ঢাকা ০২:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানব সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ঝিকরগাছার রেজা নুর 

মানব সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ঝিকরগাছার রেজা নুর  জহিরুল ইসলাম  যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ যার অনেক আছে সে ধনী নয়, কিন্তু যে মানব সেবায় অনেক কিছু দেয় সেই ধনী। কথায় আছে মানব সেবায় বড় ধর্ম,  যার উজ্জল দৃষ্টান্ত যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামের রেজা নুর।  ঝিকরগাছা-বাকড়াঁ সড়কের বল্লা গ্রামে পিচের রাস্তা থেকে পশ্চিম দিকে চলে গেছে ইটের সলিং। সেই রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে যাওয়ার পর চোখে পড়বে দক্ষিণ পাশে বাড়ির ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তাটিও ইটের সলিং করা। কিছু দূর গিয়ে রাস্তাটি একটি বাড়ির সীমানায় শেষ হয়েছে। যেনো বাড়ি থেকে বাড়ি যাওয়ার রাস্তা। এমনটা সাধারণত সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় দেখা যায়। কিন্তু গ্রামের রাস্তার এমন দৃশ্য যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামের নজুর মোড় এলাকায়। বাড়ির ভেতর ইটের সলিং করা রাস্তাটির নাম আনোয়ারা সড়ক। শুধু নজুর মোড়েই নয়, এমন রাস্তা আরও দেখা যায় বল্লা গ্রামের কলোনিপাড়ায়। এ ছাড়া নিচের পাড়া, বল্লা বাজারসহ গ্রামের আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় আছে এমন রাস্তা। তবে প্রতিটি রাস্তার আলাদা নাম আছে। বল্লা গ্রামের মৃত আতিয়ার রহমান নায়েবের ছেলে আমেরিকা প্রবাসী রেজা নুর নিজ অর্থায়নে এসব রাস্তা নির্মাণ করেছেন। শুধু রাস্তা নয়, একাধিক উপাসনালয়, পাবলিক লাইব্রেরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও তৈরি করেছেন তিনি। তৈরি করে দিয়েছেন পুকুরঘাট, নলকূপ স্থাপন, সংস্কার করেছেন খেলার মাঠ এবং তৈরি করেছেন কবরস্থান। নিজ অর্থে এসব কর্মকাণ্ডে তিনি এলাকার মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র, গরীর দুঃখী, দের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন । তাঁর  এই উন্নয়নমুলক কাজ নিজ গ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে বিস্তৃত হয়েছে আত্মীয়স্বজনের গ্রামেও।  তিনি ১৯৯৫ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে অ্যাকাউন্টিং পড়েছেন নিউইয়র্কের ড্রেইক বিজনেস স্কুলে। ঝিকরগাছা মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু হলেও ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি ম্যাসাচুসেটস স্টেটের বোস্টন সিটির অদূরে ইস্টন শহরে বসবাস করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজ অর্থায়নে বল্লার নিচের পাড়ায় দাদার নামে ২০১৬ সালে উসমান সড়ক, দাদির নামে ২০১৯ সালে সৈয়েদা জান সড়ক তৈরি করেন। একই বছর ফুফুর নামে আনোয়ারা সড়ক ও ২০১৮ সালে বল্লা বাজার সড়ক নির্মাণ করেন। সে বছরই মনিরামপুর উপজেলার হানুয়ারে নানার নামে মোক্তার মাস্টার সড়ক, ২০২২ সালে বল্লা কলোনিপাড়া মসজিদ সড়ক এবং ২০১৯ সালে বরিশাল বাবুগঞ্জের ইসলামপুরে শ্বশুর-শাশুড়ির নামে আলেয়া-কবীর সড়কসহ মোট আটটি সড়ক নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি ২০১৭ সালে বল্লা বাজারে তাঁর বাবার নামে আতিয়ার রহমান পাবলিক লাইব্রেরি, ২০১৯ সালে মায়ের নামে ময়না এতিমখানা, বোনের নামে শিউলি শিক্ষালয়, বল্লা দাখিল মাদ্রাসায় ৫০ শতাংশ জমি দান, বাবার নামে মসজিদ নির্মাণসহ এলাকাবাসীর জন্য কবরস্থান এবং বিশুদ্ধ পানির জন্য একাধিক নলকূপ বসিয়েছেন। সামাজিক উন্নয়নমূলক এসব কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সাহিত্যচর্চায় মন টানে রেজা নুরের। এ পর্যন্ত তাঁর ১৭টি উপন্যাস ও কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। বল্লা গ্রামবাসী জানান,  খেলাধুলাসহ নানান সামাজিক কর্মকাণ্ডে রেজা নুর আর্থিক সহযোগিতা করেন। বড় কোনো টুর্নামেন্ট হলে আমরা তাঁর শরণাপন্ন হই। এর আগে তিনি গোলপোস্ট উপহার দিয়েছেন। এবার টুর্নামেন্টেও তিনি বড় অঙ্কের সহযোগিতা করেন। রেজা নুর বলেন আমি বল্লা গ্রামের সন্তান। যেখানেই থাকি, আমার উপার্জনে গ্রামবাসীর হক রয়েছে। সে কারণে গ্রামের উন্নয়ন এবং সব সামাজিক কর্মকাণ্ডে আমি সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। আমি সব সময় সামাজিক উন্নয়নমুলক কাজ করে যেতে চাই।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মানব সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ঝিকরগাছার রেজা নুর 

আপডেট সময় ০২:৩৫:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩

মানব সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ঝিকরগাছার রেজা নুর  জহিরুল ইসলাম  যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ যার অনেক আছে সে ধনী নয়, কিন্তু যে মানব সেবায় অনেক কিছু দেয় সেই ধনী। কথায় আছে মানব সেবায় বড় ধর্ম,  যার উজ্জল দৃষ্টান্ত যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামের রেজা নুর।  ঝিকরগাছা-বাকড়াঁ সড়কের বল্লা গ্রামে পিচের রাস্তা থেকে পশ্চিম দিকে চলে গেছে ইটের সলিং। সেই রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে যাওয়ার পর চোখে পড়বে দক্ষিণ পাশে বাড়ির ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তাটিও ইটের সলিং করা। কিছু দূর গিয়ে রাস্তাটি একটি বাড়ির সীমানায় শেষ হয়েছে। যেনো বাড়ি থেকে বাড়ি যাওয়ার রাস্তা। এমনটা সাধারণত সিটি করপোরেশন বা পৌর এলাকায় দেখা যায়। কিন্তু গ্রামের রাস্তার এমন দৃশ্য যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামের নজুর মোড় এলাকায়। বাড়ির ভেতর ইটের সলিং করা রাস্তাটির নাম আনোয়ারা সড়ক। শুধু নজুর মোড়েই নয়, এমন রাস্তা আরও দেখা যায় বল্লা গ্রামের কলোনিপাড়ায়। এ ছাড়া নিচের পাড়া, বল্লা বাজারসহ গ্রামের আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় আছে এমন রাস্তা। তবে প্রতিটি রাস্তার আলাদা নাম আছে। বল্লা গ্রামের মৃত আতিয়ার রহমান নায়েবের ছেলে আমেরিকা প্রবাসী রেজা নুর নিজ অর্থায়নে এসব রাস্তা নির্মাণ করেছেন। শুধু রাস্তা নয়, একাধিক উপাসনালয়, পাবলিক লাইব্রেরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও তৈরি করেছেন তিনি। তৈরি করে দিয়েছেন পুকুরঘাট, নলকূপ স্থাপন, সংস্কার করেছেন খেলার মাঠ এবং তৈরি করেছেন কবরস্থান। নিজ অর্থে এসব কর্মকাণ্ডে তিনি এলাকার মানুষের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র, গরীর দুঃখী, দের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন । তাঁর  এই উন্নয়নমুলক কাজ নিজ গ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে বিস্তৃত হয়েছে আত্মীয়স্বজনের গ্রামেও।  তিনি ১৯৯৫ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে অ্যাকাউন্টিং পড়েছেন নিউইয়র্কের ড্রেইক বিজনেস স্কুলে। ঝিকরগাছা মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু হলেও ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি ম্যাসাচুসেটস স্টেটের বোস্টন সিটির অদূরে ইস্টন শহরে বসবাস করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিজ অর্থায়নে বল্লার নিচের পাড়ায় দাদার নামে ২০১৬ সালে উসমান সড়ক, দাদির নামে ২০১৯ সালে সৈয়েদা জান সড়ক তৈরি করেন। একই বছর ফুফুর নামে আনোয়ারা সড়ক ও ২০১৮ সালে বল্লা বাজার সড়ক নির্মাণ করেন। সে বছরই মনিরামপুর উপজেলার হানুয়ারে নানার নামে মোক্তার মাস্টার সড়ক, ২০২২ সালে বল্লা কলোনিপাড়া মসজিদ সড়ক এবং ২০১৯ সালে বরিশাল বাবুগঞ্জের ইসলামপুরে শ্বশুর-শাশুড়ির নামে আলেয়া-কবীর সড়কসহ মোট আটটি সড়ক নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি ২০১৭ সালে বল্লা বাজারে তাঁর বাবার নামে আতিয়ার রহমান পাবলিক লাইব্রেরি, ২০১৯ সালে মায়ের নামে ময়না এতিমখানা, বোনের নামে শিউলি শিক্ষালয়, বল্লা দাখিল মাদ্রাসায় ৫০ শতাংশ জমি দান, বাবার নামে মসজিদ নির্মাণসহ এলাকাবাসীর জন্য কবরস্থান এবং বিশুদ্ধ পানির জন্য একাধিক নলকূপ বসিয়েছেন। সামাজিক উন্নয়নমূলক এসব কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সাহিত্যচর্চায় মন টানে রেজা নুরের। এ পর্যন্ত তাঁর ১৭টি উপন্যাস ও কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। বল্লা গ্রামবাসী জানান,  খেলাধুলাসহ নানান সামাজিক কর্মকাণ্ডে রেজা নুর আর্থিক সহযোগিতা করেন। বড় কোনো টুর্নামেন্ট হলে আমরা তাঁর শরণাপন্ন হই। এর আগে তিনি গোলপোস্ট উপহার দিয়েছেন। এবার টুর্নামেন্টেও তিনি বড় অঙ্কের সহযোগিতা করেন। রেজা নুর বলেন আমি বল্লা গ্রামের সন্তান। যেখানেই থাকি, আমার উপার্জনে গ্রামবাসীর হক রয়েছে। সে কারণে গ্রামের উন্নয়ন এবং সব সামাজিক কর্মকাণ্ডে আমি সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। আমি সব সময় সামাজিক উন্নয়নমুলক কাজ করে যেতে চাই।