ঢাকা ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

শহীদ মিনার চত্ত্বরে পড়ে ছিল শ্রমিকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার

  • সোহেল রানা
  • আপডেট সময় ০৭:৪৪:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩
  • ৬০৮ বার পড়া হয়েছে

নাটোরের হয়বতপুর থেকে ফরহাদ খন্দকার (২৮) নামে এক কুলি শ্রমিকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার হয়বতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পদদেশে রক্তাক্ত মরদেহটি পড়ে ছিল।

মঙ্গলবার মধ্য রাতে স্থানীয়রা মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গ্রাম পুলিশকে পাহারায় রাখে। বুধবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে।

পরকীয়ার জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করছেন নিহতের স্বজনসহ এলাকাবাসী। নিহত ফরহাদ খন্দকার সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকার মৃত মোসলেম খন্দকারের ছেলে। সে হয়বতপুর বাজারের কাঁচামাল আড়তের কুলি শ্রমিকের কাজ করতো।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানাযায়, ফরহাদ খন্দকার বাড়ির পাশেই হয়বতপুর বাজারে সবজি আড়তে কুলি শ্রমিকের কাজ করতেন। মঙ্গলবার দিন শেষে রাতেও আড়তে কাজ করে ফরহাদ। রাতে কে বা কারা ফরহাদ খন্দকারকে হত্যা করে সবজি আড়তের অদুরে হয়বতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে রক্তাক্ত মরদেহটি ফেলে রেখে যায়।

বুধবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। নিহতের ঘার ও পাঁজরে দুইটি আঘাত বা ফুটো চিহ্ন রয়েছে। প্রচুর রক্ত ক্ষরনও হয়েছে। এটি গুলিবিদ্ধের ঘটনাও ঘটতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বলেছে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে কিভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এলাকাবাসীদের ধারনা পরকীয়ার জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

আক্কাস আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, এলাকার ফরহাদ শিকদারের স্ত্রীর সাথে ফরহাদ খন্দকারের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন আগে ফরহাদ শিকদারের স্ত্রীকে ফরহাদ খন্দকার ভাগিয়ে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা সমঝোতা করে ফাহাদ শিকদারের বউকে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু তাদের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক ছিলই। এ নিয়ে ফরহাদ খন্দকারকে মাঝে মধ্যে শাসিয়ে যেতো খন্দকার শিকদার। এই পরকীয়ার জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তার ধারনা।

নিহত ফরহাদের স্ত্রী লুৎফুন নাহার জানান, তার স্বামী প্রতিদিন কাজ শেষে রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার সমধ্যে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্ত গতরাতে ফিরতে দেরি দেখে বার বার তাকে মোবাইল ফোন করা হয়। কিন্ত তাকে পাওয়া যায়না। খোজা খুজির এক পর্যায়ে রাত দেড়টার দিকে হয়বতপুর বাজারে যাওয়ার সময় স্কুলের শহীদ মিনারের পাশে রক্তাক্ত ও মৃত অবস্থায় তাকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই সময় স্থানীয় গ্রাম পুলিশের সহায়তায় থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়। রাতে গ্রাম পুলিশকে পাহাড়ার দায়িত্ব দেয় পুলিশ।

বুধবার সকালে তার স্বামীর মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। তিনি আরও বলেন, রাতে পরপর দুইটি বিকট শব্দ শুনেছেন তারা। তার স্বামীর হত্যার জন্য ফরহাদ খন্দকারের ওপর দায় চাপিয়ে বলেন,ফরহাদ শিকদারের বউয়ের সাথে সম্পর্ক করায় শিকদার তার স্বামীকে মেরে ফেলেছে। বেশ কিছুদিন ধরে শিকদার তার স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিল। তিনি তার স্বামীর হত্যাকারী ফরহাদ শিকদারের বিচার দাবী করেন। নিহতের ভাই -বোনও ফরহাদ খন্দকারের হত্যার জন্য ফরহাদ শিকদারকে দায়ী করে তার বিচার দাবী করেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু বলেন, গভীর রাতে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে ফরহাদের লাশ পড়ে থাকার খবর পান। তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুর্ব বিরোধের জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি ধারনা করছেন। এই হত্যার সাথে যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে হত্যাকালীদের চিহ্নিত করে বিচার দাবী করেন তিনি।

নাটোর সদর থানার ওসি নাছিম আহমেদ বলেন, হয়বতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে তার রক্তাক্ত মরদেহটি পড়েছিল। রাতে কে বা কারা তাকে হত্যা করে ওই স্থানে ফেলে রেখে গেছে। কি কারনে কারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি।

তবে নিহতের ঘার ও পাঁজরে দুইটি আঘাত বা ফুটো চিহ্ন রয়েছে। প্রচুর রক্ত ক্ষরন হয়েছে। এটি গুলিবিদ্ধের ঘটনাও ঘটতে পারে। কেবল ময়না তদন্তের পর এর আসল কারন জানা যাবে। স্কুল ও ইউনিয়ন পরিষদের সিসি ফুটেজ দেখা হচ্ছে। বিষয়টি উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে

শহীদ মিনার চত্ত্বরে পড়ে ছিল শ্রমিকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার

আপডেট সময় ০৭:৪৪:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

নাটোরের হয়বতপুর থেকে ফরহাদ খন্দকার (২৮) নামে এক কুলি শ্রমিকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার হয়বতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পদদেশে রক্তাক্ত মরদেহটি পড়ে ছিল।

মঙ্গলবার মধ্য রাতে স্থানীয়রা মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গ্রাম পুলিশকে পাহারায় রাখে। বুধবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে।

পরকীয়ার জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করছেন নিহতের স্বজনসহ এলাকাবাসী। নিহত ফরহাদ খন্দকার সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকার মৃত মোসলেম খন্দকারের ছেলে। সে হয়বতপুর বাজারের কাঁচামাল আড়তের কুলি শ্রমিকের কাজ করতো।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানাযায়, ফরহাদ খন্দকার বাড়ির পাশেই হয়বতপুর বাজারে সবজি আড়তে কুলি শ্রমিকের কাজ করতেন। মঙ্গলবার দিন শেষে রাতেও আড়তে কাজ করে ফরহাদ। রাতে কে বা কারা ফরহাদ খন্দকারকে হত্যা করে সবজি আড়তের অদুরে হয়বতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে রক্তাক্ত মরদেহটি ফেলে রেখে যায়।

বুধবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। নিহতের ঘার ও পাঁজরে দুইটি আঘাত বা ফুটো চিহ্ন রয়েছে। প্রচুর রক্ত ক্ষরনও হয়েছে। এটি গুলিবিদ্ধের ঘটনাও ঘটতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বলেছে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে কিভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এলাকাবাসীদের ধারনা পরকীয়ার জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

আক্কাস আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, এলাকার ফরহাদ শিকদারের স্ত্রীর সাথে ফরহাদ খন্দকারের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন আগে ফরহাদ শিকদারের স্ত্রীকে ফরহাদ খন্দকার ভাগিয়ে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা সমঝোতা করে ফাহাদ শিকদারের বউকে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু তাদের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক ছিলই। এ নিয়ে ফরহাদ খন্দকারকে মাঝে মধ্যে শাসিয়ে যেতো খন্দকার শিকদার। এই পরকীয়ার জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তার ধারনা।

নিহত ফরহাদের স্ত্রী লুৎফুন নাহার জানান, তার স্বামী প্রতিদিন কাজ শেষে রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার সমধ্যে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্ত গতরাতে ফিরতে দেরি দেখে বার বার তাকে মোবাইল ফোন করা হয়। কিন্ত তাকে পাওয়া যায়না। খোজা খুজির এক পর্যায়ে রাত দেড়টার দিকে হয়বতপুর বাজারে যাওয়ার সময় স্কুলের শহীদ মিনারের পাশে রক্তাক্ত ও মৃত অবস্থায় তাকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই সময় স্থানীয় গ্রাম পুলিশের সহায়তায় থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়। রাতে গ্রাম পুলিশকে পাহাড়ার দায়িত্ব দেয় পুলিশ।

বুধবার সকালে তার স্বামীর মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। তিনি আরও বলেন, রাতে পরপর দুইটি বিকট শব্দ শুনেছেন তারা। তার স্বামীর হত্যার জন্য ফরহাদ খন্দকারের ওপর দায় চাপিয়ে বলেন,ফরহাদ শিকদারের বউয়ের সাথে সম্পর্ক করায় শিকদার তার স্বামীকে মেরে ফেলেছে। বেশ কিছুদিন ধরে শিকদার তার স্বামীকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিল। তিনি তার স্বামীর হত্যাকারী ফরহাদ শিকদারের বিচার দাবী করেন। নিহতের ভাই -বোনও ফরহাদ খন্দকারের হত্যার জন্য ফরহাদ শিকদারকে দায়ী করে তার বিচার দাবী করেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু বলেন, গভীর রাতে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে ফরহাদের লাশ পড়ে থাকার খবর পান। তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুর্ব বিরোধের জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি ধারনা করছেন। এই হত্যার সাথে যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে হত্যাকালীদের চিহ্নিত করে বিচার দাবী করেন তিনি।

নাটোর সদর থানার ওসি নাছিম আহমেদ বলেন, হয়বতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে তার রক্তাক্ত মরদেহটি পড়েছিল। রাতে কে বা কারা তাকে হত্যা করে ওই স্থানে ফেলে রেখে গেছে। কি কারনে কারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি।

তবে নিহতের ঘার ও পাঁজরে দুইটি আঘাত বা ফুটো চিহ্ন রয়েছে। প্রচুর রক্ত ক্ষরন হয়েছে। এটি গুলিবিদ্ধের ঘটনাও ঘটতে পারে। কেবল ময়না তদন্তের পর এর আসল কারন জানা যাবে। স্কুল ও ইউনিয়ন পরিষদের সিসি ফুটেজ দেখা হচ্ছে। বিষয়টি উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।