ঢাকা ০৬:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাহিরপুরে বালু খেকোরা ড্রেজার দিয়ে মাহরাম নদীর ভুক কেটে ভাঠি অঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন ভুলন্টিত করছে

তাহিরপুর উপজেলার ‘মাহারাম’ নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে রাতের আঁধারে বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাশালী একটি চক্র। উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রাম সংলগ্ন মাহারাম নদী থেকে প্রতি রাতেই শতাধিক নৌকার মধ্যে বালু ভর্তি করে পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর (উত্তর) ইউনিয়নের বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন পাটলাই নদীতে বড় স্টিলবডি নৌকায় বালু ভরাট করে অনত্র নিয়ে যাচ্ছে বালুখেকো চক্ররা। এসব বালু থেকে প্রভাবশালী চক্ররা রয়েলটির নামে চাঁদা তুলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বালু তোলা নিয়ে এখানে প্রায় সময়ই সংর্ঘষের ঘটনাও ঘটছে। জানা যায়, ভারতের মেঘালয় থেকে আসা সীমান্ত নদী যাদুকাটার প্রশাখা মাহারাম নদীতে এসে মিশেছে। মাহারাম নদীতে এক সময় বর্ষাকালে প্রবল স্রোত হতো।

১৯৮৮ সালের পূর্বে চৈত্র-বৈশাখ মাসে নদীতে পানি এলে অকাল বন্যায় উপজেলার মাটিয়ান, শনি বোয়ালদা, মহালিয়া, টাঙ্গুয়া, সমসাসহ ভাটি এলাকার ছোট-বড় ২৩টি হাওর পানিতে তলিয়ে যেতো। তখন স্থানীয়দের সহযোগিতা ও উপজেলা পরিষদ থেকে অকাল বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য মাহারাম নদীতে বেড়িবাঁধ দেয়া হতো। একপর্যায়ে ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু ও নুড়িপাথরের স্তূপে মাহারাম নদীটি প্রাকৃতিকভাবে ভরাট হওয়ায় উজান থেকে পানি এসে হাওর তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি পাল্টে যায়। প্রাকৃতিকভাবে বালুর বাঁধ সৃষ্টি হওয়ায় বিগত ৩৩ বছর ধরে মাহারাম নদীতে সরকারি খরচে আর বেড়িবাঁধ দিতে হচ্ছে না। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে এক শ্রেণির অসাধু বালুখেকো চক্র মাহারাম নদীতে বালু উত্তোলন করায় প্রাকৃতিক বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাতে মাহারাম নদীর উৎস মুখসহ নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করছে এলাকার অসাধু বালুখেকো একটি চক্র। চক্রটি নদী থেকে রাতে প্রায় অর্ধ শতাধিক নৌকার মধ্যে বালু ভর্তি করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। বালু উত্তোলনকারী কয়েকজন শ্রমিক জানান, প্রতি রাতেই কয়েকটি গ্রুপে দলবদ্ধ হয়ে নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে থাকে তারা। আর এসব গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন। উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, গত বছরের জুন মাসে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে তৎকালীন ইউএনও রায়হান কবির ২ লাখ ফুট বালু ২৫ দিনের মধ্যে অনত্র সরিয়ে নেয়ার সর্তে নিলাম দেন। বালু নিলামের সময় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান, সাবেক চেয়ারম্যানসহ আমরা কয়েকজন উপস্থিত ছিলাম। নির্ধারিত সময় চলে যাওয়ার পরও তাদের বালু নেয়া শেষ হচ্ছে না। নিলামের বালুর স্তূপ দেখিয়ে এ বালুর আঁড়ালে আমার জমিসহ নদী থেকে প্রতি রাতেই শতাধিক নৌকা দিয়ে বালু নিচ্ছে এই চক্র। গ্রামবাসী তাদের নিষেধ করলেও বালু উত্তোলন বন্ধ করছে না। প্রশাসনকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে, কিন্তু পদক্ষেপ নিতে দেখছি না।

বড়দল গ্রামের কৃষকনেতা সাঞ্জব উস্তার বলেন, এভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকলে মাটিয়ান হাওরসহ উপজেলার সকল হাওরের ফসল অকাল বন্যায় তলিয়ে যাবে। তিনি বালুখেকো চক্রদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মাহারাম নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে, না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

ভাঠি তাহিরপুরের কৃষক শাহিন রেজা বলেন চোরের দলেরা ভাঠি অঞ্চলের কৃষককে পথে বসানোর জন্য নিল নকশা করে মাহরাম নদীর বাঁধ হতে বালু রাতের আধারে কেটে নিচ্ছে, এই বাধ কেটে ফেল্লে এই এলাকার কৃষক আর তার জমিতে ধান বুনতে পারবে না, কারন পাহাড়ি ঢল আসার সাথে সাথেই হাওর ডুবে যাবে। আমরা প্রশাসনকে বলবো আপনারা ব্যাবস্থা নিন অন্যতায় এই এলাকার কৃষক সমাজ এই সকল বালু খেকোদের কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় তা তারা যানে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূপ্রভাত চাকমা বলেন, বালু উত্তোলনের সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই পুলিশের সহযোগিতায় মাহারাম নদীতে অভিযান চলছে। এ অভিযান নিয়মিত চলমান থাকবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

তাহিরপুরে বালু খেকোরা ড্রেজার দিয়ে মাহরাম নদীর ভুক কেটে ভাঠি অঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন ভুলন্টিত করছে

আপডেট সময় ১০:২৫:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩

তাহিরপুর উপজেলার ‘মাহারাম’ নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে রাতের আঁধারে বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাশালী একটি চক্র। উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রাম সংলগ্ন মাহারাম নদী থেকে প্রতি রাতেই শতাধিক নৌকার মধ্যে বালু ভর্তি করে পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর (উত্তর) ইউনিয়নের বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন পাটলাই নদীতে বড় স্টিলবডি নৌকায় বালু ভরাট করে অনত্র নিয়ে যাচ্ছে বালুখেকো চক্ররা। এসব বালু থেকে প্রভাবশালী চক্ররা রয়েলটির নামে চাঁদা তুলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বালু তোলা নিয়ে এখানে প্রায় সময়ই সংর্ঘষের ঘটনাও ঘটছে। জানা যায়, ভারতের মেঘালয় থেকে আসা সীমান্ত নদী যাদুকাটার প্রশাখা মাহারাম নদীতে এসে মিশেছে। মাহারাম নদীতে এক সময় বর্ষাকালে প্রবল স্রোত হতো।

১৯৮৮ সালের পূর্বে চৈত্র-বৈশাখ মাসে নদীতে পানি এলে অকাল বন্যায় উপজেলার মাটিয়ান, শনি বোয়ালদা, মহালিয়া, টাঙ্গুয়া, সমসাসহ ভাটি এলাকার ছোট-বড় ২৩টি হাওর পানিতে তলিয়ে যেতো। তখন স্থানীয়দের সহযোগিতা ও উপজেলা পরিষদ থেকে অকাল বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য মাহারাম নদীতে বেড়িবাঁধ দেয়া হতো। একপর্যায়ে ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু ও নুড়িপাথরের স্তূপে মাহারাম নদীটি প্রাকৃতিকভাবে ভরাট হওয়ায় উজান থেকে পানি এসে হাওর তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি পাল্টে যায়। প্রাকৃতিকভাবে বালুর বাঁধ সৃষ্টি হওয়ায় বিগত ৩৩ বছর ধরে মাহারাম নদীতে সরকারি খরচে আর বেড়িবাঁধ দিতে হচ্ছে না। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে এক শ্রেণির অসাধু বালুখেকো চক্র মাহারাম নদীতে বালু উত্তোলন করায় প্রাকৃতিক বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাতে মাহারাম নদীর উৎস মুখসহ নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করছে এলাকার অসাধু বালুখেকো একটি চক্র। চক্রটি নদী থেকে রাতে প্রায় অর্ধ শতাধিক নৌকার মধ্যে বালু ভর্তি করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। বালু উত্তোলনকারী কয়েকজন শ্রমিক জানান, প্রতি রাতেই কয়েকটি গ্রুপে দলবদ্ধ হয়ে নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে থাকে তারা। আর এসব গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন। উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, গত বছরের জুন মাসে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে তৎকালীন ইউএনও রায়হান কবির ২ লাখ ফুট বালু ২৫ দিনের মধ্যে অনত্র সরিয়ে নেয়ার সর্তে নিলাম দেন। বালু নিলামের সময় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান, সাবেক চেয়ারম্যানসহ আমরা কয়েকজন উপস্থিত ছিলাম। নির্ধারিত সময় চলে যাওয়ার পরও তাদের বালু নেয়া শেষ হচ্ছে না। নিলামের বালুর স্তূপ দেখিয়ে এ বালুর আঁড়ালে আমার জমিসহ নদী থেকে প্রতি রাতেই শতাধিক নৌকা দিয়ে বালু নিচ্ছে এই চক্র। গ্রামবাসী তাদের নিষেধ করলেও বালু উত্তোলন বন্ধ করছে না। প্রশাসনকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে, কিন্তু পদক্ষেপ নিতে দেখছি না।

বড়দল গ্রামের কৃষকনেতা সাঞ্জব উস্তার বলেন, এভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকলে মাটিয়ান হাওরসহ উপজেলার সকল হাওরের ফসল অকাল বন্যায় তলিয়ে যাবে। তিনি বালুখেকো চক্রদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মাহারাম নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে, না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

ভাঠি তাহিরপুরের কৃষক শাহিন রেজা বলেন চোরের দলেরা ভাঠি অঞ্চলের কৃষককে পথে বসানোর জন্য নিল নকশা করে মাহরাম নদীর বাঁধ হতে বালু রাতের আধারে কেটে নিচ্ছে, এই বাধ কেটে ফেল্লে এই এলাকার কৃষক আর তার জমিতে ধান বুনতে পারবে না, কারন পাহাড়ি ঢল আসার সাথে সাথেই হাওর ডুবে যাবে। আমরা প্রশাসনকে বলবো আপনারা ব্যাবস্থা নিন অন্যতায় এই এলাকার কৃষক সমাজ এই সকল বালু খেকোদের কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় তা তারা যানে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সূপ্রভাত চাকমা বলেন, বালু উত্তোলনের সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই পুলিশের সহযোগিতায় মাহারাম নদীতে অভিযান চলছে। এ অভিযান নিয়মিত চলমান থাকবে।