ঢাকা ০৪:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীদের জন্য নেই কোনো সরকারি নিরাময় কেন্দ্র

দেশে আশঙ্কাজনক হারে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে তারা অবহেলিত। পরিবার থেকে রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রেই নারী মাদকাসক্তরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে ৩৮০টি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের বেড সংখ্যা ৫ হাজার ৫১০। এর মধ্যে মাত্র ১১৪ বেড নারী মাদকাসক্তদের জন্য, শতকরা হিসাবে যা মোট বেডের মাত্র দুই ভাগ। এছাড়া দেশে নারী মাদকাসক্তদের জন্য সকারিভাবে পৃথক কোনো নিরাময় কেন্দ্র নেই। বেসরকারি উদ্যোগে নারী মাদকাসক্তদের জন্য রাজধানীতে দুটি নিরাময় কেন্দ্র চালু হলেও অর্থ সংকটে গত বছর একটি বন্ধ হয়ে গেছ।

নিরাময় কেন্দ্র সূত্র বলছে, নারী মাদকাসক্তদের ৩৯ ভাগই ইয়াবায় আসক্ত, যাদের বেশিরভাগই অভিজাত পরিবারের সন্তান। তাদের অবস্থা জটিল থেকে জটিলতর হলেই কেবল চিকিৎসার জন্য নিরাময় কেন্দ্রে আনে পরিবার। তবে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মাদকাসক্ত নারীরা চিকিৎসা নিতে আসেন না।

নারী মাদকাসক্তদের নিরাময় কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ পরিবার সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে তারা প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসার উদ্যোগও নেন না। পরে অবস্থা খারাপ হলে নিরাময় কেন্দ্রের শরণাপন্ন হন। অনেক পরিবার মাদকাসক্ত নারীকে নিরাময় কেন্দ্রে ফেলে রেখে চলে যান। পরে তাদের খোঁজ রাখেন না, খরচও দেন না।

অভিযোগ রয়েছে, নিরাময় কেন্দ্রে নারী মাদকাসক্তদের বেড সংখ্যা বাড়াতে এবং নারীদের জন্য পৃথক নিরাময়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) পক্ষ থেকে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয় না। ডিএনসি কর্মকর্তারাও সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় তারা অনেকটাই নিরুপায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) পরিচালক মজিবুর রহমান পাটওয়ারী  বলেন, আমরা নতুন ও আধুনিক হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মোট বেডের পাঁচ ভাগের এক ভাগ নারী মাদকাসক্তদের জন্য বরাদ্দ আছে।

মাদককে প্রতিহত করতে প্রতিবছরই দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। এ উপলক্ষ্যে আজ রোববার নানা আয়োজন করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

ডিএনসি সূত্র বলছে, দেশের চারটি সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের মোট বেড আছে ১৯৯টি। এর মধ্যে ঢাকার কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ১২৪টি বেড রয়েছে, যার মধ্যে নারীদের জন্য আছে ২৪টি। তিন বিভাগীয় শহরে (চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা) থাকা তিনটি নিরাময় কেন্দ্রে ৭৫টি বেড থাকলেও সেখানে নারী মাদকাসক্তদের চিকিৎসার সুযোগ নেই। এছাড়া দেশে বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র আছে ৩৭৬টি। যার বেড সংখ্যা ৫ হাজার ৩১১টি। এর মধ্যে মাত্র ৯০টি বেড নারীদের।

তবে ডিএনসির হিসাবেও রয়েছে গরমিল। যেমন, ডিএনসির হিসাবে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বারাকা (নারী) মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে রয়েছে ১০টি বেড। অথচ বাস্তবে এ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। এ নিরাময় কেন্দ্রের ফিল্ড অফিসার আজিম খান জানান, এ নারী শাখাটি প্রয়োজনীয় ফান্ড জোগাড় না হওয়ায় গত বছর বন্ধ হয়ে গেছে

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নারীদের জন্য নেই কোনো সরকারি নিরাময় কেন্দ্র

আপডেট সময় ০১:২৬:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

দেশে আশঙ্কাজনক হারে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে তারা অবহেলিত। পরিবার থেকে রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রেই নারী মাদকাসক্তরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে ৩৮০টি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের বেড সংখ্যা ৫ হাজার ৫১০। এর মধ্যে মাত্র ১১৪ বেড নারী মাদকাসক্তদের জন্য, শতকরা হিসাবে যা মোট বেডের মাত্র দুই ভাগ। এছাড়া দেশে নারী মাদকাসক্তদের জন্য সকারিভাবে পৃথক কোনো নিরাময় কেন্দ্র নেই। বেসরকারি উদ্যোগে নারী মাদকাসক্তদের জন্য রাজধানীতে দুটি নিরাময় কেন্দ্র চালু হলেও অর্থ সংকটে গত বছর একটি বন্ধ হয়ে গেছ।

নিরাময় কেন্দ্র সূত্র বলছে, নারী মাদকাসক্তদের ৩৯ ভাগই ইয়াবায় আসক্ত, যাদের বেশিরভাগই অভিজাত পরিবারের সন্তান। তাদের অবস্থা জটিল থেকে জটিলতর হলেই কেবল চিকিৎসার জন্য নিরাময় কেন্দ্রে আনে পরিবার। তবে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মাদকাসক্ত নারীরা চিকিৎসা নিতে আসেন না।

নারী মাদকাসক্তদের নিরাময় কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ পরিবার সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে তারা প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসার উদ্যোগও নেন না। পরে অবস্থা খারাপ হলে নিরাময় কেন্দ্রের শরণাপন্ন হন। অনেক পরিবার মাদকাসক্ত নারীকে নিরাময় কেন্দ্রে ফেলে রেখে চলে যান। পরে তাদের খোঁজ রাখেন না, খরচও দেন না।

অভিযোগ রয়েছে, নিরাময় কেন্দ্রে নারী মাদকাসক্তদের বেড সংখ্যা বাড়াতে এবং নারীদের জন্য পৃথক নিরাময়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) পক্ষ থেকে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয় না। ডিএনসি কর্মকর্তারাও সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় তারা অনেকটাই নিরুপায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) পরিচালক মজিবুর রহমান পাটওয়ারী  বলেন, আমরা নতুন ও আধুনিক হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মোট বেডের পাঁচ ভাগের এক ভাগ নারী মাদকাসক্তদের জন্য বরাদ্দ আছে।

মাদককে প্রতিহত করতে প্রতিবছরই দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। এ উপলক্ষ্যে আজ রোববার নানা আয়োজন করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

ডিএনসি সূত্র বলছে, দেশের চারটি সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের মোট বেড আছে ১৯৯টি। এর মধ্যে ঢাকার কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ১২৪টি বেড রয়েছে, যার মধ্যে নারীদের জন্য আছে ২৪টি। তিন বিভাগীয় শহরে (চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা) থাকা তিনটি নিরাময় কেন্দ্রে ৭৫টি বেড থাকলেও সেখানে নারী মাদকাসক্তদের চিকিৎসার সুযোগ নেই। এছাড়া দেশে বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র আছে ৩৭৬টি। যার বেড সংখ্যা ৫ হাজার ৩১১টি। এর মধ্যে মাত্র ৯০টি বেড নারীদের।

তবে ডিএনসির হিসাবেও রয়েছে গরমিল। যেমন, ডিএনসির হিসাবে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বারাকা (নারী) মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে রয়েছে ১০টি বেড। অথচ বাস্তবে এ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। এ নিরাময় কেন্দ্রের ফিল্ড অফিসার আজিম খান জানান, এ নারী শাখাটি প্রয়োজনীয় ফান্ড জোগাড় না হওয়ায় গত বছর বন্ধ হয়ে গেছে