ঢাকা ০৮:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
আমন ধান কাটার পর আলু চাষে লাভের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আত্রাইয়ের কৃষকেরা কুমিল্লায় যথাযথ মর্যাদায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত উচ্চ আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি বেজমেন্ট ব্যবসায়ীদের ভোলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মোহাম্মদ সানাউল হকের বিদায় সংবর্ধনা যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক অপসারণ দাবি জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে সুখবর জেলা প্রশাসককে গাছের চারা উপহার দিলেন ইউএনও টঙ্গীতে সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরনের ফাঁসীর দাবিতে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের নামে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মমিন মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে লেক ভিউ আবাসিক হোটেলের নামে চলছে নারী জুয়া ও মাদক ব্যবসা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী আজ।

  • সুমনসেন
  • আপডেট সময় ১২:০৭:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪
  • ৫৮৯ বার পড়া হয়েছে

আজ পঁচিশে বৈশাখ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বকবি।

বিশ্ব সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান অপরিসিম। বিশ্বসাহিত্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের একজন হচ্ছেন তিনি। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর অবদান অসামান্য। তাঁর হাত ধরেই বিশ্ব দরবারে বাংলা সাহিত্য পেয়েছে নতুন রূপ। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মননশীলতা দিয়ে বিশ্ব অঙ্গনে বিরল সম্মান অর্জন করেছেন তিনি।
বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা গ্রহণ না করে গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে বাড়িতে তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা।
১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তাঁর স্ত্রী মারা যান।
১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।
১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তাঁর মৃত্যু হয়।
সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন- রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন।

রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
১৯১৩ সালে তাঁর গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার ভূষিত হন।
শুধু সাহিত্য চর্চা নয়, নানা ধরণের সামাজিক আন্দোলন, নোবেল পুরস্কারের টাকায় কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠাসহ নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অনন্য হয়ে আছেন তিনি।

বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি বিশ্বপরিমণ্ডলে বাংলা সাহিত্যকে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত করেছিলেন। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, প্রবন্ধকার রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে বিচরণ করেননি। সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম ছিল তাঁর জীবনবোধের প্রধান পাথেয়। শুধু সাহিত্যসাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য তিনি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এসব প্রয়াসের মাধ্যমে তাঁর মানবহিতৈষী মন ও গভীর জনকল্যাণমূখী চেতনার পরিচয় মেলে।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। পূর্ববঙ্গের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ছিল গভীর সম্পর্ক। পূর্ববঙ্গের দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও মানবসমাজ সম্পর্কে উপলদ্ধি তাঁর সাহিত্যে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বাউল সাধক লালন ফকিরের গান তাঁকে পরিণত করেছে রবীন্দ্রবাউলে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা, উদারেনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ এবং ধর্ম-বর্ণ-বিত্ত-লিঙ্গ নির্বিশেষে সর্বমানবের মুক্তির চেতনা রবীন্দ্রনাথকে অনন্য মহিমা দান করেছে।
বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান রবীন্দ্রনাথের গান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অনন্য প্রেরণাশক্তি। তাঁর গান, সাহিত্য ও কর্মচেতনা বাংলাদেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। পাকিস্তানবাদী সংস্কৃতির বিপরীতে রবীন্দ্রসাহিত্য ছিল আমাদের প্রধান অবলম্বন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ছিল সংগ্রামের প্রেরণাশক্তি। রবীন্দ্রনাথ শেষ জীবনে ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে প্রাচ্যদেশ থেকে এক মহামানবের আগমন প্রত্যাশা করেছিলেন, সমস্ত সংকট-সমস্যায় যিনি হবেন কাণ্ডারি। তিনি আর কেউ নন-স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে মহান ভাবাদর্শে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ছিল অঙ্গীভূত। বঙ্গবন্ধু এজন্যই রবীন্দ্রনাথের গানকে জাতীয় সংগীত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশে এবং জাতি হিসেবে সার্বিক মুক্তিচেতানায় তিনি আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবেন।
বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহপূর্ণ পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথের মানবপ্রেম হতে পারে উত্তরণের নিয়ামক শক্তি। রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্যর মধ্যেই আমরা পেতে পারি মানসিক শান্তি ও কাঙ্ক্ষিত অনুপ্রেরণা।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আমন ধান কাটার পর আলু চাষে লাভের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আত্রাইয়ের কৃষকেরা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী আজ।

আপডেট সময় ১২:০৭:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মে ২০২৪

আজ পঁচিশে বৈশাখ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বকবি।

বিশ্ব সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান অপরিসিম। বিশ্বসাহিত্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের একজন হচ্ছেন তিনি। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে তাঁর অবদান অসামান্য। তাঁর হাত ধরেই বিশ্ব দরবারে বাংলা সাহিত্য পেয়েছে নতুন রূপ। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মননশীলতা দিয়ে বিশ্ব অঙ্গনে বিরল সম্মান অর্জন করেছেন তিনি।
বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা গ্রহণ না করে গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে বাড়িতে তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা।
১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তাঁর স্ত্রী মারা যান।
১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।
১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তাঁর মৃত্যু হয়।
সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন- রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন।

রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
১৯১৩ সালে তাঁর গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার ভূষিত হন।
শুধু সাহিত্য চর্চা নয়, নানা ধরণের সামাজিক আন্দোলন, নোবেল পুরস্কারের টাকায় কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠাসহ নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অনন্য হয়ে আছেন তিনি।

বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি বিশ্বপরিমণ্ডলে বাংলা সাহিত্যকে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত করেছিলেন। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, প্রবন্ধকার রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে বিচরণ করেননি। সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম ছিল তাঁর জীবনবোধের প্রধান পাথেয়। শুধু সাহিত্যসাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য তিনি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এসব প্রয়াসের মাধ্যমে তাঁর মানবহিতৈষী মন ও গভীর জনকল্যাণমূখী চেতনার পরিচয় মেলে।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। পূর্ববঙ্গের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ছিল গভীর সম্পর্ক। পূর্ববঙ্গের দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও মানবসমাজ সম্পর্কে উপলদ্ধি তাঁর সাহিত্যে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বাউল সাধক লালন ফকিরের গান তাঁকে পরিণত করেছে রবীন্দ্রবাউলে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা, উদারেনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ এবং ধর্ম-বর্ণ-বিত্ত-লিঙ্গ নির্বিশেষে সর্বমানবের মুক্তির চেতনা রবীন্দ্রনাথকে অনন্য মহিমা দান করেছে।
বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান রবীন্দ্রনাথের গান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অনন্য প্রেরণাশক্তি। তাঁর গান, সাহিত্য ও কর্মচেতনা বাংলাদেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। পাকিস্তানবাদী সংস্কৃতির বিপরীতে রবীন্দ্রসাহিত্য ছিল আমাদের প্রধান অবলম্বন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ছিল সংগ্রামের প্রেরণাশক্তি। রবীন্দ্রনাথ শেষ জীবনে ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে প্রাচ্যদেশ থেকে এক মহামানবের আগমন প্রত্যাশা করেছিলেন, সমস্ত সংকট-সমস্যায় যিনি হবেন কাণ্ডারি। তিনি আর কেউ নন-স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে মহান ভাবাদর্শে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ছিল অঙ্গীভূত। বঙ্গবন্ধু এজন্যই রবীন্দ্রনাথের গানকে জাতীয় সংগীত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশে এবং জাতি হিসেবে সার্বিক মুক্তিচেতানায় তিনি আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবেন।
বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহপূর্ণ পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথের মানবপ্রেম হতে পারে উত্তরণের নিয়ামক শক্তি। রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্যর মধ্যেই আমরা পেতে পারি মানসিক শান্তি ও কাঙ্ক্ষিত অনুপ্রেরণা।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।