প্রবাসিদের আত্মীয়-স্বজনদের জিম্মি করে বিপুল পরিমান টাকা আদায় এবং অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মূল্যবান পণ্য দেশে নিয়ে আসা চক্রের মূলহোতা খোরশেদ সহ ৩ জনকে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, এ সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা খোরশেদ আলম (৫২), তার সহযোগী জুয়েল রানা মজুমদার (৪০) ও মাসুম আহমেদ (৩৫)। এদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায়।
এসময় তাদের নিকট থেকে অপহৃত ভিকটিম উদ্বারসহ বিপুল পরিমান স্বর্ণ, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রসাধনী, অন্যান্য মূল্যবান পণ্যসামগ্রী যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় র্যাব-৩ এবং র্যাব-৪ এর একটি যৌথ দল রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার একটি বাসায় সাড়াশি অভিযান চালিয়ে নিখোঁজ ও অপহৃত ভিকটিম সৈয়দ আলী মন্ডল জীবিত অবস্হায় উদ্ধার করে এলিট ফোর্স র্যাব।
আজ শুক্রবার বেলা ১১ টায় রাজধানী কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক (মূখপাত্র) কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
এসময় র্যাবের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্হিত ছিলেন।
তিনি জানান, গত ৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ রাতে যশোরের চৌগাছা থেকে সৈয়দ আলী মন্ডল (৬৫) নামক এক ব্যক্তি মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ থেকে প্রবাস ফেরত তার ছেলেকে নেয়ার জন্য ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে নিখোঁজ হন।
ভিকটিম’র পরিবার সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুজি করে ভিকটিমকে না পেয়ে ভিকটিমের জামাতা এরপর দিন রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন, এছাড়াও ভিকটিমের পরিবার র্যাব-৪ এর নিকট ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য আবেদন করেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ভিকটিম সৈয়দ আলীর ছেলে প্রবাসি নুরুন্নবী গত ২০ আগস্ট ২০২৩ তারিখ উন্নত জীবন যাপনের আশায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গমন করে, বিদেশে গমনের পর সেখানে ভালো চাকরি ও সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় একপর্যায়ে দেশে ফেরত আসার সিদ্ধান্ত নেয়।
এ সময় প্রবাসে এ চক্রের মূলহোতা আবু ইউসুফ এবং তার সহযোগীরা নুরুন্নবীর আর্থিক দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাকে বাংলাদেশে আসার ফ্রি টিকেট দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্বর্ণালংকার এবং একটি লাগেজে বেশকিছু দামী কসমেটিক্স পণ্য, ইলেকট্রনিকস আইটেম, চকলেট ইত্যাদি বাংলাদেশে নিয়ে এসে গ্রেফতারকৃত খোরশেদ এর নিকট হস্তান্তর করতে হবে বলে শর্ত দেয়। প্রবাসি নুরুন্নবী তাদের দেয়া শর্তে রাজী হয় এবং ৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ রাতে ঢাকায় আসবে বলে তার পরিবারকে জানায়।
প্রবাসি নুরুন্নবীর পিতা ভিকটিম সৈয়দ আলী ৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ রাতে প্রবাস ফেরত ছেলেকে নেয়ার জন্য ঢাকায় আসলে চক্রের সদস্যরা তাদের পাঠানো পণ্য নিরাপদে পাওয়ার জন্য জামানত হিসেবে ভিকটিম সৈয়দ আলীকে কৌশলে রাজধানীর শান্তিনগরের একটি বাসায় নিয়ে জিম্মি করে রাখে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এ চক্রটি বাংলাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসি আরো বেশকয়েকজন দুস্কৃতিকারী বাংলাদেশিদের পরস্পর যোগসাজসে প্রবাস ফেরত বিভিন্ন যাত্রীদের মাধ্যমে বিগত ৫/৬ বছর যাবৎ কৌশলে অবৈধভাবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মূল্যবান পণ্য দেশে এনে বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি করে আসছিল।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, এ প্রতারক চক্রের অন্যতম মূলহোতা আবু ইউসুফ মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসি দেশে ও বিদেশে এ সংঘবদ্ধ চক্রটির প্রায় ১২-১৫ জন সদস্য রয়েছে, এ চক্রটি প্রবাসি ব্যক্তির নিকট স্বর্ণ, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন প্রকারের দামী প্রসাধনী ও অন্যান্য মূল্যবান পণ্যের ২৫ থেকে ৩০ কেজির ওজনের একটি লাগেজ প্রদান করে। প্রতিটি লাগেজে আনুমানিক ১০-১৫ লক্ষ টাকা মূল্যের পণ্য থাকত।
র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, এ চক্রটি নিজেদের গোপনীয়তার স্বার্থে ২-৩ মাসের মধ্যেই ভাড়াকৃত বাসা পরিবর্তন করে থাকে, গত ২ মাসে আগে তারা এ শান্তিনগরের বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল এবং সেই ভাড়াকৃত বাসা থেকে ভিকটিম সৈয়দ আলীকে উদ্ধার করা হয়, প্রবাসি যাত্রীদের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দেশে নিয়ে আসা স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান পণ্য সামগ্রী গুলিস্তান ও পল্টনসহ দেশের বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি করা হত চালানে ১৫-২০ লক্ষ টাকার মালামাল বিক্রি হয়।
র্যাব বলছে, এ চক্রের মূলহোতা খোরশেদ ২০০৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গমন করে এবং এবছর দেশে ফিরে আসে তার সহযোগী জুয়েল গাজীপুরে সাইকেল ও রিক্সার পার্টস’র ব্যবসা ছিল তার বিরুদ্ধে ডিএমপির বিমানবন্দর থানা ও ওয়ারি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত মাসুম গ্রেফতারকৃত জুয়েলের কসমেটিক্সের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো পূর্বে সে ঢাকায় প্রাইভেট কার চালানোর পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিল তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।