ঢাকা ০৫:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
শরীয়তপুরে ছেলের গাছের গোড়ার আঘাতে বাবা নিহত সেই ছেলে গ্রেফতার। ঢাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি কে এই সাদিক শিগগিরই ঢাবি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা: শিবির সভাপতি চট্টগ্রাম নগর যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত, ২ নেতা বহিষ্কার সরকার পতনের পর এই প্রথম মুখ খুললেন সাদ্দাম-ইনান কিস্তির টাকা দিতে না পারায় গরু ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন এনজিও মাঠকর্মীরা রংপুরের মিঠাপুকুরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত ভোলায় শহীদ পরিবারদের কোটি টাকার সহায়তা দিল- জামায়াতে ইসলাম জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশন যোগ দিতে নিউইয়র্কে দৈনিক তরুণ কণ্ঠ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শান্ত বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পর আমেরিকা প্রকাশ্যে এসে বড় ঘোষণা

শ্রীলঙ্কা: আর্থিক সংকটে স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় প্রায় এক বছর ধরে চলছে চরম অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটের প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির সাধারণ মানুষের ওপর। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে, একাধিক সন্তানের মধ্যে একজনকে স্কুলে পাঠানোর জন্য অন্যদের বাড়িতে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা।

আর তাই আর্থিক সংকটের জেরে সৃষ্ট এই পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দশ বছর বয়সী মালকি তার বিছানায় বসে থাকা অবস্থায়ই বেশ উত্তেজিত। সে তার দুই বোন এবং দুই ভাইয়ের এক ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠেছে যাতে সে তার নখ থেকে কিছু উজ্জ্বল লাল বস্তু সরিয়ে ফেলতে পারে।

আজ স্কুলে তার প্রথম দিন এবং সে এ বিষয়ে নিখুঁত হতে চায়। তবে তার ভাইবোনদের অবশ্যই বাড়িতে থাকতে হবে। কারণ মালকির পরিবার কেবল তাকেই স্কুলে পাঠানোর সামর্থ্য রাখে।

বিবিসি বলছে, মালকির মা প্রিয়ন্তিকাকে তার বাচ্চাদের স্কুলে পড়া বন্ধ করতে হয়েছে, যাতে তারা আতশবাজি বিক্রি করে পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করতে পারে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কায় খাদ্যের দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং একইসময়ে মুদ্রাস্ফীতিও সর্বকালের সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

বেশ কিছু দিন ধরে মালকির পরিবারের কেউ (প্রয়োজন মতো) খাবার খেতে পায় না। শ্রীলঙ্কায় স্কুলে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ থাকলেও সেখানে খাবার দেওয়া হয় না। এর সঙ্গে ইউনিফর্ম এবং পরিবহনের খরচ যোগ করলে, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে শিক্ষা একটি বিলাসবহুল বিষয়, যা মালকির মা প্রিয়ন্তিকা আর বহন করতে পারছেন না।

প্রিয়ন্তিকা বলছেন, যদি তারা স্কুলে ফিরে যেতে চায় তার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৪০০ রুপি প্রয়োজন। নিজের এক বেড-রুমের ঘরে সজল চোখে তিনি বলেন, ‘এই সব বাচ্চারা প্রতিদিন স্কুলে যেত। এখন তাদের (স্কুলে) পাঠানোর টাকা আমার কাছে নেই।’ ১০ বছর বয়সী মালকি এখন স্কুলে যেতে পারছে কারণ তার জুতা এবং ইউনিফর্ম এখনও মানানসই। কিন্তু মালকির ছোট বোন দুলাঞ্জলি বিছানায় শুয়ে কাঁদছে, মন খারাপ করে আছে। কারণ সে স্কুলে যেতে পারছে না।

(দুলাঞ্জলিকে) প্রিয়ন্তিকা বলছেন, ‘আমার প্রিয়তম, কেঁদো না। আমি চেষ্টা করব, কাল তোমাকে নিয়ে যাব।’ সকালে সূর্য ওঠার সাথে সাথে সাদা সুতির ইউনিফর্ম পরে নোংরা রাস্তা ধরে ক্লাসে যাওয়া শিশুরা মোটরসাইকেলের পেছনে চেপে বসে বা টুক-টুক গাড়িতে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে প্রক্রমা ওয়েরাসিংহেও যেন ক্লান্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।

তিনি কলম্বোর কোটাহেনা সেন্ট্রাল সেকেন্ডারি কলেজের অধ্যক্ষ এবং প্রতিদিন (শিক্ষার্থীদের) এই অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখেন। প্রক্রমা ওয়েরাসিংহে বলছেন, ‘স্কুলের দিন যখন আমরা সকালের সমাবেশ করি, তখন শিশুরা ক্ষুধায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’

সরকার বলছে, তারা স্কুলে চাল বিতরণ শুরু করেছে, কিন্তু বিবিসি যোগাযোগ করেছে এমন বেশ কয়েকটি স্কুল বলছে- তারা কোনও সাহায্য পায়নি। ওয়েরাসিংহে বলছেন, স্কুলে ছাত্রদের উপস্থিতি ৪০ শতাংশের মতো কমে গেছে। আর তাই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে আসা অব্যাহত রাখতে শিক্ষকদের অতিরিক্ত খাবার আনতে বাধ্য করেছিলেন তিনি।

জোসেফ স্ট্যালিন সিলন শিক্ষক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বিশ্বাস করেন, খরচের কারণে শিক্ষা ছেড়ে দেওয়া পরিবারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সম্পর্কে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে অসচেতন। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরাই খালি লাঞ্চ বক্স দেখেন। কিন্তু এই অর্থনৈতিক সংকটের প্রকৃত শিকার শিশুরা। (সরকার) এই ইস্যুটির উত্তর খুঁজছে না। এটি শ্রীলঙ্কা সরকারের পরিবর্তে ইউনিসেফ এবং অন্যরা দেখেছে ও শনাক্ত করেছে।’

ইউনিসেফ বলেছে, সামনের মাসগুলোতে নিজেদের খাওয়ানোই মানুষের জন্য কঠিন হয়ে উঠবে। কারণ চালের মতো মৌলিক খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি পরিবারগুলোকে কার্যত পঙ্গু করে চলেছে। আর তাই এটা প্রত্যাশিত যে, সারা দেশে আরও বেশি শিশু ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হবে।

শ্রীলঙ্কার সরকার পরিস্থিতি পরিচালনা করতে আপাতদৃষ্টিতে অক্ষম হওয়ায় দাতব্য সংস্থাগুলোকে বাধ্য হয়ে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। গত তিন দশক ধরে কলম্বোর সবচেয়ে দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করে আসছে খ্রিস্টান দাতব্য প্রতিষ্ঠান সমতা সরনা।

আর আজ এই প্রতিষ্ঠানের খাবার হলটি রাজধানী কলম্বোর বিভিন্ন স্কুলের ক্ষুধার্ত শিক্ষার্থীদের ভিড়ে পরিপূর্ণ। যদিও এই দাতব্য সংস্থাটি প্রতিদিন প্রায় ২০০ শিশুকে সাহায্য করতে পারে। তারপরও এটি স্পষ্ট যে, ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে লড়াই করছে প্রতিষ্ঠানটি।

নিজের একদল বন্ধুদের সাথে দুপুরের খাবারের জন্য লাইনে অপেক্ষা করছে পাঁচ বছর বয়সী মনোজ। সে বলছে, ‘তারা আমাদের খাবার দেয়, বাড়ি যাওয়ার জন্য বাস দেয়, তারা আমাদের সবকিছু দেয় যাতে এখন আমরা পড়াশুনা করতে পারি।’

অন্যদিকে স্কুলে নিজের প্রথম দিন শেষে বাড়ি ফিরে মালকি তার মাকে জানায়, সে তার বন্ধুদের আবার দেখতে পাওয়ার বিষয়টি কতটা উপভোগ করেছে। কিন্তু সে তার মাকে আরও জানায়, তার নতুন একটি ওয়ার্কবুক দরকার এবং তার শিক্ষকরা স্কুল প্রকল্পের উপকরণ কেনার জন্য অতিরিক্ত অর্থ চাইছেন। কিন্তু এই খরচ দেওয়ার মতো টাকা যে সংসারে নেই।

প্রিয়ন্তিকা বলছেন, ‘আমরা যদি আজকের খাবার খুঁজে বের করতে পারি, তাহলে আগামীকাল খাওয়ার জন্য কীভাবে কিছু খুঁজে পাওয়া যায় তা নিয়ে চিন্তায় থাকি। আর এটাই আমাদের জীবন হয়ে গেছে।’

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শরীয়তপুরে ছেলের গাছের গোড়ার আঘাতে বাবা নিহত সেই ছেলে গ্রেফতার।

শ্রীলঙ্কা: আর্থিক সংকটে স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

আপডেট সময় ০১:৩০:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩

ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় প্রায় এক বছর ধরে চলছে চরম অর্থনৈতিক সংকট। এই সংকটের প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির সাধারণ মানুষের ওপর। পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে, একাধিক সন্তানের মধ্যে একজনকে স্কুলে পাঠানোর জন্য অন্যদের বাড়িতে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা।

আর তাই আর্থিক সংকটের জেরে সৃষ্ট এই পরিস্থিতিতে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দশ বছর বয়সী মালকি তার বিছানায় বসে থাকা অবস্থায়ই বেশ উত্তেজিত। সে তার দুই বোন এবং দুই ভাইয়ের এক ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠেছে যাতে সে তার নখ থেকে কিছু উজ্জ্বল লাল বস্তু সরিয়ে ফেলতে পারে।

আজ স্কুলে তার প্রথম দিন এবং সে এ বিষয়ে নিখুঁত হতে চায়। তবে তার ভাইবোনদের অবশ্যই বাড়িতে থাকতে হবে। কারণ মালকির পরিবার কেবল তাকেই স্কুলে পাঠানোর সামর্থ্য রাখে।

বিবিসি বলছে, মালকির মা প্রিয়ন্তিকাকে তার বাচ্চাদের স্কুলে পড়া বন্ধ করতে হয়েছে, যাতে তারা আতশবাজি বিক্রি করে পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করতে পারে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শ্রীলঙ্কায় খাদ্যের দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং একইসময়ে মুদ্রাস্ফীতিও সর্বকালের সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

বেশ কিছু দিন ধরে মালকির পরিবারের কেউ (প্রয়োজন মতো) খাবার খেতে পায় না। শ্রীলঙ্কায় স্কুলে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ থাকলেও সেখানে খাবার দেওয়া হয় না। এর সঙ্গে ইউনিফর্ম এবং পরিবহনের খরচ যোগ করলে, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে শিক্ষা একটি বিলাসবহুল বিষয়, যা মালকির মা প্রিয়ন্তিকা আর বহন করতে পারছেন না।

প্রিয়ন্তিকা বলছেন, যদি তারা স্কুলে ফিরে যেতে চায় তার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৪০০ রুপি প্রয়োজন। নিজের এক বেড-রুমের ঘরে সজল চোখে তিনি বলেন, ‘এই সব বাচ্চারা প্রতিদিন স্কুলে যেত। এখন তাদের (স্কুলে) পাঠানোর টাকা আমার কাছে নেই।’ ১০ বছর বয়সী মালকি এখন স্কুলে যেতে পারছে কারণ তার জুতা এবং ইউনিফর্ম এখনও মানানসই। কিন্তু মালকির ছোট বোন দুলাঞ্জলি বিছানায় শুয়ে কাঁদছে, মন খারাপ করে আছে। কারণ সে স্কুলে যেতে পারছে না।

(দুলাঞ্জলিকে) প্রিয়ন্তিকা বলছেন, ‘আমার প্রিয়তম, কেঁদো না। আমি চেষ্টা করব, কাল তোমাকে নিয়ে যাব।’ সকালে সূর্য ওঠার সাথে সাথে সাদা সুতির ইউনিফর্ম পরে নোংরা রাস্তা ধরে ক্লাসে যাওয়া শিশুরা মোটরসাইকেলের পেছনে চেপে বসে বা টুক-টুক গাড়িতে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে প্রক্রমা ওয়েরাসিংহেও যেন ক্লান্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।

তিনি কলম্বোর কোটাহেনা সেন্ট্রাল সেকেন্ডারি কলেজের অধ্যক্ষ এবং প্রতিদিন (শিক্ষার্থীদের) এই অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখেন। প্রক্রমা ওয়েরাসিংহে বলছেন, ‘স্কুলের দিন যখন আমরা সকালের সমাবেশ করি, তখন শিশুরা ক্ষুধায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’

সরকার বলছে, তারা স্কুলে চাল বিতরণ শুরু করেছে, কিন্তু বিবিসি যোগাযোগ করেছে এমন বেশ কয়েকটি স্কুল বলছে- তারা কোনও সাহায্য পায়নি। ওয়েরাসিংহে বলছেন, স্কুলে ছাত্রদের উপস্থিতি ৪০ শতাংশের মতো কমে গেছে। আর তাই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে আসা অব্যাহত রাখতে শিক্ষকদের অতিরিক্ত খাবার আনতে বাধ্য করেছিলেন তিনি।

জোসেফ স্ট্যালিন সিলন শিক্ষক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বিশ্বাস করেন, খরচের কারণে শিক্ষা ছেড়ে দেওয়া পরিবারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সম্পর্কে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে অসচেতন। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরাই খালি লাঞ্চ বক্স দেখেন। কিন্তু এই অর্থনৈতিক সংকটের প্রকৃত শিকার শিশুরা। (সরকার) এই ইস্যুটির উত্তর খুঁজছে না। এটি শ্রীলঙ্কা সরকারের পরিবর্তে ইউনিসেফ এবং অন্যরা দেখেছে ও শনাক্ত করেছে।’

ইউনিসেফ বলেছে, সামনের মাসগুলোতে নিজেদের খাওয়ানোই মানুষের জন্য কঠিন হয়ে উঠবে। কারণ চালের মতো মৌলিক খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি পরিবারগুলোকে কার্যত পঙ্গু করে চলেছে। আর তাই এটা প্রত্যাশিত যে, সারা দেশে আরও বেশি শিশু ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হবে।

শ্রীলঙ্কার সরকার পরিস্থিতি পরিচালনা করতে আপাতদৃষ্টিতে অক্ষম হওয়ায় দাতব্য সংস্থাগুলোকে বাধ্য হয়ে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। গত তিন দশক ধরে কলম্বোর সবচেয়ে দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করে আসছে খ্রিস্টান দাতব্য প্রতিষ্ঠান সমতা সরনা।

আর আজ এই প্রতিষ্ঠানের খাবার হলটি রাজধানী কলম্বোর বিভিন্ন স্কুলের ক্ষুধার্ত শিক্ষার্থীদের ভিড়ে পরিপূর্ণ। যদিও এই দাতব্য সংস্থাটি প্রতিদিন প্রায় ২০০ শিশুকে সাহায্য করতে পারে। তারপরও এটি স্পষ্ট যে, ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে লড়াই করছে প্রতিষ্ঠানটি।

নিজের একদল বন্ধুদের সাথে দুপুরের খাবারের জন্য লাইনে অপেক্ষা করছে পাঁচ বছর বয়সী মনোজ। সে বলছে, ‘তারা আমাদের খাবার দেয়, বাড়ি যাওয়ার জন্য বাস দেয়, তারা আমাদের সবকিছু দেয় যাতে এখন আমরা পড়াশুনা করতে পারি।’

অন্যদিকে স্কুলে নিজের প্রথম দিন শেষে বাড়ি ফিরে মালকি তার মাকে জানায়, সে তার বন্ধুদের আবার দেখতে পাওয়ার বিষয়টি কতটা উপভোগ করেছে। কিন্তু সে তার মাকে আরও জানায়, তার নতুন একটি ওয়ার্কবুক দরকার এবং তার শিক্ষকরা স্কুল প্রকল্পের উপকরণ কেনার জন্য অতিরিক্ত অর্থ চাইছেন। কিন্তু এই খরচ দেওয়ার মতো টাকা যে সংসারে নেই।

প্রিয়ন্তিকা বলছেন, ‘আমরা যদি আজকের খাবার খুঁজে বের করতে পারি, তাহলে আগামীকাল খাওয়ার জন্য কীভাবে কিছু খুঁজে পাওয়া যায় তা নিয়ে চিন্তায় থাকি। আর এটাই আমাদের জীবন হয়ে গেছে।’