বেক্সিমকো গ্রুপের চারটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মা এবং বেক্সিমকো লিমিটেড অন্তর্ভুক্ত, কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারকে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একটি কনসোর্টিয়াম।
কনসোর্টিয়ামের পক্ষ থেকে দুবাই-ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান অ্যাডসাম ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট এলএলসি অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের সম্পর্কে কোনও বিস্তারিত তথ্য দেয়নি অ্যাডসাম।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অ্যাডসাম-এর চিঠিটি গত ১৪ অক্টোবর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে পৌঁছেছে। ‘প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করুন’ নির্দেশনা দিয়ে চিঠিটি বাণিজ্য সচিবের কাছে পাঠিয়েছেন তিনি।
অ্যাডসাম ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট এলএলসি-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার আলি খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, “বিনিয়োগকারীদের একটি কনসোর্টিয়াম আমাদেরকে বেক্সিমকো গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার অধিগ্রহণের আগ্রহপত্র জমা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে।”
চিঠিতে আরও বলা হয়, “নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, তিস্তা সোলার লিমিটেড, বেক্সিমকো কমিউনিকেশনস লিমিটেড (স্যাটেলাইট ও ডিটিএইচ লাইসেন্স) এবং বেক্সিমকো লিমিটেড (টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক বিভাগ)।”
বেক্সিমকো ফার্মা এবং বেক্সিমকো লিমিটেড ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। বেক্সিমকো ফার্মা লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জেও তালিকাভুক্ত।
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান বলেন, “বেক্সিমকো গ্রুপে আমরা এমন কোনও প্রস্তাব পাইনি।”
প্রসঙ্গত, বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তিনি কারাবন্দি রয়েছেন।
এর আগে, ৫ সেপ্টেম্বর একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংককে বেক্সিমকো গ্রুপের সকল সম্পত্তি জব্দ করতে এবং ছয় মাসের জন্য একজন রিসিভার (সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগ দিয়ে সম্পদ পরিচালনার আদেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পক্ষে করা লিভ টু আপিলটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২৮ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেছেন চেম্বার আদালত। তবে আপিল বিভাগ থেকে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করা হয়নি।
দুবাই-ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান অ্যাডসাম ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট বেক্সিমকো গ্রুপের লাভজনক কয়েকটি কোম্পানি অধিগ্রহণের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অ্যাডসামের পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “আমাদের গ্রাহকরা বেক্সিমকো গ্রুপের কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সম্পদ অধিগ্রহণের বিষয়ে আগ্রহী। আপনি বা আপনার সরকার যদি এগুলো বিক্রির পরিকল্পনা করে থাকেন বা পুনর্গঠন করতে চান, তাহলে আলোচনা শুরু করতে আমরা আগ্রহী।”
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “আপনার সরকারের কৌশলের সাথে যদি এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, আমরা কৃতজ্ঞ হব যদি পরস্পর সম্মত শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বেক্সিমকো গ্রুপের শেয়ার অধিগ্রহণের জন্য আলোচনা শুরু করা যায়।”
অ্যাডসাম ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, স্বাভাবিক দায়িত্বশীলতা ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে এই আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে এবং শর্ত রয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে চলমান অবস্থায় বিক্রি করতে হবে এবং বিক্রির সময় এগুলো গ্রহণাধীন অবস্থায় থাকবে না।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “এই প্রস্তাব অ-বাধ্যতামূলক এবং আরও দায়িত্বশীলতা প্রক্রিয়ার আওতাধীন। প্রদত্ত যেকোনও প্রস্তাবের অনেকগুলো দিক রয়েছে, যা বিবেচনা করা প্রয়োজন এবং নিয়ন্ত্রণ ও আইনগত আনুষ্ঠানিকতাগুলো সঠিক দায়িত্বশীলতা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।”
অ্যাডসাম আরও জানিয়েছে, তারা তথ্য আদান-প্রদান এবং প্রস্তাবটি পরবর্তী দায়িত্বশীলতা প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অবিলম্বে একটি নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) স্বাক্ষর করতে এবং কার্যকর করতে প্রস্তুত।
সরকার অ্যাডসামের প্রস্তাবের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে কি না, সে ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সরাসরি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সরকারকে রাজনৈতিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে দূতাবাসের মাধ্যমে অ্যাডসাম ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেবেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের আলোচিত এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি না কেনার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে তাদের সম্পদ বিক্রি করে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করা হবে।
এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপসহ বেশকিছু শিল্প গ্রুপের বিরুদ্ধে ঋণ নিয়ে অর্থপাচারের অভিযোগ থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও শীর্ষ নীতিনির্ধারক বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করার কথা প্রকাশ্যে বলেননি।
অ্যাডসাম ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংকিং, ফিন্যান্স, প্রযুক্তি, রিয়েল এস্টেট এবং বিনিয়োগে ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, কেনিয়া, তানজানিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং কানাডায় বিমান পরিবহণ, ব্লকচেইন, ওয়েবথ্রি, পণ্য, ফিনটেক, গেমিং, স্বাস্থ্যসেবা, আতিথেয়তা, বীমা, মেডটেক এবং মার্চেন্ট সার্ভিসের মতো বিভিন্ন খাতে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।