ঢাকা ০৭:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে বড় ধাক্কা খেল ইংল্যান্ড লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহ-ইসরাইল সংঘর্ষ অব্যাহত পরিচালকদের সঙ্গে প্রেম করে কাজ পান স্বস্তিকা ‘পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন বন্ধে ১ নভেম্বর থেকে অভিযান’ নির্বাচনের রোডম্যাপ জানতে চেয়েছে বিএনপি র‍্যাব-১৩ দিনাজপুর হতে চাঞ্চল্যকর তহিদুর রহমান বাঙ্গু হত্যা মামলার প্রধান আসামী গ্রেফতার আশুলিয়ায় লতিফ মন্ডল ও আক্কাস আলী মন্ডল মূর্তি মান আতংকের নাম ফাইল আটকে কৌশলে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠে এসেছে রাজস্ব কর্মকর্তাদের মতলব দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতা ও বিকাশ এজেন্টের মালিক আজাদের বিরুদ্ধে জোর করে জমির দলিল নিয়ে সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ

নতুন জঙ্গি সংগঠন “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া”এর সদস্য আবু বক্করসহ ০৪ সদস্যকে আটক করেছে র‍্যাব

র‌্যাব ফোর্সেস প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ০৩ হাজার এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ০২ হাজার জঙ্গিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।

যখনই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়েছে তখনই র‌্যাব ফোর্সের সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে, জঙ্গিবাদ বিরোধী জনমত গড়তে এবং জনসম্পৃক্ততা অর্জনেও র‌্যাব ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ২৩ আগস্ট ২০২২ তারিখে কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ০৮ জন তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে,উক্ত নিখোঁজের ঘটনায় নিখোঁজ তরুণদের পরিবার কুমিল্লার কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

গণমাধ্যমসমূহে বহুলভাবে আলোচিত নিখোঁজের এই ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এর প্রেক্ষিতে র‌্যাব ফোর্সেস নিখোঁজদের উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র‌্যাব “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায় এবং র‌্যাব জানতে পারে যে, এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।

পরবর্তীতে অক্টোবর ২০২২ থেকে অদ্যাবধি দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ইতোমধ্যে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৭৮ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।

উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমান দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও উগ্রবাদী বই। এছাড়াও উদ্ধার করা হয় সংগঠন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও কন্টেন্ট। র‌্যাব কর্তৃক ইতোমধ্যে সংগঠনটির আমীর আনিসুর রহমান @মাহমুদ, সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমের প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন, সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও উপ প্রধান মানিক, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিবসহ অন্যান্যদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সংগঠনটির আমীর আনিসুর রহমান @মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার সাথে কেএনএফ এর প্রধান নাথাম বমের সুসম্পর্ক থাকায় কেএনএফ এর সাথে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয় এবং কেএনএফ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র জঙ্গিদের পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রশদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করতো।

বিভিন্ন সময়ে র‌্যাব ফোর্সেস এর পক্ষ থেকে এই সংগঠনের সদস্যরা যাতে সঠিক পথে ফিরে আসে এজন্য লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে তাদেরকে আহবান জানানো হয়। এছাড়াও ২০২১ সালে ভুল একটা পথকে সঠিক মনে করে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন এক মা এবং তিনি নিজেই তার একমাত্র ছেলেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে পাঠিয়েছিলেন।

অতঃপর তিনি র‌্যাবের ডি-র‌্যাডিকালাইজেশন এর মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে অনুতপ্ত হয়ে ছেলেকে ফিরে পেতে গত ০৯ নভেম্বর ২০২২ তারিখে র‌্যাবের সহায়তা কামনাসহ গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে তার সন্তান আবু বক্কর @রিয়াসাদ রাইয়ানসহ অন্যান্য তরুণদেরকে ফিরে আসার আকুতি জানান।

ঘরছাড়া সন্তানকে ফেরত পেতে মায়ের এমন আবেগঘন ব্যাকুলতা নজিরবিহীন। গতকাল রাতে র‌্যাব-১১ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে ১। আবু বক্কর @রিয়াসাদ রাইয়ান (১৬), পিতাঃ তানজিম মোহাম্মদ, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ, ২। মোঃ হাসান সাইদ (২৬), পিতাঃ ছোরাব আলী হাসান, ওসমানী নগর, সিলেট, ৩। শেখ আহমেদ মামুন (২৩), পিতাঃ শেখ শামসুল হক স্বপন, ওসমানী নগর, সিলেট এবং ৪। মোঃ ইয়াছিন (২১), পিতাঃ নুর মোহাম্মদ বেপারী, মাদারীপুর নামক ০৪ ব্যক্তি স্বেচ্ছায় হাজির হয় ও নিজেরদের’কে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র পলায়নকৃত সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয় এবং র‌্যাবের নিকট আইনগত সহযোগিতা চায়।

পরবর্তীতে র‌্যাব-১১ তাদের পরিচয় নিশ্চিত করণের নিমিত্তে ইতোপূর্বে র‌্যাব কর্তৃক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন জেলা হতে নিখোঁজ ৫৫ জন তরুণের নামীয় তালিকায় তাদের নাম দেখতে পেয়ে তাদেরকে আটক করে।

র‌্যাব ফোর্সেস কর্তৃক আটককৃতদের যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনগত সহায়তাসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের ব্যাপারে আশ্বাস প্রদান করা হয়।প্রাথমিকভাবে জানা যায় যে, তারা বিভিন্ন সময়ে তাদের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়’তে যোগদান করে।

পরবর্তীতে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা তাদেরকে ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তথাকথিত হিজরতের কথা বলে বা চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড়ে গমনে আগ্রহী করে। পার্বত্য অঞ্চলে গমনের পর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সহযোগিতায় সংগঠনটির সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম ও চিন্তাভাবনা দেখে তাদের ভুল ভাঙ্গে।

পরবর্তীতে উপরোক্ত ০৪ জনসহ আরো বেশ কিছু সদস্য সমতলে ফিরতে চাইলেও প্রশিক্ষণের সাথে জড়িত সদস্যরা তাদের ফিরতে দেয়নি।

উপরন্তু শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নির্দেশনায় তাদেরকে বন্দি রেখে নির্মম নির্যাতন করা হয়। পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে জোরপূর্বক রশদ পরিবহন, রান্নাবান্না, প্রশিক্ষণের গর্ত করা, ঘর বানানোসহ বিভিন্ন ধরণের কাজ করানো হত।

ইতোমধ্যে তারা ২০২২ সালের জুন মাসে সিপ্পি পাহাড় থেকে পালিয়ে রনি পাড়া এসে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে যাওয়ার রাস্তা খোঁজার সময় কেএনএফ সদস্যদের নিকট ধরা পড়ে এবং তাদেরকে বন্দি রেখে পুনরায় নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। তারা আবারও পালানোর চেষ্টা করলে তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।

পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে তারা অন্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পলায়ন করে এবং গত মার্চ মাসের প্রথম দিকে তারা সমতলে চলে আসে।

সমতলে এসে তারা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকে। বিভিন্ন সময়ে র‌্যাব ফোর্সেসের নিকট জঙ্গিদের আত্মসমর্পন ও ভুল বুঝতে পারা জঙ্গিদের আইনগত সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টি তারা জানতে পারে।

এছাড়াও, তারা সমতলে এসে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে তাদেরকে র‌্যাবের নিকট যাওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করে।

সর্বোপরি তারা আইনগত সহযোগিতা প্রাপ্তির আশায় আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতার স্থান থেকে র‌্যাবের নারায়ণগঞ্জ ব্যাটালিয়নে হাজির হয়,আবু বক্কর @রিয়াসাদ রাইয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে নারায়ণগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিল।

২০২১ সালে তার শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগ দেয় এবং ২০২২ সালের ফেব্রæয়ারিতে ১২ জনের দলের সাথে ৩য় ব্যাচে পাহাড়ে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে গমন করে। পাহাড়ে গমনের পর সে তার ভুল বুঝতে পারে।

সে বাড়িতে ফেরার জন্য পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেও প্রশিক্ষণের দায়িত্বে থাকা সদস্যরা তাকে যোগাযোগ করতে দেয়নি। এছাড়াও তার মা ইতোপূর্বে র‌্যাবের সহায়তায় গণমাধ্যমের মাধ্যমে তাকে দেশের জন্য কোনো ধরনের হুমকির কাজ, বিশৃঙ্খলা, নৃশংসতা ও অন্যায় কাজে সামিল না হতে অনুরোধ করে ফিরে আসার আহ্বান।

মোঃ হাসান সাঈদকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে স্থানীয় মাদ্রাসা হতে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করে,২০২১ সালে সূরা সদস্য মায়মুনের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগ দেয়।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের নভেম্বরে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে সূরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে পাহাড়ে গমন করে, পাহাড়ে যাওয়ার পর সে ভুল বুঝতে পারে এবং সাঈদসহ ৪-৫ জন দুই বার পালাতে চাইলেও তারা ধরা পড়ে যায় এবং বন্দি থেকে বেত্রাঘাতসহ বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের স্বীকার হয়।

শেখ আহমেদ মামুন’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিল, ২০২১ সালে সে সাঈদের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগ দেয়।

২০২১ সালের নভেম্বরে সে, সাঈদ ও আরো বেশ করয়েকজন তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে গমন করে, সাঈদের সাথে সেও ০২ বার পাহাড় হতে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে নির্যাতনের স্বীকার হয়।

মোঃ ইয়াসিন’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে এলাকায় ঘড়ি মেকানিক হিসেবে কাজ করত, ২০২১ সালে সে সিরাজের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগ দেয় এবং ২০২১ এর নভেম্বরে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে গমন করে।

পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম দেখে সে ভুল বুঝতে পারে এবং সমতলে ফিরে আসে।স্বেচ্ছায় হাজির হওয়া ০৪ জনকে যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া অনুস্বরণ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা

নতুন জঙ্গি সংগঠন “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া”এর সদস্য আবু বক্করসহ ০৪ সদস্যকে আটক করেছে র‍্যাব

আপডেট সময় ০৭:৩৭:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অগাস্ট ২০২৩

র‌্যাব ফোর্সেস প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের প্রায় ০৩ হাজার এবং হলি আর্টিজান হামলার পরবর্তী সময়ে প্রায় ০২ হাজার জঙ্গিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।

যখনই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়েছে তখনই র‌্যাব ফোর্সের সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে, জঙ্গিবাদ বিরোধী জনমত গড়তে এবং জনসম্পৃক্ততা অর্জনেও র‌্যাব ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ২৩ আগস্ট ২০২২ তারিখে কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ০৮ জন তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে,উক্ত নিখোঁজের ঘটনায় নিখোঁজ তরুণদের পরিবার কুমিল্লার কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

গণমাধ্যমসমূহে বহুলভাবে আলোচিত নিখোঁজের এই ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এর প্রেক্ষিতে র‌্যাব ফোর্সেস নিখোঁজদের উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র‌্যাব “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায় এবং র‌্যাব জানতে পারে যে, এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।

পরবর্তীতে অক্টোবর ২০২২ থেকে অদ্যাবধি দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ইতোমধ্যে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৭৮ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।

উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমান দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও উগ্রবাদী বই। এছাড়াও উদ্ধার করা হয় সংগঠন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও কন্টেন্ট। র‌্যাব কর্তৃক ইতোমধ্যে সংগঠনটির আমীর আনিসুর রহমান @মাহমুদ, সংগঠনের দাওয়াতী কার্যক্রমের প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন, সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও উপ প্রধান মানিক, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিবসহ অন্যান্যদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সংগঠনটির আমীর আনিসুর রহমান @মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার সাথে কেএনএফ এর প্রধান নাথাম বমের সুসম্পর্ক থাকায় কেএনএফ এর সাথে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয় এবং কেএনএফ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র জঙ্গিদের পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রশদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করতো।

বিভিন্ন সময়ে র‌্যাব ফোর্সেস এর পক্ষ থেকে এই সংগঠনের সদস্যরা যাতে সঠিক পথে ফিরে আসে এজন্য লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে তাদেরকে আহবান জানানো হয়। এছাড়াও ২০২১ সালে ভুল একটা পথকে সঠিক মনে করে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন এক মা এবং তিনি নিজেই তার একমাত্র ছেলেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে পাঠিয়েছিলেন।

অতঃপর তিনি র‌্যাবের ডি-র‌্যাডিকালাইজেশন এর মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে অনুতপ্ত হয়ে ছেলেকে ফিরে পেতে গত ০৯ নভেম্বর ২০২২ তারিখে র‌্যাবের সহায়তা কামনাসহ গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে তার সন্তান আবু বক্কর @রিয়াসাদ রাইয়ানসহ অন্যান্য তরুণদেরকে ফিরে আসার আকুতি জানান।

ঘরছাড়া সন্তানকে ফেরত পেতে মায়ের এমন আবেগঘন ব্যাকুলতা নজিরবিহীন। গতকাল রাতে র‌্যাব-১১ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে ১। আবু বক্কর @রিয়াসাদ রাইয়ান (১৬), পিতাঃ তানজিম মোহাম্মদ, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ, ২। মোঃ হাসান সাইদ (২৬), পিতাঃ ছোরাব আলী হাসান, ওসমানী নগর, সিলেট, ৩। শেখ আহমেদ মামুন (২৩), পিতাঃ শেখ শামসুল হক স্বপন, ওসমানী নগর, সিলেট এবং ৪। মোঃ ইয়াছিন (২১), পিতাঃ নুর মোহাম্মদ বেপারী, মাদারীপুর নামক ০৪ ব্যক্তি স্বেচ্ছায় হাজির হয় ও নিজেরদের’কে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র পলায়নকৃত সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয় এবং র‌্যাবের নিকট আইনগত সহযোগিতা চায়।

পরবর্তীতে র‌্যাব-১১ তাদের পরিচয় নিশ্চিত করণের নিমিত্তে ইতোপূর্বে র‌্যাব কর্তৃক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন জেলা হতে নিখোঁজ ৫৫ জন তরুণের নামীয় তালিকায় তাদের নাম দেখতে পেয়ে তাদেরকে আটক করে।

র‌্যাব ফোর্সেস কর্তৃক আটককৃতদের যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনগত সহায়তাসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের ব্যাপারে আশ্বাস প্রদান করা হয়।প্রাথমিকভাবে জানা যায় যে, তারা বিভিন্ন সময়ে তাদের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়’তে যোগদান করে।

পরবর্তীতে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা তাদেরকে ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তথাকথিত হিজরতের কথা বলে বা চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড়ে গমনে আগ্রহী করে। পার্বত্য অঞ্চলে গমনের পর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর সহযোগিতায় সংগঠনটির সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম ও চিন্তাভাবনা দেখে তাদের ভুল ভাঙ্গে।

পরবর্তীতে উপরোক্ত ০৪ জনসহ আরো বেশ কিছু সদস্য সমতলে ফিরতে চাইলেও প্রশিক্ষণের সাথে জড়িত সদস্যরা তাদের ফিরতে দেয়নি।

উপরন্তু শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নির্দেশনায় তাদেরকে বন্দি রেখে নির্মম নির্যাতন করা হয়। পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে জোরপূর্বক রশদ পরিবহন, রান্নাবান্না, প্রশিক্ষণের গর্ত করা, ঘর বানানোসহ বিভিন্ন ধরণের কাজ করানো হত।

ইতোমধ্যে তারা ২০২২ সালের জুন মাসে সিপ্পি পাহাড় থেকে পালিয়ে রনি পাড়া এসে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে যাওয়ার রাস্তা খোঁজার সময় কেএনএফ সদস্যদের নিকট ধরা পড়ে এবং তাদেরকে বন্দি রেখে পুনরায় নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। তারা আবারও পালানোর চেষ্টা করলে তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।

পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে তারা অন্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পলায়ন করে এবং গত মার্চ মাসের প্রথম দিকে তারা সমতলে চলে আসে।

সমতলে এসে তারা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকে। বিভিন্ন সময়ে র‌্যাব ফোর্সেসের নিকট জঙ্গিদের আত্মসমর্পন ও ভুল বুঝতে পারা জঙ্গিদের আইনগত সহযোগিতা প্রদানের বিষয়টি তারা জানতে পারে।

এছাড়াও, তারা সমতলে এসে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে তাদেরকে র‌্যাবের নিকট যাওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করে।

সর্বোপরি তারা আইনগত সহযোগিতা প্রাপ্তির আশায় আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতার স্থান থেকে র‌্যাবের নারায়ণগঞ্জ ব্যাটালিয়নে হাজির হয়,আবু বক্কর @রিয়াসাদ রাইয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে নারায়ণগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিল।

২০২১ সালে তার শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগ দেয় এবং ২০২২ সালের ফেব্রæয়ারিতে ১২ জনের দলের সাথে ৩য় ব্যাচে পাহাড়ে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে গমন করে। পাহাড়ে গমনের পর সে তার ভুল বুঝতে পারে।

সে বাড়িতে ফেরার জন্য পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেও প্রশিক্ষণের দায়িত্বে থাকা সদস্যরা তাকে যোগাযোগ করতে দেয়নি। এছাড়াও তার মা ইতোপূর্বে র‌্যাবের সহায়তায় গণমাধ্যমের মাধ্যমে তাকে দেশের জন্য কোনো ধরনের হুমকির কাজ, বিশৃঙ্খলা, নৃশংসতা ও অন্যায় কাজে সামিল না হতে অনুরোধ করে ফিরে আসার আহ্বান।

মোঃ হাসান সাঈদকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে স্থানীয় মাদ্রাসা হতে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করে,২০২১ সালে সূরা সদস্য মায়মুনের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগ দেয়।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের নভেম্বরে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে সূরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে পাহাড়ে গমন করে, পাহাড়ে যাওয়ার পর সে ভুল বুঝতে পারে এবং সাঈদসহ ৪-৫ জন দুই বার পালাতে চাইলেও তারা ধরা পড়ে যায় এবং বন্দি থেকে বেত্রাঘাতসহ বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের স্বীকার হয়।

শেখ আহমেদ মামুন’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিল, ২০২১ সালে সে সাঈদের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগ দেয়।

২০২১ সালের নভেম্বরে সে, সাঈদ ও আরো বেশ করয়েকজন তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে গমন করে, সাঈদের সাথে সেও ০২ বার পাহাড় হতে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে নির্যাতনের স্বীকার হয়।

মোঃ ইয়াসিন’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে এলাকায় ঘড়ি মেকানিক হিসেবে কাজ করত, ২০২১ সালে সে সিরাজের মাধ্যমে উক্ত সংগঠনে যোগ দেয় এবং ২০২১ এর নভেম্বরে তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে গমন করে।

পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম দেখে সে ভুল বুঝতে পারে এবং সমতলে ফিরে আসে।স্বেচ্ছায় হাজির হওয়া ০৪ জনকে যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া অনুস্বরণ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।