বিয়ানীবাজারের চাঞ্চল্যকর ২৪ লাখ টাকার চিনি ছিনতাইকাণ্ডে প্রশাসনে তোলপাড় চলছে। মামলা হয়েছে ঘটনার চার দিন পর। এতে ছাত্রলীগ কর্মীসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ২ জনকে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রেস ব্রিফিং করেছে পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে ৮০ বস্তা চিনিসহ ভ্যান।
চিনি লুটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের পদবিধারী একাধিক নেতা এবং এই সংগঠনের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা বহিরাগতরা জড়িত থাকায় সর্বত্র বইছে সমালোচনার ঝড়। সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে থানা পুলিশ। এতে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন ও অফিসার ইনচার্জ দেবদুলাল ধর।
পুলিশ জানায়, ছিনতাই ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ৮০ বস্তা চিনি, একটি পিকআপ জব্দ ও এজাহারনামীয় দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে গ্রেফতার আসামিদের রিমান্ড আবেদন করেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহজাদা ফয়সল।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানার হোসাইনপুর গ্রামের (বর্তমানে পৌরশহরের দাসগ্রাম লিচুটিলা ছাত্তার মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া) মো. খলিল মিয়ার ছেলে মো. লিটন মিয়া (২৬) ও মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা শাহবাজপুর এলাকার বোবারতল গ্রামের (বর্তমানে সুপাতলা) মোস্তফা উদ্দিনের ছেলে হাসান (২১)। এর মধ্যে লিটন পেশাদার অপরাধী। তার বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় ডাকাতির আরও মামলা আছে।
চিনির চালানের মালিক বদরুল ইসলামের ব্যবসায়িক পার্টনার নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে দায়ের করা মামলার আসামিরা হচ্ছেন- বিয়ানীবাজারের ছোটদেশ ছুটিয়াংয়ের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী তারেক আহমদ, খাসাড়িপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল আহমদ, শ্রীধরার মুজিবুর রহমানের ছেলে স্যানেটারি মিস্ত্রি বক্কর, একই গ্রামের আনছার আলীর ছেলে দিনমজুর আনু ও আজির উদ্দিনের ছেলে সবজি ব্যবসায়ী ছাদিক আহমদ, বিয়ানীবাজার পৌর শহরের দাসগ্রাম লিচুটিলা ছাত্তার মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. খলিল মিয়ার ছেলে ছাত্রলীগকর্মী মো. লিটন মিয়া, মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা শাহবাজপুর এলাকার বোবারতল গ্রামের মোস্তফা উদ্দিনের ছেলে ছাত্রলীগ ক্যাডার হাসান, নবাং গ্রামের শরফ উদ্দিনের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী জিবান, বিয়ানীবাজারের সুপাতলার নছরুল্লাহর ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শফিউল্লাহ সাগর, খাসাড়িপাড়া গ্রামের ফারুক আহমদের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী ফাহাদ আহমদ, চারখাই জালালনগরের হেলাল মিয়ার ছেলে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ কর্মী হাসান আহমদ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জন।
ছিনতাইকাণ্ডে ছাত্রলীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা সভাপতি জুয়েল আহমদ শিপু বলেন, আমরা এমন ঘটনার নিন্দা জানাই। ছাত্রলীগের কেউ এমন ঘটনায় জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক তাহমিদ বলেন, কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায় ছাত্রলীগ নেবে না। যারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক।
চিনির চালানের মালিক বদরুল ইসলাম বলেন, চারখাই বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত কয়েক দিনে তিনি সরকারের বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে ১ হাজার ৪৭৭ বস্তা চিনি নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করেন। ওই চিনি থেকে ৪শ বস্তা চিনি তিনি জনৈক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। গত শনিবার দুপুরে একটি ট্রাকবোঝাই করে বিক্রীত চিনি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে।
তিনি অভিযোগ করেন, ১৫-১৬ জনের ছিনতাইকারী চক্র একটি প্রাইভেটকার, ৪টি মোটরসাইকেল এবং একটি পিকআপ নিয়ে চিনিবোঝাই ট্রাকের গতিরোধ করে। ছিনতাই হওয়া চিনির বাজার মূল্য অন্তত ২৪ লাখ টাকা।