শেরপুরে শারীরিক প্রতিবন্ধী মোটরসাইকেল মিস্ত্রী খোরশেদ আলমের বিয়ে হলো ধুমদামে। খোরশেদ আলম সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়নের মধ্য বয়ড়া গ্রামের মোহন মিয়া ও খোদেজা বেগমের সন্তান। তারা ৪ ভাইবোন। তবে তার মতো কেউ প্রতিবন্ধী নয়।
১১ আগস্ট শুক্রবার রাতে শহরের দিঘারপাড় মহল্লার বাচ্চু মিয়ার কন্যা বর্ষা আক্তারের সাথে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় এবং ১২ আগস্ট শনিবার দুপুরে তার নিজ বাড়িতে পাঁচশ লোককে দাওয়াত দিয়ে জমজমাট বউভাত অনুষ্ঠান করা হয়।
খোরশেদ আলমের বাবা মোহন মিয়া জানায়, খোরশেদ আলম জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। বর্তমানে তার বয়স ২৮ বছর। বয়স ২৮ হলেও দৈহিক উচ্চতা মাত্র সাড়ে ৩ ফুট। অর্থাভাবে তাকে পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়াতে পারিনি। দরিদ্রতার কারণে এবং জীবিকার তাগিদে প্রায় ১৪ বছর আগে শহরের তিনআনী বাজরে একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজে শ্রমিকের কাজে যোগ দেয় এবং অদ্যাবদি সে ওখানেই কাজ করছে। এর আগে তিনি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় দৈন্যতার কারণে একটি সার্কাস দলে যোগ দেয় সে।
খোরশেদের মা খোদেজা বেগম জানায়, প্রথমে তার ছেলের কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় মন ভেঙে যায়। এরপর ধৈর্য ধরে থেকে অবশেষে তার জন্য মেয়ে পাওয়া যায়। শারীরিক গঠন যাই হোক বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছিল তাই তার বিয়ের জন্য অনেকদিন থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। অবশেষে মেয়ে পেয়ে গেলাম এবং বিয়েও দিয়ে দিলাম। মেয়ের বাবাও হতদরিদ্র তাই কোনো রকম যৌতুক ছাড়াই পুরো বিয়ের খরচ আমরাই বহন করছি।
খোরশেদ জানায়, প্রথমে তাকে কোথাও কাজে না নিলেও একপর্যায়ে শহরের তিনআনী বাজার মহল্লার আমিনুল ইসলামের মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজে নেয়। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিন দিন তার কাজের দক্ষতায় তাকে শহরে পরিচিতি করে দেয় এবং সে এখন দক্ষ মোটরসাইকেল মিস্ত্রী।
স্থানীয়রা জানায়, খোরশেদ একজন প্রতিবন্ধী হয়েও পিছপা হয়নি। বেছে নেয়নি ভিক্ষাবৃত্তি বা অন্যকোনো পেশা। বেছে নিয়েছে মেকানিকের কাজ। তাই সে বর্তমানে একজন দক্ষ মিস্ত্রী হয়েছে।
মোটরসাইকেল গ্যারেজের মালিক আমিনুল ইসলাম জানায়, খোরশেদকে প্রথমে কেউ কাজে না নিলেও আমি তাকে কাজ দিয়েছি এবং খুব অল্প দিনেই সে ভালো কাজ করা শুরু করে। পরবর্তীতে তাকে অনেক গ্যারেজ থেকে ডাকা হলেও সে যায়নি এই বলে যে, শুরুতে তাকে যারা প্রতিবন্ধী মনে করে অবহেলা করে কাজে নেয়নি, এখন তারা কাজ শেখার পর কেন ডাকছে? তাই সে ভালো অফার পেয়েও তার মালিককে ছেড়ে যায়নি। খোরশোদ শুধু কজেই নয়, ব্যবহারেও সবার কাছে খুবই প্রিয়। তার কাছে কোনো মেয়ে বিয়ে না দিতে চাইলেও আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করে এই মেয়েকে পেয়ে বিয়ে দিলাম। তারাও খুব গরিব তাই মেয়ের বাবার কোনো খরচ করতে দেওয়া হয়নি।
খোরশেদের বিয়ে উপলক্ষে বাড়ি-ঘর সাজানো হয় রংবেরঙের কাপড় দিয়ে। বাড়ির সামনে তৈরি করা হয় মনোরম গেট। শনিবার দুপুরে আয়োজন করা হয় বউভাত অনুষ্ঠান। আশপাশের প্রায় পাঁচশতাধিক মানুষকে দাওয়াতও দেওয়া হয়।
মাত্র সাড়ে ৩ ফুট লম্বা শারীরিক প্রতিবন্ধী খোরশেদের সাথে প্রায় ৫ ফুট লম্বা কন্যার সাথে বিয়ে দেখতে আশপাশের মানুষ ভিড় করে তাদের বাড়িতে। কেউ কেউ তাকে নিয়ে সেলফি তোলে।