ঢাকা ০১:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

২ দিন পর পদ্মা সেতুতে চলবে ট্রেন, উচ্ছ্বসিত মাদারীপুরের মানুষ

আর দুই দিন পর মাদারীপুরের মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষিত ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চলাচলের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে মাদারীপুরের মানুষের মনে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের বন্যা। তারা ট্রেনে করে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে উদগ্রীব হয়ে আছেন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য সরকার পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ২০১৬ সালে অনুমোদন করে। প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার পথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এই পুরো পথটি এখনও নির্মাণ না হওয়াতে আপাতত ঢাকা থেকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ এখন ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত। রেলপথের এই অংশই আপাতত উদ্বোধন করবে সরকার। এরপর এই পথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনসাধারণের চলাচলের জন্য বাণিজ্যিক ট্রেন চালানো হবে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ফরিদপুর গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে ঢাকার সাথে নিরাপদ যোগাযোগ সম্ভব হবে। এতে গণপরিবহনের একচেটিয়া প্রভাব ও যাতায়াতে বেশি ভাড়া থেকে বাঁচবে এ অঞ্চলের মানুষ।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর এলাকার বাসিন্দা মাহতাব হোসেন (৩২) বেসরকারি এই চাকরিজীবী বলেন, ঈদে ঢাকা থেকে আসতে হয় গাদাগাদি করে। এসময় গণপরিবহনগুলো ইচ্ছেমত ভাড়া বাড়িয়ে নেয়। আমাদের বাধ্য হয়েও আসতে হয়। ট্রেন চালু হওয়ায় যে আমরা খুশি তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই ট্রেনে অন্যসময় তো বটেই বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে সাশ্রয়ী মূল্যে বাড়িতে ফিরতে পারব। ঈদের বোনাসের নামে বাসের যাত্রীদের মতো এখানে পটেককাটার সুযোগ থাকবে না। আমি মনে করি এসব কারণে রেল এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীর চর এলাকার বাসিন্দা সুজন মাহমুদ (২৯) বলেন, রেললাইন দিয়ে মাঝে মাঝে শব্দ পাই ট্রায়াল ট্রেন চলার। গত দুইদিন ধরে রেললাইন পরিষ্কার করছে ও দফায় দফায় ট্রায়াল ট্রেন চলছে। ট্রেনের শব্দে যেন আর তর সইছে না আমাদের। যে পদ্মা নদীতে আগে ফেরি-লঞ্চে পার হতাম সেই পদ্মা সেতুতে এখন ট্রেন চলবে ভাবতেই স্বপ্ন মনে হয়।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার শিবচর বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী সবুজ মোল্লা (৩৪) বলেন, ব্যবসার কাজে মাঝে মধ্যেই ঢাকায় যেতে হয়।এখান থেকে ভেঙে ভেঙে গেলে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকার বেশি খরচ হত। ট্রেন চালু হলে নিশ্চয়ই এত খরচ হবে না। পাশাপাশি মালামালও ট্রেনে করে নিয়ে আসতে পারব।

মাদারীপুরের শিবচর বরহামগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত ত্রয়ী (২২) বলেন, আমি কখনও ট্রেনে উঠিনি। পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলার খবর শুনে আগেই বাসায় বলে রেখেছি যেদিন প্রথম ট্রেন চলবে সেদিনই আমরা পরিবারের সবাই মিলে ট্রেনে ঢাকা যাব এবং ট্রেনে করেই ফিরে আসব।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রিফাত হাসনাত (২৩) বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে ঠিক করে রেখেছি উদ্বোধনের দিনে সুযোগ থাকলে ট্রেনে উঠব। ওই দিন উঠতে না পারলে যেদিন প্রথম ট্রেন চলবে সেদিনই উঠব। ১০ তারিখে উঠতে পারি আর না পারি ট্রেন চলাচল দেখার জন্য হলেও ঢাকা যাব।

প্রসঙ্গত, ১০ অক্টোবর ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ উদ্বোধন করতে ট্রেনে চড়ে শিবচর হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ভাঙ্গা উপজেলা সদরের কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়াম মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় দুপুর ২টার দিকে বক্তব্য দেবেন তিনি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে

২ দিন পর পদ্মা সেতুতে চলবে ট্রেন, উচ্ছ্বসিত মাদারীপুরের মানুষ

আপডেট সময় ০১:১৭:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ অক্টোবর ২০২৩

আর দুই দিন পর মাদারীপুরের মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষিত ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চলাচলের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে মাদারীপুরের মানুষের মনে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের বন্যা। তারা ট্রেনে করে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে উদগ্রীব হয়ে আছেন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য সরকার পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ২০১৬ সালে অনুমোদন করে। প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার পথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এই পুরো পথটি এখনও নির্মাণ না হওয়াতে আপাতত ঢাকা থেকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ এখন ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত। রেলপথের এই অংশই আপাতত উদ্বোধন করবে সরকার। এরপর এই পথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনসাধারণের চলাচলের জন্য বাণিজ্যিক ট্রেন চালানো হবে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ফরিদপুর গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে ঢাকার সাথে নিরাপদ যোগাযোগ সম্ভব হবে। এতে গণপরিবহনের একচেটিয়া প্রভাব ও যাতায়াতে বেশি ভাড়া থেকে বাঁচবে এ অঞ্চলের মানুষ।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর এলাকার বাসিন্দা মাহতাব হোসেন (৩২) বেসরকারি এই চাকরিজীবী বলেন, ঈদে ঢাকা থেকে আসতে হয় গাদাগাদি করে। এসময় গণপরিবহনগুলো ইচ্ছেমত ভাড়া বাড়িয়ে নেয়। আমাদের বাধ্য হয়েও আসতে হয়। ট্রেন চালু হওয়ায় যে আমরা খুশি তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই ট্রেনে অন্যসময় তো বটেই বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে সাশ্রয়ী মূল্যে বাড়িতে ফিরতে পারব। ঈদের বোনাসের নামে বাসের যাত্রীদের মতো এখানে পটেককাটার সুযোগ থাকবে না। আমি মনে করি এসব কারণে রেল এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীর চর এলাকার বাসিন্দা সুজন মাহমুদ (২৯) বলেন, রেললাইন দিয়ে মাঝে মাঝে শব্দ পাই ট্রায়াল ট্রেন চলার। গত দুইদিন ধরে রেললাইন পরিষ্কার করছে ও দফায় দফায় ট্রায়াল ট্রেন চলছে। ট্রেনের শব্দে যেন আর তর সইছে না আমাদের। যে পদ্মা নদীতে আগে ফেরি-লঞ্চে পার হতাম সেই পদ্মা সেতুতে এখন ট্রেন চলবে ভাবতেই স্বপ্ন মনে হয়।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার শিবচর বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী সবুজ মোল্লা (৩৪) বলেন, ব্যবসার কাজে মাঝে মধ্যেই ঢাকায় যেতে হয়।এখান থেকে ভেঙে ভেঙে গেলে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকার বেশি খরচ হত। ট্রেন চালু হলে নিশ্চয়ই এত খরচ হবে না। পাশাপাশি মালামালও ট্রেনে করে নিয়ে আসতে পারব।

মাদারীপুরের শিবচর বরহামগঞ্জ সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত ত্রয়ী (২২) বলেন, আমি কখনও ট্রেনে উঠিনি। পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলার খবর শুনে আগেই বাসায় বলে রেখেছি যেদিন প্রথম ট্রেন চলবে সেদিনই আমরা পরিবারের সবাই মিলে ট্রেনে ঢাকা যাব এবং ট্রেনে করেই ফিরে আসব।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রিফাত হাসনাত (২৩) বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে ঠিক করে রেখেছি উদ্বোধনের দিনে সুযোগ থাকলে ট্রেনে উঠব। ওই দিন উঠতে না পারলে যেদিন প্রথম ট্রেন চলবে সেদিনই উঠব। ১০ তারিখে উঠতে পারি আর না পারি ট্রেন চলাচল দেখার জন্য হলেও ঢাকা যাব।

প্রসঙ্গত, ১০ অক্টোবর ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ উদ্বোধন করতে ট্রেনে চড়ে শিবচর হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ভাঙ্গা উপজেলা সদরের কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়াম মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় দুপুর ২টার দিকে বক্তব্য দেবেন তিনি।