ঢাকা ০৬:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
রাজবাড়ীতে মহাসড়কে গাছ ফেলে যানবাহনে ডাকাতি র‌্যাব-১৩ এর পৃথক অভিযানে ১৩১১ বোতল ফেনসিডিলসহ শীর্ষ ০৪ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কলেজ শিক্ষক জসিমের সিন্ডিকেটের অবৈধ ঔষধ ও চোরাই মোবাইলের রমরমা বাণিজ্য !! বেকারত্ব কমিয়ে আনা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য : নাহিদ ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস পালিত দেশের ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বরিস জনসনের টয়লেটে গিয়ে যে কাণ্ড ঘটালেন নেতানিয়াহু পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা: সিপিডি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বটতলা হাটে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ধামরাইয়ে ১৯৬ মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব

আড়িয়ল বিলে শাপলা কুড়িয়ে চলে জীবিকা,করছেন বাড়তি আয়

বির্স্তীণ আড়িয়ল বিলে শাপলা কুড়িয়ে একেকজন রোজ হাজার টাকা আয় করছেন। সকালে সূর্য ওঠার আগেই ছোট্র ডিঙ্গি কোষানৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শাপলা সংগ্রহের খুঁজে। দিনের কয়েক ঘন্টা কুড়ানো শাপলা বিক্রি করে স্থানীয়রা আয় করছেন হাজার হাজার টাকা।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর অংশে উপজেলার আড়িয়ল বিল পাড় এলাকার আলমপুর, লস্করপুর, গাদিঘাট, বাড়ৈখালী, মদনখালী, শ্রীধরপুর, ষোলঘর, নতুন বাজারের বিভিন্ন স্থানে বিকালে স্থানীয়ভাবে শাপলার বিকিকিনি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে আড়িয়ল বিল এলাকা থেকে অন্তত ১০-১২ ট্রাক শাপলা যাচ্ছে রাজধানীর শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ি, কারওয়ান বাজার, মিরপুর, সাভারসহ বিভিন্ন সবজির পাইকারির হাটবাজারে।

জীবন ও জীবিকার তাগিদে জীবনযুদ্ধে বিকল্প উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের শতশত বেকার মানুষ আড়িয়ল বিলের শাপলা কুড়িয়ে বিক্রির আয়ে সংসার চালাচ্ছেন। একাজে একেকজন হাজার টাকা কামাই করতে পারছেন বলে আনন্দ প্রকাশ করেছেন তারা।

জানা গেছে, শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বিখ্যাত আড়িয়ল বিলে বর্ষার মৌসুমে কোন ফসল হয়না। অসংখ্য মানুষ মাছ এই সিজনে বিলে মৎস্য শিকার ও শাপলা কুড়িয়ে জীবন নির্বাহ করছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আলমপুর ও গাদিঘাট এলাকায় বিল সংলগ্ন সড়কের পাশে নৌকা ভর্তি শাপলার পসরা। এসব শাপলা বিক্রি করা হচ্ছে পাইকারের কাছে। হেঁসে-খেলে, আনন্দ-উল্লাস করে গুনে গুনে নৌকা থেকে হাতে হাতে শাপলার আটি তোলা হচ্ছে ট্রাক-পিকআপ ভ্যানে। গাদিঘাট এলাকার সুমন খান, মো. মোশারফ, নুর হোসেন, আলপুরের আমির হোসেন, শাজাহান, দেলোয়ার, বলাই রামসহ স্থানীয় দিনমজুরা জানান, বছরের এই সময় তেমন কোন কাজ থাকেনা।

বর্ষার ৪ মাস বেকার থাকতে হয় তাদের। এই সময় মাছ ধরার পাশাপাশি আড়িয়ল বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শাপলা কুড়িয়ে স্থানীয় পাইকারের কাছে বিক্রি করেন। এতে রোজ ৭০০-১০০০ টাকা আয় করতে পারছেন। আড়িয়ল বিল পাড়ে প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের সংসার চলছে শাপলা বিক্রি করে।

আলমপুরের সোনারগাঁও গ্রামের মো. আয়নাল হক বলেন, স্থানীয়দের কুড়ানো শাপলা সংগ্রহ করে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারির হাটবাজারে বিক্রি করেন। প্রতি আটি (১০টি শাপলা) শাপলা ৩ টাকায় ক্রয় করছি। সামান্য লাভে পাইকারি বাজারে এসব শাপলা বিক্রি করা হবে। আমি ২ ট্রাক শাপলা বিক্রির জন্য ঢাকায় নিচ্ছি। লাভজনক হওয়ায় এলাকায় অনেকেই শাপলার ব্যবসা করছেন।

গাদিঘাটের আবুল হোসেন জানান, স্থানীয়রা বেকার সময় কাটাচ্ছেন বিলে শাপলা কুড়িয়ে। আর্থিকভাবে তারাও লাভবান হচ্ছেন। গাদিঘাট গ্রামেই প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের সংসার চলছে শাপলা বিক্রির আয়ে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে সবজি হিসেবে শাপলা এখন বেশ জনপ্রিয়।

রাজধানীর হাটবাজারে শাপলার কদর বাড়ছে। খোলা বাজারে শাপলার আটি (৫টি শাপলা) কেনাবেচা হচ্ছে ১০-২০ টাকা করে। স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা বলেছেন, শুষ্ক মৌসুমে আড়িয়ল বিলে ব্যাপক ধানের আবাদ হলেও বর্ষা মৌসুমে বির্স্তীণ ভূমি থাকে ১০-১২ ফুট পানির নিচে। এই সময়টায় খেটে খাওয়া অসংখ্য মানুষ বছরের কয়েক মাস আড়িয়ল বিলে মাছ শিকার ও শাপলা কুড়িয়ে জীবন নির্বাহ করেন।

তবে সতেচন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাঁসাড়া-বাড়ৈখালী সড়কের দক্ষিণ দিকে আলমপুর, লস্করপুর, শ্রীধরপুরে আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন ফসলি জমিতে হাউজিং ব্যবসায়ী সাইনবোর্ড সাটানোকে কেন্দ্র করে। এরই মধ্যে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্টরা ব্যবসায়ীরা সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি কৃষি জমি ভরাট করেছে।

এখনই এসব ভূমি সিন্ডিকেট ও মাটি খেকোদের দমানো না গেলে নয়াভিরাম প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরাপুর ও হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তণের কেন্দ্রস্থল আড়িয়ল বিলটি এভাবে ভরাট হতে থাকলে এটি হয়ত এক সময় বিলীন হয়ে যাবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজবাড়ীতে মহাসড়কে গাছ ফেলে যানবাহনে ডাকাতি

আড়িয়ল বিলে শাপলা কুড়িয়ে চলে জীবিকা,করছেন বাড়তি আয়

আপডেট সময় ০৪:০১:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৩

বির্স্তীণ আড়িয়ল বিলে শাপলা কুড়িয়ে একেকজন রোজ হাজার টাকা আয় করছেন। সকালে সূর্য ওঠার আগেই ছোট্র ডিঙ্গি কোষানৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শাপলা সংগ্রহের খুঁজে। দিনের কয়েক ঘন্টা কুড়ানো শাপলা বিক্রি করে স্থানীয়রা আয় করছেন হাজার হাজার টাকা।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর অংশে উপজেলার আড়িয়ল বিল পাড় এলাকার আলমপুর, লস্করপুর, গাদিঘাট, বাড়ৈখালী, মদনখালী, শ্রীধরপুর, ষোলঘর, নতুন বাজারের বিভিন্ন স্থানে বিকালে স্থানীয়ভাবে শাপলার বিকিকিনি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে আড়িয়ল বিল এলাকা থেকে অন্তত ১০-১২ ট্রাক শাপলা যাচ্ছে রাজধানীর শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ি, কারওয়ান বাজার, মিরপুর, সাভারসহ বিভিন্ন সবজির পাইকারির হাটবাজারে।

জীবন ও জীবিকার তাগিদে জীবনযুদ্ধে বিকল্প উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের শতশত বেকার মানুষ আড়িয়ল বিলের শাপলা কুড়িয়ে বিক্রির আয়ে সংসার চালাচ্ছেন। একাজে একেকজন হাজার টাকা কামাই করতে পারছেন বলে আনন্দ প্রকাশ করেছেন তারা।

জানা গেছে, শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বিখ্যাত আড়িয়ল বিলে বর্ষার মৌসুমে কোন ফসল হয়না। অসংখ্য মানুষ মাছ এই সিজনে বিলে মৎস্য শিকার ও শাপলা কুড়িয়ে জীবন নির্বাহ করছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার আলমপুর ও গাদিঘাট এলাকায় বিল সংলগ্ন সড়কের পাশে নৌকা ভর্তি শাপলার পসরা। এসব শাপলা বিক্রি করা হচ্ছে পাইকারের কাছে। হেঁসে-খেলে, আনন্দ-উল্লাস করে গুনে গুনে নৌকা থেকে হাতে হাতে শাপলার আটি তোলা হচ্ছে ট্রাক-পিকআপ ভ্যানে। গাদিঘাট এলাকার সুমন খান, মো. মোশারফ, নুর হোসেন, আলপুরের আমির হোসেন, শাজাহান, দেলোয়ার, বলাই রামসহ স্থানীয় দিনমজুরা জানান, বছরের এই সময় তেমন কোন কাজ থাকেনা।

বর্ষার ৪ মাস বেকার থাকতে হয় তাদের। এই সময় মাছ ধরার পাশাপাশি আড়িয়ল বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শাপলা কুড়িয়ে স্থানীয় পাইকারের কাছে বিক্রি করেন। এতে রোজ ৭০০-১০০০ টাকা আয় করতে পারছেন। আড়িয়ল বিল পাড়ে প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের সংসার চলছে শাপলা বিক্রি করে।

আলমপুরের সোনারগাঁও গ্রামের মো. আয়নাল হক বলেন, স্থানীয়দের কুড়ানো শাপলা সংগ্রহ করে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারির হাটবাজারে বিক্রি করেন। প্রতি আটি (১০টি শাপলা) শাপলা ৩ টাকায় ক্রয় করছি। সামান্য লাভে পাইকারি বাজারে এসব শাপলা বিক্রি করা হবে। আমি ২ ট্রাক শাপলা বিক্রির জন্য ঢাকায় নিচ্ছি। লাভজনক হওয়ায় এলাকায় অনেকেই শাপলার ব্যবসা করছেন।

গাদিঘাটের আবুল হোসেন জানান, স্থানীয়রা বেকার সময় কাটাচ্ছেন বিলে শাপলা কুড়িয়ে। আর্থিকভাবে তারাও লাভবান হচ্ছেন। গাদিঘাট গ্রামেই প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের সংসার চলছে শাপলা বিক্রির আয়ে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে সবজি হিসেবে শাপলা এখন বেশ জনপ্রিয়।

রাজধানীর হাটবাজারে শাপলার কদর বাড়ছে। খোলা বাজারে শাপলার আটি (৫টি শাপলা) কেনাবেচা হচ্ছে ১০-২০ টাকা করে। স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা বলেছেন, শুষ্ক মৌসুমে আড়িয়ল বিলে ব্যাপক ধানের আবাদ হলেও বর্ষা মৌসুমে বির্স্তীণ ভূমি থাকে ১০-১২ ফুট পানির নিচে। এই সময়টায় খেটে খাওয়া অসংখ্য মানুষ বছরের কয়েক মাস আড়িয়ল বিলে মাছ শিকার ও শাপলা কুড়িয়ে জীবন নির্বাহ করেন।

তবে সতেচন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাঁসাড়া-বাড়ৈখালী সড়কের দক্ষিণ দিকে আলমপুর, লস্করপুর, শ্রীধরপুরে আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন ফসলি জমিতে হাউজিং ব্যবসায়ী সাইনবোর্ড সাটানোকে কেন্দ্র করে। এরই মধ্যে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্টরা ব্যবসায়ীরা সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি কৃষি জমি ভরাট করেছে।

এখনই এসব ভূমি সিন্ডিকেট ও মাটি খেকোদের দমানো না গেলে নয়াভিরাম প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরাপুর ও হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তণের কেন্দ্রস্থল আড়িয়ল বিলটি এভাবে ভরাট হতে থাকলে এটি হয়ত এক সময় বিলীন হয়ে যাবে।