জিকির শব্দের অর্থ কোনো কিছু স্মরণ করা, বর্ণনা করা, মনে রাখা বা মনে করা ইত্যাদি। জিকরুল্লাহ বলতে আল্লাহকে স্মরণ করা, আল্লাহর কথা বর্ণনা করা, আল্লাহকে মনে রাখা বোঝায়।
পবিত্র কোরআনে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করতে বলা হয়েছে। অন্য কোনো ইবাদত সম্পর্কে এমন কথা বলা হয়নি। আল্লাহর জিকির মানুষকে সব ধরনের গুনাহ থেকে রক্ষা করে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর।-(সূরা আনফাল : ৪৫) আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্বরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ -(সূরা রা’দ : ২৮)
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর এবং সকাল সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা কর। এখানে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা বলতে জিকিরকে উদ্দেশ করা হয়েছে। -(সূরা আহজাব : ৪১-৪২)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা ইমানদার তারা এমন লোক যে, যখন আল্লাহর জিকির করা হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। আর যখন তাদের সামনে আল্লাহর আয়াত পাঠ করা হয় তখন তাদের ইমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় প্রভুর ওপর ভরসা করে। (সূরা আনফাল : ২)
আল্লাহ তায়ালার স্মরণ থেকে বিমুখ হওয়া উচিত নয়। কারণ, পবিত্র কোরআনে মুনাফিকদের বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন তারা শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।-(সূরা নিসা : ১৪২) এতএব, জিকিরে যত্নশীল হওয়া একান্ত কর্তব্য।
জিকিরের ফজিলত বিষয়ে এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি বান্দার সাথে এমন ব্যবহার করি যা সে আমার প্রতি ধারণা রাখে। সে যখন আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথে থাকি। সে যদি আমাকে অন্তরে স্মরণ করে আমিও তাকে অন্তরে স্মরণ করি। সে যদি কোনো মজলিসে আমার কথা আলোচনা করে তবে আমি তার চেয়ে উওম মজলিসে তার আলোচনা করি।-(সহীহ বুখারী ২/৭৪০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৬৭৫)
আল্লাহর জিকির না করা ব্যক্তিদের মৃতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। হজরত আবু মুসা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে তার প্রতিপালককে স্মরণ করে আর যে করে না তাদের দৃষ্টান্ত হল জীবিত ও মৃতের মতো। (অর্থাৎ যে আল্লাহকে স্মরণ করে সে জীবিত। আর যে স্মরণ করে না সে মৃত)। -(সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৪০৭; মুসলিম, হাদীস : ৭৭৯)
হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কিছু মানুষ আল্লাহর যিকিরের জন্য একত্রিত হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিই একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তখন আসমান হতে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, তোমাদেরকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে এবং তোমাদের গুনাহসমূহ নেকিতে পরিণত হয়েছে। -(মুসনাদে আহমদ ৩/১৪২, হাদীস : ১২৪৫৩; শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৫৩৪)
হজরত মুয়ায ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশ করার পর জান্নাতবাসীরা দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস করবে না, শুধু ওই সময়ের জন্য আফসোস করবে, যা দুনিয়াতে আল্লাহর জিকির ছাড়া অতিবাহিত করেছে। -(শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৫১২; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস : ১৬৭৪৬)
One thought on “বেশি বেশি জিকির করলে যে সওয়াব পাবেন”