জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, গুঁড়া দুধ উৎপাদনের জায়গা তৈরি করতে হবে। সেখানে সাপোর্ট দেওয়া প্রয়োজন। আমরা আমদানি করা গুঁড়া দুধ চাই না।
রোববার (৫ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব ভবনে ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ ১৪টি সংগঠনের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে শুল্ক বিভাগের সদস্য মো. মাসুদ সাদেক, ভ্যাট নীতির সদস্য জাকিয়া সুলতানা ও আয়কর নীতির সদস্য সামস উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইমরান হোসেন খামার মালিকদের আগামী ২০ বছরের জন্য আয়কর রেয়াত ও দেশীয় উৎপাদিত দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এবং মাংসের ওপর সব ভ্যাট প্রত্যাহার চেয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে সাফটা চুক্তি থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি বাতিল এবং অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন মোহাম্মদ ইমরান।
প্রস্তাব শুনে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাইরে থেকে আনা, আমদানি করা গুঁড়া দুধ আমরা চাই না। এই জায়গাটা দেখতে হবে। গুঁড়া দুধের প্রোডাকশনের জায়গা তৈরি করতে হবে। সেখানে সাপোর্ট দেওয়া প্রয়োজন।
আলোচনায় বাংলাদেশ ড্রেস মেকার্স অ্যাসোসিয়েশন টেইলারিং অ্যান্ড টেইলার্স সেবা খাতে ৩০ শতাংশ মূল্য ভিত্তি ধরে নিট মূল্য সংযোজন ভিত্তিতে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ মূসক ধার্য করার প্রস্তাব দেন।
সংগঠনের সেক্রেটারি হারুন উর রশিদ বলেন, বর্তমান বাজারে চীন থেকে আমদানি করা শার্ট, প্যান্ট, ব্লেজার কম দামে পাওয়া যাওয়ায় দর্জি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ে পোশাক ডেলিভারি করা সম্ভব হয় না। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পোশাক সরবরাহবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকে, যা দুই-তিন বছর পর নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে হয়। বর্তমানে আমাদের ওপর ১০ শতাংশ হারে মূসক ধার্য করা রয়েছে, যা লভ্যাংশ থেকে প্রদান করা কঠিন।
এর জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ড্রেস মেকার্স যারা এখন তাদের সমস্যার কথা বলছেন বা তাদের অর্ধেক ঝরে গেছে— এটা কিন্তু ট্যাক্স বা ভ্যাটের লোডের কারণে নয়। এটা একটা ডেভেলপমেন্ট ইনডিকেটর। এটা উন্নয়ন মাপকাঠি যে আমি কাপড়টা কিনে নিয়ে, দোকান থেকে গজ কাপড় কিনি এবং মেকারের কাছে গিয়ে বলি ভাই এটা বানিয়ে দাও। নাকি আমি সরাসরি আমার পোশাক কিনি। চয়েজ করে কালার, মাপ দেখে একটা কিনি, টাকা দিয়ে দিই। এটা হলো একটা ইনডিকেটর যে একটা দেশ উন্নত হচ্ছে। যত দেশ উন্নত হবে তত থান কাপড় কিনে দর্জির কাছে যাওয়ার মতো সময় থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, আমি একবার যাব থান কাপড় কিনতে। সেটা নিয়ে বাড়ি এসে দুই দিন পর যাব দর্জির কাছে। তারপর আবার দর্জির কাছে গিয়ে ট্রায়াল দেব। তারপর সেটা নিব। এসময় আমি অন্য জায়গায় ব্যবহার করলে এর চেয়ে বেশি পয়সা কামাই করব। দেশ যত উন্নত হবে, ড্রেস মেকিং ইন্ডাস্ট্রিতে তত চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে সারভাইভ করার। এখন আপনাদের সারভাইভ করতে অন্য প্রসেসে যেতে হবে। ট্যাক্স, ভ্যাট দিয়ে আপনাদের সারভাইভ করে, আপনাদের সাপোর্ট করা যাবে না।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি স্ট্রিট ফুডসহ সব খাদ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনা, শতভাগ রেস্তোরাঁকে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের আওতায় আনা ও রেস্টুরেন্টে ভ্যাট ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ক্যান্টিনে ভ্যাট হার ১ শতাংশ ও কেটারিং সার্ভিসে খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে ভ্যাট হার ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ এগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) কৃষিজ পণ্য সরবরাহের বিপরীতে উৎসে কর কর্তনে অব্যাহতি প্রদান, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপকরণ হিসেবে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দিয়েছে।
সংগঠনটির সদস্য ও প্রাণ আর এফ এল গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার মোল্লাহ আসেফ হোসেন বলেন, পাউরুটি, হাতে তৈরির বিস্কুটের প্রধান কাঁচামাল আটা, ময়দা, চিনি ও তেল ইত্যাদির আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারমূল্য দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে এসআরওতে সেই সব পণ্যের যে মূল্য নির্ধারিত আছে, বর্তমানে সেই ব্যবহৃত কাঁচামালের মূল্যই তার চেয়ে বেশি। এসব কাঁচামালের এসআরও মূল্য বাড়ানো দরকার। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এসেপটিক প্যাক আমদানি শুল্ক হ্রাস করার প্রস্তাব করেন তিনি।
হজ এজেন্সিস অব বাংলাদেশ (হাব) এজেন্সিগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি কেনার সুবিধা প্রদানের আহ্বান জানায়। বাংলাদেশ সিকিউরিটি সার্ভিসেস কোম্পানিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন করপোরেট কর, মূসক, উৎসে কর ও টার্নওভার করা ০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
রেস্টুরেন্টে ভ্যাট প্রদান প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ১৫ থেকে ১০-এ, সেখান থেকে ৫-এ আনলাম। এখন বলছে ৩ শতাংশ করেন। ৩ শতাংশ করার সঙ্গে সঙ্গে বলবেন ০ করেন।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যার যার জায়গা থেকে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করছেন। আমরাই সব রাজস্ব দিচ্ছি, ভ্যাট দিচ্ছি— এমন মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। পোল্ট্রি ফিশারিজে আমরা বরাবরই সাপোর্ট দিয়ে আসছি। মেশিন বানানোর স্ক্রুটাকে ডিউটি ফ্রি করে দেওয়ার কথা বলছেন। সব আইটেমকে ডিউটি ফ্রি সুবিধা দিতে হবে— এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ডিক্লারেশন নেবেন সেগুলো নিয়ে আসবেন। কিন্তু সেই ডিক্লারেশনের জায়গায় আপনারা থাকেন না।