ঢাকা ১০:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বগুড়ায় জজের পা ধরলেন অভিভাবক,শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে শিক্ষার্থীর মাকে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে এমন অভিযোগে বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এ বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।

তারা ঘটনার সম্মানজনক বিচার দাবিতে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুই দফা সড়ক অবরোধ এবং স্কুলে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন। তবু শিক্ষার্থীরা অনড় থাকলে জেলা প্রশাসক জেলা জজের সঙ্গে কথা বলে জানান, ওই বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তখন শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়। রাত সোয়া ৯টার দিকে তারা বাড়ি ফিরতে শুরু করে।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বলছে, বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পালাক্রমে নিজেদের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে হয়। সোমবার অষ্টম শ্রেণির পাঠকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল একজন বিচারকের মেয়ের। সে রাজি না হলে তার সঙ্গে সহপাঠীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। এ ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে একজন আপত্তিকর কথা লিখে পোস্ট দেয়। সেই পোস্টের নিচে তার সহপাঠীসহ অন্যরা বিচারকের মেয়েকে তীব্রভাবে আক্রমণ করে পাল্টা লিখতে শুরু করে।

এর পরেরদিন মঙ্গলবার মেয়েটির বিচারক মা শিক্ষকদের মাধ্যমে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ডেকে নেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফেসবুকে বিচারক ও তার মেয়েকে নিয়ে অসম্মানজক কথা লেখার অভিযোগে বিচারক অভিভাবকদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করার হুমকি দেন। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন এক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিদ্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে। তাদের অবরোধের কারণে মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের পূর্বনির্ধারিত অভিভাবক সমাবেশ সংক্ষিপ্ত করতে হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিন আলোচনা করেন। বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে এই আলোচনায় শিক্ষার্থী, কয়েকজন অভিভাবক, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী উপস্থিত ছিলেন।

অবশেষে জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘ঘটনাটি ইতিমধ্যে হাইকোর্ট জেনেছে, আইন মন্ত্রণালয় জেনেছে, এ বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জেলা জজ সাহেব তোমাদেরকে এই মেসেজটি দিতে বলেছেন।’ জেলা প্রশাসক বলেন, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি করেছে। যিনি অপরাধী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ে মাত্র একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। সে কারণে শিক্ষার্থীদেরই তাদের শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করতে হয়। বিচারকের মেয়ে ঝাড়ু দিতে না চাওয়ায় কয়েকজন শিক্ষার্থী তার হাতে ঝাড়ু তুলে দেয়। এতে মেয়েটি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।’

তবে বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোবাশ্বেরা বেগম সাংবাদিকদের একটু ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিষয়টি এই রকম নয়। এক ফেসবুক পোস্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ঝামেলা বাধে। এর পরে ওই বিচারক এসে কিছু শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবকদের বলেন যে, এই শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে তাকে ও তার মেয়েকে নিয়ে অনেক অপমানজনক কথা কেন বলেছেন। এই সব লিখলে আইসিটি নামের একটা মামলা হতে পারে সেটা কি তোমরা জানো? এমন সময় একজন শিক্ষার্থীর মা এসে বিচারকের পায় ধরে ক্ষমা চান।’

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে

বগুড়ায় জজের পা ধরলেন অভিভাবক,শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আপডেট সময় ১২:১৯:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩

প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে শিক্ষার্থীর মাকে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে এমন অভিযোগে বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এ বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।

তারা ঘটনার সম্মানজনক বিচার দাবিতে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুই দফা সড়ক অবরোধ এবং স্কুলে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন। তবু শিক্ষার্থীরা অনড় থাকলে জেলা প্রশাসক জেলা জজের সঙ্গে কথা বলে জানান, ওই বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তখন শিক্ষার্থীরা শান্ত হয়। রাত সোয়া ৯টার দিকে তারা বাড়ি ফিরতে শুরু করে।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বলছে, বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পালাক্রমে নিজেদের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে হয়। সোমবার অষ্টম শ্রেণির পাঠকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল একজন বিচারকের মেয়ের। সে রাজি না হলে তার সঙ্গে সহপাঠীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। এ ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে একজন আপত্তিকর কথা লিখে পোস্ট দেয়। সেই পোস্টের নিচে তার সহপাঠীসহ অন্যরা বিচারকের মেয়েকে তীব্রভাবে আক্রমণ করে পাল্টা লিখতে শুরু করে।

এর পরেরদিন মঙ্গলবার মেয়েটির বিচারক মা শিক্ষকদের মাধ্যমে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ডেকে নেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফেসবুকে বিচারক ও তার মেয়েকে নিয়ে অসম্মানজক কথা লেখার অভিযোগে বিচারক অভিভাবকদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করার হুমকি দেন। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন এক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিদ্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে। তাদের অবরোধের কারণে মঙ্গলবার বিদ্যালয়ের পূর্বনির্ধারিত অভিভাবক সমাবেশ সংক্ষিপ্ত করতে হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিন আলোচনা করেন। বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে এই আলোচনায় শিক্ষার্থী, কয়েকজন অভিভাবক, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী উপস্থিত ছিলেন।

অবশেষে জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘ঘটনাটি ইতিমধ্যে হাইকোর্ট জেনেছে, আইন মন্ত্রণালয় জেনেছে, এ বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জেলা জজ সাহেব তোমাদেরকে এই মেসেজটি দিতে বলেছেন।’ জেলা প্রশাসক বলেন, এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি করেছে। যিনি অপরাধী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ে মাত্র একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। সে কারণে শিক্ষার্থীদেরই তাদের শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করতে হয়। বিচারকের মেয়ে ঝাড়ু দিতে না চাওয়ায় কয়েকজন শিক্ষার্থী তার হাতে ঝাড়ু তুলে দেয়। এতে মেয়েটি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।’

তবে বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোবাশ্বেরা বেগম সাংবাদিকদের একটু ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিষয়টি এই রকম নয়। এক ফেসবুক পোস্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ঝামেলা বাধে। এর পরে ওই বিচারক এসে কিছু শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবকদের বলেন যে, এই শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে তাকে ও তার মেয়েকে নিয়ে অনেক অপমানজনক কথা কেন বলেছেন। এই সব লিখলে আইসিটি নামের একটা মামলা হতে পারে সেটা কি তোমরা জানো? এমন সময় একজন শিক্ষার্থীর মা এসে বিচারকের পায় ধরে ক্ষমা চান।’