ঢাকা ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
দাউদকান্দি উপজেলা নবাগত ইউএন ও এসিল্যান্ড ভূমি ও পৌর প্রশাসক মো: জিয়াউর রহমান কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময় ভোলায় আজকের পত্রিকার পাঠক বন্ধুর উদ্যোগে মাদক বিরোধী র‌্যালি,সেমিনার ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নতুন ব্রিজ এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে পথচারী জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে আমরা আর কোনো অবিচার চাই না’ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে বদলি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ রিমান্ডে যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাবেক ২ আইজিপি বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ফের উত্তাল আশুলিয়া, বন্ধ ৫২ কারখানা ট্রাইব্যুনালে প্রথমবার হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ

তানোরে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দালাল ইয়াকুবের হাতে আলাদিনের চেরাগ

সম্পদ বলতে পিতার ৫ বিঘা জমি, তিন ভাই, এক বোন, জমি এখনো ভাগ বাটোয়ারা হয়নি। দুই ভাই শ্বশুর বাড়িতে থাকেন, কামলা দিয়ে চলে সংসার, নুন আনতে পান্তা ফুরায়, দিনরাত খেটেও পারছেন না কিছু করতে। কিন্তু ইয়াকুব ভূমি অফিসের দালালি করে পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। যাকে বলে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ।

মাত্র ১০ বছরের কারিশমায় জিওল মোড়ে স্ত্রীর জায়গায় তিন তলা পাকা ফ্লাট বাড়ি করেছেন। কিনেছেন এবং বন্ধক নিয়েছেন বেশ কয়েক বিঘা জমি। হঠাৎ করে এমন সম্পদশালী বনে যাওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কিভাবে এত অল্প সময়ে এতকিছু করে বসলেন ইয়াকুব। তার বাড়ি রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার জিওল দক্ষিণ পাড়া গ্রামে। ইয়াকুবের পিতা ইসাহাক ওরফে ইসা।

নিচেই রয়েছে তার দোকান ঘর বা চেম্বার। ওই মোড়েই তার এক শ্যালক চা বিক্রি করেন। ইয়াকুব তার চেম্বারে বসেই চালিয়ে যান ভূমির আনুষঙ্গিক কার্যক্রম। তার বাড়িতে তল্লাসি করলে অফিসের চেয়েও বেশি ফাইল পত্র পাওয়া যাবে এমনটিই বলছেন এলাকাবাসী।

এর আগে ইয়াকুবের চেম্বারে তৎকালিন ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতো অভিযান চালিয়ে দপ্তরের ফাইল পত্র পাওয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল দিয়েছিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে ইয়াকুব আরো বেপরোয়া দালালি শুরু করেন। অবশ্য তাকে জেল দেওয়ার সময় তার কাছে দপ্তরের ফাইল কিভাবে এসেছে কারা জড়িত সবার শাস্তির দাবিও উঠেছিল।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর এলাকার জিওল দক্ষিণ পাড়া গ্রামের দিন মজুরের ছেলে ইয়াকুব। পৌর সদর ভূমি অফিসের বদলি হওয়া নায়েব ইকবালের সাথে গড়ে তুলেন সখ্যতা।

শুরু করেন ভূমি দালালি, বদলে যায় ইয়াকুবের ভাগ্য। বিগত ২০০৯ সালে নায়েব হিসেবে সদর ইউপি ভূমি অফিসে চাকুরীতে আসেন ইকবাল। প্রায় ৬-৭ বছর চাকুরী করেন সদরে। ইকবালের মাধ্যম দিয়ে উপজেলা জুড়ে দালালি শুরু করেন ইয়াকুব। ইকবাল গত ২০১৪-১৫ সালের দিকে বদলি হয়ে চলে যান।

আসেন রবিউল নামের আরেক নায়েব। তার সাথেও সখ্যতা করে দিয়ে যান ইকবাল। রবিউল বদলি হয়ে মুন্ডুমালা ইউপি ভূমি অফিসে নায়েব হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। সদরের দায়িত্বে আসেন উপজেলায় দীর্ঘ দিনের নায়েবের দায়িত্বে থাকা লুৎফর রহমান। তার সাথে গলায় গলায় পিরিত। ইয়াকুব ছাড়া কোন কাজই হয়না। এই তিন কর্মকর্তা ইয়াকুবকে অবৈধ পথে সম্পদশালী করে দেন।

স্থানীয়রা জানান, ইয়াকুব এখন গ্রামের অন্যতম টাকা ওয়ালা ব্যক্তি। যাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরাত সেই ইয়াকুব সম্পদ শালী বনে গেলেন। ভাতরন্ড, রহিমা ডাঙ্গা মৌজায় ৪ বিঘা জমি কিনেছেন, যার মুল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা, ৬ বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছেন যার মুল্য প্রায় ১৮ লাখ টাকার।

জিওল মোড়ে তিনতলা দালান বাড়ি করেছেন যার খরচ প্রায় ৩৮-৪০ লাখ টাকা । প্রতি বছর যান ওমরাহ করতে। তার কয়েক প্রতিবেশি বলেন, আমরা হতবাক হচ্ছি একজন ভূমি অফিসে দালাল যদি ১০-১২ বছরে এত সম্পদের মালিজ হন কিভাবে। তাহলে কর্মকর্তারা কত টাকার বা সম্পদের মালিক।

সারা জীবন চাষ আবাদ করে এক বিঘা জমি কিনতে পারলামনা। মাটির বাড়িও করতে পারলাম না। আর নায়েব ইকবাল, রবিউল ও লুৎফরের যাদুতে ভাগ্য বদলে গেল ইয়াকুবের। ইয়াকুবের ধনাঢ্য হওয়ার কারন খুজে বের করতে গেলেই ধরা পড়বে কর্মকর্তা রাও কত সম্পদের মালিক।

ইয়াকুব বর্তমানে সৌদি আরবে ওমরাহ পালনে রয়েছেন। প্রতি নিয়তই ফেসবুকে ছবি ছাড়ছেন। ভূমি কর্তারা ভ্রমনে গেলেও ইয়াকুব থাকেন । ওমরাই যাওয়ার বেশ কিছুদিন আগে ইয়াকুবের কাছে জানতে চাওয়া হয় কোন চাকুরী নাই কিভাবে জমি কেনা ও বাড়ি করা হল তিনি দাম্ভিকতার সহিত বলেন, চাঁদাবাজি করেছি।

মুন্ডুমালা ইউপি ভূমি অফিসের নায়েব রবিউল বলেন, আমার সাথে ইয়াকুবের তেমন সম্পর্ক ছিল না।

তানোর পৌর সদর ইউপি ভূমি অফিসের নায়েব লুৎফর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সৃষ্টি কর্তা কাকে কিভাবে ধনী করবেন, গরীব করবেন, তিনিই বলতে পারেন, আমি বলতে পারিনা বলে জানান তিনি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দাউদকান্দি উপজেলা নবাগত ইউএন ও এসিল্যান্ড ভূমি ও পৌর প্রশাসক মো: জিয়াউর রহমান কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে পরিচিতি ও মতবিনিময়

তানোরে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দালাল ইয়াকুবের হাতে আলাদিনের চেরাগ

আপডেট সময় ১০:১৯:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩

সম্পদ বলতে পিতার ৫ বিঘা জমি, তিন ভাই, এক বোন, জমি এখনো ভাগ বাটোয়ারা হয়নি। দুই ভাই শ্বশুর বাড়িতে থাকেন, কামলা দিয়ে চলে সংসার, নুন আনতে পান্তা ফুরায়, দিনরাত খেটেও পারছেন না কিছু করতে। কিন্তু ইয়াকুব ভূমি অফিসের দালালি করে পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। যাকে বলে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ।

মাত্র ১০ বছরের কারিশমায় জিওল মোড়ে স্ত্রীর জায়গায় তিন তলা পাকা ফ্লাট বাড়ি করেছেন। কিনেছেন এবং বন্ধক নিয়েছেন বেশ কয়েক বিঘা জমি। হঠাৎ করে এমন সম্পদশালী বনে যাওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কিভাবে এত অল্প সময়ে এতকিছু করে বসলেন ইয়াকুব। তার বাড়ি রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার জিওল দক্ষিণ পাড়া গ্রামে। ইয়াকুবের পিতা ইসাহাক ওরফে ইসা।

নিচেই রয়েছে তার দোকান ঘর বা চেম্বার। ওই মোড়েই তার এক শ্যালক চা বিক্রি করেন। ইয়াকুব তার চেম্বারে বসেই চালিয়ে যান ভূমির আনুষঙ্গিক কার্যক্রম। তার বাড়িতে তল্লাসি করলে অফিসের চেয়েও বেশি ফাইল পত্র পাওয়া যাবে এমনটিই বলছেন এলাকাবাসী।

এর আগে ইয়াকুবের চেম্বারে তৎকালিন ইউএনও সুশান্ত কুমার মাহাতো অভিযান চালিয়ে দপ্তরের ফাইল পত্র পাওয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল দিয়েছিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে ইয়াকুব আরো বেপরোয়া দালালি শুরু করেন। অবশ্য তাকে জেল দেওয়ার সময় তার কাছে দপ্তরের ফাইল কিভাবে এসেছে কারা জড়িত সবার শাস্তির দাবিও উঠেছিল।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর এলাকার জিওল দক্ষিণ পাড়া গ্রামের দিন মজুরের ছেলে ইয়াকুব। পৌর সদর ভূমি অফিসের বদলি হওয়া নায়েব ইকবালের সাথে গড়ে তুলেন সখ্যতা।

শুরু করেন ভূমি দালালি, বদলে যায় ইয়াকুবের ভাগ্য। বিগত ২০০৯ সালে নায়েব হিসেবে সদর ইউপি ভূমি অফিসে চাকুরীতে আসেন ইকবাল। প্রায় ৬-৭ বছর চাকুরী করেন সদরে। ইকবালের মাধ্যম দিয়ে উপজেলা জুড়ে দালালি শুরু করেন ইয়াকুব। ইকবাল গত ২০১৪-১৫ সালের দিকে বদলি হয়ে চলে যান।

আসেন রবিউল নামের আরেক নায়েব। তার সাথেও সখ্যতা করে দিয়ে যান ইকবাল। রবিউল বদলি হয়ে মুন্ডুমালা ইউপি ভূমি অফিসে নায়েব হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। সদরের দায়িত্বে আসেন উপজেলায় দীর্ঘ দিনের নায়েবের দায়িত্বে থাকা লুৎফর রহমান। তার সাথে গলায় গলায় পিরিত। ইয়াকুব ছাড়া কোন কাজই হয়না। এই তিন কর্মকর্তা ইয়াকুবকে অবৈধ পথে সম্পদশালী করে দেন।

স্থানীয়রা জানান, ইয়াকুব এখন গ্রামের অন্যতম টাকা ওয়ালা ব্যক্তি। যাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরাত সেই ইয়াকুব সম্পদ শালী বনে গেলেন। ভাতরন্ড, রহিমা ডাঙ্গা মৌজায় ৪ বিঘা জমি কিনেছেন, যার মুল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা, ৬ বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছেন যার মুল্য প্রায় ১৮ লাখ টাকার।

জিওল মোড়ে তিনতলা দালান বাড়ি করেছেন যার খরচ প্রায় ৩৮-৪০ লাখ টাকা । প্রতি বছর যান ওমরাহ করতে। তার কয়েক প্রতিবেশি বলেন, আমরা হতবাক হচ্ছি একজন ভূমি অফিসে দালাল যদি ১০-১২ বছরে এত সম্পদের মালিজ হন কিভাবে। তাহলে কর্মকর্তারা কত টাকার বা সম্পদের মালিক।

সারা জীবন চাষ আবাদ করে এক বিঘা জমি কিনতে পারলামনা। মাটির বাড়িও করতে পারলাম না। আর নায়েব ইকবাল, রবিউল ও লুৎফরের যাদুতে ভাগ্য বদলে গেল ইয়াকুবের। ইয়াকুবের ধনাঢ্য হওয়ার কারন খুজে বের করতে গেলেই ধরা পড়বে কর্মকর্তা রাও কত সম্পদের মালিক।

ইয়াকুব বর্তমানে সৌদি আরবে ওমরাহ পালনে রয়েছেন। প্রতি নিয়তই ফেসবুকে ছবি ছাড়ছেন। ভূমি কর্তারা ভ্রমনে গেলেও ইয়াকুব থাকেন । ওমরাই যাওয়ার বেশ কিছুদিন আগে ইয়াকুবের কাছে জানতে চাওয়া হয় কোন চাকুরী নাই কিভাবে জমি কেনা ও বাড়ি করা হল তিনি দাম্ভিকতার সহিত বলেন, চাঁদাবাজি করেছি।

মুন্ডুমালা ইউপি ভূমি অফিসের নায়েব রবিউল বলেন, আমার সাথে ইয়াকুবের তেমন সম্পর্ক ছিল না।

তানোর পৌর সদর ইউপি ভূমি অফিসের নায়েব লুৎফর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সৃষ্টি কর্তা কাকে কিভাবে ধনী করবেন, গরীব করবেন, তিনিই বলতে পারেন, আমি বলতে পারিনা বলে জানান তিনি।