যমুনা টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ‘ক্রাইমসিন’ এ সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমি জালিয়াতি করে রেজিস্ট্রি বায়না দলিল করা সংক্রান্ত মামলায় এক বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও তিনটি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলু ও তার বাহিনীর জমি দখল, মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবেদন প্রচার হওয়ায় যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার এবং রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান সহ তিনজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে জাকারিয়া শিপলু এ মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রংপুরের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজ তারা অবিলম্বে এই মিথ্যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার এবং বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রুহুল তালুকদার দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিকে জানান, রংপুর সিটির ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যমুনা টেলিভিশনের ক্রাইমসিনের প্রতিবেদনকে মিথ্যা, বানোয়াট দাবি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ বিচারক জনাব ড. আব্দুল মজিদ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে আদালত।

এদিকে এই মামলা দায়েরের পর পরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর উপর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রংপুরের সাংবাদিক সমাজ ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। তারা এই মামলাকে গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করার ব্যাহত অপপ্রয়াস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং রংপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী বাদল জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকারের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। একেকজন একেক কথা বলছেন। সরকার মাজহারুল মান্নান দীর্ঘদিন ধরে সৎ এবং সাহসী সাংবাদিকতা করছেন। ক্রাইমসিনে যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে তাতে আদালতের রায়, মামলার নথিপত্র, আইনের ধারা উল্লেখ করে, ভুক্তভোগীদের বক্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও মেয়রের বক্তব্য নিয়ে করা হয়েছে। সেখানে যমুনার নিজস্ব কোনো কথা বা মন্তব্য নেই। কিন্তু শুধুই হয়রানীর করার জন্য তাকে সহ অন্য সংবাদকর্মীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়া হয়েছে এটা কখনোই কাম্য করে না সাধারণ জনগণ।

রংপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী দৈনিক মাতৃভূমিকে জানায় জানান, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কারণে সাংবাদিক মাজহারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধের অপপ্রয়াস মাত্র। হয়রানী করা হচ্ছে। সাংবাদিক সমাজ কখনোই এটা মানবে না। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের জন্য করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং মাজহারের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের ব্যুরো প্রধান মাহবুব রহমান হাবু দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার বিষয়টি স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে অন্তরায় সৃষ্টির অপপ্রয়াস এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ। এটা অব্যাহত থাকলে স্বাধীন সাংবাদিকতা টিকে থাকবে না। যদি স্বাধীন সাংবাদিকতা টিকে না থাকে তবে রাষ্ট্র ও সরকার হুমকির মুখে পড়বে।

এ ব্যাপারে রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম রাজু দৈনিক মাতৃভূমি কে বলেন , সরকারি জমি জালিয়াতির মামলায় একজন জনপ্রতিনিধিকে আদালত কারাদণ্ড দিয়েছে। তার নামে ৩টি মামলার ওয়ারেন্ট ছাড়াও ৫টি মামলা বিচারাধীন আছে। তিনি এলাকায় জমি দখল, জাল দলিল বাণিজ্য করছেন প্রকাশ্যে। নিরীহ মানুষকে হুমকি মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন। প্রকাশ্যে মাদক বিস্তারের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তিনি। সেই খবর প্রচার হওয়ায় সাংবাদিক মাজহারের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দাখিল করা হয়েছে। আমরা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

রংপুর সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি বলেন, অপরাধীরা সংবাদ হলেই নিজেদের কুকীর্তি আড়াল করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়। আমরা আশ্চর্য হয়েছি। একজন দণ্ডপ্রাপ্ত ও ওয়ারেন্টভুক্ত মামলার আসামি কীভাবে আদালতে গিয়ে মামলা করলেন। বিষয়টি আমরা ভাবতেই পারছি না।