ঢাকা ০৮:২০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
অসীম সাহসিকতা ও ধৈর্যের মাধ্যমে সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে : জামায়াতের নায়েবে আমির ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮১ মন্ত্রিপরিষদ সচিব হলেন ড. শেখ আব্দুর রশীদ সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা হলেন কাউন্সিলর রংপুর সিটি কর্পোরেশন এর ৩৩ টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করবেন যে সকল সরকারি কর্মকর্তাগন মুরাদনগরে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান: ৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা তৈরী হতে চলেছে উন্নতমানের বাংলাদেশী ড্রোন কুমিল্লার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকালে বাংলাদেশী নাগরিক আটক বিগত সময়ে মালয়েশিয়া কলিং ভিসা জালিয়াতি .বলেছেন প্রবাসী ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন। বেসিক ব্যাংকে টেন্ডার সিন্ডিকেটে গোপালগঞ্জের ভূত সক্রিয়, মানছে না হাইকোর্টের নির্দেশনা! হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি সরকার : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ধর্ষণের পর চলন্ত ট্রেনে হত্যা করে কিশোরীকে ফেলে দেন সৎ বাবা

যশোরে কিশোরী আঁখি মনিকে ধর্ষণ ও চলন্ত ট্রেনের ভেতর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে সৎ পিতা মিন্টু সরদার। মঙ্গলবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদ আসামির জবানবন্দি গ্রহণ শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। মিন্টু সরদার ঝিনাইদহের মহেশপুরের দাড়িয়াপুর গ্রামের স্কুলপাড়ার সলেমান সরদারের ছেলে।

মিন্টু সরদার জানান, পালিত মেয়ে আঁখি মনি যশোরের চৌগাছার বলুহর মেলা দেখতে গেছে বলে জানতো মিন্টু। মেয়ে আঁখি মনিকে না পেয়ে মা খোঁজাখুজি করতে থাকে। বিকেলে আঁখি মনিকে খোঁজার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে বলুহর মেলায় এসে আঁখি মনিকে খুঁজে পায় মিন্টু। রাতে তারা মেলায় ছিল। এরপর আঁখি মনিকে যশোর রেল স্টেশন দেখানোর কথা বলে যশোর আসে। মিন্টু আঁখি মনিকে নিয়ে স্টেশনের পাশে বৈকালী নামে একটি হোটেলে ওঠে। হোটেলে মিন্টু তাকে ধর্ষণ করে। পরে আঁখি মনিকে আবারো বলুহর মেলায় নিয়ে যায় মিন্টু। রাতে ফিরে স্টেশনের পাশে তাকে ধর্ষণ করে এবং ট্রেনে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ট্রেনের মধ্যে আঁখি মনি সব ঘটনা বাড়ি যেয়ে বলে দেবে বলে মিন্টুকে হুমকি দেয়। এরপর মিন্টু আঁখি মনিকে ট্রেনের গেটের কাছে নিয়ে হাঁটু দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। মিন্টু বাড়ি গিয়ে আঁখি মনিকে খুঁজে পায়নি বলে জানায়। মিন্টু আঁখির পায়ের নুপুর ও ২ হাজার টাকা আবর্জনার মধ্যে লুকিয়ে রাখে। তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করেছে।

যশোর সদরের সাতমাইল-মথুরাপুর রেললাইনের পাশ থেকে আঁখির লাশ উদ্ধারের পর ডিবি পুলিশ মিন্টু সরদারকে আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে বাড়ির পাশে পুঁতে রাখা ২ হাজার টাকা ও নিহতের পায়ের নূপুর উদ্ধার করে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন।

পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে প্রেসব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর আঁখি মনি বাড়ির বাইরে ছিলো। এ সময় তাকে খুঁজে আনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় সৎ পিতা মিন্টু সরদার। পথে তাদের দেখা হলে আঁখি মনিকে প্রলোভন দেখিয়ে চৌগাছার বলুহ দেওয়ানের মেলায় নিয়ে যায় মিন্টু সরদার। সেখানে ঘোরাঘুরি শেষে পরদিন রবিবার তাকে যশোরে নিয়ে যায়। দুপুর ১টার দিকে যশোর রেলস্টেশনের বৈকালী আবাসিক হোটেলে পিতা কন্যা পরিচয়ে রুম নেয় মিন্টু সরদার। ওই হোটেলের ভেতর আঁখি মনিকে ধর্ষণ করে সৎপিতা। পরে সন্ধ্যায় রেলস্টেশনের পশ্চিমের এক পাশের ঝোপের ভেতর নিয়ে আঁখি মনিকে ফের ধর্ষণ করে মিন্টু সরদার। এরপর রাত সোয়া ১১টার দিকে কোটচাঁদপুর যাওয়ার জন্য সৈয়দপুরগামী সীমান্ত এক্সপ্রেসে আঁখি মনিকে নিয়ে ওঠে সে। কিন্তু বাড়ি গিয়ে সবকিছু ফাঁস করে দিতে পারে এই ভয়ে ট্রেনের ভেতর আঁখি মনিকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মিন্টু সরদার। পরে ট্রেনটি যশোরের সাতমাইল ও মথুরাপুরের মাঝামাঝি স্থানে পৌঁছালে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় সৎ পিতা।

এই হত্যাকাণ্ডকে পৈশাচিক উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, ডিবি পুলিশ স্থানীয় জনতার সহায়তায় অভিযুক্ত মিন্টু সরদারকে আটক এবং পরে তার স্বীকারোক্তিকে বাড়ির পাশে আবর্জনার ভেতর পুঁতে রাখা আঁখি মনির ২ হাজার টাকা ও পায়ের নূপুর উদ্ধার করে। তিনি জানান, হত্যার ঘটনায় নিহতের মা নুরজাহান বেগম খুলনা রেলওয়ে থানায় মামলা করেছেন।

ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মিজানুর রহমান আটক মিন্টু সরদারকে মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করেন। এ সময় আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, আটক মিন্টু সরদার ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামের স্কুলপাড়ার সলেমান সরদারের ছেলে। এ পর্যন্ত সে ৩টি বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার বিয়ে করে মিন্টু সরদার। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে তালাক দিলে তিনি নুরজাহান বেগমকে মেয়ে আঁখি মনিসহ বিয়ে করে। আঁখি মনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছিমপুর গ্রামের তৌহিদুল ইসলামের মেয়ে। তৌহিদুল ইসলাম স্ত্রী নুরজাহান বেগমকে তালাক দিলে ৬ বছর আগে মিন্টু সরদারকে বিয়ে করেন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

অসীম সাহসিকতা ও ধৈর্যের মাধ্যমে সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে : জামায়াতের নায়েবে আমির

ধর্ষণের পর চলন্ত ট্রেনে হত্যা করে কিশোরীকে ফেলে দেন সৎ বাবা

আপডেট সময় ১২:৫৫:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

যশোরে কিশোরী আঁখি মনিকে ধর্ষণ ও চলন্ত ট্রেনের ভেতর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে সৎ পিতা মিন্টু সরদার। মঙ্গলবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদ আসামির জবানবন্দি গ্রহণ শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। মিন্টু সরদার ঝিনাইদহের মহেশপুরের দাড়িয়াপুর গ্রামের স্কুলপাড়ার সলেমান সরদারের ছেলে।

মিন্টু সরদার জানান, পালিত মেয়ে আঁখি মনি যশোরের চৌগাছার বলুহর মেলা দেখতে গেছে বলে জানতো মিন্টু। মেয়ে আঁখি মনিকে না পেয়ে মা খোঁজাখুজি করতে থাকে। বিকেলে আঁখি মনিকে খোঁজার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে বলুহর মেলায় এসে আঁখি মনিকে খুঁজে পায় মিন্টু। রাতে তারা মেলায় ছিল। এরপর আঁখি মনিকে যশোর রেল স্টেশন দেখানোর কথা বলে যশোর আসে। মিন্টু আঁখি মনিকে নিয়ে স্টেশনের পাশে বৈকালী নামে একটি হোটেলে ওঠে। হোটেলে মিন্টু তাকে ধর্ষণ করে। পরে আঁখি মনিকে আবারো বলুহর মেলায় নিয়ে যায় মিন্টু। রাতে ফিরে স্টেশনের পাশে তাকে ধর্ষণ করে এবং ট্রেনে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ট্রেনের মধ্যে আঁখি মনি সব ঘটনা বাড়ি যেয়ে বলে দেবে বলে মিন্টুকে হুমকি দেয়। এরপর মিন্টু আঁখি মনিকে ট্রেনের গেটের কাছে নিয়ে হাঁটু দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। মিন্টু বাড়ি গিয়ে আঁখি মনিকে খুঁজে পায়নি বলে জানায়। মিন্টু আঁখির পায়ের নুপুর ও ২ হাজার টাকা আবর্জনার মধ্যে লুকিয়ে রাখে। তার স্বীকারোক্তিতে পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করেছে।

যশোর সদরের সাতমাইল-মথুরাপুর রেললাইনের পাশ থেকে আঁখির লাশ উদ্ধারের পর ডিবি পুলিশ মিন্টু সরদারকে আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তিতে বাড়ির পাশে পুঁতে রাখা ২ হাজার টাকা ও নিহতের পায়ের নূপুর উদ্ধার করে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন।

পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে প্রেসব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর আঁখি মনি বাড়ির বাইরে ছিলো। এ সময় তাকে খুঁজে আনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় সৎ পিতা মিন্টু সরদার। পথে তাদের দেখা হলে আঁখি মনিকে প্রলোভন দেখিয়ে চৌগাছার বলুহ দেওয়ানের মেলায় নিয়ে যায় মিন্টু সরদার। সেখানে ঘোরাঘুরি শেষে পরদিন রবিবার তাকে যশোরে নিয়ে যায়। দুপুর ১টার দিকে যশোর রেলস্টেশনের বৈকালী আবাসিক হোটেলে পিতা কন্যা পরিচয়ে রুম নেয় মিন্টু সরদার। ওই হোটেলের ভেতর আঁখি মনিকে ধর্ষণ করে সৎপিতা। পরে সন্ধ্যায় রেলস্টেশনের পশ্চিমের এক পাশের ঝোপের ভেতর নিয়ে আঁখি মনিকে ফের ধর্ষণ করে মিন্টু সরদার। এরপর রাত সোয়া ১১টার দিকে কোটচাঁদপুর যাওয়ার জন্য সৈয়দপুরগামী সীমান্ত এক্সপ্রেসে আঁখি মনিকে নিয়ে ওঠে সে। কিন্তু বাড়ি গিয়ে সবকিছু ফাঁস করে দিতে পারে এই ভয়ে ট্রেনের ভেতর আঁখি মনিকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মিন্টু সরদার। পরে ট্রেনটি যশোরের সাতমাইল ও মথুরাপুরের মাঝামাঝি স্থানে পৌঁছালে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় সৎ পিতা।

এই হত্যাকাণ্ডকে পৈশাচিক উল্লেখ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, ডিবি পুলিশ স্থানীয় জনতার সহায়তায় অভিযুক্ত মিন্টু সরদারকে আটক এবং পরে তার স্বীকারোক্তিকে বাড়ির পাশে আবর্জনার ভেতর পুঁতে রাখা আঁখি মনির ২ হাজার টাকা ও পায়ের নূপুর উদ্ধার করে। তিনি জানান, হত্যার ঘটনায় নিহতের মা নুরজাহান বেগম খুলনা রেলওয়ে থানায় মামলা করেছেন।

ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মিজানুর রহমান আটক মিন্টু সরদারকে মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করেন। এ সময় আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, আটক মিন্টু সরদার ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামের স্কুলপাড়ার সলেমান সরদারের ছেলে। এ পর্যন্ত সে ৩টি বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার বিয়ে করে মিন্টু সরদার। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে তালাক দিলে তিনি নুরজাহান বেগমকে মেয়ে আঁখি মনিসহ বিয়ে করে। আঁখি মনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছিমপুর গ্রামের তৌহিদুল ইসলামের মেয়ে। তৌহিদুল ইসলাম স্ত্রী নুরজাহান বেগমকে তালাক দিলে ৬ বছর আগে মিন্টু সরদারকে বিয়ে করেন।