ১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই দিন মারা যান দুজন।

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শফিউর রহমান গত শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বলেছিলেন, ঠিক কতজনের মরদেহ এসেছে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ১০ জনের বেশি হবে। পরের দিন তিনি জানিয়েছিলেন, আরও একজনের মরদেহ হাসপাতালটিতে নেওয়া হয়েছে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল গিয়ে জানা যায়, সেখানে মোট ১৩ জনের মরদেহ নেওয়া হয়েছে। এর আগের হিসাবের ক্ষেত্রে হাসপাতালটিতে মৃত্যু ধরা হয়েছে ১১ জনের, বাড়ল দুজন। হাসপাতালটির পরিচালক শফিউর রহমান বলেন, মরদেহগুলোর ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি। কারণ ময়নাতদন্তের মতো পরিস্থিতি তখন ছিল না।

এদিকে গুলিবিদ্ধ পোশাক কারখানার কর্মী শুভ শীল (২৪) গতকাল ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। তাঁকে গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। একই দিনে ভর্তি হওয়া গুলিবিদ্ধ ফারুক (৪৫) নামের এক ব্যক্তি পরদিন রোববার মারা গেছেন বলে গতকাল (মঙ্গলবার) জানা যায়। তিনি সাভারে থাকতেন। এনাম মেডিকেলের তত্ত্বাবধায়ক মো. ইউসুফ তথ্যগুলো নিশ্চিত করেছেন।

সংঘর্ষে মোট কতজন নিহত ও আহত হয়েছেন, তার সরকারি হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত সোমবার রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষে তিনজন পুলিশ সদস্য এবং একজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন। ১ হাজার ১১৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ১৩২ জন। তিনজন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন।

ওই দিন (সোমবার) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। সেখানে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন, সংঘর্ষে মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা কত, সংকলিত কোনো হিসাব সরকারের কাছে আছে কি না? তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশ ও আনসার সদস্যদের আহত ও নিহতের হিসাব দেন।

বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির জনসংযোগ শাখা থেকে গতকাল জানানো হয়, নিহত আনসার সদস্যের নাম মো. জুয়েল শেখ (২২)। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালীতে। তিনি মতিঝিল থানায় অঙ্গীভূত আনসার সদস্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন। উল্লেখ্য, এই আনসার সদস্যের নিহতের তথ্য আগেই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ফলে নতুন করে আর অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী, তরুণ ও নারী রয়েছেন। নিহত মানুষের বেশির ভাগের শরীরে গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল। কারও কারও মৃত্যু হয়েছে আঘাতে। আহত অনেকে চোখে রাবার বুলেট ও ছররা গুলি এবং শরীরের অন্যান্য জায়গায় গুলির ক্ষতচিহ্ন নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মারা যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয়ের বাড়ি পটুয়াখালীতে। তাঁর সহপাঠীদের দাবি, টিউশনি শেষ করে ফেরার পথে হৃদয় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন।

হৃদয়ের বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া ও মা অর্চনা রানীর ছেলে একটিই। আরেকটি মেয়ে রয়েছে। রতন কাঠমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান। মুঠোফোনে তিনি জানান, ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছেন, লেখাপড়া শেষ করে সে চাকরি করে দরিদ্র বাবার সংসারের বোঝা কাঁধে তুলে নেবে; কিন্তু একটি গুলিতে সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে ১৬ জুলাই সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা আরও ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ বেশি হয়েছে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে। ১৭ জুলাই সারা দেশে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরের দিন বন্ধ হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। ১৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী।

গবেষকেরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে ও পরে এত অল্প সময়ে সংঘর্ষে এত মানুষের মৃত্যু কখনো হয়নি। মৃত্যু ও আহত মানুষের কোনো পূর্ণাঙ্গ হিসাবও পাওয়া যাচ্ছে না।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মঙ্গলবার বলেন, নিহত ও আহত মানুষের সংখ্যা কত তা হিসাব করা উচিত। সরকার যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তার কার্যপরিধিতে নিশ্চয়ই বিষয়টি আসবে। তিনি বলেন, সামগ্রিক ঘটনাবলিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় আছে কি না, তা কমিশন খতিয়ে দেখছে।