বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। এতে সাধারণ রোগীদের বাইরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা করাতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া দালালদের কারণে রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। হাসপাতালের কর্মকর্তা, স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিক ও (ডায়াগনস্টিক সেন্টার) মালিকেরা এই দালাল চক্র গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত শনিবার বেলা ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সমানে একদল তরুণ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের নাম মোসলেম হাসপাতাল এলাকায় তাঁর বাড়ি। জরুরি বিভাগের চারদিকে সারিবদ্ধ ইজিবাইক দাঁড়ানো। ইজিবাইকের সামনে চালক দাঁড়িয়ে। এ সময় হাসপাতাল থেকে বের হন এক রোগী। হাতে তাঁর একটি ব্যবস্থাপত্র। তিনি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দালালেরা রোগী ও তাঁর স্বজনদের নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা–নীরিক্ষা করানোর জন্য টানাটানি শুরু করেন।
নাম গোপন রাখার শর্তে এক দালাল বলেন, হাসপাতাল এলাকায় গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর এবং ফার্মেসির মালিকেরা হাসপাতালে কর্মরত ঝাড়ুদার, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ইজিবাইকচালকদের নিয়ে একটি দালাল চক্র তৈরি করেছে। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে পরীক্ষা–নিরীক্ষা লিখে দেওয়ার পর দালালেরা রোগীদের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের নিয়ে যায়। একজন রোগী নিয়ে আসতে পারলে একজন দালাল ১০০ টাকা পেয়ে থাকেন। একইভাবে সমপরিমাণ টাকা কমিশন পেয়ে থাকেন হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতালে এক্স–রে করাতে ২০০ টাকা, ইসিজি করাতে ৮০ টাকা, রক্তের পরীক্ষা (সিবিসি) করাতে ২০০ টাকা খরচ হয়। অপর দিকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্স–রে করাতে ৬০০ টাকা, ইসিজি করাতে লাগে ৭০০ টাকা, রক্তের পরীক্ষা (সিবিসি) পরীক্ষা বাবদ ১ হাজার ৭০০ টাকা খরচ করতে হয় বলে জানান ল্যাবের কর্মকর্ত। অর্থাৎ জেনারেল হাসপাতালের পরিবর্তে বাইরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে গেলে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা বেশি খরচ হয়।
বোরহানউদ্দিন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির প্রতিনিধি সুমন বলেন, হাসপাতালে দালাল চক্র একটি বড় সমস্যা। দালালদের তৎপরতা বন্ধে হাসপাতালের ভেতরে স্থায়ীভাবে পুলিশ বা আনসার মোতায়েন করার হলে দালান নির্মুল হবে।
হাসপাতালে দালাল চক্র সৃষ্টি করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহানউদ্দিন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির প্রতিনিধি সুমন বলেন,গুটিকয়েক অসাধু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের জন্য প্রতিটি বেসরকারি ক্লিনিকমালিককে লজ্জায় পড়তে হচ্ছে। জেলা প্রশাসন কঠোর হলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
টানা এক সপ্তাহ হাসপাতাল এলাকা ঘুরে কয়েক জন সক্রিয় দালালের নাম পাওয়া গেছে। এঁরা হলেন বোরহানউদ্দিন পৌর শহরের মোসলেম, রাবেয়া ১, রাবেয়া ২,কামাল, টাইগার ওরপে সুমন,রাশেদ,শাহনাজ পারভিন, সেফালি খাতুন, আকলিমা,মুন্নী, কমলা,রেনু,কাজলি,বাপ্পি, রানা, রুহুল আমিন সহ এমন আরো অনেকে।
দালাল চক্রের হস্তক্ষেপে রোগীদের অনেক অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের একজন কাচিয়া ইউনিয়ন আ: খালেক । তিনি বলেন, তাঁর বাবা মাঠে কাজ করতে গিয়ে কোমরে আঘাত পান। পরে দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক ব্যবস্থাপত্র নিয়ে এক দালাল ভালো চিকিৎসার কথা বলে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে আট ধরনের পরীক্ষা করানোর পর ওষুধ লিখে দেওয়া হয়। চিকিৎসা করাতে তাঁকে ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে।
বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে টি এইচ এ ডা: নিরুপম সরকার বলেন, দফায় দফায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে দালালদের তৎপরতা বন্ধে বৈঠক হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয় না। হাসপাতালে সার্বক্ষণিক পুলিশ অথবা আনসার সদস্য মোতায়েন হলে, ও আমাদের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, নিয়মিত তদারকি করা হলে দালালদের তৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব হবে।