ঢাকা ০৯:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাটোরে “দৈনিক যুগান্তর” পত্রিকা পুড়িয়ে সাংবাদিকের হাত ভেঙে দেওয়ার হুমকি

নাটোর-২ ( সদর ও নলডাঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের কানাডায় বাড়ী এবং বিদেশী ব্যাংকে কাড়ি কাড়ি টাকা সহ অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের নানা অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেছেন তার সমর্থকরা।

গতকাল মঙ্গলবার শহরের কানাইখালী পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিমুল এমপির অনুসারী বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। পরে যুগান্তর পত্রিকায় আগুন দেন। সমাবেশে বক্তব্যে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ নেতারা দৈনিক যুগান্তরের নাটোর প্রতিনিধি শহিদুল হক সরকারের হাত ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন এবং তাকে প্রেসক্লাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

কানাডায় স্ত্রীর নামে বাড়ি ব্যাংকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা’ শিরোনামে আজ ২০ জুন একটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক যুগান্তর। প্রতিবেদনে এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও তা বিদেশে পাচারের অভিযোগের কথা তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম, নলডাঙ্গা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান লিটন, নাটোর সদর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান আলমগীর, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ডাবলু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তারুল ইসলাম আলম এবং জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুলী এহিয়া। বক্তারা প্রকাশিত সংবাদটি মিথ্যা এবং বানোয়াট বলে দাবি করে বলেন, প্রতিপক্ষরে কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

সমাবেশে নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান লিটন বলেন, ‘সাংবাদিক শহিদুল যে হাত দিয়ে নোংরা কথা লিখেছে তার সেই হাত ভেঙে দিতে হবে।’

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তারুল ইসলাম আলম মোস্তারুল ইসলাম আলম বলেন, ‘সাংবাদিক শহিদুল হক জামায়াত কর্মী। তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছে। সাংবাদিক শহিদুল হক প্রেসক্লাবে আসতে পারবে না। ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাব পাহারা দেবে। প্রেসক্লাবে আসা মাত্র তার হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে। প্রেসক্লাবের শহিদুল হক সরকারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ অথবা বহিষ্কার করার দাবি জানান তিনি।

পরে নাটোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খান চুন্নুর নেতৃত্বে যুগান্তর পত্রিকা পোড়ানো হয়। যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির টাকায় এমপি শিমুল নাটোরে ও কানাডায় স্ত্রীর নামে বিলাসবহুল দুটি বাড়ি করেছেন। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংকে স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিনিধির নামে তিনি কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রেখেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রকাশ্যে সাংবাদিকের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকির ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারাজি আহমেদ রফিক বাবন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শহিদুল হককে প্রেসক্লাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাংবাদিক শহিদুল হক বলেন, ‘পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিরোপেক্ষতা বজায় রেখেই সংবাদটি করা হয়েছে। কোনো পক্ষপাতিত্ব বা মিথ্যা সংবাদ যুগান্তরে প্রকাশের সুযোগ নেই।’

হুমকি-ধামকির কারণে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, সংবাদের জেরে এমন প্রতিক্রিয়া তিনি প্রত্যাশা করেননি।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এমপি শিমুল বলেন, নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। বিষয়টি আমি আগে থেকে জানতাম না। তবে তিনি দৈনিক যুগান্তর কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রতিনিধি শহিদুল হক সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করবেন বলেও জানান।

একজন এমপি কিন্তু একজন আইন প্রণেতা। স্বাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া তার বিরুদ্ধে মনগড়া অসত্য সংবাদ লেখার ক্ষমতা একজন গনমাধ্যম কর্মীর নেই। বহুল প্রচলিত একটি পত্রিকা বা চ্যানেল এ ধরনের সংবাদ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ না করে প্রকাশ করেনা।।প্রতিষ্টিত প্রতিটি গনমাধ্যমের সম্পাদনা বিভাগ আছে। যারা যাচাই বাছাই ছাড়া একজন সম্মানীত সংসদ সদস্যের নামে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেনা। সুতারাং- মিথ্যা সংবাদ যদি একজন গনমাধ্যমকর্মী করেই থাকে। তবে আপনি আদালতের দারস্থ হোন। বাংলাদেশ প্রেস ইনিস্টিটিউটে বিচার দিন। না পারলে কালো আইন প্রয়োগ করুন। কিন্তু রাজপথে মিথ্যাচার করতে পারেন না।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নাটোরে “দৈনিক যুগান্তর” পত্রিকা পুড়িয়ে সাংবাদিকের হাত ভেঙে দেওয়ার হুমকি

আপডেট সময় ১০:৫৯:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ জুন ২০২৩

নাটোর-২ ( সদর ও নলডাঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের কানাডায় বাড়ী এবং বিদেশী ব্যাংকে কাড়ি কাড়ি টাকা সহ অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের নানা অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেছেন তার সমর্থকরা।

গতকাল মঙ্গলবার শহরের কানাইখালী পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিমুল এমপির অনুসারী বলে পরিচিত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। পরে যুগান্তর পত্রিকায় আগুন দেন। সমাবেশে বক্তব্যে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ নেতারা দৈনিক যুগান্তরের নাটোর প্রতিনিধি শহিদুল হক সরকারের হাত ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন এবং তাকে প্রেসক্লাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

কানাডায় স্ত্রীর নামে বাড়ি ব্যাংকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা’ শিরোনামে আজ ২০ জুন একটি সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক যুগান্তর। প্রতিবেদনে এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও তা বিদেশে পাচারের অভিযোগের কথা তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম, নলডাঙ্গা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান লিটন, নাটোর সদর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান আলমগীর, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ডাবলু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তারুল ইসলাম আলম এবং জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুলী এহিয়া। বক্তারা প্রকাশিত সংবাদটি মিথ্যা এবং বানোয়াট বলে দাবি করে বলেন, প্রতিপক্ষরে কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

সমাবেশে নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান লিটন বলেন, ‘সাংবাদিক শহিদুল যে হাত দিয়ে নোংরা কথা লিখেছে তার সেই হাত ভেঙে দিতে হবে।’

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তারুল ইসলাম আলম মোস্তারুল ইসলাম আলম বলেন, ‘সাংবাদিক শহিদুল হক জামায়াত কর্মী। তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছে। সাংবাদিক শহিদুল হক প্রেসক্লাবে আসতে পারবে না। ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাব পাহারা দেবে। প্রেসক্লাবে আসা মাত্র তার হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে। প্রেসক্লাবের শহিদুল হক সরকারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ অথবা বহিষ্কার করার দাবি জানান তিনি।

পরে নাটোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খান চুন্নুর নেতৃত্বে যুগান্তর পত্রিকা পোড়ানো হয়। যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির টাকায় এমপি শিমুল নাটোরে ও কানাডায় স্ত্রীর নামে বিলাসবহুল দুটি বাড়ি করেছেন। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংকে স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিনিধির নামে তিনি কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রেখেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রকাশ্যে সাংবাদিকের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকির ব্যাপারে মন্তব্য জানতে চাইলে নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারাজি আহমেদ রফিক বাবন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শহিদুল হককে প্রেসক্লাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাংবাদিক শহিদুল হক বলেন, ‘পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিরোপেক্ষতা বজায় রেখেই সংবাদটি করা হয়েছে। কোনো পক্ষপাতিত্ব বা মিথ্যা সংবাদ যুগান্তরে প্রকাশের সুযোগ নেই।’

হুমকি-ধামকির কারণে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, সংবাদের জেরে এমন প্রতিক্রিয়া তিনি প্রত্যাশা করেননি।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এমপি শিমুল বলেন, নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ করেছেন। বিষয়টি আমি আগে থেকে জানতাম না। তবে তিনি দৈনিক যুগান্তর কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রতিনিধি শহিদুল হক সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করবেন বলেও জানান।

একজন এমপি কিন্তু একজন আইন প্রণেতা। স্বাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া তার বিরুদ্ধে মনগড়া অসত্য সংবাদ লেখার ক্ষমতা একজন গনমাধ্যম কর্মীর নেই। বহুল প্রচলিত একটি পত্রিকা বা চ্যানেল এ ধরনের সংবাদ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ না করে প্রকাশ করেনা।।প্রতিষ্টিত প্রতিটি গনমাধ্যমের সম্পাদনা বিভাগ আছে। যারা যাচাই বাছাই ছাড়া একজন সম্মানীত সংসদ সদস্যের নামে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেনা। সুতারাং- মিথ্যা সংবাদ যদি একজন গনমাধ্যমকর্মী করেই থাকে। তবে আপনি আদালতের দারস্থ হোন। বাংলাদেশ প্রেস ইনিস্টিটিউটে বিচার দিন। না পারলে কালো আইন প্রয়োগ করুন। কিন্তু রাজপথে মিথ্যাচার করতে পারেন না।