আলেয়া বেগম(৩৪) রাজধানীর হাজারীবাগ থানার বউ বাজার এলাকার বাসিন্দা। তিনি ৩০শে অক্টোবর জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি দেন। তিনি ১৫ ই জানুয়ারী দেশে ফিরে আসেন। নির্মম নির্যাতনের কথা বলেন।
শারমিনের সাথে আলেয়া বেগমের পূর্বে পরিচিতি ছিল। বউ বাজারের বাসিন্দা তারা।আলেয়া বেগম বাসায় বাসায় গিয়ে কাজ করেন। তিন চারটি বাসায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন । তার একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান সহ অসুস্থ স্বামী নিয়ে তার চার জনের ছোট্ট সংসার টিতে প্রধান উপার্জন কারী একমাত্র ব্যাক্তি তিনিই । আলেয়া নিয়মিত ছুটে চলেন ভালো কাজের সন্ধানে। দালাল শারমিনের সাথে সেই সুত্রে পরিচয়। গৃহ কর্মের অনুসন্ধানে শারমিনের সাথে কথোপকথনের একপর্যায়ে আলেয়াকে অধিক আয়ের জন্য সৌদিতে যাওয়ার কথা বলে শারমিন ।শারমিন আলেয়াকে এমন ভাবে নিশ্চিত করে যে, শারমিন আগে ৫০ জন লোককে সৌদি আরবে পাঠিয়েছে। এবং তারা ভালো আছে।শারমিনের পরিচিতি ভাই রানা আছে, তার অফিসে নিয়ে যাব।পরে শারমিন তাকে এই ঠিকানায় নিয়ে আসে। নিসুতি ইন্টারন্যাশনাল আর এল-০৪৫৬, ট্রাভেলএজেন্সি আইএটিএনং-৪২৩৪১৮০৬,
৩০,পুরানা পল্টন লেন, গাল্ফ টাওয়ার( ৬ষ্ট তলা) ঢাকা- ১০০০।রানার সাথে পরিচয় হয় আলেয়ার, রানা বলে “সৌদির সরকার মেয়েদের ফ্রিতে তাদের দেশে নেয়। এবং প্রতিমাসে ৩০ /৪০ হাজার টাকা বেতন দেয়।ভালো হাউজ ভিসা আছে আপনি চিন্তা করবেন না”।রানার কথামতো আলেয়া সৌদিতে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তাকে প্রথমে রেষ্ট হাউজে রাখা হয়। পরে একটি বাসায় কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়। সৌদির গৃহকত্রী তাকে দাসি হিসেবে ক্রয় করেছে বলে জানায়। পরে আলেয়া জানতে পারে দেশ থেকে শারমিন ও রানার মাধ্যমে তাকে সৌদিতে দাসী হিসেবে, ০৪ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করা হয়েছে। আলেয়ার দাবি পূনরায় তাকে সৌদির অফিস থেকে ২৩ হাজার রিয়েল অর্থাৎ ৯ লক্ষ টাকায় তথা সর্বমোট ১৩ লক্ষ টাকায় তাকে বিক্রয় করা হয়। তাকে একটি বাসায় কাজ করতে দেওয়া হয়। সেখানে আলেয়া ১ মাস ২৫ দিন কাজ করে। কিন্তু তাকে কোন ধরনের বেতন দেওয়া হয়নি।বরং গৃহকর্ত্রীর ছেলে তাকে অশালীন যৌন সম্পৃক্ত অত্যাচার করতো।এতে আলেয়া রাজী না থাকায় তাকে এক বেলায় খাবার দিত। বরং কোন খাদ্য গ্রহন করতে গেলে তার উপর আরো নির্মম নির্যাতন চলতো।দিনে এক বেলা মাপা একপ্লেট ভাত সাথে একটু ডাইল ও মরিচের আধা ভাঙ্গা গুঁড়ো দিতো। সে সৌদি আরবে এমন ঘটনার শিকার হয়ে দাম্মাম শহরের অফিসে যায় এবং সেখানে গিয়ে তাদের কাকুতি মিনতি করে আলেয়া বেগম বলে, “আমি বাংলাদেশে যেতে চাই”।কিন্তু তাকে দেশে না পাঠিয়ে আটকে রেখে অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। এবং সৌদিয়ান লোক সু জুতা দিয়ে তার পা মুড়াইয়া থেঁৎলে ফেলে।আলেয়া বলে “এই নির্যাতন শুধু আমাকে নয় বাংলাদেশের অন্তত ত্রিশ জন নারীর সঙ্গে ঘটেছে ওই দিন, কেউ নির্যাতনের শিকার হয়ে বেআইনি কাজে যোগ দেন, আমি পরে জানতে পারি আসলে ভালো কাজের নাম করে আমাদেরকে দাসী হিসেবে বিক্রি করে এক শ্রেণীর মানব পাচারকারী দালাল।যার খপ্পরে আজ আমি প্রবাসে করুন নির্যাতনের শিকার।আমি বুঝতে পেরে পালিয়ে গিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় কর্মস্থল হতে উদ্বার হয়ে আমার ছেলে ও স্বামীর তদবিরে দেশে ফিরে আসি।আমি ন্যায় বিচার চাই৷আমি সরকারের কাছে একটাই দাবি করি, যাতে করে আমাদের দেশের কোন মেয়েকে কাজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে গৃহ কাজের নামে পাচার করে দাসত্ব প্রথায় ও পৈশাচিক নির্যাতনের উদ্দেশ্য বিক্রি না করা হয়”।