ঢাকা ০৮:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লা চান্দিনায় প্রেম করায় কলেজছাত্রীকে হেনস্থা, সালিশ চলাকালে আত্মহত্যা

 

কুমিল্লার চান্দিনায় প্রেমিকের কাছে প্রতারিত হয়ে গ্রাম্য সালিশে উপস্থিত মাতবরদের অশালীন কথা শুনে সহ্য করতে না পেরে সালিশ চলাকালে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক কলেজছাত্রী। প্রেমিকের প্রতারণা ও গ্রাম্য মাতবরদের নোংরা কথায় নিজের প্রাণ দিলেন ১৮ বছর বয়সি কলেজছাত্রী আমেনা আক্তার।

এ ঘটনায় মৃতের পিতা বাদী হয়ে প্রেমিক গাজী বিল্লাল, গ্রাম্য মাতবরসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে আসামি করে শুক্রবার থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের আলিকামোড়া গ্রামে ওই কলেজছাত্রী আত্মহত্যা করেন।

নিহত আমেনা আক্তার কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার আলিকামোড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তিনি চান্দিনা মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

জানা যায়, আমেনা আক্তারের সঙ্গে একই গ্রামের হাসেম প্রধানের ছেলে গাজী বিল্লাল হোসেনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে গড়ে উঠে। সম্প্রতি আমেনা আক্তারের পরিবার তার জন্য বিয়ে ঠিক করায় ওই বিয়েতে অসম্মতি জানিয়ে নিজের প্রেমের কথা পরিবারকে জানায়। আর তাতে বিয়ে ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীতে আমেনা আক্তার তার প্রেমিক বিল্লালকে বিয়ে করার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তার সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে প্রেমিক বিল্লাল। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নানা রকম গুঞ্জন সৃষ্টি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকালে দুই পরিবারের মাঝামাঝি আনোয়ার খন্দকারের বাড়িতে একটি সালিশের আয়োজন করা হয়।

ওই সালিশে ছেলের পরিবারের লোকজন এবং বেশ কয়েকজন মাতবর ছেলের পক্ষ নিয়ে কুৎসা রটিয়ে মেয়েকে আপত্তিকর কথা শোনায়। এসব সহ্য করতে না পেরে সালিশ চলাকালে ওই কলেজছাত্রী বাড়িতে গিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

নিহতের বড় ভাই ফারুক হোসেন জানান, আমরা গরিব, আর তারা (ছেলের পরিবার) বড় লোক। এই কারণে আমার বোনের প্রেম মেনে না নিয়ে উল্টো আমার বোনকে অকথ্য ভাষায় কথা বলে অপমানিত করেন তারা। আর মাতবররাও পক্ষপাতিত্ব করে যা-তা কথা বলে টাকার বিনিময়ে আমার বোনের প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করছিলেন। এসব কিছুই সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে আমার বোন। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

বিষয়টি জানতে অভিযুক্ত প্রেমিক গাজী বিল্লালের বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করতে চাইলে তারা আত্মগোপনে থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে মাইজখার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ সেলিম প্রধান জানান, দুইজনের মধ্যে প্রেম ও বেশ কয়েকজন মাতবরের কুৎসা রটানোর ঘটনা সত্য বলে আমি জেনেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার ওসি মো. সাহাবুদ্দীন খান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত শেষে মামলা নিয়েছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কুমিল্লা চান্দিনায় প্রেম করায় কলেজছাত্রীকে হেনস্থা, সালিশ চলাকালে আত্মহত্যা

আপডেট সময় ১১:০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ অক্টোবর ২০২৩

 

কুমিল্লার চান্দিনায় প্রেমিকের কাছে প্রতারিত হয়ে গ্রাম্য সালিশে উপস্থিত মাতবরদের অশালীন কথা শুনে সহ্য করতে না পেরে সালিশ চলাকালে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক কলেজছাত্রী। প্রেমিকের প্রতারণা ও গ্রাম্য মাতবরদের নোংরা কথায় নিজের প্রাণ দিলেন ১৮ বছর বয়সি কলেজছাত্রী আমেনা আক্তার।

এ ঘটনায় মৃতের পিতা বাদী হয়ে প্রেমিক গাজী বিল্লাল, গ্রাম্য মাতবরসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে আসামি করে শুক্রবার থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের আলিকামোড়া গ্রামে ওই কলেজছাত্রী আত্মহত্যা করেন।

নিহত আমেনা আক্তার কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার আলিকামোড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তিনি চান্দিনা মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

জানা যায়, আমেনা আক্তারের সঙ্গে একই গ্রামের হাসেম প্রধানের ছেলে গাজী বিল্লাল হোসেনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে গড়ে উঠে। সম্প্রতি আমেনা আক্তারের পরিবার তার জন্য বিয়ে ঠিক করায় ওই বিয়েতে অসম্মতি জানিয়ে নিজের প্রেমের কথা পরিবারকে জানায়। আর তাতে বিয়ে ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীতে আমেনা আক্তার তার প্রেমিক বিল্লালকে বিয়ে করার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তার সঙ্গে প্রতারণা শুরু করে প্রেমিক বিল্লাল। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় নানা রকম গুঞ্জন সৃষ্টি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকালে দুই পরিবারের মাঝামাঝি আনোয়ার খন্দকারের বাড়িতে একটি সালিশের আয়োজন করা হয়।

ওই সালিশে ছেলের পরিবারের লোকজন এবং বেশ কয়েকজন মাতবর ছেলের পক্ষ নিয়ে কুৎসা রটিয়ে মেয়েকে আপত্তিকর কথা শোনায়। এসব সহ্য করতে না পেরে সালিশ চলাকালে ওই কলেজছাত্রী বাড়িতে গিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

নিহতের বড় ভাই ফারুক হোসেন জানান, আমরা গরিব, আর তারা (ছেলের পরিবার) বড় লোক। এই কারণে আমার বোনের প্রেম মেনে না নিয়ে উল্টো আমার বোনকে অকথ্য ভাষায় কথা বলে অপমানিত করেন তারা। আর মাতবররাও পক্ষপাতিত্ব করে যা-তা কথা বলে টাকার বিনিময়ে আমার বোনের প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করছিলেন। এসব কিছুই সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে আমার বোন। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

বিষয়টি জানতে অভিযুক্ত প্রেমিক গাজী বিল্লালের বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগ করতে চাইলে তারা আত্মগোপনে থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে মাইজখার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ সেলিম প্রধান জানান, দুইজনের মধ্যে প্রেম ও বেশ কয়েকজন মাতবরের কুৎসা রটানোর ঘটনা সত্য বলে আমি জেনেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

এ ব্যাপারে চান্দিনা থানার ওসি মো. সাহাবুদ্দীন খান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত শেষে মামলা নিয়েছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।