রাজশাহীতে এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে আহত করে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে৷ আর এ ঘটনা গত মাসের ২৬ সেপ্টেম্বর পুঠিয়া উপজেলার শীলমাড়িয়া ইউনিয়নের কাজুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে৷ পরে গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম শ্যামল কুমার৷ তিনি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন৷ অন্যদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম হৃদয় হোসেন৷ কাজুপাড়ায় তার নানা-নানির বাসায় থেকে পড়াশোনা করেন তিনি৷
অভিযোগ উঠেছে, রিদয় হোসেনের পরিবার ও তার নানা নানিরা অসহায় হওয়ায় স্কুল প্রধান শ্যামল কুমার তাদেরকে নানাভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন৷ এমনকি এই ঘটনায় তার পরিবারকে থানায় অভিযোগ বা সাধারণ ডায়েরি করতে দেয়নি ওই শিক্ষক৷
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর স্কুলটির প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমারের ক্লাসে ৬ জন শিক্ষার্থী পড়া পারেনি৷ ফলে তিনি সবাইকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হৃদয় হোসেন নামের এক ছাত্র গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ পরে বিষয়টি গ্রাম প্রধান, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে জানালে তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামক) হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক তার অপারেশনের কথা জানায়৷ পরে ওই শিক্ষক নিজেই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছেন ওই ছাত্র৷
সরেজমিনে গেলে স্থানীয় গ্রাম প্রধান ওয়ারিশ আলী মৃধা জানান, ‘শুধু ওই শিক্ষার্থী নয়, এর আগেও বহু শিক্ষার্থীকে সে মারধর করেছে। একবার আমরা বসে ফয়সালাও করে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে হৃদয় হোসেনের নানা-নানি জানান, শিক্ষক শ্যামল হৃদয়কে মারধর করেছে। প্রথমে তারা বুঝতে পারেননি। কয়েকদিন পরে আঘাতের জায়গাটি ফুলে যায়। পরে হাঁটাচলা করতে না পারায়, তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে জানায়, প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার তাকে মারধর করেছে। তবে তার চিকিৎসার সকল খরচ ওই শিক্ষক দিচ্ছেন। এটা নিয়ে নিউজ হলে তার চিকিৎসার খরচ বন্ধ হয়ে যাবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা৷
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হৃদয় বলেন, হেডমাস্টার আমাকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মেরেছে। ম্যাডাম আর পিয়ন এসে আমাকে মারধর করার কথা কাউকে বলতে নিষেধ করে গিয়েছিল। স্কুলের সকল বাচ্চাদেরও নিষেধ করেছে যাতে মারধরের বিষয়টি কাউকে না জানায়৷
অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার বলেন, সেদিন আমি ছয় থেকে সাত জন বাচ্চাকে নির্দেশিকা কাঠি দিয়ে মেরেছি। কিন্তু কয়েকদিন পরে হৃদয় ক্লাসও করেছে। তবে সে সাইকেল নিয়ে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছে। তার চিকিৎসা খরচ আমি বহন করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ বি এম ছানোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি আরও আগে অভিভাবকদের আমাকে জানানো উচিত ছিল। তাহলে আমি ব্যবস্থা নিতাম। এভাবে কাউকে মারধর করা যাবে না। এমনকি কোনো বাচ্চাকে চোখ রাঙিয়েও কথা বলা যাবে না। যদি এধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।