ঢাকা ০২:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কাশিমপুর কারাগারে নারী কেলেঙ্কারি ঘটনায় আজিজুলের শাস্তির নয়ছয় (প্রথম পর্ব) পাবনার দুই শহীদের কবর যিয়ারত ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এডওয়ার্ড কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মো আব্দুল আউয়াল পূজার ডিউটিতে আনসার থেকে লাখ টাকার বাণিজ্য তজুমউদ্দিন মেঘনায় জালপাতা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ট্রলার ছিনতাই ভোলায় পিস্তল নিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যানসহ আটক-২ সনি’র নতুন ব্রাভিয়া টিভি ও আল্ট এফওয়াই টুফোর বাজারজাত শুরু সীমান্তে মিয়ানমারের গুলিতে ১ বাংলাদেশি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩ বিএনপি কোনো ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে না : প্রিন্স বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ৪০০ পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন জামায়াত নাটোরে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি সর্বহারা পার্টির!

সিকিমের বাঁধ ভাঙা পানি ঢুকছে তিস্তায়, বাংলাদেশে অসময়ে বন্যার পদধ্বনি

গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ কমবেশি প্রতি বছর বন্যায় প্লাবিত হয়। কখনো এই বন্যা সহনশীল থাকে, আবার কখনো ভয়াল আকার ধারণ করে। বাংলাদেশের উজানে অবস্থিত ভারত। সম্প্রতি ভারতের উত্তর সিকিমের বাঁধ ভাঙা পানি ঢুকছে তিস্তায়, ফলে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে অসময়ে বন্যার পদধ্বনি। বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরে ‘হঠাৎ বন্যার ঝুঁকিতে ৫ জেলা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে ভারতের সিকিম রাজ্যে। প্রবল বৃষ্টিতে উত্তর সিকিমের লোনাক লেক উপচে পানি গড়িয়েছে তিস্তায়। লেকের চানথাং বাঁধ রক্ষায় অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিলে কূল উপচে প্লাবিত হয়েছে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকা নদীর অববাহিকা। ভারতের দুই রাজ্যের হড়কা বানের তাণ্ডব আসতে পারে বাংলাদেশেও। গত বুধবার থেকেই হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি। এতে করে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধার তিস্তা নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ওইসব জেলার নদীতীরবর্তী এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড মানুষদের সতর্ক করতে মাইকিং করছে।

ভারতের আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, গজলডোবা, দোমুহুনী, মেখালিগঞ্জ ও ঘিশের মতো নিচু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে এবং পরে সর্বোচ্চ পানি সমতল অতিক্রম করতে পারে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস সঠিক হলে আগামী দুদিন সতর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশকেও। আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে, আগামী দুদিন উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এতে করে বন্যার পানি খানিকটা বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে পানির চাপ সামলাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে, যা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে চার লাখ কিউসেক ভাটিতে বাইপাস করতে সক্ষম। এই পরিস্থিতিতে গত পরশু বিকেল ৩টার পর থেকে তিস্তা অববাহিকায় উজানের ঢল প্রবেশ করতে শুরু করে।

আসন্ন বিপর্যয় মোকাবিলায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধার তিস্তা নদীতীরবর্তী এলাকায় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, তিস্তা ব্যারাজ ডিভিশনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় হতে হবে। দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন। তারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন এবং তিস্তা অববাহিকার চর ও সংলগ্ন গ্রামে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে এই অসময়ের বন্যায় আমন ধান নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। দেখা যায়, তিস্তা নদীর চরে উঠতি আমনের আধাপাকা ধান কেটে চরবাসী ঘরে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি কাটতে না পারা আমন ধানক্ষেতও পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। যে কোনো দুর্যোগে সবার আগে মানবিক বিপর্যয়ের দিকগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এজন্য বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় অসহায় মানুষ যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় পায়, এ ব্যাপারে বিশেষ যতœবান হতে হবে। দুর্গতদের কৃষিকাজে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি সহজ শর্তে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা দরকার।

বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো আমাদের সাধ্যের অধীন নয়। তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে মানুষের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। নদ-নদীর নাব্য রক্ষা করে একদিকে যেমন বন্যার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তেমনি সম্ভব ভাঙন ঠেকানো। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ভাটির দেশ। উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে। অভিন্ন নদীগুলোর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে উজানে থাকা ভারত ও নেপালের সঙ্গে এমন গঠনমূলক আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কাশিমপুর কারাগারে নারী কেলেঙ্কারি ঘটনায় আজিজুলের শাস্তির নয়ছয় (প্রথম পর্ব)

সিকিমের বাঁধ ভাঙা পানি ঢুকছে তিস্তায়, বাংলাদেশে অসময়ে বন্যার পদধ্বনি

আপডেট সময় ০৪:৩২:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩

গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ কমবেশি প্রতি বছর বন্যায় প্লাবিত হয়। কখনো এই বন্যা সহনশীল থাকে, আবার কখনো ভয়াল আকার ধারণ করে। বাংলাদেশের উজানে অবস্থিত ভারত। সম্প্রতি ভারতের উত্তর সিকিমের বাঁধ ভাঙা পানি ঢুকছে তিস্তায়, ফলে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে অসময়ে বন্যার পদধ্বনি। বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরে ‘হঠাৎ বন্যার ঝুঁকিতে ৫ জেলা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে ভারতের সিকিম রাজ্যে। প্রবল বৃষ্টিতে উত্তর সিকিমের লোনাক লেক উপচে পানি গড়িয়েছে তিস্তায়। লেকের চানথাং বাঁধ রক্ষায় অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিলে কূল উপচে প্লাবিত হয়েছে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকা নদীর অববাহিকা। ভারতের দুই রাজ্যের হড়কা বানের তাণ্ডব আসতে পারে বাংলাদেশেও। গত বুধবার থেকেই হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি। এতে করে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধার তিস্তা নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ওইসব জেলার নদীতীরবর্তী এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড মানুষদের সতর্ক করতে মাইকিং করছে।

ভারতের আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, গজলডোবা, দোমুহুনী, মেখালিগঞ্জ ও ঘিশের মতো নিচু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে এবং পরে সর্বোচ্চ পানি সমতল অতিক্রম করতে পারে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস সঠিক হলে আগামী দুদিন সতর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশকেও। আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে, আগামী দুদিন উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এতে করে বন্যার পানি খানিকটা বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে পানির চাপ সামলাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে, যা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে চার লাখ কিউসেক ভাটিতে বাইপাস করতে সক্ষম। এই পরিস্থিতিতে গত পরশু বিকেল ৩টার পর থেকে তিস্তা অববাহিকায় উজানের ঢল প্রবেশ করতে শুরু করে।

আসন্ন বিপর্যয় মোকাবিলায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধার তিস্তা নদীতীরবর্তী এলাকায় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, তিস্তা ব্যারাজ ডিভিশনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় হতে হবে। দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন। তারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন এবং তিস্তা অববাহিকার চর ও সংলগ্ন গ্রামে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে এই অসময়ের বন্যায় আমন ধান নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। দেখা যায়, তিস্তা নদীর চরে উঠতি আমনের আধাপাকা ধান কেটে চরবাসী ঘরে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। পাশাপাশি কাটতে না পারা আমন ধানক্ষেতও পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। যে কোনো দুর্যোগে সবার আগে মানবিক বিপর্যয়ের দিকগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এজন্য বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় অসহায় মানুষ যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় পায়, এ ব্যাপারে বিশেষ যতœবান হতে হবে। দুর্গতদের কৃষিকাজে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি সহজ শর্তে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা দরকার।

বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো আমাদের সাধ্যের অধীন নয়। তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে মানুষের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। নদ-নদীর নাব্য রক্ষা করে একদিকে যেমন বন্যার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তেমনি সম্ভব ভাঙন ঠেকানো। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ভাটির দেশ। উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে। অভিন্ন নদীগুলোর গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে উজানে থাকা ভারত ও নেপালের সঙ্গে এমন গঠনমূলক আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।