ফুটবল বিশ্বকাপের পর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দর্শক প্রিয় দুটি টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকা ও ইউরো। যেই দুই টুর্নামেন্ট এখন শেষ হওয়ার পথে। যেখানে শিরোপা জয়ী দলকে বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষায় এখন বিশ্বের কোটি ফুটবল অনুরাগী। বাংলাদেশ সময় রোববার ১টায় জার্মানির বার্লিনে স্পেন খেলবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এর ঠিক কয়েক ঘণ্টা পর সোমবার সকাল ৬টায় কলম্বিয়ার বিপক্ষে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে নামবে আর্জেন্টিনা।
টুর্নামেন্ট দুটি ঘিরে বাংলাদেশের দর্শকদের আগ্রহের অন্ত নেই। বিশ্ব ফুটবলে দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপ অন্যান্য মহাদেশের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে। দুই ঘরনার ফুটবলই আপন বৈশিষ্ট্যে অনন্য। যদিও সময়ের পরিক্রমায় দক্ষিণ আমেরিকার ছন্দময় ফুটবল ইউরোপের পাওয়ার ফুটবলের কাছে অনেকটাই বিলীন হওয়ার পথে।
কোপা আমেরিকা ২০২৪:
কোপা আমেরিকার এবার ৪৮তম আয়োজন। স্বাগতিক দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কোপায় আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতেছে সর্বোচ্চ ১৫ বার। ব্রাজিল জিতেছে ৯ বার, চিলি ,প্যারাগুয়ে এবং পেরু জিতেছে ২ বার করে, বলিভিয়া এবং কলম্বিয়া জিতেছে ১ বার করে। আর্জেন্টিনা গত কোপা কাপ এবং বিশ্বকাপ জিতেছে। ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিদ্বন্দ্বী কলম্বিয়া ২৩ বছর পর ফাইনালে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে আর্জেন্টিনা ফেভারিট বিবেচিত হলেও পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ ছন্দে থাকা কলম্বিয়া ছেড়ে কথা বলবে না।
ফাইনালটি আর্জেন্টিনার বিশ্বস্ত দুই খেলোয়াড় আনহেল ডি মারিয়া এবং নিকোলাস ওটামন্দির বিদায়ী ম্যাচ। পুরো দল দুই খেলোয়াড়কে বিদায়ী উপহার হিসাবে শিরোপা জয়ে সর্বস্ব নিয়োগ করবে সন্দেহ নেই। কিন্তু এটাও ভুলে গেলে চলবে না; টুর্নামেন্টে কলম্বিয়াকে অনেক ছন্দময় এবং উৎবুদ্ধ মনে হয়েছে। এবারের কোপায় কয়েকটি ম্যাচে তাদের শারীরিক শক্তি প্রয়োগের প্রবণতা দেখা গেছে। ফাইনালেও সেটি হলে খেলার আকর্ষণ অনেক কমে যাবে। খেলাটির রেফারী হিসাবে ৫ জন ব্রাজিলিয়ান থাকবে। জানি না হয়তো ম্যাচটি খুদে জাদুকর লিওনেল মেসিরও বিদায়ী ম্যাচ হতে পারে।
কলম্বিয়ার প্রাণ-ভোমরা হামেস রদ্রিগেজের অনুপ্রেরণায় এবারের টুর্নামেন্টে দারুণ ছন্দে আছে দলটি। সেট পিস থেকে টুর্নামেন্ট জুড়েই গোল করেছে কলম্বিয়া। আর এখানেই আছে আর্জেন্টিনার দুর্বলতা। কাজেই খেলাটিতে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তবে বাংলাদেশিরা অনেকেই আর্জেন্টিনার জয়ে উচ্ছ্বসিত হবে সন্দেহ নেই।
ইউরো ২০২৪:
ইউরো কিন্তু তুলনামূলক ভাবে কোপার অনেক পরে শুরু হলেও এখন কোপার মতোই আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে ইউরোপীয় লীগ ফুটবলের জনপ্রিয়তার কারণে। ১৯৬০ শুরু হওয়ার পর চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয় ইউরো। এটি ইউরোর ১৭ তম আসর। যা অনুষ্ঠিত হচ্ছে জার্মানিতে। ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে বার্লিনে।
যেখানে ইতালি ,জার্মানি ,ফ্রান্সের মত শক্তিশালী দলগুলোকে বিভিন্ন পর্যায়ে পরাজিত করে ফাইনালে উঠেছে দারুণ ছন্দে থাকা স্পেন। অন্যদিকে ধুঁকতে থাকা ইংল্যান্ড অনেকটা ভাগ্যের জোরে পৌঁছেছে ফাইনালে। ১৯৯৬ ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে জার্মানিকে পরাজিত করে বিশ্বকাপ জয়ের পর এবার আবারো একটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ফাইনালে উঠেছে তারা। অন্যদিকে স্পেন ১৯৬৪ এবং ২০০৮ দুবার টুর্নামেন্ট জিতেছে। তরুণ দলটি ছন্দময় শৈল্পিক ফুটবলের সঙ্গে ইউরোপ ঘরনার পাওয়ার ফুটবল সম্পৃক্ত করে দারুণ খেলছে।
টুর্নামেন্টের খেলার ধারা অনুযায়ী স্পেন শিরোপার ফেভারিট দল। কিন্তু ইংল্যান্ড দল কৌশলে স্পেনের দুর্বলতা খুঁজে নিয়ে শিরোপা জয় করলেও বিস্মিত হওয়ার থাকবে না। স্পেন দলে ১৬ বছরের মেধাবী কিশোর লামিন ইয়ামাল দারুণ খেলছেন। খেলায় আছে লিওনেল মেসির ছাপ। ইয়ামালকে সামাল দিতে না পারলে বিপদে পরতে হতে পারে ইংল্যান্ডকে। বার্লিনে অনেক স্প্যানিশ বাস করেন। কাজেই স্থানীয় জার্মানরা হয়ত স্পেনকে সমর্থন করবে।
জার্মানি এবং স্পেন ৩ বার করে, ফ্রান্স ,ইতালি ২ বার, সোভিয়েট ইউনিয়ন, চেকোস্লোভাকিয়া, পর্তুগাল, ডেনমার্ক ,গ্রীস এবং নেদারল্যান্ড একবার করে শিরোপা জিতেছে। আর ইংল্যান্ড কিন্তু কখনো ইউরো শিরোপা জিতেনি।