ঢাকা ১২:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পটুয়াখালীতে সমাজসেবার উপ-পরিচালকের প্রতীকী দায়িত্বে স্কুল শিক্ষার্থী আয়েশা পটুয়াখালীতে ৪ জেলেকে ১০ দিন করে কারাদন্ড; ৭০ মিঃ জাল আগুনে ধ্বংস ধামরাইয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবক দলের গণসংযোগ ও মতবিনিময় কুমিল্লায় ভিডিও কলে রেখে প্রেমিক-প্রেমিকার আত্মহত্যা বোয়ালখালী পুলিশের অভিযানে ৩ দিনে ৪ জন গরু চোর সহ ছয়টি গরু উদ্ধার পাবনায় যুবদল নেতা রায়হানের উদ্যোগে অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরন ও দোয়া অনুষ্ঠিত ভোলায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপর হামলা, আটক-১ মায়ের বসতভিটা রক্ষায় জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ রানা প্লাজা ধস: আপিলেও স্থগিত সোহেল রানার জামিন আগষ্টিনের সহোচর কল্পনা ফলিয়ার যত প্রতারণা

বদলে যাওয়া অ্যানি খানের মহানুভবতার গল্প

মডেলিং, উপস্থাপনা ও অভিনয়ের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিলেন অ্যানী খান। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় চার বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে শোবিজ থেকে বিদায় নেন তিনি। এরপর থেকে ইসলামী নিয়মকানুন অনুযায়ী জীবনযাপন শুরু করেন। পোশাকেও পরিবর্তন এনেছেন। পরেন বোরকা ও হিজাব। এখনো সেভাবেই চলছেন তিনি।

অভিনয় জগতকে বিদায় জানানোর পর নতুন কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করেন অ্যানি খান। অনলাইনে পোশাক ব্যবসা শুরু করেন। ‘অ্যানীস কালেকশন’ নামের সেই প্রতিষ্ঠানে বোরকা ও সালোয়ার কামিজ বিক্রি করছেন অ্যানি। শুরু থেকেই ক্রেতাদের কাছে থেকে ভালো সাড়া পান তিনি। বর্তমানে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। পাশাপাশি তিনি ধর্ম-কর্ম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সক্রিয়। ফলে এক সময়ের সফল এই অভিনেত্রী মাঝে-মধ্যেই খবরের শিরোনাম হন।

তবে রূপালী জগত ছেড়ে ইসলামি বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা এবং উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার পথ অতটা সহজ ছিল না অ্যানি খানের। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্ত অনুরাগীর বেশিরভাগই তার পাশে থেকে সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগালেও অনেকের সমালোচনা ও নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হন তিনি। তবে কোনো সমালোচনাই তিনি গায়ে মাখেন না। বরং নিজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছেন এই উদ্যোক্তা।

এখানেই থেমে থাকেননি অ্যানি খান। ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন তিনি। রমজানে গরিব ও অসহায়দের জন্য ইফতারের আয়োজন করা, বিধবার ঘর বানিয়ে দেওয়াসহ দরিদ্র মানুষকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন তিনি। তার এসব মহতি উদ্যোগ ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেক অনুরাগী আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে অ্যানি খানের উদ্যোগের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন।

অ্যানি খানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরায় তাদের একটি নারী সার্কেল আছে; যারা পুরোপুরি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন। এছাড়া লন্ডনেও এরকম একটি গ্রুপ আছে। দেশে কোনো অসহায় মানুষের সন্ধান পেলে যাচাই-বাছাই করে তারা বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করেন। এছাড়া অনেক মসজিদ-মাদ্রাসায় ফ্যান বা সাউন্ড সিস্টেম দিয়েও সহযোগিতা করেছেন। গেল রমজানেও অসহায় অনেক পরিবারকে সেহরি ও ইফতার দিয়ে সহযোগিতা করেছেন অ্যানি খান।

যে প্রক্রিয়ায় টাকা সংগ্রহ হয়

কোনো অসহায় মানুষের খোঁজ পাওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে সহেযোতিার জন্য প্রথমে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন অ্যানি খান। তার স্ট্যাটাস দেখে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়ান। এরপর সেই টাকা দিয়ে অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ান তিনি। অনেক সময় শুধু নিজের উপার্জনের টাকা দিয়েও মানুষের কল্যাণে কাজ করেন তিনি। তবে নিজের টাকা দিয়ে আত্মীয় স্বজন ও নিজ এলাকা ময়মনসিংহে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেন তিনি।

এছাড়া উত্তরায় তাদের সার্কেলে যেসব নারী আছেন বা লন্ডনে যারা (নারী) থাকেন তারাও নানাভাবে অ্যানি খানের মানবকল্যাণমূলক এসব কাজে সহযোগিতার হাত বাড়ান।
মানবকল্যাণমূলক এসব কাজ করার সময় লেনদেনের হিসাব-নিকাশের বিষয়েও স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করেন অ্যানি খান। ভক্ত অনুরাগীদের কাছ থেকে পাওয়া টাকার হিসাব ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে দেনে তিনি। এমনকি কাকে কী দিয়ে সহযোগিতা করছেন সেই পণ্যের ভাউচারও তিনি নিজের ওয়ালে প্রকাশ করেন।

অ্যানি খান যুগান্তরকে বলেন, অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে সব সময় তাগিদ অনুভব করি। আমার মাধ্যমে যদি কোনো মানুষের উপকার হয়, তাহলে আল্লাহ এর প্রতিদান দেবেন।

তবে ভালো কাজ করতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অসহায় মানুষের সহযোগিতা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেন। তাদের আজেবাজে কথায় অনেক সময় মনোবল ভেঙে যায়। তবে তাদের কথায় কান দিলে চলবে না। কারণ আমি তো আল্লাহর খুশির জন্য অসহায় মানুষের জন্য কাজ করছি।

‘তবে এটাও সত্য যে, গরিব অসহায় মানুষের জন্য অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়ান; যাদেরকে আমি চিনি না। কিন্তু তারা নির্ধিদ্বায় আমাকে টাকা দিয়ে দেন’, যোগ করেন সাবেক এই অভিনেত্রী।

সমালেচাকারীদের উদ্দেশে অ্যানি খান বলেন, তাদের একটা বিষয় বোঝা উচিৎ, আমি টাকার কথা চিন্তা করলে মিডিয়া (বিনোদন) জগত জীবনেও ছাড়তাম না। আমি শুধু আল্লাহর ভয়ে অভিনয় ছেড়ে ইসলামের পথে এসেছি।

আপনি মেয়েদের জন্য মাদ্রাসা করতে চেয়েছিলেন, সেই প্রকল্প কতদূর এগিয়েছে জানতে চাইলে অ্যানি খান বলেন, মেয়েদের জন্য মাদ্রাসা করার নিয়ত করেছি। তবে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। আল্লাহ তৌফিক দিলে করব ইনশাআল্লাহ।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পটুয়াখালীতে সমাজসেবার উপ-পরিচালকের প্রতীকী দায়িত্বে স্কুল শিক্ষার্থী আয়েশা

বদলে যাওয়া অ্যানি খানের মহানুভবতার গল্প

আপডেট সময় ১০:৪৩:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪

মডেলিং, উপস্থাপনা ও অভিনয়ের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিলেন অ্যানী খান। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় চার বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে শোবিজ থেকে বিদায় নেন তিনি। এরপর থেকে ইসলামী নিয়মকানুন অনুযায়ী জীবনযাপন শুরু করেন। পোশাকেও পরিবর্তন এনেছেন। পরেন বোরকা ও হিজাব। এখনো সেভাবেই চলছেন তিনি।

অভিনয় জগতকে বিদায় জানানোর পর নতুন কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করেন অ্যানি খান। অনলাইনে পোশাক ব্যবসা শুরু করেন। ‘অ্যানীস কালেকশন’ নামের সেই প্রতিষ্ঠানে বোরকা ও সালোয়ার কামিজ বিক্রি করছেন অ্যানি। শুরু থেকেই ক্রেতাদের কাছে থেকে ভালো সাড়া পান তিনি। বর্তমানে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। পাশাপাশি তিনি ধর্ম-কর্ম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সক্রিয়। ফলে এক সময়ের সফল এই অভিনেত্রী মাঝে-মধ্যেই খবরের শিরোনাম হন।

তবে রূপালী জগত ছেড়ে ইসলামি বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা এবং উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার পথ অতটা সহজ ছিল না অ্যানি খানের। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্ত অনুরাগীর বেশিরভাগই তার পাশে থেকে সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগালেও অনেকের সমালোচনা ও নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হন তিনি। তবে কোনো সমালোচনাই তিনি গায়ে মাখেন না। বরং নিজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে চলেছেন এই উদ্যোক্তা।

এখানেই থেমে থাকেননি অ্যানি খান। ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন তিনি। রমজানে গরিব ও অসহায়দের জন্য ইফতারের আয়োজন করা, বিধবার ঘর বানিয়ে দেওয়াসহ দরিদ্র মানুষকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন তিনি। তার এসব মহতি উদ্যোগ ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেক অনুরাগী আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে অ্যানি খানের উদ্যোগের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন।

অ্যানি খানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরায় তাদের একটি নারী সার্কেল আছে; যারা পুরোপুরি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন। এছাড়া লন্ডনেও এরকম একটি গ্রুপ আছে। দেশে কোনো অসহায় মানুষের সন্ধান পেলে যাচাই-বাছাই করে তারা বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করেন। এছাড়া অনেক মসজিদ-মাদ্রাসায় ফ্যান বা সাউন্ড সিস্টেম দিয়েও সহযোগিতা করেছেন। গেল রমজানেও অসহায় অনেক পরিবারকে সেহরি ও ইফতার দিয়ে সহযোগিতা করেছেন অ্যানি খান।

যে প্রক্রিয়ায় টাকা সংগ্রহ হয়

কোনো অসহায় মানুষের খোঁজ পাওয়ার পর ওই ব্যক্তিকে সহেযোতিার জন্য প্রথমে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন অ্যানি খান। তার স্ট্যাটাস দেখে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়ান। এরপর সেই টাকা দিয়ে অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ান তিনি। অনেক সময় শুধু নিজের উপার্জনের টাকা দিয়েও মানুষের কল্যাণে কাজ করেন তিনি। তবে নিজের টাকা দিয়ে আত্মীয় স্বজন ও নিজ এলাকা ময়মনসিংহে অসহায় মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেন তিনি।

এছাড়া উত্তরায় তাদের সার্কেলে যেসব নারী আছেন বা লন্ডনে যারা (নারী) থাকেন তারাও নানাভাবে অ্যানি খানের মানবকল্যাণমূলক এসব কাজে সহযোগিতার হাত বাড়ান।
মানবকল্যাণমূলক এসব কাজ করার সময় লেনদেনের হিসাব-নিকাশের বিষয়েও স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করেন অ্যানি খান। ভক্ত অনুরাগীদের কাছ থেকে পাওয়া টাকার হিসাব ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে দেনে তিনি। এমনকি কাকে কী দিয়ে সহযোগিতা করছেন সেই পণ্যের ভাউচারও তিনি নিজের ওয়ালে প্রকাশ করেন।

অ্যানি খান যুগান্তরকে বলেন, অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে সব সময় তাগিদ অনুভব করি। আমার মাধ্যমে যদি কোনো মানুষের উপকার হয়, তাহলে আল্লাহ এর প্রতিদান দেবেন।

তবে ভালো কাজ করতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অসহায় মানুষের সহযোগিতা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেন। তাদের আজেবাজে কথায় অনেক সময় মনোবল ভেঙে যায়। তবে তাদের কথায় কান দিলে চলবে না। কারণ আমি তো আল্লাহর খুশির জন্য অসহায় মানুষের জন্য কাজ করছি।

‘তবে এটাও সত্য যে, গরিব অসহায় মানুষের জন্য অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়ান; যাদেরকে আমি চিনি না। কিন্তু তারা নির্ধিদ্বায় আমাকে টাকা দিয়ে দেন’, যোগ করেন সাবেক এই অভিনেত্রী।

সমালেচাকারীদের উদ্দেশে অ্যানি খান বলেন, তাদের একটা বিষয় বোঝা উচিৎ, আমি টাকার কথা চিন্তা করলে মিডিয়া (বিনোদন) জগত জীবনেও ছাড়তাম না। আমি শুধু আল্লাহর ভয়ে অভিনয় ছেড়ে ইসলামের পথে এসেছি।

আপনি মেয়েদের জন্য মাদ্রাসা করতে চেয়েছিলেন, সেই প্রকল্প কতদূর এগিয়েছে জানতে চাইলে অ্যানি খান বলেন, মেয়েদের জন্য মাদ্রাসা করার নিয়ত করেছি। তবে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। আল্লাহ তৌফিক দিলে করব ইনশাআল্লাহ।